Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

লাভ জিহাদ: উগ্র হিন্দুত্ববাদের স্বরুপ উন্মোচন

Last updated on April 12th, 2024

লাভ জিহাদ কী

লাভ জিহাদ! অদ্ভুত একটি বাক্য। জিহাদ শব্দটি মূলত ইসলামে ব্যবহৃত শব্দ হলেও, লাভ জিহাদের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু এই লাভ জিহাদ নিয়েই আমাদের উপমহাদেশে চলছে চরম মাতামাতি। কিন্তু কেন? নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে কোনো এক  গভীর ষড়যন্ত্র। আসুন আজ আমরা জানার চেষ্টা করি লাভ জিহাদের আদ্যোপান্ত। 

লাভ জিহাদ কী

শুনতে অবাক লাগলেও এটাই আমাদের মুসলমানদের জন্য বাস্তবতা। আজ পুরো বিশ্ব আমাদের মুসলিমদের সন্ত্রাসী হিসাবেই চিনে। এর কারণ আমি ব্যাখ্যা করব না। কেননা এটা ব্যাপক একটি বিষয়। তবে এতটুকু আমাদের জেনে রাখা উচিত জিহাদ মানেই সন্ত্রাসী নয় কিংবা ষড়যন্ত্রকারী নয়।

কিন্তু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে লাভ জিহাদের নামে পুরো মুসলিম জাতি ও মুসলমানরের সন্ত্রাসী এবং ষড়যন্ত্রকারী হিসাবেই উপস্থাপন করছে। এর কারণ হিন্দু মুসলিম প্রেম বিয়ে এবং সম্পর্ক।

আরও দেখুন: যে ভুলের কারণে বিদেশ থেকে ফিরে সর্বস্ব হারাচ্ছে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা

প্রেম একটি স্বাভাবিক বিষয় প্রতিটি নারী পুরুষের জন্য। কেননা এইসবের মধ্যে শয়তানের সরাসরি ইন্দন থাকে। তাই এইসব অবৈধ প্রেম এবং অবৈধ সম্পর্ক করতে ও হতে কোথাও সময় নেয় না। যেকারণে ভারতের মত সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের দেশে মুসলমান ছেলেরা ধরে ধরে হিন্দু মেয়েদের প্রেম ভালোবাসা বিয়ে করে।

আর এই প্রেম ভালোবাসা বিয়েকেই তারা নাম দিয়েছে লাভ জিহাদ। কারণ এই প্রেম ভালোবাসা বিয়ের মাধ্যমে একজন মুসলমান তাদের হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করার মাধ্যমে মুসলিম বানিয়ে ফেলছে। এতে মুসলিম বেড়ে যাচ্ছে আর হিন্দু কমে যাওয়া সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। এই কারণেই হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক কিংবা  বিয়ের নাম হচ্ছে এখন লাভ জিহাদ। 

লাভ জিহাদের উৎপত্তি কোথায়

লাভ জিহাদের মূল উৎপত্তি হচ্ছে ভারতে। আর এই প্রেম ভালোবাসা ভারতের জন্য তাদের জন্মের ইতিহাস থেকেই সুপ্রসিদ্ধ। কিন্তু এইসব হিন্দু মুসলিম প্রেম বিয়ে নিয়ে শত শত বছরেও কেউ কোনো কথা বলেনি। কেননা এটা একটি প্রাকৃতিক জৈবিক ব্যাপার। কিন্তু হঠাৎ করেই কিছুদিন যাবত এই হিন্দু মুসলিম প্রেম বিয়ে নিয়ে ভারতে চলছে তুলকালাম কান্ড।

আর এইসব কান্ডের মূল হোতা বরাবরের মতোই বিভিন্ন রাজনীতিবিদ। প্রতিটি দেশেই তাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো না কোনো নিজস্ব ইস্যু থাকে। আর তেমন ভারতেও রয়েছে মুসলমান ইস্যু। এই ইস্যু নিয়ে সবসময়ই ভারতে চলে ব্যাপক রাজনীতি।

