অতিরিক্ত ওজনের জন্য হতাশা ও হীনমন্যতায় ভুগেন এমন অনেক মানুষ রয়েছে। তবে রয়েছে এর উল্টোটাও। একটুখানি ওজন বাড়িয়ে নিজেকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় দেখাতে চান এমন ব্যক্তির সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ওভার ওয়েট বা আন্ডার ওয়েট দুটিই এক ধরনের অসুস্থতা। যদি কোন ব্যক্তির বিএমআই-১৮ এর নিচে হয়ে থাকে তবে সে ব্যক্তির ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম বা তাকে আন্ডার ওয়েট বলা হয়।
অনেকেই নিজে নিজে মোটা হওয়ার সহজ উপায় হিসেবে বিভিন্ন সোর্স থেকে বিভিন্ন ভুল ডায়েট দেখে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ ছাড়াই ডায়েট শুরু করে দেন, ফলশ্রুতিতে ওজন তো বাড়েই না বরং শরীরে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। যা আন্ডার ওয়েট ব্যক্তিকে পূর্বের তুলনায় আরো হতাশাগ্রস্থ করে তোলে।
ওজন না বাড়া বা দিন-দিন ওজন কমে যাওয়ার পিছনে বহু কারণ থাকতে পারে। কেউ যদি মনে করে তাকে কিছুটা ওজন বাড়াতে হবে তাহলে অবশ্যই আগে তাকে নিজের ওজন না বাড়ার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।
আজকের আর্টিকেল এ আমরা ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়, ওজন বৃদ্ধি না হওয়ার কারণ, ওজন বৃদ্ধির সঠিক খাদ্য তালিকা এবং ওজন বাড়াতে যেসব ভুল বেশিরভাগ মানুষ করে থাকে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
যা ফলো করে ওজন বাড়িয়ে আপনিও হতে পারবেন সুন্দর ও সুঠাম দেহের অধিকারী।
মোটা না হওয়ার কারণ কী
আপনার যদি মনে হয়ে থাকে যে আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করছেন, কিন্তু তারপরও আপনার ওজন সেই তুলনায় অনেকটাই কম, তবে প্রথমেই আপনাকে জেনে নিতে হবে যে কেন আপনি আন্ডারওয়েট বা ঠিক কি কারণে আপনার ওজন বাড়ছেনা। ওজন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জানার আগে আপনাকে এটা জানতে হবে যে ঠিক কি কি সমস্যা ওজন বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে।
আরও পড়ুন:
অভিজ্ঞ নিউট্রিশনিষ্টরা ওজন বৃদ্ধির উদ্দেশ্য কোন ডায়েট প্ল্যান দেয়ার আগে ওই ব্যক্তির রক্তের কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস এবং থাইরয়েড আগে পরীক্ষা করে নেন। এরপর যেকোনো ডায়েট প্ল্যান দিয়ে থাকেন।
আমরা এখানে ওজন না বাড়ার তিনটি মৌলিক কারণ নিয়ে আলোচনা করবো। এগুলো হলো:
- অপর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ
- জীনগত বা বংশগত বৈশিষ্ঠ্য
- শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা
১. অপর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ
ওজন বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন আপনাকে শরীরের আসল চাহিদার তুলনায় পরিমাণে আরেকটু বেশি ক্যালরি গ্রহণ করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। যেমন ধরুন আপনার শরীরে যদি দৈনিক ১২০০ ক্যালরির চাহিদা থাকে তবে আপনাকে দৈনিক ১৫০০-১৬০০ ক্যালরির খাবার খেতে হবে। তাহলেই আপনার শরীরের চাহিদা পূরণ হওয়ার পর অবশিষ্ট ক্যালরি আপনার শরীরে বাড়তি ওজন হিসেবে জমা হবে।
আরও পড়ুন
তাই আপনি যদি শরীরের চাহিদার তুলনায় পরিমাণে বেশি ক্যালরি গ্রহণ না করেন তবে আপনার ওজন বাড়বেনা এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ না করলেও ওজন বাড়তে চায় না। তাই ওজন বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই বুঝে শুনে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করতে হবে।
২. জীনগত বা বংশগত বৈশিষ্ট্য
যদি কোন ব্যক্তির বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানি চিকন হয়ে থাকে তবে তার চিকন হওয়ার সম্ভাবনাই ৮০%। এটিকেই জীনগত বা বংশগত বৈশিষ্ট্য বলা হয় যা কোন ব্যক্তি বংশ পরম্পরায় পেয়ে থাকে। রোগা বা চিকন হওয়ার এটিও একটি বড় কারণ হতে পারে।
