Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পাত্রী নির্বাচনে করণীয়: সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য উপযুক্ত পাত্রী যেভাবে বাছাই করবেন

Last updated on April 12th, 2024

পাত্রী নির্বাচনে করণীয়

পাত্রী নির্বাচনে আপনাকে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ইসলামে পাত্রী দেখার নিয়ম অনুসরণ করে একজন ভালো পাত্রী বাছাই করতে পারবেন। কোনো মেয়ে বিয়ে করার আগে তার ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই দেখতে হবে এবং ইসলামের দৃষ্টিতে যেভাবে পাত্রী নির্বাচন করতে বলা হয়েছে সেভাবেই বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে হবে। পাত্রী নির্বাচনে হাদিসে মানদণ্ড দেওয়া আছে, যেগুলো বিয়ের পূর্বে আপনাকে জানতে ও মানতে হবে। এছাড়াও বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশকিছু বিষয় যাচাই করতে হবে। এই সব করণীয়গুলো অনুসরণ করে সঠিক উপায়ে দ্বীনদার ও ভালো পাত্রী চেনা সম্ভব।

দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে হলে আপনাকে উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন করতেই হবে। নতুবা বিবাহ পরবর্তী জীবনে অশান্তির শেষ থাকবেনা। 

সুতরাং চলুন আজকের এই লেখাটি থেকে জেনে নেওয়া যাক, পাত্রী নির্বাচনে করণীয় কী, ইসলামের দৃষ্টিতে পাত্রী নির্বাচন, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে পাত্রী নির্বাচনে করণীয়, সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য উপযুক্ত পাত্রী বাছাইয়ে আমাদের করা ভুল, ব্যক্তিগত করণীয়, এবং দাম্পত্য জীবনে সুখী হবার চাবিকাঠি সম্পর্কে।

একজন বিখ্যাত মনীষী বলেছেন, যার স্ত্রী ভালো, তার জন্য দুনিয়াটা জান্নাতের। আর যার স্ত্রী খারাপ, তার জন্য দুনিয়াটা জাহান্নাম। সুতরাং একজন পুরুষের ভালো স্ত্রী পাওয়াটা খুবই সৌভাগ্যের ব্যাপার। যে স্বামী তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে তার আঁধার ঘরে আলো খুঁজে পাবে। কিংবা তার ধূধূ মরুভূমিসহ হৃদয়ে স্ত্রীটি নির্মল হাসি দিয়ে ফলাবে সবুজের বাগান।

আমরা কমবেশি সবাই রোমান্টিকতা পছন্দ করি। কিন্তু পৃথিবীর খুব অল্প পুরুষই তার স্ত্রীর সাথে শেষ পর্যন্ত রোমান্টিকতা ধরে রাখতে পারে। কারণ অধিকাংশ পুরুষই বিয়ের সময় সঠিক পাত্রী নির্বাচনে ভুল করে। যা তাদেরকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়।

আর তাই বর্তমান সময়ে আমাদের পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে যে অস্থিরতা বজায় আছে, তার মূল কারণ হচ্ছে পারিবারিক অশান্তি। আর পারিবারিক অশান্তি মানেই স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া, ফ্যাসাদ, মতের অমিল, মনোমালিন্য ইত্যাদি। যা কখনোই কেউ বিয়ের আগে বুঝতে কিংবা যাচাই করতে পারে না। 

যেকারণে আজ আমাদের সংসার গুলোতে অশান্তি লেগেই আছে। তাই বিয়ের আগে একজন ভালো পাত্রী নির্বাচন করা খুবই জরুরী। যা তাদের সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য আবশ্যকীয়। 

তাই আমরা যারা এখনো সঠিক পাত্রী নির্বাচন করতে না পারার কারণে বিয়ে করিনি কিংবা পাত্রী নির্বাচন করেই বিয়ে করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

কেননা আজকে আমরা এমন কিছু গোপন টেকনিক শিখব, যা দ্বারা একজন স্বামী তার সুখী দাম্পত্য জীবন গড়তে খুব সহজেই একজন ভালো স্ত্রী পেতে পারেন। আজকের এই পোস্টটি একজন স্বামীর জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচনের জন্য একটি লিটমাস পেপারের ভূমিকা রাখবে। এই বিষয়ে আমরা শতভাগ গ্যারান্টি দিচ্ছি। 

কেমন ছেলে বিয়ে করা উচিত
কেমন ছেলে বিয়ে করা উচিত

উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন জরুরী কেন? 

প্রতিটি মানুষেরই বিয়ের আগে উপযুক্ত  পাত্র-পাত্রী নির্বাচন খুবই জরুরি বিষয়। একারণে সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও সুখী সমৃদ্ধ  দাম্পত্য জীবনের জন্য উপযুক্ত পাত্র-পত্রী নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু বিয়ের আগে অনেকেই উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করতে পারেন না।

যেকারণে বিয়ে পরবর্তী এইসব সংসারে ঝুটঝামেলা ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। যেখানে অধিকাংশ সংসারের ক্ষেত্রেই নেমে আসে অশান্তি। যার করুন সমাপ্তি হয় ডিভোর্স কিংবা তালাকের মাধ্যমে। যা বিয়ের আগে ঐ পাত্র পাত্রীরা এবং তাদের পরিবার পরিজন কেউ চায়নি কিংবা কল্পনাও করেনি।

আর এই জন্যই বিয়ের আগে সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য উপযুক্ত পাত্রী বাছাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ টি করার জন্য পাত্রী নির্বাচনে আমাদের অনেক  করণীয় রয়েছে। যা আমরা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব ইনশা-আল্লাহ।

পাত্রী নির্বাচনে করণীয় কী

আমরা আগেই বলেছি একটি সুখী সমৃদ্ধ সংসারের জন্য উপযুক্ত নির্বাচন খুবই আবশ্যকীয় বিষয়। আর এই পাত্রী নির্বাচনের জন্য আমাদের বিভিন্ন করণীয় রয়েছে।

