প্রবাসী: শৃঙ্খলিত জীবনের করুণ উপাখ্যান

June 3

4 min read

প্রবাসীদের করণীয়

প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদেরই একটি স্বপ্ন থাকে, মা বাবা ভাই বোনকে নিয়ে সুন্দর একটি সোনার সংসারের। আর সেই সংসার গড়তেই সে পাড়ি দেয় ধূধূ বালুচরের দেশ মধ্যপ্রাচ্যে! অথচ এই প্রবাস জীবন কখনোই সবার জন্য সমান হয় না। তাই আমরা দেখতে পাই হাজার হাজার তরুণ তরজা যুবককে, যারা বুক ভরা স্বপ্ন দেখে কঠিন ইস্পাত শিকল মনোবলে প্রবাসে পাড়ি দিলেও দিন শেষে শূন্য হাতেই হয় তাদের বাড়ি ফেরা।

কেন এমন হয়? যারা প্রেয়সীর কোমল হাত ছেড়ে তপ্ত মরুভূমিকে করে আলিঙ্গন, কেন তাদের জীবনে নেমে আসে তিমির রাত্রির যাবতীয় অন্ধকার? আজ আমরা জানব প্রবাসীদের সেই সব কষ্টের স্মৃতি যা তারা যুগের পর যুগ আলিঙ্গন করে আছে। জানব কী তাদের ভুল? কী করা তাদের উচিত ছিলো না আর কী তাদের করা উচিত। একইসাথে জানব আমরা যারা নতুন প্রবাসে যেতে ইচ্ছুক, তাদের করণীয় কী। 

প্রবাসী কথন

যারা শুধুমাত্র পরিবারের দিকে তাকিয়ে থেকে হাজারো বঞ্চনা গঞ্জনা চোখ বুজে সহ্য করে। অসহ্য কষ্ট স্বীকার করে তপ্ত মরুর বালুকাময় ভূমিতে গড়ে সবুজের সমারোহ। যারা নিজেদের সোনালী সময় ব্যয় করে গড়ে বিদেশীদের অর্থনীতি। তারাই হচ্ছে আমাদের চির নিগৃহীত প্রবাসী।

যারা নিরন্তর ছুটে চলে বিষাদময় জীবন নৌকা নিয়ে মরুর বুকে। স্বপ্ন দেখে মরিচিকার মতো কত কিছুই। এভাবেই একদিন একটু একটু করে আষাঢ়ের মেঘ কেটে দেখা দেয় সোনালী রঙিন আলো। তখন তারা আর পিছনে ফেলে আসা শত কোটি কষ্টের কোনো হিসাব রাখে না।

প্রবাসীদের রক্তে মাংস ও ঘামে যে অর্থ আমাদের দেশে আসে, সেই অর্থ দিয়েই আমরা করছি বিলাসী জীবনযাপন। তাদের রেমিটেন্সের টাকায় তারা নিজেরা যতটুকু সুখ স্বাচ্ছন্দ্য কিনতে পারছে, তার চেয়ে  আমরা উচ্চবিত্তরা ঢের বেশী উপকৃত হচ্ছি। আর তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে নিজেরা ফুর্তি করে চললেও, তাদের নাম দিয়েছি আমরা “কামলা।” যা কখনোই তারা আশা করে না এবং যা কখনোই তাদের জন্য শোভা পায় না।

অথচ তাদের অপরিকল্পিতভাবে অদক্ষ শ্রমিক হয়ে বিদেশ গমন, না জেনে শুনে দালালকে নিজের সহায় সম্বল তুলে দেওয়া, কঠিন পরিশ্রমের অর্থ নিজে সঞ্চয় না করে যাবতীয় অর্থ পরিবারের পেছনে খরচ করা। এমনকি বিয়ে করে সুন্দরী বউয়ের মেহেদী শুকানোর আগেই বিদেশে ফিরে যাওয়া। ইত্যাদি নানান কঠিন নির্মমতার কাহিনী যা তাদের বর্তমান অধঃপতনের মূল কারণ। আসুন আমরা প্রবাসীর গহীন হৃদয়ে প্রবেশ করি।

