উপবৃত্তি গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় বড় একটি সুবিধা এনে দিয়েছে। তবে এই উপবৃত্তি পেতে হলে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। তবে অনেকেই জানে না কীভাবে অনলাইনে আবেদন করতে হয় বা আবেদনে ভুল হলে কী সমস্যা হয়। তাছাড়া মনে প্রশ্ন থাকতে পারে উপবৃত্তির সুবিধাগুলো কী কী। তাই উপবৃত্তি সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের উত্তর জানতে নিবন্ধটি পুরোটা পড়েন। আজকে আমরা উপবৃত্তির যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
Table of Contents
উপবৃত্তি কী?
যেসকল শিক্ষার্থী অর্থনৈতিকভাবে অসহায় বা দারিদ্র্য তাদের সরকার কর্তৃক যে আর্থিক সাহায্য করা হয়, তাকে উপবৃত্তি বলে। অর্থাৎ উপবৃত্তির মাধ্যমে সরকার গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিত করে। অনেক শিক্ষার্থী আছে যাদের পড়ার ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাবে পড়ালেখা করতে পারে না। এদের পড়াশুনার সকল খরচ সরকার বহন করে। আর এই শিক্ষার জন্য সরকারের অনুদানকৃত অর্থই হলো উপবৃত্তি। নির্দিষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরাই শুধু উপবৃত্তি পেয়ে থাকে।
কত টাকা উপবৃত্তি প্রদান করা হয়?
২০০২ সাল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি চালু করা হয়। তখন মাথাপিছু ১০০ টাকা উপবৃত্তির জন্য বরাদ্দ ছিলো। কিন্তু বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫০ টাকা মাথাপিছু উপবৃত্তি দেওয়া হয়। তাছাড়া একই পরিবারের দুইজন শিক্ষার্থী থাকলে দুইজনই সমান টাকা পাবে। তাছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর জন্য পাঁচ হাজার টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর জন্য আট হাজার এবং স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্য দশ হাজার টাকা উপবৃত্তি বরাদ্দ থাকে।
উপবৃত্তির জন্য আবেদন
শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণের সময়সূচিসহ আবেদনপত্র পূরণের নির্দেশনা জারি করেছে শিক্ষা বিভাগ। উপবৃত্তির আবেদনের নির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া হয়ে থাকে প্রতি বছর। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উপবৃত্তির জন্য আবেদন করতে হয়।
উপবৃত্তির আবেদনের জন্য যা যা লাগবে
উপবৃত্তির আবেদনের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এসবের মাধ্যমে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়।
- শিক্ষার্থীর জন্ম সনদ
- শিক্ষার্থীর ১৭ ডিজিটের সনদ নাম্বার
- শিক্ষার্থীর নিজের ছবি ও স্বাক্ষর
- অভিবাকের জাতীয় পরিচয়পত্র
- শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুপারিশপত্র
- অভিভাবক যদি তৃতীয় বা চতুর্থ পদে চাকরি করে তবে কর্মরত প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়ন পত্র
- একটি সচল ব্যাংক সেবা যুক্ত মোবাইল নাম্বার
উপবৃত্তির জন্য অনলাইনে আবেদন
উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য বর্তমানে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। অনলাইন আবেদন ছাড়া উপবৃত্তির ফরম নেওয়া হয় না। তাই eservice.pmeat.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
উপবৃত্তির আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম
উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য অবশ্যই অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। অফলাইন বা ডাকটিকিটের মাধ্যমে আবদেন এখন আর নেওয়া হয় না। নিম্নে উল্লেখিত ধাপসমূহ অনুসরণ করে খুব সহজেই উপবৃত্তির আবেদন করা সম্ভব।
- eservice.pmeat.gov.bd এই ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করা থাকলে লগইন করতে হবে। নয়ত রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।