ইসলামে পাত্রী নির্বাচনে করণীয়
ইসলামে পাত্রী নির্বাচনে করণীয়

ইসলামের দৃষ্টিতে পাত্রী নির্বাচনে করণীয়

আমাদের দেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ হওয়ার কারণে, এখানে ইসলামী ধর্মীয় প্রভাব বেশী। আর তাই আমরা যারা মুসলমান আছি, তাদের জেনে রাখা উচিত যে, ইসলাম দাম্পত্য জীবনের ব্যাপক দিক নির্দেশনা প্রদান করে।

বিশেষ করে রাসুল সা: তাঁর পুরোটা জীবন দিয়ে সুখী দাম্পত্য জীবনের ইতিহাস রচনা করে গেছেন। যেখান থেকে আমাদের শিক্ষণীয় নানান বিষয় রয়েছে। যা আমাদের অধিকাংশ মুসলমানই জানে না।

পাত্রী নির্বাচনে বহুল আলোচিত হাদিসে কী বলা হয়েছে?

যার প্রথম কথা হচ্ছে, রাসুল সা: চারটি  বিষয় দেখেই একজন পুরুষকে তার যোগ্য স্ত্রী নির্বাচন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। একটি হাদিস যা আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে। যেখানে রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়। ১) তার সম্পদ ২) তার বংশমর্যাদা ৩) তার সৌন্দর্য এবং ৪) তার দীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [মুসলিম ১৭/১৫, হা. ১৪৬৬, আহমাদ ৯৫২৬, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০৯০]

এই হাদিস থেকে রাসুল সাঃ আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন যে, চারটি গুণ থাকলে তবেই তুমি ঐ মহিলাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করো। আর তা হলো, (১) সৌন্দর্য (২) সম্পদ (৩) বংশ (৪) দীনদারী। এই হাদিস সর্বশেষে যে গুণের কথা বলা হয়েছে। মূলত এটিই হলো আসল গুণ। আর তা হলো দীনদারী ও আদর্শবাদিতা।  

এই গুণটিই ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই তিনি এই শিক্ষাই তাঁর উম্মতকে দিয়ে যাচ্ছেন যে- দীনদারী কোনো মহিলা পাওয়া গেলে তাকেই যেন আমরা স্ত্রীরূপে গ্রহণ করি। অর্থাৎ অন্যান্য গুণ গুলো হাজার থাকলেও, এই গুণ তথা দ্বীনদারী না থাকলে ঐ অন্যান্য গুণসম্পন্ন মহিলাকে কখনোই গ্রহণ করা যাবে না।

বরং দ্বীনদারি থাকলে অন্যান্য গুণ গুলো না থাকলেও তাকে গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে। আর এই কারণে দ্বীনদারি গুণটি  সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই হাদীস অনুযায়ী  দ্বীনদারীর গুণ বঞ্চিতা নারীকে বিয়ে করাই উচিত নয়।

আমরা এখন এইসব গুণ সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি। কেন কী কারণে ইসলামে এইসব গুণের কথা বলা হয়েছে তা আমাদের প্র্যাকটিক্যালি জানা উচিত।

সৌন্দর্য 

এক‌টা প্রবাদ চালু আছে, “পেহেলে দর্শনদারী বাদমে গুণ বিচারী।” সুতরাং প্রথম দেখাতে যাকে ভালো লাগবে না, তার হাজারো গুণ পরে বর্ণনা করলেও আপনার মনপুত হবেনা। তাই বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্রী নির্বাচনের জন্য অবশ্যই পাত্রী সুন্দরী হওয়া আবশ্যক। তবে তা কখনোই পাত্রের তুলনা ছাড়া নয়।

আমরা অনেক সময় পরিবারের চাপে পাত্রী পছন্দ না হলেও বিয়ে করে ফেলি। কিন্তু পরবর্তীতে কখনোই সেই সংসারে সুখের দেখা পাওয়া যায় না। কেননা স্ত্রীর সৌন্দর্য্য যদি স্বামীর পছন্দনীয় না হয়, তাহলে সেখানে ভালবাসা বিরাজ করে না।

ইসলাম এই জন্যই সুন্দরী পাত্রী দেখে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছে, যাতে বিয়ে পরবর্তী কেউ পরকীয়ায় লিপ্ত না হয়। কোনো স্মার্ট ছেলে যদি আনস্মার্ট অসুন্দর কাউকে বিয়ে করে, তাহলে সে খুব সহজেই পরনারীতে আসক্ত হবে। যা ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক গুনাহ।

আর সেই জন্যই যেকোনো পুরুষকে বিয়ের জন্য তার পছন্দের সুন্দরী পাত্রী পছন্দ করার জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

সম্পদ

ইসলাম একজন আদর্শ পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার সম্পদ থাকাকে গুরুত্ব দিয়েছে। এটা ঐ পাত্রের জন্য যার আর্থিক অবস্থা দুর্বল। একজন গরিব ভালো দ্বীনদার ছেলে একজন সম্পদশালী পাত্রীকে বিয়ে করলে, সে স্ত্রীর সম্পদকে যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের, সমাজের এবং রাষ্ট্রীয় জীবন ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। 

বংশীয় পরিবার 

একটি ভালো বংশের নারী কখনোই সহজে স্বামীর অবাধ্য হতে পারে না। যে কারণে ভালো বংশীয় পরিবার থেকে বিয়ে করার জন্য ইসলাম নির্দেশ দেয়। কেননা যে পরিবার ভালো, সেই পরিবারের মেয়েরা পর্দাশীন হয়। তারা ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক আদর্শে বড় হওয়ার কারণে স্বামী সংসার শ্বশুরবাড়ির ইত্যাদিকে খুবই গুরুত্ব দেয়।

তাছাড়া ভালো বংশীয় পরিবারের মেয়েদের দিকে সহজে কোনো খারাপ ছেলেপেলেরা নজর দেয় না। একইসাথে ভালো পরিবারের মেয়েরা সবসময়ই পারিবারিক চাপে থাকার কারণে তাদের মধ্যে প্রেম জনিত সমস্যা অনুপ্রবেশ করতে পারে না। তাই এইসব পরিবারের মেয়েরা সবসময়ই স্বামী অনুরক্ত হয়। 

