কীভাবে আজীবন সুস্থ থাকা যায়? (Complete Health Guidelines)

সুস্থ থাকার উপায়
সারাংশ: আমরা অনেকেই জানি না সামান্য কিছু নিয়ম মানার মাধ্যমেই আমরা সুস্থ থাকতে পারি। আমরা সুস্থ থাকার প্রক্রিয়াটাকে অনেক ঝামেলার মনে করি। তাই খুব সহজে দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাস পাল্টানোর মাধ্যমে কীভাবে সুস্থ থাকা যায় তা নিয়ে আজ আলোচনা করব। সুস্থ থাকার জন্য পুরো কন্টেন্টটি মন দিয়ে পড়ুন।

সূচিপত্র

সুস্থ থাকা মানে শরীর সুস্থ স্বাভাবিক থাকা। মোটা হওয়া মানে যেমন সুস্থ থাকা না, ঠিক তেমনই অতিরিক্ত কম ওজনও সুস্থতার লক্ষ্মণ না। কথাই আছে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে সুখী হওয়া সম্ভব না। যখন আপনি সুস্থ থাকবেন তখন আপনার মনটাও থাকবে ফুরফুরে। কাজেও তখন মন বসবে বা কাজ করতে ভালো লাগবে। তাই একটু কষ্ট হলেও আপনার স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে হবে। এটা আপনার সুস্থতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কথায় আছে, “প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ উত্তম।” তাই অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে। 

আজীবন সুস্থ থাকার উপায়

যাহোক, সুস্থ থাকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিশ্চয়ই এতক্ষণে আপনাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। এখন আসি কীভাবে সুস্থ থাকা যায় (How to be healthy) সে বিষয়ে। সুস্থ থাকার জন্য খুব বেশি কষ্ট করতে হবে—তেমন না। সুস্থ থাকার জন্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাসের পরিবর্তনই যথেষ্ট। সে অভ্যাসগুলো নিয়েই আজকে বিস্তারিত বলতে যাচ্ছি।

১. খাদ্যাভ্যাস

সুস্থ থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন। 

  • পর্যাপ্ত পানি পান করা
  • সকালের নাস্তা করা
  • ঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ 
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ 
  • মৌসুমি ফল খাওয়া 
  • ডাক্তারের পরামর্শে ডায়েট চার্ট তৈরি করা

পর্যাপ্ত পানি পান করা

মানুষের দেহে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগই পানি। পানির অপর নাম জীবন। সুস্থ থাকার জন্য বিশুদ্ধ পানি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পানির উপকারিতার শেষ নেই। পানির কিছু সাধারণ উপকারিতা হলো:

  • পানি আমাদের মাথা ব্যাথা ও বদহজম থেকে রক্ষা করে।
  • পানি হজমশক্তি বাড়ায়।
  • বিশুদ্ধ পানি শরীরের বাড়তি ওজন বা মেদ কমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বক সুস্থ রাখে।
  • শরীরকে হাইড্রেড রাখতে সাহায্য করে।

পানি পানের অনেক উপকারিতা থাকার কারণে সুস্থতার জন্য পানি পান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে খালি পেটে পানি পান করা  ছাড়াও সুস্থ থাকার প্রয়োজনে দিনে কম হলেও ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। তবে খাবার খাওয়ার মাঝে পানি পান না করাই উত্তম। এতে হজম ক্রিয়ায় বাঁধা সৃষ্টি হয় না।

সকালের নাস্তা করা

আমাদের দিন শুরু হয় সকালের নাস্তা করার মাধ্যমে। তাছাড়া সারারাত আমাদের দেহ বিশ্রাম নেওয়ার পর আমরা সকালে নাস্তা গ্রহণ করি। তাই সকালের নাস্তাটা আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

সকালের নাস্তার জন্য সবচেয়ে ভালো হয় মৌসুমি ফল খাওয়া। তাছাড়া আপেল, কমলা, আঙ্গুর, কলা ইত্যাদিও খাওয়া যায়, সাথে এক গ্লাস দুধ, দুটি ডিম আর তিনটা খেজুর। দুধে আছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ওমেগা থ্রি, ওমেগা সিক্সসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ডিমে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট, জিংক, ফরফরাস, ফ্যাট, পটাশিয়াম। খেজুরে থাকে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, কোলেস্টেরল। এখানে প্রত্যেকটি উপাদানই শরীরের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

