Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পাত্র নির্বাচনে করণীয়: কেমন ছেলে বিয়ে করা উচিত | বিয়ের জন্য পাত্র দেখার নিয়ম

Last updated on April 12th, 2024

কেমন ছেলে বিয়ে করা উচিত

“জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে”- জীবন এই তিন নিয়ে। হ্যাঁ প্রিয় বন্ধুরা একমাত্র মানুষই সামাজিক জীব বলে তাকে বিয়ে নামক একটি শৃঙ্খল মেনে নিতে হয়। যেকারণে আমরা যারা সামাজিক মানুষ, তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কিংবা সময়ের পর অথবা জীবন-জীবিকা, পরিবেশ-পরিস্থিতির নানান প্রয়োজনে বিয়ে নামক একটি শঙ্খনীল নীড়ে প্রবেশ করতে হয়।

নীড় মানে বাসা। যেখানে থাকে ভালবাসা। আর যে নীড়ে নেই ভালবাসা সেই নীড় যেন নীড় নয়, ধূধূ বালুচরের ধোঁয়াশা! আর তাই প্রতিটি পরিবারে ভালবাসার বন্ধনকে দৃঢ় এবং মজবুত করতে আমাদের প্রয়োজন দুটি অন্তহীন মনের। যারা সুখে দুঃখে ত্যাগ তিতিক্ষায় পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কাটিয়ে দিবে অনন্ত জীবন।

কিন্তু আমাদের পরিবার পরিবেশ সমাজ ও পরিস্থিতির কারণে অধিকাংশ সময়ই আমরা  একজন ভালো মনের মানুষের সন্ধান পাই না। যেকারণে আমাদের সংসার গুলো হয়ে শ্মশান। যেখানে নিরবে নিবৃত্তে হাজারো নারী পুরুষের কান্নার রোল প্রতিধ্বনিত হয় প্রতিনিয়ত। 

আর সেইজন্য একটি সংসার গোছাতে এবং সাজাতে নারীর ভূমিকার পাশাপাশি রয়েছে একজন উপযুক্ত পুরুষের হস্তক্ষেপ। সে কারণে বিয়ের আগে একজন ভালো স্বামী চাইতে হলে, আমাদের উচিত হবে একজন ভালো পাত্র খোঁজা। 

আর তাই প্রিয় বন্ধুরা আজকে আপনাদের সামনে নিয়ে আসলাম এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক, যা আপনার জীবনকে সাজাতে এবং জীবনকে রাঙাতে বড্ড প্রয়োজন। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক, একজন উপযুক্ত পাত্র যাচাই বাছাইয়ে আমরা কী কী বিষয় গুরুত্ব দিব। এবং একজন পাত্রের কী কী গুণাবলী থাকলে তাকে আমরা আমাদের জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিব। 

কেমন ছেলে বিয়ে করা উচিত

মানুষ স্বভাবগতভাবেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। বিয়ে হলো বিপরীত লিঙ্গের দুইজন মানুষের একত্রে বসবাসের বৈধ সামাজিক বন্ধন। যার মাধ্যমে দুইজন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আজকের এই আলোচনায় আমরা বিশদভাবে জানবো কেমন ছেলে বিয়ে করা উচিত বা সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য বিয়ের ক্ষেত্রে একজন আদর্শ জীবনসঙ্গী নির্বাচনে কী কী বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে।

পাত্রী নির্বাচনে করণীয়
বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচনে করণীয়

প্রেমের বিয়েতে পাত্র নির্বাচন

আমাদের আধুনিক সমাজে বর্তমানে অধিকাংশ বিয়েই হচ্ছে লাভ ম্যারেজ কিংবা প্রেমঘটিত বিয়ে। অর্থাৎ ছেলে মেয়ে রাজি তো কিয়া করেগা কাজী! যেহেতু কাজীরই কিছু করার নেই, সেহেতু  পরিবারের অভিভাবকরাও আর পাজি সাজে না সচারচর। আর এভাবেই পরিবারের সম্মতি কিংবা অসম্মতি অথবা পরিবারের অপারগতাকে কাজে লাগিয়ে অধিকাংশ ছেলেমেয়ে বিয়ে করে ফেলে।

এই জাতীয় বিয়ে করার অনেক সুবিধা থাকলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেক নারীর সংসারের শান্তি আমরা তেমন দেখতে পাই না। এর কারণ বিয়ের আগে আমরা আমাদের বর্তমান স্বামী এবং সাবেক প্রেমিককে উপযুক্ত ভাবে যাচাই করি না।

যেকারণে আমাদের অনেক বোনদের দিনশেষে কান্নার সাগরে ভাসতে হয়। তাই বিয়ের আগেই অবশ্যই আমাদের প্রেমিকদের বিভিন্নভাবে বাজিয়ে দেখতে হবে। যাতে ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর এবং আনন্দপূর্ণ হয়। 

শুধু ভালোবাসাই একমাত্র কারণ নয়

একজনের সাথে জানাশোনা আছে বলেই যে তাকে বিয়ে করতে হবে। কিংবা কারো সাথে সময় কাটালে ভালো লাগলেই যে সে আমার সারাজীবনের জন্য উপযুক্ত। এমনটা ভাবা কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

ভালবাসি ঠিক আছে। কিন্তু ভালবাসারও রয়েছে নানান সংজ্ঞা। আমাদের উচিত হবে যাকে নিয়ে সারাজীবন কাটাব, তাকে ভালোভাবে পরখ করা। সে আসলেই আমার উপযুক্ত কিনা। কিংবা আমি আসলেই তার উপযুক্ত কিনা।