শুধু তাই নয়, একটি ভালো পরিবারের মানুষ ঐতিহ্যগত ভাবেই ভালো হয়। ফলে কোনো কারণে তাদের মেয়ে স্বামীর সংসারে সমস্যা সৃষ্টি করলে তাদের পরিবার ঐ মেয়েকে প্রশ্রয় দেয় না। আমাদের দেশে অধিকাংশ সংসার নষ্ট হয় স্ত্রীর পরিবারের প্রশ্রয় দেওয়ার কারণে।

তাই যে মেয়ের বাপ ভাই ভালো, তারা কখনোই তাদের মেয়েকে হাজার সমস্যা থাকলেও অন্যায় করার জন্য সাহস জাগাবে না। এছাড়াও এমন অনেক ভালো ভালো ফ্যামিলি আছে, যারা একসময় খুবই মান সম্মানী ছিলো। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাদের পরিবার দুর্বল হয়ে গেছে। আর এইসব ফ্যামিলি থেকে পাত্রী বাছাই করলে, তারা কখনোই মানসম্মানের কারণে হাজারো কষ্টের মাঝেও স্বামীর অবাধ্য হবেনা।

দ্বীনদারি 

উপরোক্ত বিষয়াদির পাশাপাশি সর্বাবস্থায় পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই পাত্রীর দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমরা যেসব বিষয় এখানে ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি এবং আরো যা আলোচনা করব, তার মধ্যে সর্বোত্তম গুণ হচ্ছে দ্বীনদারি। আমরা অনেকেই দ্বীনদারি মানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াকেই বুঝি।

কেউ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কালাম পড়লেই দ্বীনদারি হয়ে যায় না। দ্বীনদারি মানে হলো এমন একজন মুসলমান, যিনি সর্বাবস্থায় দ্বীন ইসলামকে প্রাধান্য দেন। অর্থাৎ যিনি প্র্যাকটিসিং মুসলিম, তিনিই হচ্ছেন একজন দ্বীনদার মানুষ। সুতরাং এমন মহিলাকে বিয়ে করার জন্য ইসলাম কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়, যে মহিলা খুবই ইসলাম মেনে চলে।

একজন স্ত্রী যদি সৎ দ্বীনদার হয়, তাহলে তার স্বামীও দ্বীনদার হতে বাধ্য। একইসাথে তার সন্তানও একজন দ্বীনদার সন্তান হিসাবে গড়ে উঠে। আমরা জানি পরিবার হচ্ছে প্রথম এবং উৎকৃষ্ট শিক্ষালয়। সুতরাং পরিবারে যদি একজন স্ত্রী দ্বীনদার থাকে, তাহলে তার স্বামী কখনোই অবৈধ কাজ করতে পারে না। একজন মা যদি দ্বীনদার হয় তাহলে তার সন্তান সহজে নষ্ট হতে পারে না।

মোটকথা একজন প্রকৃত দ্বীনদার স্ত্রী তার সংসারের পুরো ইসলামেরই আদর্শ ধারণ করে। ফলে ঐ পরিবারটি একটি আদর্শ ইসলামিক পরিবার হিসাবে গড়ে উঠে। যা আমাদের বর্তমান নষ্ট সমাজে খুবই জরুরি। আজ আমাদের মুসলিম পরিবার গুলো বিজাতীয় সংস্কৃতিতে ভরে যাচ্ছে। তারা নব্য আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইসলামী ঐতিহ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

আর তাই একজন মুসলিমের পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন দ্বীনদার পাত্রী নির্বাচন করতে হবে। যাতে সে নিজে এবং তার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ঈমান আকিদা এবং ভালো আমল নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে পারে।

ইসলামে পাত্রী নির্বাচন
সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে পাত্রী নির্বাচনে করণীয়

সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে পাত্রী নির্বাচনে করণীয়

সামাজিক দিক বিবেচনায় পাত্রী নির্বাচনে যেসকল দিক দেখতে হবে তা হলো:

মোহরানা অল্প হওয়া

আমাদের দেশে বর্তমানে একটি ট্রেন্ড চালু হয়েছে। আর তা হলো মাত্রাতিরিক্ত মোহরানা দেওয়া কিংবা আদায় করা। যা কখনোই ধর্মীয়, মানবিক কিংবা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহনযোগ্য নয়। কেননা এই অধিক মোহরানার জন্য অধিকাংশ ছেলেরাই উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করতে পারে না।

একইসাথে পাত্র পক্ষ থেকে অধিক মোহরানা আদায় করার ফলে পাত্রী পক্ষকেও বিয়েতে ব্যাপক পরিমাণে খরচ করতে হয়। যা অনেকক্ষেত্রে মোহরানার সমান হয়ে যায়। অথচ আমাদের দেশে মোহরানার টাকা নগদে আদায় করে না। তাই একজন পাত্রের ঐ পাত্রীই  নির্বাচন করা উপযুক্ত, যার মোহরানা কম হবে।

শুধু তাইনয় সুখী  দাম্পত্য জীবনের জন্য মোহরানা নগদে আদায় করা খুবই জরুরী। যদি স্বামী কম মোহরানা দিয়ে স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারে, তাহলে ঐ স্ত্রী সহজে স্বামীর অবাধ্য হয় না। আর বেশী মোহরানা দিয়ে বিয়ে করলে, ঐ স্ত্রী সৎ না হলে তার মধ্যে স্বৈরাচারী মনোভাব চলে আসবে। 

যা সংসারের জন্য কল্যাণকর নয়। কেননা একজন স্ত্রী যদি সংসারে স্বৈরশাসন শুরু করে, তখন স্বামী কখনোই তাকে শাসন করতে পারে না। আর শাসন করতে না পারার মূল কারণ হলো অধিক মোহরানা। এই মোহরানার কারণে স্ত্রীর মনে এই সাহস জন্ম নেয় যে, আমি যাই করি না কেন, আমার স্বামী আমাকে তালাক দিতে পারবে না।