বুক ভরা স্বপ্ন যাত্রায় যেখানে বিপত্তি 

ছোট ছোট ভাইবোনের সুখের দেখা দিতে, বৃদ্ধ বাবা মায়ের ক্লান্তি দূর করতে, পরিবারের ভালো ছেলেটি পাড়ি দেয় কঠিন প্রবাসে। এই যাত্রা যেন যাত্রা নয় যেন মরণ যাত্রা। কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের প্রবাসীরা ভিসা কিনে দালাল থেকে। যা সবসময় ভালো হয় না। ফলে এই দালাল চক্রের চক্রান্তে অধিকাংশের বেশী প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্যে মানেবতর জীবনযাপন করে।

এই দালালরা অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত প্রবাসীদের নানান ভাবে ধোঁকা দেয়। বিশেষ করে এক কাজ এবং বেতনের কথা বলে অন্য কাজ এবং নিম্ন বেতনের চাকরি ধরিয়ে দেয়। যা কখনোই একজন প্রবাসীর দেওয়া টাকার সাথে সামঞ্জস্য নয়। ফলে বেশী টাকা দালালকে দিয়ে কম টাকার চাকরি করতে অনেকেই বাধ্য হয়। শুধু তাই নয় অনেকেই বিদেশী আরবাব বা মালিক থেকে ফ্রীতে ভিসা নিলেও সেই ফ্রীতে পাওয়া ভিসা দেশে বেশী টাকা দিয়ে বিক্রি করে। আর যখন কেউ সেই ভিসায় কাজ করতে যায়, তখন তাকে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়।

কেননা তাকে তার মালিক ফ্রীতে নিয়ে এসেছে তাই তার কাজের সময় নির্ধারণ হয় বেশী কিন্তু বেতন দেয় কম। অথচ যে ব্যক্তি দেশ থেকে সেখানে গেল সে জানে তার বেতন হবে বেশী, ডিউটি হবে কম। আর সেখানে গিয়ে বুঝতে পারে সে প্রতারণার স্বীকার হয়েছে। আর এভাবে কাজ করলে কখনোই সে, যে টাকা দিয়ে বিদেশে এসেছে সেই টাকা পরিশোধ হবেনা। তাই তখন তার হাতে অন্যায় পথ ছাড়া ন্যায় কোনো পথ খোলা থাকে না।

অর্থাৎ হয় তাকে কষ্ট সহ্য করে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হবে যা কখনোই সম্ভব হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। নয় তাকে সেই মালিক থেকে পালিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও কাজ নিতে হবে। আর সে যদি তার মালিক থেকে পালিয়ে যায়, তাহলে সে সেই দেশে একজন অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত হতে হবে। আর এভাবেই হাজার হাজার বাংলার যুবক না জেনে না বুঝে কোনো কারণ ছাড়াই সেই দেশে অপরাধী হয়ে জেলে ধরা পড়ে।

যাদের ভাগ্য ভালো হয় তারা অন্য কোথাও ভালো কাজ করে টাকা পয়সা ইনকাম করে দেশের ধারদেনা পরিশোধ করতে পারে। আর যাদের ভাগ্য খারাপ হয়, তারা অন্য কোথাও কাজ করার আগেই ধরা খেয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসে। আর এভাবেই একটি সুন্দর স্বপ্ন নিষ্ঠুরতার স্বীকার হয়। 

নিজের কারণে নিজে যখন দোষী 

আমরা বিভিন্ন মিডিয়াতে অহরহই দেখি যে, শত শত প্রবাসী পুরো জীবন তার সংসারের পেছনে খরচ করলেও, দিন শেষে দেশে তার পাশে কেউ নেই। যে যুবক মরিচিকার পেছনে ছুটে চলে ঠিকমতো বিয়ে সংসার সন্তানের মুখ দেখতে পারেনি। সেই যুবক যখন পড়তি বয়সে দেশে ফিরে আসে তখন তার আশেপাশে তারা নেই। যারা প্রতিনিয়ত ফোনে এটা ওটা বলে তার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছিল। সেই মা বাবা পর্যন্ত সন্তানকে চিনতে পারে না, যার পরিশ্রমে তারা কংক্রিটের ছাদের নিচে থাকে।

সেই ভাই বোনও তাকে চিনে না যাদের আবদার পূরণ করতে কৈশোরের ছেলেবেলা শেষ করে রঙিন যৌবনকে চেনার আগেই পাড়ি দিয়েছিল প্রবাসে। অথচ তার টাকায় হয় বোনদের বিয়ে ভাইদের বাইকের শখ পূরণ। এমনকি নিজের টাকায় ভাইদের চাকরি দিলেও তারা তখন সরে পড়ে যখন সে হয়ে যায় অসহায়। আর এর মূলে রয়েছে সেইসব প্রবাসীদের গাফিলতি।