৩. শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা
রোগা বা চিকন হওয়ার ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের
শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতাও দায়ী হতে পারে। শারীরিক অসুস্থতা যেমন ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হরমোনাল ইমব্যালেন্স, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগ ওজন বৃদ্ধির পথে বাঁধা সৃষ্টি করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন মানসিক রোগ যেমন ডিপ্রেশন, হাইপারটেনশন এর মতো মানসিক রোগগুলোও ওজন বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে থাকে।

মোটা হওয়ার সহজ উপায়
এ অংশে আমি মোটা হওয়ার সহজ উপায় হিসেবে এমন কিছু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করবো যা সঠিকভাবে অনুসরণ করে খুব সহজেই আপনি আপনার ওজন বাড়াতে পারবেন।
১. খাবার তালিকা তৈরি করুন
আপনি হয়তো খাবার গ্রহণ করছেন তবে সঠিক নিয়মে নয়! শুধুমাত্র ওজন কমাতে নয় বরং ওজন বাড়াতেও প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য তালিকা। এর জন্য আপনি একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জিম ট্রেইনার বা একজন ডায়েটিশিয়ান এর শরণাপন্ন হতে পারেন। তারা আপনাকে আপনার ওজন বৃদ্ধির টার্গেট ও শরীরের অবস্থা বুঝে আপনার জন্য উপযুক্ত খাদ্যের মাধ্যমে আপনার খাদ্য তালিকাটি তৈরি করবেন।
২. পুষ্টিকর খাবার খান
আপনি হয়তো পেটভরে খাবার ঠিকই খাচ্ছেন তবে সেটা সুষম খাবার নয়! শরীরকে সুস্থ রাখতে ও সঠিক ওজনে আনতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
আপনাকে অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকাটিকে খাদ্যের বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরি করতে হবে (যেমন: ভিটামিন, মিনারেল, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি) যাতে করে আপনার শরীরে কোন প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদনের ঘাটতি দেখা না দেয়। এই অভ্যাস আপনার দ্রুত ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
৩. খাদ্য গ্রহণের সংখ্যা বাড়াতে হবে
দ্রুত ওজন বাড়াতে আপনার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই অতিরিক্ত সময় যোগ করতে হবে। আমরা সচরাচর তিনবার খাবার খেয়ে থাকি। আপনি যদি আগের দিনগুলোতে দৈনিক তিনবার খাবার নিয়ে থাকেন তাহলে সেটাকে এখন বাড়িয়ে ৫-৬ বার করতে হবে। ঘন ঘন পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণ এর ফলে আপনার ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
৪. প্রচুর পরিমাণে ফ্লুইড গ্রহণ করুন
দ্রুত ওজন বাড়াতে গিয়ে আমরা অনেকেই শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী উপাদান “পানি” পান করাই ভুলে যাই। পানি আমাদের শরীর কে ডিটক্স ও হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে যা ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। এছাড়াও চিয়া সিড মিশ্রিত শরবত, বিভিন্ন ফলের জুস খেতে পারেন যা শরীরকে সতেজ রাখার পাশাপাশি বাড়তি ক্যালরির যোগান দিবে।
৫. দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন
চিন্তামুক্ত মানুষ খুব কমই আছে। তবে সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই নিজেকে যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। আন্ডারওয়েট নিয়ে তো দুশ্চিন্তা করাই যাবেনা। কেননা, দুশ্চিন্তা ওজন বৃদ্ধির পথে বাঁধা। আপনি রিল্যাক্স থাকার জন্য মেডিটেশন, যোগ ব্যায়াম, যোগ নিদ্রার চর্চা করতে পারেন এতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