এই কূটকৌশলের কারণে আজ হাজারো সংসার নিরবে নিবৃত্তে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই সুখে সংসার করার জন্য অবশ্যই কম মোহরানার পাত্রী নির্বাচন করতে হবে।

বুদ্ধিমতী ও মেধাবী হওয়া

একজন উপযুক্ত পুরুষের একজন উপযুক্ত স্ত্রী হতে হলে অবশ্যই তাকে বুদ্ধিমতী ও মেধাবী হতে হবে। তাই বিয়ের জন্য পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই এমন পাত্রী নির্বাচন করতে হবে, যার আকল জ্ঞান বুদ্ধি বেশী এবং মেধাবী।

একজন সফল মানুষ হতে হলে তার সাথে একজন জ্ঞানী সহচর থাকা আবশ্যক। আর তাই আমরা যদি ভবিষ্যৎ জীবনে উন্নতি করতে চায়, তাহলে আমাদের অবশ্যই এমন পাত্রী নির্বাচন করতে হবে যার জ্ঞান বুদ্ধি ভালো।

আমরা আমাদের সমাজে এমন অনেক পুরুষ দেখি, যাদের স্ত্রী চালাক চতুর না হওয়ার কারণে জীবনে উন্নতি লাভ করতে পারেনি। স্বামী মেধা ও শ্রম দিয়ে টাকাপয়সা আয় করলেও, স্ত্রী সেই টাকাপয়সার সঠিক মূল্যায়ন ও বন্টন করতে না পারার কারণে অনেকেই তাদের যোগ্যতা থাকার পরও সমাজে উপযুক্ত স্থানে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি।

এছাড়াও বিয়ে মানে হচ্ছে দুটি মনের মিলন। স্বামী জ্ঞানী গুণী হলে আর স্ত্রী যদি আলাভোলা হয়, তাহলে সেই সংসারে কখনোই শান্তি আসে না। কেননা এখানে একে অন্যকে বোঝার এবং বোঝানোর অনেক ব্যাপার রয়েছে। যা একটি সুখী দাম্পত্য জীবনে খুবই জরুরী।

পাত্রী কুমারী হওয়া

বিয়ের ক্ষেত্রে আমাদের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিধবা বিবাহ করে সুন্নাত হলেও, একটি সুখী সমৃদ্ধ সংসার গড়ার জন্য কুমারী মেয়ে বিয়ে করা জরুরী। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে কুমারী পাত্রী একজন স্বামীর জন্য আদর্শ।

কেননা দিনদিন যে হারে নারী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে কেউ বিধবা বিবাহ করলে সে নারীদের ফিতনায় পড়তে বাধ্য হবে। আজকাল হাত বাড়ালেই নারী ধরা দেয়। বিধবা পাত্রীর প্রতি আকর্ষণ কমে গেলে কিংবা অন্যের বউ বলে মনে শান্তি না পেলে ঐ স্বামী পাপে লিপ্ত হতে পারে যেকোনো সময়।

তাই আকর্ষণীয় কুমারী পাত্রী বিয়ে করা উত্তম। যাতে স্বামীর মন সবসময় স্ত্রীর দিকে ঝুঁকে থাকে। এতেকরে স্বামীও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং সংসারে সুখ সমৃদ্ধি থাকে।

এছাড়াও কুমারী পাত্রী তার প্রথম বিবাহ বলে মন প্রাণ দিয়ে স্বামী এবং সংসারের যত্ন নেয়। পক্ষান্তরে বিধবা স্ত্রী নতুন স্বামীর সাথে আগের স্বামীর বিভিন্ন তুলনা শুরু করতে পারে। যা অধিকাংশ সময়েই ভালো হয় না। অনেকক্ষেত্রে এ নিয়ে ঝগড়া ঝাঁটি হয়। যা পরবর্তীতে তালাকে রূপ নেয়। তাই বিয়ের ক্ষেত্রে কুমারী পাত্রী নির্বাচন খুবই আদর্শ। 

সচ্চরিত্র হওয়া 

একজন ভালো চরিত্রে নারী সবসময়ই তার স্বামীর জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। সচ্চরিত্র মানে হলো, সদালাপী, সুমিষ্টভাষী, নম্র-ভদ্র, ধৈর্যশীলা, পরশ্রীমনা, স্বামীভক্ত ও স্বামী অনুরাগীনী ইত্যাদি গুণে সমৃদ্ধ হওয়া। যা একজন স্বামী পছন্দ করে। কেউ কিন্তু কটূ সংলাপী, অহংকারী, উদাসীন, অসংযত, বেপরোয়া ও অকৃতজ্ঞ ইত্যাদি মনমানসিকতার পাত্রী পছন্দ করেন না।

কেননা এইসব গুণ কখনোই একজন মানুষকে সন্তুষ্ট নয় বরং অসন্তুষ্ট করে। যার প্রমাণ বর্তমান সংসার গুলোতে আমরা দেখতে পাচ্ছি। যেখানে স্ত্রীর বেপরোয়া মনোভাব স্বামীর সংসার থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আর স্ত্রীদের ধৈর্য্যহীনতাই অধিকাংশ সংসার ভাঙ্গনের মূল কারণ। তাই পাত্রী নির্বাচনে অবশ্যই সচ্চরিত্রের পাত্রী পছন্দ করা খুবই জরুরী।

ব্যক্তিগত করণীয় 

আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিয়ের সময় নিজের জন্য বিয়ে না করে পরের জন্য বিয়ে করি। ফলে দিনশেষে নিজের বিভিন্ন পছন্দ অপছন্দের বিষয় স্ত্রীর সাথে না মিললে আমাদের দুঃখের আর অন্ত থাকে না। তাই আমাদের উচিত নিজের পছন্দকে আগে গুরুত্ব দিয়ে অপরের মতামতকে সম্মান করা। তাই এইক্ষেত্রে আমাদের কিছু বিষয় গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। 