তারা যদি সচেতন হয়ে চলত তাহলে এইসব প্রবাসীদের দিন শেষে কষ্টের স্বীকার করতে হতো না। প্রত্যেকের উচিত অবশ্যই পরিবারের দায়িত্ব পালন করা। তবে তা কখনোই নিজেকে ঠকিয়ে নয়। নিজের জন্য নূন্যতম অর্থ সম্পদ না রেখে সব পরিবারের পিছনে খরচ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বোকামি।

আমরা এমন হাজারো চিত্র দেখতে পাই, যেখানে প্রবাসী ভাই কংক্রিটের ঘরদোর বাঁধলেও সেই বাড়িতে ঠাঁই হয় না তার। প্রবাস জীবন শেষে তাকে শুরু করতে হয় আবার নতুন জীবন। যা কখনোই বয়সের ভারে ন্যুব্জ হওয়া প্রবাসীর শোভা পায় না। তাই প্রবাসীদের উচিত পরিবারকে দেখার পাশাপাশি নিজের জন্য কিছু করা। কেননা প্রবাসের চাকরি যতদিন শক্তি আছে ততদিন। তাই সামর্থ্য থাকতেই নিজের জন্য কিছু করা কখনোই দূষণীয় কিছু নয়। 

এছাড়াও আমাদের সিংহভাগ বিবাহিত প্রবাসীরা যে ভুলটা করেন তা হচ্ছে, তাদের যাবতীয় ইনকামসহ সহায় সম্পত্তি স্ত্রীদের নামে দিয়ে দেওয়া। এটা করারও যথেষ্ট কারণ থাকে। যখন একজন স্বামী তার স্ত্রীকে সময় দিতে পারে না। তখন স্বাভাবিকভাবেই তার অপরাধ বা অপারগতা ঢাকার জন্য স্ত্রীকে মেনে নিতে হয়। এই মেনে নিতে গিয়ে তারা নিজের জন্য কিছুই রাখে না। ফলে একসময় তারা যখন একেবারে দেশে ফিরে আসে, তখন তারা স্ত্রীসহ সন্তানদেরও চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ায়।

কেননা স্ত্রী সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে তারা তাদের জীবনের মূল্যবান সময় দিয়ে দিলেও, সন্তানদের সঠিক ভাবে মানুষ করার জন্য তারা তেমন সময় দিতে পারে না। তাই অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রবাসীদের সন্তানরা তাদের বাবা মাকে তেমন সমীহ করে না বা তারা জীবনে তেমন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। যার মূল কারণ হচ্ছে প্রবাসী বাবার সন্তানদের সময় না দেওয়া। 

শুধু স্ত্রী সন্তানের গঞ্জনা নয়, বর্তমান সময়ে প্রবাসীদের গলার কাঁটা হচ্ছে পরকীয়া। অধিকাংশ প্রবাসীর ঘরে আজ অশান্তি হওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে স্ত্রীদের পরকীয়া। বিদেশে গিয়ে সময়মতো দেশে আসতে না পারা, বেশী বয়সের স্বামী হওয়া কিংবা স্ত্রীর আগের প্রেমিক থাকার কারণে অধিকাংশ প্রবাসীর স্ত্রীরা পরকীয়ায় জড়িত হয়। একারণে পর্যাপ্ত টাকা পয়সা দিলেও ঘরে শান্তির দেখা থাকে না।

যার একপর্যায়ে অন্য ছেলের হাত ধরে স্ত্রীর পলায়ন কিংবা সবকিছু ঠিক থাকলেও কাকের বাসায় কোকিলের বাসের মতো চলে সংসার।  যার পরিণতি কখনোই ভালো হয় না। প্রবাসীদের এইসব দুর্গতির একমাত্র কারণ তারা নিজেরাই। 

পরিবার সমাজ সংসার ছাড়াও প্রবাসীরা দেশের বাইরেও প্রচুর ভুল করে। যা তাদের প্রবাস জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। বিশেষ করে পড়াশোনা ছাড়া বিদেশে যাওয়া। অদক্ষ শ্রমিক হয়ে বিদেশে যাওয়ার কারণে সেখানে অধিকাংশ প্রবাসীই তাদের পরিশ্রমের আশানুরূপ টাকা পায় না। যে কারণে বছরের পর বছর কষ্ট করে গেলেও সুখের সোনার হরিণের দেখা তারা কখনো পায় না। 