আর এখন তাদের ইস্যু হলো হিন্দু মুসলিম প্রেম বিয়ে সম্পর্ক। যা একটি সুপ্রাচীন ইতিহাসেরই একটি অংশ। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে ভারতে এই হিন্দু মুসলিম বিয়ে চর্চা  শুরু হয়। ২০১০ সালে কেরালার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ভি. এস. অচ্যুতানন্দন সর্বপ্রথম  এই হিন্দু মুসলিমের বিয়ের বিষয়টিকে প্রেম জিহাদ বা লাভ জিহাদ হিসেবে উত্থাপন করেন। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে এটি মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার এবং প্রসারতা লাভ করে।

এর কারণ জিহাদ! ইসলামে জিহাদ মানে যুদ্ধ করা চেষ্টা করা সংগ্রাম করা ইত্যাদি। যা মূলত বিধর্মীদের সাথে এবং ক্ষেত্রবিশেষে নিজের সাথেও করতে হয়। এই জিহাদ শব্দকে কাজে লাগিয়ে তারা হিন্দু মুসলিমের প্রেমকে একটি প্রশ্নবিদ্ধ জায়গায় নিয়ে গেছে।

তাদের দাবি ছিলো মুসলিম ছেলেরা তাদের হিন্দু মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিত করছে। আর এভাবেই শতশত হাজার হাজার মেয়েকে মুসলমানরা ধর্মান্তরিত করে একপ্রকার হিন্দুদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। একইসাথে তাদের বদ্ধমূল ধারণা যে, ইসলামও মুসলমানদের এভাবে ধর্মান্তরিত করতে উৎসাহিত করছে। অর্থাৎ তাদের মতে এটা ইসলাম ধর্মের একটি অংশ হলো বিধর্মীদের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিত করা।

কিন্তু আসলে সত্য হলো ইসলাম শুধু বিধর্মীদের নয়, বরং স্বধর্মী সাবালিকা মেয়েদের থেকেও দূরে থাকার জন্য পুরুষদের নির্দেশ দেয়। সুতরাং ইসলামের বিরুদ্ধে এই প্রশ্ন তোলা অমূলক। তারপরও তারা ২০০৯ সাল থেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে একটি প্রোপাগান্ডার অংশ হিসাবে এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠিত করে।

এই জন্য তারা সনাতন প্রভাত এবং হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির মাধ্যমে তাদের  হিন্দুসমাজকে তাদের মহিলাদের মুসলমানদের থেকে রক্ষা করার জন্য  আহ্বান জানায়। শুধু তাইনয় তারা মুসলমানদের সরাসরি কুৎসিত ও ধর্ষক হিসাবে আখ্যায়িত করে। একইভাবে তারা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, বিশ্ব হিন্দুপরিষদকে ভারত ও বিদেশে এই তত্ব প্রচার করার জন্য আহবান জানায়।

যার ফলস্বরুপ ২০১৪ সালে রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির এই প্রচারের সাফল্যে লাভ করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়। আর পরপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির নির্বাচনের পর ভারতে এহ লাভ জিহাদ ধারণাটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। একইসাথে তারা বিভিন্ন টেলিভিশন যেমন : টাইমস নাউ, রিপাবলিক টিভি সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালায়।

আর এভাবেই লাভ জিহাদ ষড়যন্ত্র তত্ত্বটি ভরতে প্রতিষ্ঠা পায়। সুতরাং লাভ জিহাদ হলো হিন্দু মুসলিম সম্পর্ককে ষড়যন্ত্রের নাম দিয়ে একটি ইস্যু তৈরি করা। যেখানে হিন্দু মুসলিম সম্পর্ককে কোনঠাসা করার এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করা। একারণেই বর্তমানে ভারতে হিন্দু মুসলিম বিয়েতে নানান সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