৬. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান ও বিশ্রাম নিন
বিশ্রাম ও ঘুম ওজন বাড়াতে খুবই প্রয়োজনীয় এবং কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রেই রোগা শরীরের পিছনে দায়ী হয়ে থাকে ব্যক্তির হাই মেটাবলিজম রেট। প্রতিবার খাবারের পর লম্বা সময় ধরে বিশ্রাম করুন। এটা আপনার মেটাবলিজম রেটকে কমিয়ে আনবে যা আপনার ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক। রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা অবশ্যই ঘুমাতে হবে।
যদি আপনার কোন শারীরিক সমস্যা না থাকে তবে উপরের বিষয়গুলো অনুসরণ করলে সহজেই আপনি মোটা হতে পারবেন।
ইসলামে মোটা হওয়ার উপায়
সুস্বাস্থ্য সৃষ্টিকর্তা থেকে প্রাপ্ত নিয়ামতসমূহের মধ্যে একটি। ডায়েট ও সঠিক লাইফস্টাইলের পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তার কাছেও প্রার্থনা করুন যেন তিনি আপনাকে সুস্বাস্থ্য দান করেন।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে,
“আমার মায়ের ইচ্ছা ছিল আমাকে স্বাস্থ্যবতী বানিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর নিকট পাঠাবেন। এজন্য তিনি অনেক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, কিন্তু কোন ফল হয়নি। শেষে তিনি আমাকে পাকা খেজুরের সাথে শসা বা খিরা খাওয়াতে থাকলে আমি তাতে উত্তমরূপে স্বাস্থ্যের অধিকারী হই।”
সুনানে আবু দাউদ – ৩৯০৩
আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,
“নবী (সাঃ) শসা খেজুরের সাথে একত্রে খেতেন।”
সহীহ্ ইবনু মা-জাহ – ৩৩২৫
শসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি, কে; এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম ও কপার। অন্যদিকে খেজুর এ রয়েছে ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুক্টোজ যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি শর্করা। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ও ভিটামিন সি। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এ দুটি খাবার একত্রে খেলে খুব দ্রুতই মেদ-ভুড়িহীন ওজন বৃদ্ধি পায় যা পরীক্ষিত।
এছাড়াও আমল হিসেবে আপনি নিম্নোক্ত এই দোয়াটি পাঠ করতে পারেন:
"ওয়া লাওলা-ফাদলুল্লা হি আলাইকুম ওয়া রাহমাতুহু ওয়া আন্নাল্লা-হা তাওওয়া-বুন হাকীম"
মোটা হওয়ার খাদ্য তালিকা
ওজন বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক খাদ্য তালিকা। আপনি যে পরিমাণ ক্যালরি দৈনিক খাদ্যের মাধ্যমে আপনার শরীরে প্রবেশ করাচ্ছেন এখন থেকে আপনাকে তার চেয়ে কিছুটা বেশি পরিমাণে ক্যালরি প্রতিদিন নিতে হবে। নিচে ওজন বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন কি কি খাবার কেমন পরিমাণে খেতে পারেন তার একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি।
সকালের নাস্তা: প্রথমেই ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি পান করতে হবে। এরপর ১৫-২০ মিনিট যেকোনো হালকা ব্যায়াম বা হাটাহাটি করতে হবে। নাস্তাতে তিনটি রুটি, এক বাটি মিক্স সবজি, এক পিস চিকেন রাখতে পারেন। অথবা আপনি চাইলে রুটির জায়গায় ভাতও খেতে পারেন। পূর্বে আপনি যে পরিমাণ ভাত খেতেন তার চেয়ে এক অথবা দু’মুঠো ভাত বেশি নিবেন।
মিড মর্নিং স্ন্যাকস: দুপুরের স্ন্যাকস টাইমে যেকোনো দুটি সিজনাল ফল, এক গ্লাস দুধ ও এক মুঠো পরিমাণ যেকোনো বাদাম খেয়ে নিবেন। আপনি চাইলে ফল ও দুধ দিয়ে মিল্কশেক তৈরি করেও খেতে পারেন। চাইলে একটি সিদ্ধ ডিমও খেয়ে নিতে পারেন।
দুপুরের খাবার: দুপুরের খাবারে থাকবে ভাত (পূর্বের তুলনায় এক- দু’মুঠো বেশি নিতে হবে), দুই টুকরো মাছ অথবা কয়েক টুকরো যেকোনো মাংস, এক কাপ ঘন ডাল, এক বাটি সবজি।