এই ছাড়াও অধিকাংশ প্রবাসী বিদেশে এসে টাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে পতিতাবৃত্তি, জুয়া, মাদক, চোরাকারবারিসহ নানান ঘৃণিত অপরাধ। যা আমাদের দেশের ভাবমূর্তির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। প্রবাসীদের নানান অপরাধের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীদের ভিসা পর্যন্ত আজ বন্ধ হয়ে আছে। 

উপরোক্ত এইসব কারণে প্রবাসীরা নিজেদের কারণে নিজেরাই আজ দুঃখ দুর্দশায় পতিত। তাই আমরা যারা প্রবাসী আছি তাদের উচিত হবে অবশ্যই এইসব ব্যাপার মাথায় রেখে তবেই প্রবাস জীবনযাপন করা। 

প্রবাসীদের করণীয়

প্রবাসীদের দুর্দশার জন্য অন্যরা যতটুকু না দায়ী, তার চেয়ে বেশী দায়ী তারা নিজেরাই। এই কারণে আমরা যারা প্রবাসী আছি তাদের উচিত হবে নিজেদের ব্যাপরে সতর্কতা অবলম্বন করা। আশাকরি আমরা যদি সতর্ক হই তাহলে আমাদের দুর্গতি সমূহ কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারব।

ভিসা আবেদনে জালিয়াতি

আমরা যারা ভিসা কিনে বিদেশে যেতে চাই, তাদের উচিত হবে অবশ্যই ভিসা যাচাই বাছাই করে তবেই ভিসা ক্রয় করা। বর্তমান ডিজিটাল যুগে সবকিছুই অনলাইনে পাওয়া যায়। তাই কেউ যদি কোম্পানির কথা বলে ভিসা দিতে চায়, তাহলে সেই কোম্পানি সম্পর্কে অবশ্যই অনলাইনে সবকিছু বিস্তারিত পাওয়া যাবে।

এছাড়াও আমাদের প্রবাসীরা যে সমস্যায় বেশী পড়ে, সেটা হচ্ছে এক কাজের কথা বলে অন্য কাজ দেওয়া। বিশেষ করে লেবার কোম্পানির ভিসা নিয়ে সমস্যা হয় বেশী। কেননা লেবার কোম্পানি গুলোর কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট কাজ থাকে না। তারা যখন যে কাজের যে জায়গায় কন্ট্রাক্ট পায় তখন সেই জায়গায় সেই কাজ করে।

ফলে যারা ক্লিনার বা সিকিউরিটি ভিসা নিয়ে বিদেশ যায় তারা প্রতারণার শিকার হয় বেশী। কেননা তাদের বলা হয় হাসপাতালে কিংবা স্কুলের চাকরি। দৈনিক আট ঘন্টা ডিউটি থাকা ফ্রী খাওয়া নিজের ইত্যাদি। তখন তারা মনে করে বোধহয় আমার চাকরি বোধহয় আজীবন হাসপাতাল কিংবা স্কুলে। সুতরাং কোনো সমস্যা নেই।

কিন্তু বাস্তব কথা হলো, এইসব চাকরি কখনোই এক জায়গায় স্থায়ী নয়। অর্থাৎ কোম্পানি গুলোর সাথে যতদিন হাসপাতাল, স্কুল কিংবা মার্কেট ইত্যাদির চুক্তি থাকে, ততদিন পর্যন্ত ঐ লেবার কোম্পানি গুলো সেখানে লোক সাপ্লাই দিয়ে থাকে। যখন চুক্তি শেষ হবে, তখন ঐ লোক গুলোর অন্য জায়গায় ডিউটি করতে হবে।

এক্ষেত্রে আজ হাসপাতালে করলেও কাল রাস্তার ধারেও কিংবা খোলা মাঠেও ডিউটি পড়তে পারে। যা ভিসা দেওয়ার আগে কেউ  বলে না। ফলে কিছুদিন চাকরি করার পর কিংবা যাওয়ার সাথে সাথেই যখন প্রচন্ড রোদে কাজ করতে হয়, তখন আমাদের দেশের প্রবাসী ভাইদের কষ্টের সীমা থাকে না। অথচ প্রতারকরা স্কুল এবং হাসপাতালের কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। 