আবেগের মোহে ক্ষণিকের ভালো লাগা কখনোই আজীবনের পথচলা হতে পারে না। তাই প্রতিটি নারীকেই তার প্রেমিককে বিভিন্নভাবে চেকে দেখতে হবে। আমরা এমনও অসংখ্য মেয়ে দেখেছি যারা সৌন্দর্য্যের কারণে কিংবা স্মার্টনেসের কারণে ছেলেদের পছন্দ করে। কিন্তু ছেলেটি জীবন সম্পর্কে অগোছালো কিংবা তার রয়েছে নেশার সমস্যা কিংবা সে বাউন্ডলে ইত্যাদি।

এই জাতীয় ছেলে প্রেম করতে খুবই পটু। এরা প্রেমিকাদের যথেষ্ট সময় দেয়। যাতে মেয়েরা তাদের দেখে বা পেয়ে গদগদ হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তব জীবনে এই ছেলেরা কখনোই তাদের স্ত্রীদের শেষ রক্ষা করতে পারে না। তাই শুধু ভালবাসার জন্য বিয়ে কখনো নয়। 

বিশ্বাস যাচাই করুন 

প্রেম করেছেন বেশ করেছেন। কিন্তু প্রেমিককে কতটুকু যাচাই করেছেন? এই প্রশ্নের সামনে অধিকাংশ মেয়েরই উত্তর হয়, প্রেমিক যাচাই! সেটা আবার কী জিনিস। ও তো খুব ভালো ছেলে। খুব স্মার্ট। ও তো খারাপ হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

কিন্তু বিয়ের পর এইসব ছেলেদেরই নানান কুৎসা কূ কীর্তি তাদের স্ত্রীরা বলে বেড়ায়। তাই খুব ভালো ছেলে সেটা মুখে নয় বরং যাচাই করে পরখ করুন। তাকে আপনি কতটুকু বিশ্বাস করেন এবং সে কতটুকু আপনার বিশ্বাস রেখেছে।

কখনোই কোনো ছোটখাটো বিষয়ও এড়িয়ে যাবেন না। কেননা যে ছোট বিষয় যেমনঃ মোবাইলে মিথ্য বলা, অতিরিক্ত সৌখিনতা করা, ছেলেমানুষি মনোভাব, লাইফ নিয়ে সিরিয়াস না হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি আপনি তার ঘরে সারাজীবনের জন্য যেতে চান।

আউটলুকিং কখনোই বিয়ের মানদন্ড নয়

বেশিরভাগ মেয়েই ছেলেকে ভালো লাগে, তাই প্রেম করে। কিন্তু কেন ভালো লাগে? ওকে দেখতে ভালো লাগে, ওর কথা ভালো লাগে। ও সুন্দর কবিতা লিখে, গান গায় ছবি আঁকে। ও খুব পরোপকারী। সবার বিপদে আপদে ঝাপিয়ে পড়ে। তাই তো ওকে ভালোবাসি। 

কিন্তু স্মার্টনেস কখনোই স্বামী হওয়ার যোগ্যতা নয়। আপনার বয়ফ্রেন্ড প্রেমিক হিসাবে খুবই স্মার্ট হতে পারে, কিন্তু স্বামী হিসাবে স্মার্ট হতে হলে তার অন্যান্য যোগ্যতারও প্রয়োজন আছে। তাই অন্যান্য যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষায় যদি আপনার প্রেমিক নাম্বার না পায়, তাহলে শুধু আউটলুক দিয়ে তাকে স্বামীর আসনে বসানো কখনোই বুদ্ধিমতির কাজ নয়। 

মন মানসিককা যাচাই করুন 

আমরা যারা প্রেম করি তাদের জন্য এই বিষয়টি খুবই সহজ যে, তার প্রেমিকের মন মানসিকতা কেমন তা যাচাই করা। যা আমাদের প্রেমিকা বোনেরা প্রায় সময়ই এড়িয়ে যান। অথচ আপনারা যদি প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে সিরিয়াস থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে আপনার স্বীয় প্রেমিকের যাবতীয় মন মানসিকত সম্পর্কে জানতে এবং যাচাই করতে হবে।

বিশেষ করে তার আচার আচরণ, অন্যদের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি। বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতিতে তার এটিটিউড কেমন তা জানা খুবই জরুরী। তাকে ভালো লাগে, এই কথাটি এক ধরনের আপেক্ষিক। কেননা একজন মানুষের বিভিন্ন ধরনের রূপ রয়েছে। যার কোনো না কোনোটি আপনার ভালো লেগেছে।

কিন্তু একজন মানুষের সাথে কিছু সময় পার করা আর সারাজীবন এক ছাদের নিচে বসবাস করা এক নয়। তাই সে কেমন ধরনের মানুষ সেই বিষয়টি আমাদের শতভাগ নিশ্চিত হওয়া উচিত। 

জীবন দর্শন এক হওয়া

আমরা যারা প্রেম করি তাদের জন্য এই বিষয়টি যাচাই করা খুবই সহজ। কেননা জীবন মানুষের একটাই। আর তাই এই জীবনে যদি স্বামী স্ত্রীর জীবন দর্শন এক না হয়, তাহলে তাদের সারাজীবন পস্তাতে হবে। সংসারে যদি দুজন দুই ধরনের চিন্তাধারা নিয়ে চলে তাহলে সেই সংসারে কখ‌নোই সুখ শান্তি বিরাজ করে না। কেননা যদি জীবন দর্শন একই না হয় তাহলে স্বামী স্ত্রী এক ছাদে এক বিছানায় থাকলেও তাদের  জীবন চলে আলাদা আলাদা।

এই কারণে যখনই আমরা কারো সাথে সম্পর্ক করি, তখন তাকে পরখ করার সাথে সাথে তার জীবন দর্শন সম্পর্কেও আমাদের জেনে নেওয়া উচিত। যদি তার চিন্তাভাবনা ও দর্শন আমাদের সাথে মিলে যায়, তাহলে সেই ছেলেকে বিয়ে করলে ভবিষ্যতে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম। 