মনের মানুষকে খুঁজুন 

প্রতিটি পুরুষেরই তার ভবিষ্যৎ স্ত্রীকে নিয়ে নানান ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা থাকে। যা আমরা পারিবারিক ভাবে বিয়ে করতে গিয়ে সব বিসর্জন দিয়ে দেই। যা কখনোই উচিত নয়। কেননা বিয়ে মানুষের জীবনে একবারই হয়। তাই আপনি যে ধরনের পাত্রী পছন্দ করেন, সেই ধরনের পাত্রই আপনার বিয়ে করা উচিত।

আপনার মন যদি উড়ন্ত বলাকা খোঁজে, সেখানে আপনি জলহস্তীকে বিয়ে করে কখনোই সুখী হতে পারবেন না। তাই আপনার মন যা চাই তা যদি উপযুক্ত হয়, তাহলে তার জন্য প্রয়োজনে সংগ্রাম করুন। কেননা আজ আপনার পরিবার কিংবা অন্যান্যদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে গিয়ে এমন মেয়েকে বিয়ে করলেন যার সাথে আপনার মনেরই মিল নেই! তাহলে কেমন হবে বলুন?

সুতরাং বিয়ে যেহেতু আপনি করবেন সেহেতু আপনার যৌক্তিক পছন্দকেই আপনি গুরুত্ব দিন এবং তার পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করুন। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, আপনি অযৌক্তিক কোনো কিছুর জন্য পরিবারের বিরুদ্ধে যাবেন না। যৌক্তিক কারণে পরিবারকে বুঝিয়ে সমর্থন আদায় করুন।

যেমন অনেক পরিবার চায় তার পুত্রবধূ শিক্ষিত হোক এবং ভালো চাকুরিজীবী হোক। এক্ষেত্রে আপনি যদি চাকুরিজীবী পাত্রী কিংবা বেশি শিক্ষিত পাত্রী পছন্দ না করেন, তাহলে সেটা পরিবারকে বুঝাতে হবে।

কেননা আপনিও ইনকাম করছেন, সেও ইনকাম করছে। তাহলে সংসার করবে কে? কিংবা স্বামী সন্তানকে কে সময় দিবে? অথবা বেশি শিক্ষিত হলে অনেক সময় শ্বশুরবাড়িকেই পাত্তা দিবে না, এমনও হতে পারে।

তাহলে এই বিষয় গুলো আমাদের খোলাখুলিভাবে পরিবারে অবশ্যই আলোচনা করতে হবে। যাতে আপনার ভবিষ্যৎ সংসারে অশান্তি না আসে। একইভাবে যদি আপনি চাইছেন যে আপনি একজন চাকুরিজীবী পাত্রী বিয়ে করবেন। কারণ আপনার যে আয় তাতে সংসার চালিয়ে ভবিষ্যৎ গড়া যাবে না। তাহলে দুজনকেই ইনকাম করতে হবে।

এক্ষেত্রে বড় বাঁধা হলো সংসারের কাজ করবে কে? বিশেষ করে আমরা যারা যৌথ পরিবারে থেকে বিয়ে শাদি করি, তাদের জন্য চাকুরিজীবী মেয়ের পক্ষে সমর্থন আদায় করা কঠিন। তাই আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা পরিবারকে বোঝাতে হবে। যাতে তারা আপনার যৌক্তিকতাটা মেনে নিয়ে আপনাকে সমর্থন করে।

কিন্তু কখনোই আপনার পরিকল্পনা থেকে সরে যাবেন না। কেননা এটা দুই একদিনের বিষয় নয়। এটা একটা লাইফটাইমের বিষয়। যা আপনি মৃত্যুর আগপর্যন্ত বয়ে বেড়াবেন। সুতরাং নিজের পছন্দকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।

কোনো কিছু গোপন না করা

আমাদের অধিকাংশ বিয়েতেই এমন এমন বৃহৎ বিষয় গোপন করা হয়, যা পরবর্তীতে অনেক সময় বড় আকার ধারণ করে। আমরা যদি সত্যিকারের সৎ হয়ে থাকি, তাহলে আমাদের সততাকে কখ‌নোই প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না।

আমরা বিয়ে করার আগে নিজেকে বড় করতে গিয়ে অনেক অনেক মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকি। বিশেষ করে অর্থ সম্পদ ইত্যাদি নিয়ে আমরা বেশি মিথ্যা বলি যাতে আমরা পাত্রী পক্ষের কাছে বড় হতে পারি। এক্ষেত্রে আমাদের জেনে রাখা উচিত, মিথ্যা বলে বড় লোকের মেয়ে বিয়ে করে লাভ কী? যদি পরবর্তীতে তাদের পায়ের তলায় পড়ে থাকতে হয়।

অর্থাৎ আমরা ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিয়ে তো করে ফেলতে পারব। কিন্তু পরবর্তীতে সব জানাজানি হয়ে গেলে, আমাদের মান সম্মান আর কতটুকু থাকবে? আর স্ত্রী ও তার পরিবারের কাছে যদি স্বামীর সম্মানই না থাকে, তাহলে আর বাকি থাকেই বা কী?

মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিয়ে করলে, ঐ স্বামী কখনোই স্ত্রীর সামনে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারে না। আপনার টাকা নেই অথচ পয়সাঅলার গল্প করে বিয়ে করে ফেললেন। যখন স্ত্রী সন্তানকে ঠিকমতো খাওয়াতে পাড়াতে পারবেন না, তখন স্ত্রীর পরিবারের কাছেই হাত পাতে হবে। যা কখনোই একজন স্বামীর জন্য ভালো নয়।

সুতরাং অর্থ বিত্তসহ অন্যান্য যেকোনো গুরুতর বিষয় কখনোই বিয়েতে গোপন করা যাবে না। যদি আপনি সুখী দাম্পত্য জীবন চান। প্রয়োজনে সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর হলেও সকল সত্য প্রকাশ করুন। যাতে এ নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো ঝামেলা না হয়।