শুধু তাই নয় এইসব চাকরিতে বেতনও খুবই কম। যা চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে কেউ জানে না। ফলে এইসব ভিসায় আড়াই থেকে  তিন লাখেরও উপর খরচ গেলেও বেতন আসে মাত্র ১৮ থেকে ২০ হাজার। তাও খেয়েদেয়ে বাড়িতে পাঠানোর জন্য আট দশ হাজারো থাকে না। ফলে প্রবাসী সীমাহীন  কষ্টে পড়ে যান।

তাই উচিত হবে অবশ্যই সবকিছু জেনেশুনে এবং যারা বিদেশে আছেন, এমন কারো সাথে যোগাযোগ করে তবেই এইসব কোম্পানি ভিসায় বিদেশ আসা। এছাড়াও যারা বাঙ্গালিদের নিজস্ব দোকানে কাজ করতে আসেন। তাদের সমস্যা হয় বেতন নিয়ে। অর্থাৎ এই দেশে মালিক বেশী টাকা ইনকাম করলেও তাকে দিচ্ছে কম। এই জাতীয় সমস্যাও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়। 

তাই আমরা যারা আত্মীয়স্বজনের দোকানে বা তাদের তত্বাবধানে বিদেশে যাব, তাদের উচিত হবে দেশে থাকতেই সবকিছু ফয়সালা করা। যাতে সেখানে গিয়ে কথা কাটাকাটি না হয়। আর আমাদের প্রবাসী ভাইরের চিন্তা করতে হবে, আমার বেতন আমার জন্য ঠিক আছে কিনা। আমার মালিক আমাকে দিয়ে কত লাভ করছে, সেটা যেন আমরা কখনোই না দেখি। যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের টাকার মান বেশী। তাই আমাদের মনে হতে পারে মালিকরা বোধহয় আমাকে ঠকাচ্ছে! সুতরাং এই জাতীয় চিন্তা করা যাবে না।

আমাদের অশিক্ষিত অল্প শিক্ষিত ভাইয়েরা বেশী কষ্ট পড়ে যায় বাগানের ভিসা গুলোতে। এইসব ভিসা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ফ্রী তে দেওয়া হয়। অর্থাৎ শুধু প্লেন ভাড়া দিয়েই এইসব কাজের জন্য যাওয়া যায়। ফলে বাগানের মালিকরা এইসব কাজে বেতন দেয় কম। অথচ আমাদের দেশের কিছু অমানুষ প্রবাসী দালাল রয়েছে। যারা এই বিনা মূল্যের ভিসা গুলোও টাকা দিয়ে আমাদের দেশে বিক্রি করে।

ফলে এইসব ভিসায় যারা আসে তাদের অধিকাংশই সবচেয়ে বেশী কষ্টে পড়ে যায়। কারণ প্রচন্ড গরমে বাগানের কাজ হচ্ছে সবচেয়ে কষ্টকর। তাছাড়া এইসব বাগান বা খামারবাড়ি গুলো থাকে ধূধূ মরুভূমিতে। ফলে লোকালয়ের দেখাসাক্ষাৎ তেমন পাওয়া যায় না। যেকারণে কষ্টের সাথে মনক্ষুন্ন থাকেও বেশী। এইসবের জন্য যারা এই জাতীয় বাগানে কাজ করে, তারা বেশিদিন এই কাজ করতে পারেনা বা চায় না। তখন তাদের সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। আর এভাবেই আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্যে অপরাধীতে পরিনত হয়।

এইসব পালিয়ে যাওয়া প্রবাসীরাই পরবর্তীতে নানান ধরনের অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে বাধ্য হয়ে জড়িয়ে পড়ে। আর এভাবেই আমরা প্রবাসীরা নিজেরা না চাইলেও অপরাধী হয়ে যায়। কেননা পালিয়ে যাওয়া কোনো কর্মীকে কেউই চাকরি দেয় না। তখন তাদের পেট চালাতে এবং দেশের ধারদেনা দিতে বাধ্য হয়ে অপরাধ জগতে পা বাড়াতে হয়।