পারিবারিক সম্পর্ক কেমন যাচাই করুন 

প্রেম করলেই আমরা শুধু নিজেদের নিয়েই আপ্লুত হয়ে যাই। যেকারণে আমি তুমি ছাড়া আমাদের আর কোনো কথাই থাকে না। কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে আমি তুমি মেনে নেওয়া গেলেও, জীবন যুদ্ধে শুধু আমি তুমি দিয়ে সংসার চলবে না। একটি সংসার মানেই পারিবারিক সংস্কৃতির বন্ধন।

তাই আমাদের অবশ্যই হবু স্বামীর পারিবারিক সম্পর্ক গুলো কেমন তা জেনা নিতে হবে। এইক্ষেত্রে যারা আগে থেকেই প্রেম করে স্বামী নির্বাচন করেন, তাদের জন্য বিষয়টি খুবই সহজ। 

কেননা প্রেম যখন বিয়ের জন্য করবেন, তখন ধীরে ধীরে ছেলের পরিবার সম্পর্কে আমাদের জেনে নিতে হবে।যদি ছেলের পারিবারিক সম্পর্ক ভালো থাকে তাহলে পরবর্তীতে কোনো প্রকার সমস্যা হলে তা খুব সহজেই সমাধান করা সম্ভব।

মানুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই 

আমরা যখন প্রেম করি, তখন কখনোই ছেলেদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চিন্তা করি না। প্রেমিক পুরুষটি আরেকজনের সাথে কেমন বিহ্যাব করছে সেটা নিয়ে কখনোই ভাবি না। কিন্তু একটা চিরস্থায়ী সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, অন্য মানুষের সাথে আমার স্বামীর আচরন কেমন। 

বিশেষ করে ভাইবোন, বাবা মা সহ রাস্তার  রিকশাঅলা, ঠেলাঅলা থেকে শুরু করে  হোটেলের ওয়েটার বা গাড়ির ড্রাইভার কিংবা একেবারে অপরিচিত মানুষের সাথে তা অভিব্যক্তি কেমন তা জেনে রাখা উচিত।

কেননা একজন মানুষ যদি তার আশেপাশের মানুষ গুলোকেই গুরুত্ব না দেয়, তাহলে সে কখনোই ঘরের মানুষকে গুরুত্ব দিবে না। তাই শুধু টোনাটুনির প্রেম করেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই তার দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই করুন।

টাকা ছাড়া আদর্শ অর্থহীন 

টাকাপয়সা এমন একটি বিষয় যা আমরা কখনোই উপেক্ষা করতে পারি না। তাই জীবনযাপনের জন্য নূন্যতম আর্থিক স্বচ্ছলতা অবশ্যই প্রতিটি মানুষ আশা করে। কিন্তু আমরা যখন প্রেম করি তখন আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি অনেকেই বুঝে না বুঝে এড়িয়ে যান।

ফলে দু চার বছর প্রেম করার পর যখন বিয়ের সময় আসে, তখন দেখা যায় প্রেমিকের টাকাপয়সার খবর নেই। তাহলে যে প্রেমিকের টাকাপয়সা থাকবে না অর্থাৎ আয় ইনকামের ব্যবস্থা থাকবে না। সেই প্রেমিক প্রেমিকই থেকে যাবে। কখনোই প্রেমিকার বিয়ের পাত্র হতে পারবে না।

তাই শুধু লাইলী মজনুর প্রেম করলেই বিয়ে হয়ে যাবে না। প্রেমকে বিয়েতে রূপান্তর করতে চাইলে অবশ্যই প্রেমিককে বিয়ের পাত্রের উপযুক্ত হতে হবে। ছেলে ভালো বলে অন্যান্য সবকিছু ছেড়ে দিলেও, নিয়মিত আয় করতে না পারলে কিংবা তার পরিবার তার দায়িত্ব না নিলে কখনোই এমন পাত্রকে বিয়ে করা যাবে না।

আমাদের অনেক উদারপন্থী প্রেমিকা আছেন, যারা বিয়ের আগে আর্থিক বিষয়টা নিয়ে কখনোই ভাবেন না। ছেলে ভালো গান করে, ছবি আঁকে, কবিতা লেখে। ও খুব সমাজ সচেতন, সবার খেয়াল রাখে, খুব জনদরদি ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব কারণেই একশ্রেণির মেয়েরা এই জাতীয় ছেলেদের ভালোবাসে।

শুধু ভালবাসা বাসিই নয়, বরং তারা বিয়েও করে ফেলে। কিন্তু কিছুদিন নাটক কবিতা গানের মোহ কেটে গেলে তারা বাস্তবতায় ফিরে আসে। অথচ তখন আর সূর্য ফেরানোর কোনো উপায় থাকে না। সুতরাং আদর্শ অবশ্যই প্রয়োজন আছে। এবং তা জাগতিক এবং বাস্তবিক হতে হবে।

বিয়ের জন্য পাত্র দেখার নিয়ম
বিয়ের জন্য পাত্র দেখার নিয়ম

অ্যারেঞ্জ ম্যারেজে পাত্র নির্বাচনে করণীয় 

বিয়ের জন্য পারিবারিকভাবে ছেলে দেখার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে-

মন খুলে কথা বলুন

আমরা যারা পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে করতে যাব, তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, পাত্রের সাথে মন খুলে কথা বলা। যদিও মেয়েদের এইক্ষেত্রে যথেষ্ট আড়ষ্টতা ও লজ্জ্বা থাকবে। তারপরও ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য এই কষ্টটুকু মেনে নিয়ে পাত্রের সাথে সব বিষয়ে আলাপ আলোচনা করতে হবে।