যতই হিন্দু নারী সেচ্ছায় ধর্ম ত্যাগ করুক না কেন তা তারা মেনে নিতে চাইছে না। কেননা বর্তমানে লাভ জিহাদ নিয়ে আইনও ভারতে প্রনয়ণ হয়ে গেছে। 

লাভ জিহাদের উৎপত্তি কেন

লাভ জিহাদের উদ্ভব হয়েছে মূলত রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে। ভারতের রাজনীতিতে বিজেপি হচ্ছে হিন্দু সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল। তারা তাদের ভোট বাড়ানো এবং জনগণকে তাদের দিকে দৃষ্টি দিতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। 

লাভ জিহাদ নিয়ে কারা সরগরম

লাভ জিহাদ নিয়ে মূলত ভারতীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ হিন্দু সাম্প্রদায়িক কিছু গোষ্ঠী জড়িত। এর কারণ হচ্ছে, ইসলামী চিন্তাবিদ ডা. জাকির নায়েকের কল্যাণে ভারতে ব্যাপকভাবে ইসলামের প্রসার হওয়া। এই ইসলামী স্কলার প্রকাশ্যে হিন্দু পন্ডিত এবং হিন্দুদের সরাসরি চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে পরাস্ত করার কারণে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। এই কারণে ভারতীয় যাবতীয় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ও হিন্দু সাম্প্রদায়িক দলসহ সকল মুসলিম বিদ্বেসী দল গুলো লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। 

তাদের উদ্দেশ্য কী

যারাই লাভ জিহাদের কথা বলে ভারতে মুসলমানদের কোনঠাসা এবং বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট। তারা বৃহত্তর ভারতে মুসলমানদের কোনো অস্তিত্ব দেখতে চায় না। আর তাই এইসব ছোটখাটো ইস্যু নিয়ে তারা ডা. জাকির নায়েকসহ বিভিন্ন মুসলিম নেতা ও দ্বীনের দ্বাঈীদের গ্রেপ্তার ও নির্বাসনে পাঠাচ্ছে।

তারা কখনোই ভারতকে মুসলমানদের জন্য ছেড়ে দিবে না। যেখানেই মুসলমান আছে সেখানেই তারা ঝামেলা করবে। আর এভাবেই তারা ধীরে ধীরে প্রথমত হিন্দু থেকে মুসলিমে ধর্মান্তরিত হওয়া ঠেকাবে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ভারত থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করবে। যা একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। 

লাভ জিহাদের ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি 

ইসলাম খুবই পবিত্র এবং নৈতিকতা নির্ভর ও অশ্লীলতা বিরোধী একটি ধর্ম। ইসলামে কখনোই প্রতারণা কিংবা অশ্লীলতার কোনো স্থান নেই। এই লাভ জিহাদের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে অশ্লীলতা, প্রতারণা এবং একটি গুজবের তথ্য রয়েছে। 

প্রথম কথা হচ্ছে ইসলাম কখনোই অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় দেয় না। আর এটা এতোটাই শক্তিশালী আইন দ্বারা সুরক্ষিত যে, কোনো মুসলিম শুধু শারীরিক সম্পর্ক নয় বরং যেকোনো নারীর (যে কয়জন নিষিদ্ধ নয় তারা ছাড়া) সাথে দেখা করাও হারাম তথা নিষিদ্ধ।

অর্থাৎ বির্ধমী মেয়ে নয় বরং মুসলিম মেয়ে হলেও তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করাও ইসলাম অনুমোদন দেয় না। যেখানে দেখা করার অনুমোদন নেই, সেখানে প্রেম করা কীভাবে ইসলাম সমর্থন করতে পারে? সুতরাং ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম ভালোবাসার কোনো স্থান নেই।

অতএব লাভ জিহাদ করে কোনো মুসলিম কখনোই ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো কাজ করছে না। যদি ইসলামই লাভ করাকে সমর্থন না দেয় তাহলে সেখানে জিহাদের প্রশ্ন আসছে কীভাবে? ইসলাম যে অর্থে জিহাদ শব্দটি ব্যবহার করে, সেখান থেকে লাভ জিহাদ শব্দ গুলো যোজন যোজন দূরত্বে অবস্থান করছে। 