অপরাধ থেকে বেঁচে থাকা

আমাদের প্রবাসীদের উচিত হবে, শত কষ্টের মাঝেও সৎ থেকে অপরাধ থেকে মুক্ত থাকা। কেননা একজনের অপরাধের কারণে আমরা পুরো জাতিই আজ অপরাধী হিসাবে স্বীকৃত হচ্ছি। তাই পতিতাবৃত্তি, মাদক চোরাচালান ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। একইসাথে আমাদের বাঙ্গালিদের একটা খারাপ অভ্যাস হচ্ছে, আমরা যেখানেই যাই সেখানেই নিজেদের রাজ্য বানিয়ে ফেলি। অর্থাৎ আমাদের প্রবাসী ভাইদের একটি অংশ রয়েছে, যারা বিদেশেও তাদের আইন বহির্ভূত রাস্তাঘাটে উম্মুক্ত ব্যবসা বাণিজ্য করে। যা কখনোই শোভনীয় এবং আইনসম্মত নয়। এইসব কারণেও আমাদের ভাবমূর্তি যথেষ্ট নষ্ট হচ্ছে।

শুধু তাইনয় আমাদের প্রবাসীদের একটি অংশ রয়েছে, যাদের লোভ থাকে সীমাহীন। এই লোভের কারণে তারা এমন সব অপরাধ করে, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের বাংলাদেশীদের অন্যান্য দেশের মানুষেরা আগে যথেষ্ট বিশ্বাস করত। আর আমাদের কিছু লোভী ভাইয়েরা সেই বিশ্বাসের তালা ভেঙ্গে সবকিছু নিয়ে দেশে পালিয়ে আসে। যা কখনোই উচিত নয়। এই কারণে এইসব মালিকরা পরবর্তীতে আর বাংলাদেশীরের চাকরিতে রাখে না। যা খুবই লজ্জ্বাজনক।

নিজের জন্য ভাবুন

অবশ্যই প্রতিটি প্রবাসীকে তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। তবে তার মানে এই নয় যে, নিজের সবকিছু উজাড় করে শুধু পরিবারকে সবকিছু দিয়ে দিব। তাই প্রতিটি প্রবাসীর উচিত সবকিছু হক ভাবে চিন্তা করা। যাতে সে নিজেকে না ঠকাই। কেননা অধিকাংশ প্রবাসীই দেখা যায় ভাই বোন মা বাবার পেছনে খরচ করতে করতে তাদের নিজের জন্যও কিছু করতে পারে না।

এমনকি বিয়ে শাদীও সময়মতো হয়ে উঠে না। ফলে বুড়ো বয়সে বিয়ে করতে গেলে উপযুক্ত পাত্রী পাওয়া যায় না। আবার পাত্রী পাওয়া গেলেও বুড়ো স্বামীর কারণে অনেকে ঠিকমতো সংসার করে না। আবার সংসার করলেও পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে যায়। যেকারণে তাদের জীবনটাই হয়ে উঠে দুর্বিষহ। সুতরাং প্রবাসীদের উচিত হবে, অবশ্যই নিজেকে নিয়ে ভাবা এবং সময় দেওয়া ও সঠিক সময়ে বিয়ে সংসার করা এবং স্ত্রীকে সময় দেওয়া। তাহলেই তাদের জীবন সার্থক হবে।

বিয়েতে সাবধানতা অবলম্বন

এটা আজ দিনের আলোর মতোই পরিস্কার যে প্রবাসী স্বামীরা কত কষ্টের মুখোমুখি। হাজারো উদাহরন দৃষ্টান্ত আজ সমাজের আনাচকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। প্রবাসের বুকে যারা বিয়ে করে চলে এসেছে, কিন্তু সময়মতো দেশে যেতে না পারায় স্ত্রী অন্যের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হচ্ছে না এমন উদাহরন খুব কম। প্রবাসীদের অনেকে সুন্দর দেখেই বিয়ে করার জন্য উঠেপরে লেগে যান। এটা শুনতে খারাপ লাগলেও সত্য যে, সুন্দরী মেয়েরা কখনোই খালি থাকে না। অর্থাৎ কারো না কারো সাথে সম্পর্ক আছেই (কিছু ছাড়া, যারা পরিবারের শাসনে সীমাবদ্ধ)। 