এমন এমন টপিক নিয়ে আলাপ করতে হবে, যা আপনার জন্য জরুরী। বিশেষ করে আমাদের অনেকেরই ব্যক্তিগত সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা থাকে। অনেক মেয়ের নারী ঘটিত সমস্যাও থাকে। তাই বিয়ের আগেই হবু স্বামীর সাথে সব বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার হওয়া উচিত। যাতে এইসব বিষয় নিয়ে কেউ পরবর্তীতে আঙ্গুল তুলতে না পারে।

পারিবারিক সম্পর্ক কেমন যাচাই করুন 

আমরা যখন পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে করতে যাব, তখন আমাদের চেষ্টা করতে হবে যেকোনো উপায়ে পাত্রের বিভিন্ন বিষয় জেনে নেওয়া। যা আমাদের সংসার পরবর্তী জীবনে খুবই কাজে আসবে। 

আর অবশ্যই পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার সাথে তার পরিবারের সম্পর্ক কেমন তা যাচাই করতে হবে। যদি ছেলের পারিবারিক সম্পর্ক মজবুত থাকে, তাহলে সেই ছেলে সামাজিক। আর যারা পারিবারিক ভাবেই সামাজিক, তারা কখনোই অসামাজিক কাজ যথা বউ পেটানো, যৌতুকের জন্য চাপ বা জোর করে কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। তাই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, পাত্রের পারিবারিক অবস্থান এবং পরিবারে পাত্রের সম্পৃক্ততা কেমন তাও যাচাই করতে হবে। একটি সুন্দর গোছানো পরিবার মানেই শান্তি।

যদি পরিবারের সাথে ছেলের যোগাযোগ ঠিকমতো না থাকে, কিংবা পরিবারের সদস্যদের সাথে দূরত্ব থাকে, অথবা পরিবারের সাথে ছাড়াছাড়া ভাব মানেই, ঐ পরিবারের সাথে ছেলের ঘনিষ্ঠতা কম। আর যে ছেলেরা নিজের পরিবারের সাথে সম্পর্কহীন, সেই ছেলে কীভাবে নতুন সম্পর্কেকে গুরুত্ব দিবে?

মানুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই 

আমরা আগেই আলোচনা করেছি মানুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কেমন তা জানা কেন গুরুত্বপূর্ণ। তাই যখন আমরা পারিবারিক ভাবে পাত্র নির্বাচন করতে যাব, তখন অবশ্যই চেষ্টা করব এই পাত্রের মন মানসিকত এবং অন্যদের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন তা জেনে নেওয়া। 

সৌন্দর্য্যের প্রেমে পড়বেন না 

আমাদের কিছু কিছু বোন রয়েছে, যারা ছেলেদের সৌন্দর্য দেখে পাগল হয়ে যায়। যা আপাতত দৃষ্টিতে দোষের কিছু না। কিন্তু শুধু সৌন্দর্য্যের কারণে একজন ছেলের সাথে প্রেম করা গেলেও, তাকে কখনোই বিয়ে করা যাবে না। কেননা সারাজীবন সংসার করার জন্য সৌন্দর্য কখনোই কোনো গুণ হতে পারে না। 

আধুনিক সমাজে সুন্দর বলতে আমরা বুঝি, স্মর্টনেস, বাচনভঙ্গী, সৃজনশীল মন মানসিকতা ইত্যাদিকে। একারণে  প্রেম করে জীবনসংঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয়টা যত পরে আসবে ততই ভালো হবে। 

সুতরাং ছেলে সুন্দর বলেই বিয়ে করব এটা যেন না হয়। ছেলের সৌন্দর্য্যের সাথে সাথে অন্যান্য নূন্যতম গুণাবলীও আমাদের যাচাই করতে হবে। আর এটা যারা প্রেম করে তারা খুব সহজেই যাচাই করতে পারে। সুতরাং এই বিষয়টা প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে বেশী প্রযোজ্য।

টাকা পয়সা নয় পারিবারিক মূল্যবোধ দিয়ে বিচার করুন 

আমরা অনেকেই আছি যারা ছেলেদের কিংবা প্রেমিকের টাকা পয়সাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রেম কিংবা সম্পর্ক স্থাপন করি। যা খুবই দুঃখজনক। মানুষের জীবনে টাকাপয়সার প্রয়োজন আছে এটা সত্য। কিন্তু জীবনই যদি না থাকে তাহলে টাকাপয়সা দিয়ে কী হবে?

আমাদের আগে চিন্তা করতে হবে একটা সুন্দর জীবন। পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষেরই অতিরিক্ত টাকাপয়সা নেই। কিন্তু তাই বলে তারা সুখী নয় এমনটা আদৌ নয়। তাই টাকাপয়সার চাপে আমরা যেন মানুষ চিনতে ভুল না করি।

যখন আমরা প্রেম করব কিংবা প্রেম করেই যখন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিব। তখন আমাদের প্রাধান্য যেন টাকা পয়সা না হয়। আমাদের প্রাধান্য দিতে তার মূল্যবোধ কতটুকু সেটার। সে ব্যক্তিগতভাবে কতটুকু সৎ, তার অন্যান্য যোগ্যতা এবং যে সব যোগ্যতার কথা আমরা আলোচনা করছি সেগুলো মোটামুটি ঠিক আছে কিনা তা দেখতে হবে।

যদি আনুসাঙ্গিক অন্যান্য যোগ্যতার পাশাপাশি আপনার প্রেমিক আপনাকে বড় বড় ট্রিট দেয়, ভালো ভালো শপিং করে দেয় তাহলে সব ঠিক আছে। কিন্তু অন্যান্য যোগ্যতা নয় শুধু আপনি যখন যা চাইছেন তাই দিচ্ছে। 