গরিব থেকে বিয়ে করা

বর্তমান সময়ের প্রয়োজনে আমাদের এমন পাত্রী নির্বাচন করতে হবে, যার আর্থিক অবস্থা আমাদের চাইতে দুর্বল। কেননা বর্তমান আইনকানুন খুবই কড়া। যেকারণে আমাদের দেশের মহিলাদের পাওয়ার দিনদিন বেড়ে গেছে। 

আর তাই তারা পান থেকে চুন খসলেই থানা কোর্ট কাচারি করতে দ্বিধাবোধ করে না। অথচ সংসার হচ্ছে টক মিষ্টি ঝাল। প্রতিটি সংসারেই সুখ অসুখ, ঝগড়া ঝাঁটি, হা হুতাশ, মনোমানিল্য ইত্যাদি থাকবেই। এটা একটা প্রাকৃতিক নিয়ম।

মানুষের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যই হলো এক একজনের এক এক মত। তাই সংসারে সবসময় স্বামী স্ত্রীর মতামত কখনোই এক হবেনা। তাই সংসারে সামান্য ঠোকাঠুকি থাকবেই। কিন্তু আমরা যদি ধনী পরিবার থেকে বিয়ে করি, তাহলে তারা তাদের মেয়ের পক্ষে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে চিন্তা করবে না।

পক্ষান্তরে একজন গরিব ঘরের মেয়ে কখনোই তার পরিবারে তার সংসার সম্পর্কে বুঝাবে না। কেননা কষ্ট করে যখন বিয়ে দিয়েছে তখন একটু কষ্ট সহ্য করেই সংসার করে যাই। এই চিন্তাধারণাই একটি গরিব পরিবারের মেয়ে করবে। একইসাথে হাজার কষ্ট হলেও গরিব মেয়ের পরিবার, কখনোই তাদের মেয়েকে সংসার ভাঙ্গার জন্য প্রশ্রয় দিবে না।

কেননা একবার বিয়ে দিতেই যার এতো খরচ হয়েছে, সেখানে এই মেয়েকে আবার বিয়ে দিবে কীভাবে? অন্যদিকে ধনী প্রভাবশালী পরিবারের মেয়ে কোনো কারণে তার সংসারের অশান্তির কথা পরিবারে  জানালে, ঐ পরিবার তাকে কখনোই ঐ সংসার করতে উৎসাহিত করবে না। বরং তাকে ফুঁসলিয়ে স্বামীর সংসার ত্যাগ করাবে। কেননা তারা এই ইস্যুটা ইগোতে নিবে। আর ধনীদের ইগো মানেই সংসার ভেঙে হলেও নিজেদের জয় ছিনিয়ে আনা। 

এইসব কারণে আমাদের সবসময়ই চেষ্টা করা উচিত, সংসারের শান্তির জন্য আমাদের চাইতে নিম্ন অর্থনৈতিক পরিবার থেকে বিয়ে করা।

সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য উপযুক্ত পাত্রী বাছাইয়ে আমাদের ভুল 

আমরা এতক্ষণ জানলাম পাত্রী নির্বাচনে আমাদের করণীয় কী। এখন আমরা জানব সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য উপযুক্ত পাত্রী বাছাইয়ে আমাদের ভুল গুলো কী কী। আমরা যখন বিয়ে করি আমাদের অধিকাংশ বিয়ের ক্ষেত্রেই আমরা তাড়াহুড়া করি। অথচ কোনো কাজে তাড়াহুড়া করা হচ্ছে শয়তানের কাজ। তাই আসুন জেনে নিই আমাদের ভুল গুলো কী 

অন্যের প্রেমিকা কিনা যাচাই করা

আমাদের অনেক ভাই আছেন, যারা সুন্দরী দেখে অর্থ সম্পদ দেখেই তাড়াহুড়া করে বিয়ে করে ফেলেন। আর এই কারণেই আমাদের অধিকাংশ স্বামী নিজের অজান্তেই অন্যের প্রেমিকা বিয়ে করে দুঃখের সংসার করতে বাধ্য হয়। যারফলে বিভিন্ন কারণে এই স্বামী না পারে ঠিকমতো সংসার করতে, না পারে স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে। আর তাই কাকের বাসায় কোকিলের বসবাসের মতোই চলে টোকাটুকির তাদের সংসার।

সুতরাং আমরা যখন বিয়ের জন্য পাত্রী নির্বাচন করব, তখন আমাদের অবশ্যই করণীয় হবে, আমাদের পছন্দের পাত্রীর কোনো উপযুক্ত প্রেমিক আছে কিনা। অর্থাৎ ছেলেমেয়ে উভয়ই উভয়কে ভালবাসে কিনা। যদি শতভাগ সবকিছু ঠিক হওয়ার পরও আমরা জানতে পারি যে, এই পাত্রীর প্রেমিক রয়েছে। তাহলেও আমাদের সেই সম্পর্ক গড়া থেকে ফিরে আসতে হবে।

কেননা অধিকাংশ সংসারে এই জাতীয় সমস্যা থাকলেও, আমরা সেগুলো কে তেমন গুরুত্ব দেই না। ফলে হাতেগোনা কয়েকটি সংসার ঠিক থাকলেও অধিকাংশ সংসারে অশান্তি বিরাজ করে। তাই আমাদের অবশ্যই এটা যাচাই করতে হবে যে আমাদের পছন্দের পাত্রীর উপযুক্ত প্রেমিক আছে কিনা।

নিজে দ্বীনদার না হয়ে দ্বীনদারি পাত্রী খোঁজা

আমাদের অধিকাংশ পুরুষই বিয়ের ক্ষেত্রে নামাজি কালামী মেয়ে খোঁজার চেষ্টা করেন। অথচ নিজে উত্তর দক্ষিণ হয়ে কখনো ঠিকমতো সিজদাও দেয় না। তাই নিজে প্রকৃত মুসলমান না হয়ে একজন ভালো দ্বীনদারি মেয়ে বিয়ে করা উচিত নয়।