তাই হুট করে গিয়েই খোঁজখবর না নিয়ে বিয়ে করা উচিত নয়। আপনার টাকা আছে তাই ধুমধাম করে বিয়ে করে ফেললেন। কিন্তু কদিন পর বিদেশে চলে আসার পর এমন কিছু মেয়েরাই পুরনো প্রেমিক নিয়ে পালিয়ে যায়। আর এটা একটা রীতিতে পরিনত হয়ে গেছে। আর এই জাতীয় স্ত্রীরাই যাওয়ার সময় আপনার টাকা পয়সা সোনাদানা সব নিয়ে যাচ্ছে। এমন হাজারো ঘটনা তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে হরহামেশাই আমরা দেখতে পাচ্ছি।

শুধু তাই নয় বর্তমান সময়ের প্রেমিক প্রেমিকারা খুবই চালাক। যেহেতু পরিবার থেকে লিগাল ভাবে বিয়ে করা যাবে না। তাই এইসব প্রেমিকারা এমন সব প্রবাসীকে বিয়ে করে যার কাছ থেকে পরবর্তীতে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়া যায়। তাছাড়া এমনও হাজারো উদাহরণ আছে, বিয়ের পর স্ত্রী তার স্বামীকে ঠিকমতো কাছে ঘেঁষতে দেয় না। যখন ঐ প্রবাসী দুই এক মাস পর বিদেশে চলে আসে, তখন ঐ মেয়ে তার পুরোনো প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যায়।

আবার কিছু আছে যারা স্বামীকে জোর করে পরিবার থেকে ছাড়িয়ে নেয়। এরপর স্বামী বিদেশে গেলে পুরোনো প্রেমিকের সাথে চলে রামলীলা। আর প্রবাসীরা এইসব ক্ষেত্রে খুবই অসহায়। কেননা সময় মতো বিয়ে করতে না পারার কারণে এইসব বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয়। নতুবা স্ত্রীকে সময় দিতে না পারার কারণেও এইসব অন্যায় মেনে নিতে হয়।

যা করতে পারলে ভালো 

বিয়ের ক্ষেত্রে প্রবাসী পাত্রদের জন্য খুবই ভালো হয় যদি পরিবারের সবার পছন্দমত আত্মীয়স্বজন থেকে বিয়ে করা। এতে ছেলে মেয়ে উভয় উভয়ের জানাশোনা থাকবে। ভবিষ্যৎ বিভিন্ন সমস্যা হতে নিজেরাই ভালো কোন সমাধানে পৌঁছাতে পারবে। কেননা এখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে কেউ  নিশ্চিত ভাবে বলতে পারবেন না যে, সে  কারো প্রেমিকাকে বিয়ে করছে না।

দিনদিন দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যার ফলস্রুতিতে দেশে যে হারে তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাব পড়ছে। তার আঁচ সমাজের প্রতিটি কোণায় কোণায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। যারফলে প্রতিটি ছেলে মেয়েই তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ সাগরে গা ভাসিয়ে জীবনের রঙিন রোমাঞ্চকর অনুভূতি অন্বেষণে ব্যস্ত। সেখানে আমরা কেউ কখনোই এই নিশ্চয়তা দিতে পারব না যে আমাদের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী কারো প্রেমিকা ছিলো না।

তাছাড়া আমাদের অধিকাংশ প্রবাসীই টাকার জোরে বয়সে ছোট মেয়ে বিয়ে করতে ইচ্ছুক হয়। অথচ এইসব ছোট মেয়েরাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে তারা অন্যের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে পরকীয়ায় জড়িত হয়ে যায়। যারফলে তাদের অজান্তেই তাদের সংসার নষ্ট হয়ে যায়।

তাই প্রবাসীদের উচিত হবে একটু দেখেশুনে সমজদার কোন মেয়েকে বিয়ে করা। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে, যদি আপনি কোন টিনএজ কে বিয়ে করেন তবে আপনাকে তাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। আপনি যদি নিয়মিত বিরতিতে দেশে যেতে না পারেন তাহলেও বড় সমস্যা। হয়তো দেখবেন যে আপনার সুন্দর সময় অন্যজনকে দিয়ে বসে আছে। আর এটা বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী খুবই স্বাভাবিক। সুতরাং দেখে শুনে বুঝে বিয়ে করতে হবে।