সুতরাং লাভ জিহাদ নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্পষ্ট। ইসলাম কখনোই বিয়ে বহির্ভূত যৌনতা, অশ্লীলতা এবং পর নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা সমর্থন করে না। তাই লাভ জিহাদ নাম দিয়ে ইসলামের নামে যে কুৎসা, গুজব, অপপ্রচার এবং ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ অমূলক।

বাংলাদেশে লাভ জিহাদ

আমরা এতক্ষণ ধরে লাভ জিহাদের বিষয়টি শুধু ভারতেরই অংশ হিসাবে জেনে এসেছি। কিন্তু চরম সত্য হলো বাংলাদেশেও লাভ জিহাদের প্রচার প্রচারণা রয়েছে এবং তা দুর্বার গতিতে চলছে। তবে এখানে কুশীলব ভিন্ন।

ভারতে মুসলমানরা সংখ্যালঘু বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা সহজ হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশেও এমন ঘটনা সুপ্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসলেও তাকে কেউ লাভ জিহাদ নাম দেয়নি বা দেওয়ার প্রশ্ন আসেনি। কেননা এটা নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

তাহলে বাংলাদেশে কীভাবে লাভ জিহাদের প্রচার প্রচারণা চলবে? এর সহজ উত্তর হলো, বাংলাদেশে লাভ জিহাদের উল্টো চিত্র চিত্রায়িত হচ্ছে। আমাদের দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান মেয়েদের এখন সংখ্যালঘু হিন্দুরা প্রেম বিয়ের নামে প্রতারণা করছে।

ভারতে মুসলমানরা বিয়ে করে হিন্দুদের নিয়ে সংসার করছে। আর বাংলাদেশে হিন্দু ছেলেরা প্রেম ভালোবাসা, বিয়ের নামে সতীত্ব ধ্বংস করে ভগবানের সন্তান ঢেলে দিচ্ছে। ফলে মুসলমান নারীদের কোলে এখন হিন্দুর দেবতা ঘুরে বেরাচ্ছে। যার ভবিষ্যৎ খুবই আশংকাজনক।

আমাদের পরিবার সমাজ রাষ্ট্রে দিনদিন ইসলামের অনুশাসন উঠে যাচ্ছে। যারফলে আমাদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে ধর্মহীনতা এবং নাস্তিকতা। যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি মুসলমান ছেলেমেয়েদের মধ্যে ফ্রি মিক্সিং দেখে। ছেলেমেয়েদের এইসব ফ্রি মিক্সিং থেকে এক শ্রেণী খুব কৌশলে সুবিধা নিতে বসে আছে।

তারা ভারতে যেটা পারছে না, সেটা বাংলাদেশে করে সফলতা লাভ করছে। তাই  এখানে তারা তাদের হিন্দু ভাইদের দিয়ে লাভ জিহাদের প্রতিশোধ নিচ্ছে মুসলিম মেয়েদের সর্বনাশ করে। এই জায়গায়ও মুসলিম মেয়েরা ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে। যদিও ভারতের মুসলমানরা হিন্দু মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে কোনো ফাঁদ পাতে না।

কেননা হিন্দু মুসলিম বিয়ে মানেই হিন্দু মেয়ে মুসলিম হয়ে তবেই সংসার করছে। কোনো হিন্দু মেয়ে স্বেচ্ছায় মুসলিম হওয়ার পর ঐ সংসারে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত খুবই কম। বলতে গেলে তা খুবই কদাচিৎ।

আবার অনেক মুসলিম মেয়েও হিন্দু ছেলে বিয়ে করলেও তারা ধর্মের দিকে থাকে স্বতন্ত্র। তা এইসব নিয়ে কেউ তেমন ঘাটাঘাটি করত না। যে ঘাটাঘাটিটা ভারতীয় কিছু রাজনৈতিক দলের কারণে এখন সবাই ঘাটছে।