তারমানে তার টাকা আছে বিধায় খরচ করতে দ্বিধা করছে না। কিন্তু এটা ভালবাসা নয় বরং মোহ। যা একদিন না একদিন কেটে যাবে। আজকে আপনার পেছনে খরচ করছে তো আগামীকাল আরেকজনের জন্য খরচ করবে না এমন কোনো গ্যারান্টি নেই।

তাই কখনোই পারিবারিক শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ ইত্যাদি ছাড়া ভুলেও ঐ পাত্রকে বিয়ে করা যাবে না। 

প্রবাসী পাত্র যাচাই

আমরা অনেকেই আছি টাকাপয়সার কারণে হোক বিলাসিতার কারণে হোক কিংবা শখের বশে হলেও প্রবাসীদের সাথে প্রেম করি এবং বিয়ে করি। এখানে প্রবাসীদের বিয়ে করা ভুল নয়। তবে না জেনেশুনে প্রবাসীদের বিয়ে করা উচিত নয়।

আমরা যখন প্রেম করি, তখন প্রবাসীর ডলার দিরহাম ভালো লাগে। তাদের মিষ্টি মিষ্টি কথা ও দামী দামি গিফট আমাদের মোহিত করে। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু জীবন সংসার মিষ্টি কথা কিংবা ডলার দিরহাম ও দামি গিফট দিয়ে হয় না।

সংসার করার জন্য মানুষ লাগে। আপনি স্বামীকেই যদি কাছে না পান, তাহলে সংসার করবেন কী দিয়ে? অনেকেই বলতে পারেন, তাহলে কি প্রবাসীরা স্ত্রী সংসার করে না? হ্যাঁ অবশ্যই করে। তবে তাদের যারা সত্যিকার স্ত্রী তারা এটা মেনে নিয়েই সংসার করছে যে, তারা তাদের স্বামীদের সবসময় কাছে পাবে না।

তারা টাকা পাবে তবে মানুষ পাবে না। বিপদে আপদে সুখে দুঃখ তার সহানুভূতি পেলেও। যার ছোঁয়ায় শরীর মন শান্তি পাবে। জীবনযাপনে নানান সমস্যায় যার ভালবাসার পরশ মাখা হাত চাইবে। নিঃসঙ্গ একাকী মুহূর্তে যাকে পাশে লাগবে। গর্ভের সন্তানকে আগলে বাবার পরশ দিবে। একইসাথে হাজারো কষ্টে সন্তানকে ভূমিষ্ট করাতে যে মানুষটিকে প্রতিটি নারী চায়। সে হচ্ছে তার প্রাণপ্রিয় স্বামী।

এইসব ঐশ্বরিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ভালবাসা যারা ত্যাগ দিতে পারবে, কেবলমাত্র তারাই প্রবাসী পাত্রকে বিয়ে করতে পারে। যারা পারে না তারা প্রবাসীর সাথে বিয়ের পর পরই সংসার ছেড়ে দেয়। আর যারা তাদের শিকল থেকে বের হতে পারে না, তারা পরকীয়ায় লিপ্ত হয়।

যেকারণে পত্রপত্রিকায়সহ বিভিন্ন সোস্যাল  মিডিয়ায় প্রবাসী স্ত্রীদের পরকীয়ার সংবাদ ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। সুতরাং প্রবাসীকে বিয়ে করার আগে ভাবুন। আপনি চাইলেই তাকে সবসময় কাছে পাবেন না। আপনার চরম বিপদ মুহূর্তেও তাকে পাশে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। মোটকথা কাগজের স্বামী নিয়েই আপনাকে সংসার করতে হবে।

তবে সব প্রবাসীই এমন তা নয়। যারা বিদেশে ভালো ব্যবসা বানিজ্য এবং ভালো অবস্থানে আছে তাদের কথা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে এই সংখ্যাটা খুবই নগন্য। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, যারা দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকে, তারা যে সবসময়ই ধোঁয়া তুলশি পাতা তা কিন্তু নয়।

একজন নারী যতটুকু তার সতীত্ব রক্ষা করতে পারে, তার ছিটেফোঁটাও অধিকাংশ পুরুষ রক্ষা করতে পারে না। তাই দ্বীনদার ও সৎ ছেলে বাদে অন্যান্য ছেলেরা দেশে বিয়ে করে বাড়ি না আসলেও তাদের কাজ তারা ঠিকই চালিয়ে নিতে পারে। অতএব এই বিষয় গুলোও মাথায় রাখতে হবে। 

আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য যে, যারা ইউরোপ আমেরিকার প্রবাসী পাত্রকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক। তারা যেন অবশ্যই এটা মেনে নেয় যে, তাদেরকে একসময় না একসময় এই বাংলাদেশকে ভুলে যেতে হবে। এখানকার বাবা মা ভাই বোন বন্ধু বান্ধব আত্মীয়স্বজন  সব নাড়ির টান ছেঁড়েছুড়ে ফেলে অন্য দেশেই হতে হবে তাদের চিরস্থায়ী বসবাস। 

এই মানসিকতা যাদের থাকবে না, তারা যেন কখনোই ইউরোপ আমেরিকান প্রবাসী পাত্রকে বিয়ে না করেন। কেননা আজকে বিয়ে দেশে করলেও কালকে আপনাকে ঠিকই বিদেশে চলে যেতে হবে। কেননা ইউরোপ আমেরিকায় মানুষ রিটার্ন টিকিট নিয়ে যায় না।

এছাড়াও এইসব প্রবাসীদের বিয়ের আগে জেনে নেওয়া উচিত যা, তারা আগে কয়টা বিয়ে করেছে! কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রবাসীরা ঐ দেশের নারীদের বিয়ে করেই তবে সিটিজেনশিপ পায়। তাই যদি বিয়ে করে থাকে তাহলে তা কী এবং কীভাবে করেছে তা জেনে এবং মেনে তবেই বিয়ে করা উচিত।