দিনে ঠিকমতো খাওয়া 

সারাদিন ভালো করে খাবার খাওয়া আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি খাবারই না খাই তাহলে আমাদের শরীরে পুষ্টি আসবে কোথা থেকে? খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে “খাদ্য মিরামিড” আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কোন খাবার কতটুকু খেতে হবে।  

তবে এখানে ভালোকরে খাওয়া বলতে পেট খুব বেশি ভরে খাওয়ার কথাও বলা হয়নি। অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য ভালো না। খাবার আস্তে ধীরে খেতে হয়। আর আমাদের পেট ভরে গেছে এটা আমাদের মস্তিষ্ক ২০ মিনিট পর অনুভূতির  নির্দেশনা পাঠায়। তাই পেট ভরে গেছে এমন অনুভব হওয়ার আগেই খাবার খাওয়া থামিয়ে দেওয়া উচিত।

মৌসুমি ফল খান

সুস্থ থাকার জন্য মৌসুমি ফল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মৌসুমি ফল ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হার শক্ত করতে সাহায্য করে। মৌসুমি ফল আম হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম। কারণ এতে আছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম যা হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়াও মৌসুমি ফল হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই উপকারী।

ডাক্তারের পরামর্শে ডায়েট চার্ট তৈরি করুন 

ডায়েট চার্ট অনুযায়ী খাবার খাওয়া সুস্থ থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে সেই খাদ্য তালিকা বা ডায়েট চার্টটা হতে হবে আপনার চাহিদা অনুযায়ী। তাই এ বিষয়ে আপনার একজন ভালো ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। 

২. ব্যায়াম

সুস্থ থাকার জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ব্যায়াম করাও জরুরি। ব্যায়াম হৃদরোগ, মানসিক অবসন্নতা ও দূর্বলতা ইত্যাদি দূর করে। যৌন জীবনের জড়তা কাটাতে ব্যায়াম অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া শরীরের সঠিক অনুপাত বজায় রাখতেও ব্যায়ামের গুরুত্ব অনেক। তাই সুস্থ থাকতে হলে ব্যায়াম করতে হবে।

৩. সঠিক ঘুম নিশ্চিত করুন 

সুস্থ থাকার জন্য ঘুমের গুরুত্ব নতুন করে বোঝার কিছু নাই। সুস্থ থাকতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম অপরিহার্য। ঘুমানো অবস্থায় আমাদের মস্তিষ্ক বিশ্রাম নেয়। হার্ভার্ড মেডিকেলের এক গবেষণায় পাওয়া গেছে, যারা দৈনিক ৫ ঘন্টা ঘুমায় তাদের মৃত্যু ঝুঁকি ১৫ ভাগ বেড়ে যায়। অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে আমাদের দেহে কর্টিসল নামক হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমানোর ফলে শরীরে অনেক ক্ষতি হয়। যেমন- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, মানসিক অবসন্নতা দেখা দেয়, চেহারা নষ্ট হয়ে যায় ইত্যাদি। 

প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুমাতে যাওয়া আর তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা হলো ঘুমানোর প্রাথমিক নিয়ম। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে রাতে। তাছাড়া অতিরিক্ত ক্লান্তি দূর করার জন্য দিনে ১ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। তবে এটা বলে রাখা প্রয়োজন যে অতিরিক্ত ঘুমও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। 

৪. শারীরিক পরিশ্রম করা

সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে শারীরিক পরিশ্রম ব্যায়ামের মতই কার্যকরী। কারণ এতে আপনার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ সরাসরি ব্যায়ামে অংশ নেয়। অলস শরীরে রোগ বাসা বাঁধে। শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে বয়স অনুযায়ী। কম বয়সী শিশুকে দিয়ে শারীরিক পরিশ্রম করানো উচিত নয়। তবে তাদের খেলাধূলা করতে দেওয়া উচিত। প্রাপ্ত বয়স্কদের তাদের দেহের অনুপাত অনুযায়ী কম বেশি শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত।

৫. মানসিকভাবে চিন্তা মুক্ত থাকা

শরীরের রোগ বুঝা গেলেও মানসিক চিন্তাটাকে বাইরে থেকে বুঝা যায় না। তাই আমরা কখনোই মানসিক রোগের চিকিৎসার কথা ভাবি না। তবে এই মানসিক চিন্তা হতে পারে আপনার সুস্থ থাকার সবচেয়ে বড় বাঁধা। মানসিক চিন্তা অথবা ডিপ্রেশন যাই বলেন না কেন—দুটোই আমাদের স্বাস্থ্যের উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। মানসিক চিন্তায় থাকলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না। খাওয়া-দাওয়া, কাজ করা বা স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া কোনো কিছুতেই মন বসে না। এতে আমরা আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে হেলে পড়ি। 