আর এই রাজনৈতিক ইন্ধনেই বাংলাদেশে বর্তমানে হিন্দুদের পক্ষ থেকে লাভ জিহাদের প্রচার প্রচারণা চলছে। যার ফলে আজকাল সোস্যাল মিডিয়াতে আমরা দেখতে পাচ্ছি এমন অহরহ ঘটনা। যা আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও এর পরিকল্পনা সুদূরপ্রসারী।

মুসলমানদের করণীয় 

ভিন্ন ধর্মীর সাথে প্রেম ভালোবাসা বিয়ে আগেও ছিলো ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু এইসব প্রেম ভালোবাসাকে লাভ জিহাদ নাম দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করা? কিংবা ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করার কোনো মানে হতে পারে না। এই কারণে আমাদের সকলকে সচেতন থাকা খুবই জরুরী।

আমরা যারা হিন্দু মেয়েদের সাথে সম্পর্কে জড়িত আছি তাদের উচিত হবে শতভাগ পরিশুদ্ধ মন নিয়ে তার কাছে ধর্মীয় বিষয় গুলো উত্থাপন করা। শুধু বিধর্মী নয়, কোনো বেগানা নারী পুরুষের সাথেই সম্পর্ক করা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না। সুতরাং আমাদের সবাইকে প্রেম জাতীয় জিনা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

আমরা যারা নিজেদের সত্যিকার মুসলমান মনে করি তাদের সবসময়ই নিজেদের দ্বীনকে কলুষিত মুক্ত রাখতে হবে। যাতে আমাদের কারণে দ্বীন ইসলামকে কেউ গালমন্দ করতে না পারে। একইসাথে কোনো হিন্দু মেয়ের সাথে কখনোই কোনো প্রতারণা না করা। কেননা বিধর্মীদের সাথে প্রতারণা করার অর্থ হলো মুসলমানরা প্রতারক।

যা কখনোই ইসলামের শিক্ষা নয়। তাছাড়া কোনো হিন্দু স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত না হলে কিংবা দ্বীন ইসলামের প্রতি আগ্রহ না থাকলে, সেই মেয়ের সাথে সম্পর্কের দোহাই দিয়ে জোর করে ধর্মান্তরিত করা চরম অন্যায়। তাই কখনোই কোনো কারণে কাউকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা যাবে না।

একইসাথে এটা কোনো মুসলমানের মেয়ের জন্য শোভনীয় নয় যে, সে কোনো হিন্দু ছেলের সাথে সম্পর্ক করবে। এটা শুধু তখনই হতে পারে যখন কেউ স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কেউ পরবর্তীতে মুসলমান হবে সেই আশায় তার সাথে সম্পর্ক করার মোটেই ইসলামের শিক্ষা নয়।

কেননা বিধর্মী ছেলেরা কখনোই মুসলিম হওয়ার আশায় প্রেম করে না। যারা সত্যিকারের মুসলিম হবে তারা কখনোই প্রেমকে উপজীব্য করে মুসলিম হবেনা। সুতরাং (পরিচিত) কেউ যদি ইসলাম গ্রহণের পর বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাহলে তা সাদরে গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু কখনোই ঐ ছেলে মুসলিম হবে সেই আশায় তার সাথে প্রেম ভালোবাসা বা অন্য কিছু কখনোই করা উচিত হবে না।

এর কারণ এই লাভ জিহাদ আর ভারতীয় ইস্যু নয় বরং এই লাভ জিহাদ পুরো বিশ্বে সরগরম। ইন্ডিয়ানরা সারাবিশ্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে এই লাভ জিহাদের তত্ত্ব ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে নাস্তিক দেশেও হিন্দু মুসলিম করার সময় তারা লাভ জিহাদ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

এছাড়াও এই লাভ জিহাদ তত্ত্ব বাংলাদেশে খুবই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষকরে হিন্দু ছেলেরা এই উদ্দেশ্যে খুবই কৌশলে মুসলিম মেয়েদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে ফায়দা নিচ্ছে। যার প্রমাণ আমরা ফেইসবুকসহ যাবতীয় সোস্যাল মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি।