কেননা ঐসব দেশে কন্টাক্ট ম্যারেজ নামেও বিয়ে থাকে যেখানে তারা কাগজে কলমে স্বামী স্ত্রী হলেও তারা একত্রে সংসার করে না। অনেকক্ষেত্রে বিয়েও করে সংসারও করে। আবার সেই বিয়ে শেষ হলে দেশে এসে নতুন করে বিয়ে করে। সুতরাং এইসব ব্যাপার আগে থেকেই জেনে নিবেন এবং মেনে নিতে পারলে বিয়ে করবেন।

পাত্রের বয়স যাচাই

বিয়ের আগে অবশ্যই আমাদের পাত্রের বয়স যাচাই বাছাই করে নিবেন। কেননা আপনার বয়স যদি পাত্রের চাইতে ১০ বছরের অধিক হয়, তাহলে জীবন এবং সংসারে নানান ঝামেলা সৃষ্টি হয়। যদিও আমাদের মা বাবাদের আমলে বিয়ের ক্ষেত্রে বয়সটা কোনো ফ্যাক্টর ছিলো না।

কিন্তু আধুনিক বর্তমান সময়ে বয়স একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে কারণে আগে থাকতে সেটা শিউর হয়ে নিবেন। পাত্রের বয়স ৩০ আর আপনার যদি হয় ১৮/২০। তাহলে এই ৩০ বছরের পাত্রের শারীরিক এবং মানসিক গঠন এখন আপনার পছন্দ হলেও, ৫/১০ বছর পর আর আপনার তাকে পছন্দ হবে না। 

এর কারণ হচ্ছে, আপনি যখন ৩০ এ পা দিবেন। তখন আপনি সমাজ সংসার এবং জীবনবোধ নিয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলবেন। কিন্ত আপনার স্বামীর তখন বয়স কত? তার তখন ৪০+ এই বয়সে আস্তে আস্তে পুরুষের জীবন যৌবন ভাটা পড়তে থাকে।

যেকারণে আপনার যা পছন্দ হবে তখন তার সেগুলো বোরিং লাগবে। আপনার মন মানসিকতার সাথে তার মন মানসিকতার হবে যোজন যোজন পার্থক্য। এছাড়াও তার এই বয়সে সে বার্ধ্যকের দিকে ঝুকে যাবে। এমনকি তার সেবা শুশ্রূষার প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং বয়সটা শুরুতে সমস্যা না করলেও, একসময় না একসময় আপনার এই বেশী বয়সী পাত্রকে বিয়ে করার জন্য আফসোস হবে।

এছাড়াও তার অসুস্থতা না হলেও আপনি অসুস্থ হলেও তার থেকে আশানুরূপ সেবা শুশ্রূষা আপনি পাবেন না। বরং আপনি অসুস্থ সে আরেকটি বিয়ে করার যুক্তি খুঁজে পাবে। যেকারণে আমাদের সমাজ সংসারে স্বামী অসুস্থ হলে স্ত্রীরা বিয়ে করে না। কিন্তু স্ত্রী অসুস্থ হলে স্বামীদের বিয়ে করতে হয়!

ক্যারিয়ার নয় ভালো মানুষ খুঁজুন 

আমাদের অনেক বোন আছেন যারা ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক বেশী চিন্তা করেন। তই তারা নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ার পরে বিয়ে করতে যায়। কিন্তু ততদিনে পদ্মা মেঘনায় হাজারো সূর্যাস্ত সূর্যোদয় হয়ে যায়। আর তাই এই বসন্তের শেষ বয়সে তখন কোকিলের আর দেখা পাওয়া যায় না। 

একইভাবে অনেকেই আছেন তারা স্বামীর ক্যারিয়ারকে খুবই গুরুত্ব দেয়। পাত্র ভালো ইনকাম করে, গাড়ি বাড়ি আছে, টাকাপয়সার কোনো অভাব নেই। সুতরাং এই পাত্রই আমার জন্য উপযুক্ত কিংবা অভিভাবকরাও একটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেখে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন।

কিন্তু এই ক্ষেত্রে তারা টাকাপয়সা কিংবা পাত্রের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করার কারণে ঐ পাত্রের অন্যান্য গুণাবলী না থাকলেও তাকে মেয়ে দিয়ে দেন। যে কারণে এই টাকাপয়সার অহংকারই একদিন তাদের কাল হয়ে দাঁড়ায়।

তাই ক্যারিয়ার নয় বরং আমাদের একজন ভালো মানুষের প্রয়োজন। যে সুখে দুঃখে তার স্ত্রীকে আগলে রাখবে। যার পরম মমতার হাতের ছোঁয়ায় নিশীথ শীতের রাতেও স্ত্রী পাবে ঐশ্বরিক উষ্ণতা। যেখা‌নে যান্ত্রিক জীবনের হাজারো দুঃখ দুর্দশার ক্লান্তির মাঝেও যার একটুখানি  সহানুভূতির ছোঁয়ায়ই হবে লক্ষ কোটি টাকার সমান। 

ইসলামে পাত্রী নির্বাচন
আদর্শ পাত্রের গুণাবলী

পাত্রের আরো কিছু ব্যক্তিগত গুণাবলী 

একজন আদর্শ পাত্রের নিম্নোক্ত গুণাবলী যাচাই করা যেতে পারে-

যে ছেলেরা দুঃসময়েও মাথা ঠাণ্ডা রাখে

বিয়ের পাত্র হিসাবে সবসময় এমন ছেলেকে পছন্দ করা উচিত, যে ছেলে সবসময় মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে। যেসব ছেলেরা সব পরিস্থিতিতে নিজেদের সংযত রাখতে পারে, তারা যেকোনো কিছু করার আগে যথেষ্ট ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়। তাই এমন ছেলেকেই বিয়ে করা উচিত যারা সকল পরিস্থিতি খুব শান্ত শিষ্ট ভাবে মোকাবেলা করে।