অতিরিক্ত দেনমোহর না দেওয়া

আমাদের প্রবাসীদের একটি বড় দোষ হলো, মেয়ে বেশী পছন্দ হলেই আমরা বেশী দেনমোহরের লোভে ফেলে মেয়েকে বিয়ে করে ফেলি। অথচ এই দেনমোহরের কষ্টের হাজারো উদাহরন দৃষ্টান্ত আজ সমাজের আনাচকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর এই অতিরিক্ত দেনমোহরের কারণে হাজারো সংসারে আজ সুখ শান্তি নেই। স্ত্রীর হাজারো অন্যায় একজন প্রবাসী স্বামী সহ্য করছে শুধুমাত্র দেনমোহরের কারণে। তাই সংসার সুন্দর করতে চাইলে কখনোই অতিরিক্ত দেনমোহর দেওয়া উচিত হবে না। 

সর্বশেষ কথা 

পরিশেষে প্রবাসী ভাইদের এটাই বলব, আপনারা যারা এখনও প্রবাসী হননি, তারা যেন দেখেশুনে বুঝে তবেই ভিসা ক্রয় করেন। আর কখনোই জানাশোনা ছাড়া কারো কাছ থেকে ভিসা ক্রয় করবেন না। ভিসা সম্পর্কে সবিস্তারে জেনে তবেই যেন আমরা ভিসা ক্রয় করি। একইসাথে অবশ্যই কাজ সম্পর্কে অবগত হয়ে তবেই যেন বিদেশে যাই। কেননা লাখ লাখ টাকা খরচ করে গিয়ে, দুই তিন মাস পর দেশে চলে আসা কখনোই ভালো কিছু নয়।

একইসাথে আমরা যারা নতুন বিদেশে যাব তাদের উচিত হবে, যাবতীয় অপরাধ থেকে বিরত থাকা। কেননা গুটিকয়েক জনের  অপরাধে আজ আমরা বাংলাদেশীরা সবাই অপরাধী হয়ে আছি। সুতরাং অপরাধ যেন আমাদের গ্রাস করতে না পারে সেই চিন্তা করতে হবে।

একইসাথে বিয়ে শাদির ব্যাপারে সবকিছু বিচার বিবেচনা করে তবেই পদক্ষেপ নিতে হবে। যাতে ভবিষৎ সংসার জীবনে অশান্তি না হয়। এভাবেই যদি আমরা আমাদের প্রবাস জীবনে উপরোক্ত দিকনির্দেশনা মেনে চলতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা প্রবাস জীবন সুন্দর করে উপভোগ করতে পারব। একইসাথে পরিবারের সকলের মুখেও নির্মল হাসি ফোটাতে পারব।

Share this article

Content Writer
Chattogram, Bangladesh
জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলাম। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখছি। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস।
Comments
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
Related articles
কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা
কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা: কোরিয়ান ভাষা শেখার সহজ উপায়

দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের জন্য যেতে হলে আপনাকে কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সরকারিভাবে বোয়েসেলের (BOESL – Bangladesh Overseas Employment and Services Limited) মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার জন্য আপনাকে বেশকিছু ধাপ পাড়ি দিতে হবে। আজকের এই পোস্টে আলোচনা করা হবে কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা নিয়ে।

পিল খাওয়ার নিয়ম
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম: পিল খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে পিল খাচ্ছেন তো!

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম না জেনে নিজের খেয়াল খুশি মতো সাধারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা ইমার্জেন্সি পিল খেলে হতে পারে নানাবিধ সমস্যা। এই পোস্টের মাধ্যমে পিল বা জন্মনিরোধক বড়ি খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে পারবেন।

References

1. Featured Image Man Model Source: Freepik

Was this article helpful?
Share this post
প্রবাসীদের করণীয়
প্রবাসী: শৃঙ্খলিত জীবনের করুণ উপাখ্যান
https://www.studykoro.com/probashider-koronio/

Email Newsletter

Subscribe to our newsletter with your email address to get new post updates in your mailbox.

Your privacy is important to us

অনুসন্ধান করুন

সঠিক কিওয়ার্ড লিখে খুঁজে নিন আপনার দরকারি পোস্টটি!

ক্যাটাগরি

Report this article

Let us know if you notice any incorrect information about this article or if it was copied from others. We will take action against this article ASAP.

We're happy to give you a good experience

Please share your good experience so that we can improve the quality of our content and make our website more useful for you.

Sorry, what's the problem?

Please share your bad experience so that we can improve the quality of our content.

Report this book

Let us know if you notice any incorrect information about this PDF book. Also, please let us know if the given PDF file is banned for sharing; we will remove it as soon as possible. 

User Profile Picture

YourName