কেননা আপনি যদি দ্বীনদার না হোন কিংবা দ্বীন পালনের ইচ্ছা না থাকে, তবে এই সংসার করে আপনি লাভবান হবেন না। কেননা আপনার স্ত্রী চাইবে হিজাব পড়ে চলতে, পরপুরুষের সাথে দেখাসাক্ষাৎ না করতে। আর আপনি চাইবেন আধুনিক মনা হয়ে উশৃঙ্খল জীবনযাপন করতে। তখন দুই জন দুই মেরুর হলে কখনোই সেই সংসারে আল্লাহ না চাইলে শান্তি আসবে না।

তাই নিজে যদি ধর্মকর্ম পালনে ইচ্ছুক না হোন, তাহলে কখনোই একজন ধর্মপ্রাণ মেয়েকে বিয়ে করবেন না। এতে আপনার যেমন অশান্তি হবে, ঠিক তদ্রুপ ঐ মেয়েটিও ধর্মীয় কাজে বাঁধা আসার কারণে কিংবা একজন অসৎ মানুষের সাথে সংসার করার কারণে কষ্ট পাবে।

শুধু তাই নয়, একজন দ্বীনদার মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কারণে আপনি নিজেও আল্লাহর কাছে গুনাহগার হবেন। তাই ভালো হওয়ার নিয়ত না থাকলে নিজের মতো কাউকে বিয়ে করাই উত্তম।

জোর করে বিয়ে নয়

আমাদের সমাজে বেশ কিছু বিয়েতে দেখা যায়। পাত্রের আর্থিক অবস্থা ভালো হলে, পাত্রী পক্ষ তাদের মেয়েকে একপ্রকার জোর করেই বিয়ে দিয়ে দেয়। যা অনেক ক্ষেত্রে পাত্র পক্ষ জানে না। এই জোর করে বিয়ে দেওয়ার কারণে অনেক নববধূ সহজে স্বামীর সংসার ঠিকমতো করে না।

এই ক্ষেত্রে স্বামী ধৈর্যশীল না হলে, এই মেয়ে কখনোই স্বামীর সংসার করতে পারে না। তাই একজন আদর্শ স্বামী হিসাবে সংসার করতে চাইলে, শতভাগ নিশ্চিত হয়ে তবেই বিয়ে করা উচিত। প্রয়োজনে হবুস্ত্রীর সাথে খোলাখুলিভাবে কথা বলতে হবে। যাতে সংসারে কোনো অশান্তি সৃষ্টি না হয়।

নিজের গোপন তথ্য প্রকাশ না করা

বিয়ের আগে আমরা পাত্ররা অনেকেই সত্যবাদী যুধিষ্ঠির বনে যায়। অর্থাৎ কারো সাথে বিয়ে ঠিকঠাক থাকলে, তার সাথে বিয়ে হওয়ার আগেই কিংবা বিয়ের পরপরই, নিজেদের গোপন কথা প্রকাশ করে ফেলি। যা কখনোই করা যাবে না।

বিশেষ করে প্রেম নিয়ে বেশী সমস্যা হয় সংসার গুলোতে। আমাদের মধ্যে প্রেম করে না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। তবে সত্যিকারের প্রেম করা সংসার করতে পারার সংখ্যা খুবই নগন্য। তাই আমরা যারা প্রেম করে ব্যর্থ হয়েছি। তাদের কখনোই অতীতের প্রেমের কথা নববধূকে বলা যাবে না। কেননা এই খোঁটা আপনাকে আজীবন শুনতে হবে। সুতরাং অতীতের কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। 

সুখী দাম্পত্য জীবনের শপথবাক্য

আমরা সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচনের জন্য অনেক দৌড়ঝাপ করি। এবং একসময় আমাদের মনমতোন পাত্রীও বাছাই করি। কিন্তু যখন সংসার করতে আসি, তখন সংসারের সকল দায়িত্ব স্ত্রীর কাঁধে তুলে দিয়ে বিন্দাস হয়ে ঘুড়ে বেড়াই!

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিয়ের পরপরই স্ত্রীর নানান খুটিনাটি দোষত্রুটি ধরতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে যাই। শুধু স্ত্রীর নয়, বিয়ের পর অধিকাংশ স্বামীই লেগে যায় শ্বশুরবাড়ির নানান ভুলত্রুটি বের করতে। যেন বিয়ের পর দুই পরিবার একটি যুদ্ধে অবতীর্ণ!

বিয়েতে কে কী দিল, কেন দিল, কেন দিল না ইত্যাদি প্রশ্ন নিয়ে গবেষণাই চলে বহুদিন। এই পরিস্থিতিতে অনেক নববধূই সংসারে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। ফলে সৃষ্টি হয় সংসারে অশান্তি। যা একপর্যায়ে ডিভোর্স পর্যন্ত গড়ায়।

যেসব মেয়েরা নিজেকে মানিয়ে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সংসার করতে পারে, তারাই স্বামীর সাথে সংসার করতে পারে। তবে আমাদের বর্তমান সময়ের মেয়েদের সেই ধৈর্য্য এবং সহনশীলতা কোথায়?

তাই “সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে” এই কথাটি সত্যি হলেও, হাল আমলে একজন স্বামীকেই শেষ পর্যন্ত সংসার টিকিয়ে রাখতে যুদ্ধ করতে হয়। কেননা বর্তমান নারী স্বাধীনতার যুগে নারীরা বিয়ে না করলেও কিংবা স্বামী পরিত্যাক্তা হলেও চলে যেতে পারে। 

কিন্তু একজন পুরুষের পরিবার নিয়ে থাকতে হলে তার একজন উপযুক্ত স্ত্রী থাকা চাই। তাই প্রতিটি পুরুষেরই বিয়ের পর শপথবাক্য পাঠ করা উচিত। যাতে তারা সঠিকভাবে স্ত্রীর সাথে মিলেমিশে সংসার করে।

এইক্ষেত্রে একজন স্বামীকে এটা চিন্তা করতে হবে যে, তার স্ত্রী অন্য বাড়ি থেকে নতুন একটি বাড়িতে এসেছে। তাই তার এই বাড়ির পরিবেশে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে।  সুতরাং এই সময়টুকু স্বামীর উচিত হবে স্ত্রীকে নানাভাবে সাহায্য করা। 