অতিরিক্ত সৌখিন কিনা

আমরা যখন প্রেম করি তখন প্রেমিকের অনেক বদঅভ্যাসই আমরা এড়িয়ে চলি। যার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত সৌখিনতা। মানুষের মধ্য শখ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু  অতিরিক্ত সৌখিনতা কখনোই জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে না।

মানুষ যখন সৌখিনতায় নিজেকে পর্যবসিত করে, তখন তার মধ্যে অহংবোধ চলে আসে। এই অহংকার তাকে আরও বেশী বেশী সৌখিনতা এবং মাত্রারিক্ত ব্যয়বহুল বিলাসি জীবনযাপনে উদ্ভুদ্ধ করে। যা একজন স্বাভাবিক মানুষের জীবনকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট। তাই কখনোই বিলাসি এবং অতিরিক্ত সৌখিন ব্যক্তিকে বিয়ে করা যাবে না। 

নারীকে সম্মান করে এমন পুরুষকে বিয়ে করুন  

আমাদের সমাজ সংস্কৃতি পরিবেশ সবকিছু মিলিয়ে নারীদের সঠিক সম্মান এবং মর্যাদা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই নারীরা আজও সমাজ সংসারে অবহেলিত। তাই বিয়ের সময় প্রতিটি নারীদের এমন একজন পুরুষকে বাছাই করা উচিত, যে নারীদের সম্মান এবং মর্যাদা দেয় এবং দিতে জানে।

যদি একজন স্বামী তার স্ত্রীকে শুধু একজন ঘরনি কিংবা ঘরের আসবাবপত্র মনে করেন। তাহলে সেই পুরুষ থেকে কখনোই সঠিক সম্মান এবং মর্যাদা পাওয়া যাবে না। তাই আমাদের বিয়ের সময় এমন পুরুষকেই বিয়ে করার চেষ্টা করব, যিনি নারীদেরকে তার সঠিক সম্মান ও মর্যাদা দেন। 

শিক্ষাগত যোগ্যতা

পাত্রের হাজার কোটি টাকা থাকলেও আমাদের একজন শিক্ষিত পাত্রের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। কেননা একজন স্বশিক্ষিত মানুষ আর একজন অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে বিস্তর ফারাক। তাই পাত্রের যোগ্যতা হিসাবে আমাদের নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করা উচিত।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, শুধু সার্টিফিকেট অর্জনই শিক্ষিতের পরিচয় বহন করে না। শিক্ষিত বলতে একজন মানুষের সামাজিক মানবিক সৃজনশীল সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিকেই বোঝানো হয়। তাই যার মধ্যে মানবতাবোধ নৈতিকতাবোধ এবং সুশৃঙ্খল ধর্মীয় বোধ নেই, সে কখনোই একজন শিক্ষিতের কাতারে পড়ে না। তাই সার্টিফিকেট নয় একজন ভালো রুচিবোধ সম্পন্ন মানুষই হচ্ছে শিক্ষিত মানুষ। 

লক্ষ্যহীন পুরুষদের এড়িয়ে চলুন 

যেসব পুরুষদের জীবন নিয়ে কোনো লক্ষ্য নেই, তারা কখনোই সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। কেননা যাদের কোনো লক্ষ্যই নেই তারা খুব দ্রুত যেকোনো বিপদ আপদে দুঃখ দুর্দশায় নিয়মিত বিরতিতে হতাশ হয়ে পড়েন। তখন তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সাহস পায় না। একারণে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অন্য মানুষ লাগে। তাই সবসময় চেষ্টা করতে হবে, এমন ছেলেকে বিয়ে করার। যার জীবনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য রয়েছে।

যে নিজের ভুল সহজে স্বীকার করে

পৃথিবীর খুব মানুষই ভুল করলে কিংবা দোষ করলে তা সহজে নিজের দোষ স্বীকার করে। আর জীবন সংসার এমন একটি পাঠশালা, যেখানে ভুল ভ্রান্তি দোষ ত্রুটি সবকিছুুর সংমিশ্রণ থাকবে। আর তাই এখানে কেউ দোষ করলে যদি তা স্বীকার না করে উল্টো একরোখা মনোভাব নিয়ে চলে, তাহলে তা কখনোই সংসারে শান্তি বয়ে আনবে না।

এই কারণে এমন ছেলেকে সবাই পছন্দ করে, যারা নিজেদের ভুল ভ্রান্তি গুলো অকপটে স্বীকার করে এবং অনুতপ্ত ও লজ্জ্বিত হয়। সুতরাং এইজাতীয় ছেলেকে বিয়ে করতে পারলে সংসারে হাজার ঝুট ঝামেলা হলেও তা মানিয়ে নেওয়া সম্ভব।

অর্থসম্পদই শেষ কথা নয়

আমরা যারা শুধু অর্থসম্পদের কারণে একটি ছেলেকে বিয়ে করি কিংবা আমাদের পিতারা তাদের মেয়েদের একটি পয়সা অলা ছেলেকে বিয়ে দেন। সেইসব মেয়েরা কখনোই স্বামীর সংসারে শান্তিতে থাকতে পারে না। কেননা একটি ছেলের অন্যান্য গুণের অনুপস্থিততে শুধুমাত্র টাকাপয়সা তার আদর্শ হতে পারে না।