- তারপর মোবাইল ভেরিফিকেশনের অপশন আসবে। তখন মোবাইল ভেরিফিকেশন করতে হবে।
- তারপর লগইন করে নিতে হবে।
- লগইন করার পর যে আবেদন ফরম আসবে তাতে শিক্ষার্থীর যাবতীয় তথ্য দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে, যে মোবাইল নাম্বার দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করা হয়েছে সেটিতে যেন কোনো ব্যাংকিং সেবা চালু থাকে। যেমন: বিকাশ, নগদ অথবা রকেট। সবগুলো ধাপ সম্পূর্ণ করার পর আপনার সামনে একটি ড্যাশবোর্ড আসবে যেখানে আপনি আপনার আবেদনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন। স্কুলে জমা দেওয়ার সুবিধার্থে এখান থেকে আবেদনের একটি কপি আপনাকে প্রিন্ট করে নিতে হবে।
আবেদন ফরম পূরণ করার নির্দেশনাবলি
আবেদন ফরম পূরণ করার ক্ষেত্রে সব তথ্য নির্ভুল দেওয়ার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে মোবাইল নাম্বারটা যেন সঠিক হয়। একজন শিক্ষার্থী একের অধিক আবেদন ফরম পূরণ করতে পারবে না বা একের অধিক নাম্বারও দিতে পারবে না।
জীবিত পিতা-মাতা থাকলে দাদা-দাদি বা অন্যরা অভিভাবক হিসাবে গণ্য হবে না। তাই তাদের তথ্য ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। তবে পিতা-মাতা জীবিত না থাকলে তাদের তথ্য ব্যবহার করা যাবে। কোনো ভুল তথ্য ব্যবহার করলে আবেদন বাতিল করে দেওয়া হতে পারে।
উপবৃত্তি পাওয়ার সময়সীমা কত?
শিক্ষার্থী যদি উপবৃত্তি পাওয়ার যোগ্য বলে গণ্য হয় তাহলে তাকে এসএমএস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে৷ উপবৃত্তি যদি নিশ্চিত হয় তাহলে যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করবে সে প্রতিষ্ঠানে কোনো বেতন বা ফি দিতে হবে না। আর ৪-৬ মাসের ভেতর শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত টাকা ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দিয়ে দেওয়া হবে।
উপবৃত্তি পাওয়ার যোগ্যতা
- আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি প্রযোজ্য।
- যারা ইতিমধ্যে অন্য কোনো বৃত্তি পেয়ে থাকে তারা উপবৃত্তির জন্য অযোগ্য বলে গণ্য হবে।
- মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে।
- অবশ্যই অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
- আবেদন করার সময় যদি কোনো শিক্ষার্থীর ভুল তথ্য দেওয়া হয় তাহলে সে আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে।
- উপজেলা কর্মকর্তাদের দ্বারা শিক্ষার্থীর সকল তথ্য যাচাই করা হয়। উপজেলা কর্মকর্তারা তাদের কমিটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর তালিকা ট্রাস্টে প্রেরণ করে।
আরও দেখুন: ভালো ছাত্র হওয়ার উপায়
উপবৃত্তি সংক্রান্ত নোটিশ ২০২৩
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ উপবৃত্তি সংক্রান্ত নোটিশ জানতে pmeat.gov.bd ওয়েবসাইটের উপবৃত্তি সংক্রান্ত নোটিশ বোর্ডে নজর রাখুন।
উপবৃত্তির জন্য আবেদন ফরম
উপবৃত্তির আবেদন ফরম ডাউনলোড করতে Download লেখায় ক্লিক করুন।
উপবৃত্তি টাকা দেখার নিয়ম
বিকাশে উপবৃত্তির টাকা দেখার নিয়ম কিংবা নগদে উপবৃত্তির টাকা দেখার নিয়ম—সাধারণ ব্যালেন্স দেখার মতোই। যেভাবে বিকাশ বা নগদে ব্যালেন্স দেখেন সেভাবে কোড ডায়াল করে অথবা অ্যাপ থেকে চেক করুন উপবৃত্তির টাকা এসেছে কিনা।
উপবৃত্তির ওয়েবসাইট
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর ওয়েবসাইট-ই হলো উপবৃত্তির ওয়েবসাইট।
শেষ কথা
উপবৃত্তি শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে। শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপবৃত্তি দেওয়া চালু করেছে বাংলাদেশ সরকার। তাই উপবৃত্তির সুবিধা গ্রহণ করে হলেও আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। উপরে উল্লেখিত ধাপসমূহ অনুসরণ করে খুব সহজেই উপবৃত্তির আবেদন করা সম্ভব।