বিয়ে যখন হয়েই গেছে, তখন পুরোনো কোনো কিছু নিয়ে কথা না বাড়ানো। দুই পরিবারের মধ্যে সর্বদা সমঝোতা করে দেওয়া। কোনো কিছু নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে চাপ সৃষ্টি না করা। নিজের পরিবারের সদস্যদের কার কী রুচি তা আগেভাগে স্ত্রীকে জানানো। নিজের কী রুচি অভিরুচি তা স্ত্রীকে জানানো। একইসাথে স্ত্রীর কী রুচি অভিরুচি তাও জেনে নেওয়া ইত্যাদি নানান খুটিনাটি বিষয়ে স্বামীর উচিত হবে স্ত্রীকে সাহায্য করা। 

আমরা যদি উপরোক্ত বিষয় গুলো একটু মানিয়ে নিতে পারি, তাহলে আমাদের দাম্পত্য জীবন ইনশাআল্লাহ অবশ্যই সুখী ও সমৃদ্ধ হবে। শুধু উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন করলেই সব কিছু শেষ হয়ে যায় না। কেননা স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। তাই শুধু উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন করে বিয়ে করে নিলেই দাম্পত্য জীবন  সুখী হবে না। যদি তা রক্ষা করার জন্য আমরা উদ্যোগ না নিই। 

প্রিয় বন্ধুরা আমরা এতক্ষণ জানলাম “পাত্রী নির্বাচনে আমাদের করণীয় কী? এবং সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য উপযুক্ত পাত্রী বাছাই করার জন্য আমাদের কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আমরা সকলেই জানি ভালো ও প্রকৃত মানুষের জীবনে বিয়ে একবারই হয়।

তাই এই এক বিয়ে করেই যেন আমরা সুখী সমৃদ্ধ সংসার করতে পারি তারজন্য পাত্রী নির্বাচনে বিয়ের আগেই আমাদের নানান করণীয় রয়েছে। যাতে করে বিয়ের পর আমরা আমাদের স্ত্রীদের সাথে নিয়ে একটি সুখী সমৃদ্ধ দাম্পত্য জীবন গড়ে তুলতে পারি। আশাকরি পাত্রী নির্বাচন সংক্রান্ত এই আর্টিকেলটি আপনাদের সুখী দাম্পত্য জীবন গড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

Share this article

Content Writer
Lives in Chattogram, Bangladesh
জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলাম। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখছি। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস।
Comments
guest
2 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
Anonymous
Anonymous

ব্যক্তিগত জীবনে চরিত্রহীন ছিলাম। তার প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে নিয়্যাত করেছিলাম একজন বিধবা বিয়ে করবো। কিন্তু বিয়ে করেছিলাম একজন ডিভোর্সি নারীকে। শুরু থেকে মনমালিন্য আর ঝামেলা। দুইটা সন্তান আসছে পৃথিবীতে। একজনের বয়স ১১ অন্যজনের ৯ বছর। কিন্তু সুখ পেলামনা। বিয়ের ১২ বছরের মাথায় সংসার ভেঙে গেলো। একসাথে নষ্ট হলো ৪ টা জীবন। এখনো যারা চারিত্রিকভাবে সৎ আছেন সকলের প্রতি আমার হাতজোড় অনুরোধ, আল্লাহর ওয়াস্তে আর যাই করেন যিনা-ব্যবিচারে জড়াবেন না। দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই হারাবেন। আখিরাতের ফায়সালা আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু দুনিয়ার ভোগান্তি কোনোভাবেই পিছু ছাড়বে না। আর বিয়ের মতো সিদ্ধান্তঃ আবেগতাড়িত হয়ে নিবেন না। ডিভোর্সি পুরুষ বা নারী কাউকে গ্রহণ করার আগে শতবার ভাববেন। কারণ অতীতের রেশ প্রতিটি মানুষের জীবনে রয়ে যায়। আপনি যদি ভাবেন কারো অতীতের দু:খ মোচন করে দিতে পারবেন, তাহলে আপনি ভুল। এই যেমন আমার কথাই বলি, কেউ যদি আমাকে আবেগের বশবর্তী হয়ে বিয়ে করেন তাহলে তিনি ভুল করবেন। কারণ আমার অতীত সম্পর্কের তিক্ততা আমার রক্তে মিশেছে। এই তিক্ততা নিজের অস্তিত্বে কতটা গভীরভাবে মিশেছে তা আমি নিজের চলাফেরা আর কথাবার্তায় নিজেই অনুধাবণ করতে পারি। হে আমার যুবক ভাই ও বোনেরা। হারাম সম্পর্কে যেমন আরাম নাই। একইভাবে ভুল জীবনসঙ্গী নির্বাচন একটা হালাল সম্পর্ককে যন্ত্রণাময় করতে যথেষ্ট। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সবাইকে উত্তম, হালাল ও পবিত্র রিযিক দান করুন।

—সংগৃহীত

StudyKoro
Admin
StudyKoro
Reply to  Anonymous

আমিন।

Related articles

পিল খাওয়ার নিয়ম

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম: পিল খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে পিল খাচ্ছেন তো!

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম না জেনে নিজের খেয়াল খুশি মতো সাধারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা ইমার্জেন্সি পিল খেলে হতে পারে নানাবিধ সমস্যা। এই পোস্টের মাধ্যমে পিল বা জন্মনিরোধক বড়ি খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে পারবেন।

English blog

Images Source: Pxfuel

ক্যাটাগরি

অনুসন্ধান করুন

সঠিক কিওয়ার্ড লিখে খুঁজে নিন আপনার দরকারি পোস্টটি!

Share this page
পাত্রী নির্বাচনে করণীয়

পাত্রী নির্বাচনে করণীয়: সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য উপযুক্ত পাত্রী যেভাবে বাছাই করবেন

https://www.studykoro.com/bride-selection-for-marriage/

Report this book

Let us know if you notice any incorrect information about this PDF book. Also, please let us know if the given PDF file is banned for sharing; we will remove it as soon as possible. 

User Profile Picture

YourName