বিকালের স্ন্যাকস: বিকালের স্ন্যাকসে থাকবে একটি ডিম সিদ্ধ, একমুঠো যেকোনো ধরনের বাদাম, একটি বা দুটি সিজনাল ফল। চাইলে সপ্তাহে তিন চারবার আপনি সিঙ্গারা-সমুচার মতো খাবার গুলোর মধ্যে যেকোনো একটা খেতেই পারেন তবে সেটা অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে। নিয়মিত এগুলো খেতে যাবেন না।
রাতের খাবার: রাতের খাবার দুপুরের খাবারের অনুরুপ থাকবে। তবে রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস গরম দুধে এক চামচ মধু মিশিয়ে খাবেন। রাত ১১টার আগে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।
মোটা হওয়ার ঔষধের নাম
“মোটা হওয়ার ঔষধ” শিরোনামটি দেখে যদি ভেবে থাকেন যে এখানে আমি হয়তো মোটা হওয়ার সহজ উপায় হিসেবে চটজলদি মোটা হওয়ার কিছু ঔষধের নাম সাজেস্ট করবো তাহলে আপনি নিরাশ হবেন।
এমন অনেকেই আছেন যারা মোটা হওয়ার দ্রুততম ও সহজ উপায় খুঁজতে গিয়ে বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত নিজেরাই ঔষধ গ্রহণ করে থাকে। এতে অল্প সময়ের মধ্যে সাময়িক পরিবর্তন দেখা গেলেও পরবর্তীতে ঔষধ ছেড়ে দিলে আপনি পুনরায় আগের জায়গায় ফিরে যাবেন বা এর চেয়েও খারাপ হতে পারে।
আরও পড়ুন
এ ধরনের ঔষধ গ্রহণে রয়েছে অনেক ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
মনে রাখবেন ”যে জিনিস যত দ্রুত সৃষ্টি হয় তা ততটাই দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যায়”। তাই আপনার উচিত প্রাকৃতিক ভাবে খাবারের মাধ্যমে ওজন বৃদ্ধি করা। চাইলে আপনি ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন। তিনি আপনার বয়স ও শরীরের অবস্থা বুঝে আপনাকে সেটি সাজেস্ট করবেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত নিজে নিজে কখনোই ঔষধ খেতে যাবেন না।

ওজন বাড়ানোর ব্যায়াম
কি খুব অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন আমিতো এমনিতেই রোগা, ব্যায়াম করলে তো আরও রোগা হয়ে যাবো! যদি এরকমটা ভেবে থাকেন তাহলে আপনার ভাবনা একদমই ভুল।
হ্যাঁ, তবে ওজন কমাতে যেমন কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম রয়েছে আপনার জন্য তেমন নির্দিষ্ট ব্যায়াম নেই। তবে আপনাকেও ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম শরীরের মেটাবলিজম রেটে সামঞ্জস্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ব্যায়াম বা বিভিন্ন শারীরিক কার্যক্রমের ফলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের চাহিদা তৈরি হবে যা আপনার ওজন বৃদ্ধিকে আরও একধাপ এগিয়ে দিবে।
যদি সম্ভব হয় জিমে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন এক্ষেত্রে আপনার একটি লাভ হবে, ট্রেইনার আপনাকে সঠিক ব্যায়ামের পাশাপাশি আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী একটি খাদ্য তালিকাও তৈরি করে দিবেন। এছাড়া যেহেতু আপনার জন্য নির্দিষ্ট ধরাবাঁধা কোন ব্যায়াম নেই তাই আপনি চাইলে বাড়িতে বিভিন্ন ইয়োগা, প্লাংক ও নরমাল হাঁটাহাঁটির মাধ্যমে এক্সারসাইজ চালিয়ে যেতে পারেন।
প্রয়োজনীয় কিছু প্রশ্নোত্তর
নিচে মোটা হওয়া বা ওজন বৃদ্ধি বিষয়ক কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর সংযোজন করা হলো:
মোটা হওয়ার উদ্দেশ্যে কি কি ভুল করা যাবেনা?
উত্তর: অনেকেই সহজে মোটা হওয়ার উপায় হিসেবে কার্ব ডায়েটকে বেছে নেয় যা একদমই উচিত নয়। অতিরিক্ত কোন কিছুই সুফল বয়ে আনে না। আপনাকে অবশ্যই সুষম খাদ্যের মাধ্যমেই ওজন বাড়াতে হবে। এছাড়া ওজন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত সফট ড্রিংকস, মিষ্টি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া, অতিরিক্ত তেল চর্বি ও মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া ঠিক নয়। এতে আপনার শরীরে ফ্যাট বাড়লেও সেটা আপনার জন্য সুস্থতা বয়ে আনবে এটা বলা যায় না।
আপনার ওজন ঠিক কত হওয়া উচিত?