আর তাই আমাদের মুসলমান মেয়েদের এই বিষয়ে খুবই সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে। কখনোই কারো মিষ্টি কথায় হাজারো প্রলোভনে এই বিজাতীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া যাবেনা। একইসাথে মুসলিম ছেলেরা কখনোই একটি হিন্দু মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিত যেন না করে। কেননা দ্বীন জোর করে পালনের বিষয় নয়।

আমাদের দেশে বড় বড় সেলেব্রিটি বড় পর্দার মানুষেরাও প্রেমের নামে বিয়ের নামে যা করেছে তা একজন মুসলমান হিসাবে খুবই ন্যাক্কারজনক। এই ঘটনায় বিধর্মীরা আজ ইসলামের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলে কথা বলতে পারছে। যা কখনোই ইসলামে কাম্য নয় বরং শাস্তি যোগ্য অপরাধ। এই কারণে কখনোই ধর্ম সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে প্রেম বিয়ে ভালোবাসা নয়। 

পরিশিষ্ট

লাভ জিহাদ বিষয়টি ভারতীয় রাজনীতির একটি অংশ হলেও তা আমাদের দেশসহ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের মুসলমানরা বিধর্মীদের সাথে এই আশায় প্রেম করে, বিধর্মীরা মুসলিম হলে সে তো জান্নাতী হয়ে যাবে। কিন্তু ইসলামে কখনোই বিষয়টি এতো সহজ নয়। কেননা ইসলাম প্রেম করার অনুমতি দেয় না। সেখানে অবৈধ প্রেম করে বিয়ে করলে তা কীভাবে নেকীর কাজ হতে পারে?

তাই আগে নিজে দ্বীন ইসলাম জানুন। পরে কীভাবে অন্যকে দ্বীন ইসলামে আনতে তা জানুন। কখনোই অবৈধ প্রেম কিংবা জোর করে, ফাঁদে ফেলে, প্রতারণা করে কাউকে মুসলিম করার পুরস্কার নয় বরং শাস্তি অবধারিত। আল্লাহ সঠিক জিহাদ বুঝার এবং সেই অনুযায়ী চলার তৌফিক দিন আমিন। 

Share this article

Content Writer
Lives in Chattogram, Bangladesh
জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলাম। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখছি। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস।
Comments
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Related articles

পিল খাওয়ার নিয়ম

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম: পিল খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে পিল খাচ্ছেন তো!

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম না জেনে নিজের খেয়াল খুশি মতো সাধারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা ইমার্জেন্সি পিল খেলে হতে পারে নানাবিধ সমস্যা। এই পোস্টের মাধ্যমে পিল বা জন্মনিরোধক বড়ি খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে পারবেন।

পরকীয়া থেকে মুক্তির উপায়

পরকীয়া প্রেম থেকে মুক্তির উপায় | পরকীয়া প্রেমের কারণ, লক্ষণ ও সমাধান

পরকীয়া থেকে মুক্তির উপায়: “পরকীয়া” বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে আলোচিত একটি শব্দ। যে শব্দের পজিটিভ কোনো অর্থ নেই। যে মানুষের সাথেই এই শব্দটি জড়িত হয়, তার পারিবারিক জীবনই হয়ে যায় অতিষ্ঠ।

English blog

ক্যাটাগরি

অনুসন্ধান করুন

সঠিক কিওয়ার্ড লিখে খুঁজে নিন আপনার দরকারি পোস্টটি!

Share this page
লাভ জিহাদ কী

লাভ জিহাদ: উগ্র হিন্দুত্ববাদের স্বরুপ উন্মোচন

https://www.studykoro.com/love-jihad/

Report this book

Let us know if you notice any incorrect information about this PDF book. Also, please let us know if the given PDF file is banned for sharing; we will remove it as soon as possible. 

User Profile Picture

YourName