২০১৫ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগে যা তাদের স্বাস্থ্যের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে। তাই সুস্থ থাকার জন্য মানসিক ভাবে চিন্তামুক্ত থাকা জরুরি। সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। জীবন নিয়ে হতাশ না হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

৬. ধূমপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন বন্ধ করতে হবে

তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটা একটা চিরন্তন বাস্তব কথা—যেটা সবাই জানি। তবে যারা তামাক বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে তারা এটা ছাড়তে রাজি নন। তবে সুস্থ থাকতে হলে একটু কষ্ট হলেও ধুমপান বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া অন্য যেকোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।

তামাক সেবনে ফুসফুসের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি মানসিক রোগেরও সৃষ্টি হয় এই তামাক সেবন থেকেই। তাছাড়াও আরো অনেক ক্ষতিকর দিক আছে তামাক সেবনের। তাই সুস্থ থাকতে হলে এই তামাক না নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। 

৭. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। সেই সাথে সুস্থ্য থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অপরিচ্ছন্ন দেহ রোগের আবাসস্থল। অপরিষ্কার দেহে বিভিন্ন জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই প্রবেশ করে মানবদেহকে রোগাক্রান্ত করতে সক্ষম। তাছাড়া বাড়িঘর, বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার না থাকলেও অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা সুস্থতার জন্য জরুরী। 

৮. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা

বেশি ওজন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ওজন বাড়ার ফলে শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে নারীদের হতে পারে ব্রেস্ট ক্যানসার। তাছাড়া হতে পারে হৃদরোগের মতো আরো অনেক রোগ। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। আর প্রতি মাসে একবার করে মেডিকেল চেক-আপ করানো উচিত।

সুস্থ থাকার দোয়া

সুস্থ থাকার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারি, যেন মহান আল্লাহ আমাদের সব অসুস্থতা দূর করে সুস্থতা দান করেন। এক্ষেত্রে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) একটা দোয়া পড়তেন। তা হলো: 

اَللَّهُمَّ عَافِنِىْ فِىْ بَدَنِى – اَللَّهُمَّ عَافِنِىْ فِىْ سَمْعِىْ – اَللَّهُمَّ عَافِنىِ فِىْ بَصَرِىْ – لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি সাম-ই, আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি বাসারি, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ! সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণেন্দ্রিয়ে। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নাই।

শেষ কথা

সুস্থ থাকাও একটি ইবাদত। ভালোভাবে বাঁচতে হলে সুস্থ থাকা জরুরি। তাই সুস্থ থাকতে এই নিবন্ধে উল্লিখিত নিয়ম কানুনগুলো মেনে চলুন।

Share
Tweet
Share
Pin
Share
Share
Tweet
Pin
Share
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
ঘরে বসে এর IELTS প্রস্তুতি
Tanny Rani Das

IELTS প্রস্তুতি সম্পর্কে আদ্যোপান্ত জানুন | ঘরে বসে IELTS এর প্রস্তুতি

উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন যখন আপনাকে হাতছানি দেয়, তখন আপনার জীবনের সাথে জড়িয়ে যাবে IELTS (আইইএলটিএস) নামক শব্দটি। বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য যারা

এই নিবন্ধে কোনো তথ্যসূত্র সংযোজন করা হয়নি।
লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
social media
অন্যদের সাথে শেয়ার করুন
Post
Tweet
Pin
Email
Happy
আপনি উপকৃত হওয়ায় আমরা খুশি হয়েছি।

নিবন্ধটি থেকে আপনি কেমন উপকৃত হয়েছেন তা আমাদের জানাতে ভুলবেন না যেন।

Sad
দুঃখিত কী সমস্যা?

পরবর্তী নিবন্ধটি আরও ভালো করতে আপনার সমস্যাটি অনুগ্রহ করে আমাদের জানান।

নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন

স্টাডিকরো’র গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ই-মেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন।

আপনার প্রাইভেসি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ

Report about this product

Let us know if you notice any incorrect information about this product. Also, please let us know if the given PDF file is banned for sharing; we will remove it as soon as possible. 

User Profile Picture

YourName