উত্তর: উচ্চতা অনুযায়ী একজন সুস্থ স্বাভাবিক নারী বা পুরুষের ওজন কেমন হওয়া উচিত সেটি আপনি খুব সহজেই বিএমআই (BMI) ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে বের করতে পারবেন। বিএমআই ১৮ এর নিচে হলে আন্ডারওয়েট এবং ২৫ এর উপরে হলে ওভারওয়েট বিবেচনা করা হয়। নিচে একটি তালিকা দেয়া হলো যেটি দেখেও আপনি আপনার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কেমন হওয়া উচিত তা বুঝতে পারবেন।
এছাড়াও BMI Calculator ব্যবহার করে জেনে নিতে পারেন আপনার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত।
উচ্চতা | পুরুষ (কিলোগ্রাম) | নারী (কিলোগ্রাম) |
---|---|---|
৪ ফুট ৭ ইঞ্চি | ৩৯-৪৯ | ৩৬-৪৬ |
৪ ফুট ৮ ইঞ্চি | ৪১-৫০ | ৩৮-৪৮ |
৪ ফুট ৯ ইঞ্চি | ৪২-৫২ | ৩৯-৫০ |
৪ ফুট ১০ ইঞ্চি | ৪৪-৫৪ | ৪১-৫২ |
৪ ফুট ১১ ইঞ্চি | ৪৫-৫৬ | ৪২-৫৩ |
৫ ফুট | ৪৭-৫৮ | ৪৩-৫৫ |
৫ ফুট ১ ইঞ্চি | ৪৮-৬০ | ৪৫-৫৭ |
৫ ফুট ২ ইঞ্চি | ৫০-৬২ | ৪৬-৫৯ |
৫ ফুট ৩ ইঞ্চি | ৫১-৬৪ | ৪৮-৬১ |
৫ ফুট ৪ ইঞ্চি | ৫৩-৬৬ | ৪৯-৬৩ |
৫ ফুট ৫ ইঞ্চি | ৫৫-৬৮ | ৫১-৬৫ |
৫ ফুট ৬ ইঞ্চি | ৫৬-৭০ | ৫৩-৬৭ |
৫ ফুট ৭ ইঞ্চি | ৫৮-৭২ | ৫৪-৬৯ |
৫ ফুট ৮ ইঞ্চি | ৬০-৭৪ | ৫৬-৭১ |
৫ ফুট ৯ ইঞ্চি | ৬২-৭৬ | ৫৭-৭৩ |
৫ ফুট ১০ ইঞ্চি | ৬৪-৭৯ | ৫৯-৭৫ |
৫ ফুট ১১ ইঞ্চি | ৬৫-৮১ | ৬১-৭৭ |
৬ ফুট | ৬৭-৮৩ | ৬৩-৮০ |
৬ ফুট ১ ইঞ্চি | ৬৯-৮৬ | ৬৫-৮২ |
কি খেলে দ্রুত মোটা হওয়া যায়?
উত্তর: কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো ওজন বাড়াতে খুবই কার্যকরী। যেমন: দুধ, ডিম, ঘি/মাখন, চিজ/পনির, গরু-খাসির মাংস, ফাস্টফুড, সফট ড্রিংকস, মিষ্টি জাতীয় খাবার, চকোলেট, মেয়নিজ ইত্যাদি। এসকল খাবার ফ্যাট সমৃদ্ধ; যা ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ওজন বৃদ্ধির জন্য যেসকল বিষয় জানা খুবই প্রয়োজন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশাকরি পাঠক এতে অবশ্যই উপকৃত হবেন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে সাথে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Very good,,,, Khub shundor likhechen Medam,,,
ধন্যবাদ আপনাকে
অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি আর্টিকেল প্রকাশ করার জন্য। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে অন্যতম এটি উপকারী একটি আর্টিকেল।
আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। এমন উপকারী কন্টেন্ট পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন।
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ গুলোর জন্য অনেক উপকারী একটি আর্টিকেল। ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি আর্টিকেল প্রকাশ করার জন্য।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
আমি প্রতিদিন ৪ বেলা খাই সাথে ১-২টা ডিম।
এভাবে চললে কি ওজন বাড়বে?
একইসাথে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুমান।
আর হ্যাঁ, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার ও দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকুন।
আশাকরি এভাবে চললে আপনার ওজন বাড়বে ইনশা আল্লাহ।