তাই শুধু অর্থসম্পদ আছে বলেই মেয়ে সুখে থাকবে এমন নয়। মেয়ে খেয়েপড়ে সুখের থাকার নিশ্চয়তাই সব শেষ কথা নয়। যদি টাকাপয়সার জন্যই সংসারে অশান্তি হতো, তাহলে আমাদের দেশের রিক্সাঅলা ঠেলাঅলার বৌ একটাও থাকত না।

অথচ তাবত পয়সাঅলা, বিদেশীঅলার স্ত্রীরাই পরকীয়ায় লিপ্ত। এর কারণ কখনোই টাকাপয়সা নয়, সৌখিনতা নয়, নাওয়া খাওয়ার অভাব নয়। বরং তাদের শান্তির অভাব, ভালোবাসার অভাব। আর তাই তারা ভালবাসার জন্য পয়সাঅলার ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় নতুবা কাকের ঘরে কোকিলের বাচ্ছা জন্ম দেয়। 

মিশুক ও সামাজিক

আমাদের এমন ছেলেকে স্বামী হিসাবে পছন্দ করা উচিত, যে সহজেই সবার সাথে মিশতে পারে এবং যার মধ্যে কোনো আড়ষ্টতা কাজ করে না। এরা সহজেই যেকোনো পরিবেশ পরিস্থিতিতে নিজে মানিয়ে নিতে পারে বলে এরা খুবই সামাজিক মনোভাবের হয়। ফলে এরা স্ত্রীদের জন্য আদর্শ স্বামী হয়। 

কতৃত্ববাদী নয়

আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা সমাজ সংসার পরিবারে কতৃত্ব এবং নেতৃত্ব দিবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যারা এই জাতীয় মনোভাব নিয়ে চলে, তারা কখনোই স্বামী হিসাবে ভালো হয় না। কেননা এদের মনমানসিকতাই হলো নারীদের দমিয়ে রাখা এবং তাদের মতামতের গুরুত্ব না দেওয়া।

ফলে এদের সংসারে কোনো মেয়েই শান্তিতে থাকতে পারে না। কেননা এরা নারীদের সুযোগ সুবিধা অসুবিধা কোনো কিছুর চিন্তা না করেই, নিজেদের সিদ্ধান্তকেই সবার উপর চাপিয়ে দেয়। ফলে সংসারে শুধু তাদেরই কতৃত্ব চলতে থাকে। হোক সেটা ভালো কিংবা মন্দ। তাই অবশ্যই এমন ছেলেকে বিয়ের পাত্র হিসাবে বাছাই করতে হবে, যার মধ্যে কতৃত্ব মনোভাব নেই।

নীতি নৈতিকতা 

অবশ্যই একজন ভালো মানুষের নীতি নৈতিকতা বোধ সবসময়ই অন্য যেকোনো সাধারণ মানুষের চাইতে ভালো হয়। তাই নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন একজন মানুষকে বিয়ে করতে পারাটা খুবই সৌভাগ্যের বিষয়।

কেননা এরা নীতিবান বলে কখনোই কোনো অন্যায় করে না বা কোনো অন্যায়কে সমর্থনও করে না। যে কারণে সংসারে একটি নীতি আদর্শ বিরাজ করে। যা দ্বীনি জীবনযাপন জন্য খুবই জরুরী।

যারা পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত

আত্মকেন্দ্রিক মানুষ সবসময়ই ভালো হয় না। যারা শুধু নিজেদের নিয়েই চিন্তা করে তারা কখনোই অপরকে নিয়ে চিন্তা করার সময় পায় না কিংবা পছন্দও করে না। তাই যেসব ছেলে সামাজিক এবং পরিবার পরিজনকে গুরুত্ব এবং সময় দেয়, তারা বিয়ের জন্য খুবই ভালো।

যে ছেলে পরিবারের গুরুত্ব বুঝে সকল দায়িত্ব নেয়, সেই ছেলে বিয়ের পর বৌয়েরও দায়িত্ব নিতে কার্পণ্য করবে না। আর এমন দায়িত্বশীল পুরুষদের কাছে যেকোনো মেয়েই সহজে সংসার করতে পারে।

উপার্জনের উৎস

আমাদের অধিকাংশ মেয়ের অভিভাবকই পাত্রের ইনকামের উৎস নিয়ে কখনোই যাচাই বাছাইয়ের তোয়াক্কা কর না। অর্থাৎ পাত্রের আয় সৎ না অসৎ সে ব্যাপারে আমাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এমনকি আমরা বলি যে, ছেলে ভালো চাকরি বাকরি করে, উপরি ইনকামও ভালো। এই উপরি ইনকাম কী সেটা আমরা আর ঘেঁটে দেখি না।

ফলে এই অসৎ উপার্জনের ঘরে আমরা আমাদের মেয়েদের অবৈধ কাজের সহযোগী হতে বাধ্য করি। আর যারা অসৎ উপার্জন করতে পারে, তারা কখনোই সৎ নয়। আর যারা সৎ নয়, তাদের থেকে আমরা নীতি নৈতিকতাও আশা করতে পারি না। 

অধিক মোহরানার ফাঁদে না পড়া

আমাদের দেশে বর্তমান কালচার হলো যতবেশী পারা যায় মোহরানা আদায় করা। আদায় করা বললে ভুল হবে। কেননা আমাদের দেশে শতকরা এক ভাগ বিয়েতেও শতভাগ মোহরানা দিয়ে হয় না। ৯৯ ভাগেরও বেশী বিয়েতে মোহরানা থাকে বাকি।

এখন বাকি থাকে বলেই ছেলেপক্ষকে পায়ের তলায় ফেলে যত দাম হাঁকানো যায় ততোই মঙ্গল! এই মানসিকতা নিয়েই আমরা আছি। অথচ অধিক মোহরানা কখনোই সংসারে আনে না। বরং এতে করে পাত্রপক্ষেরই বেশী ক্ষতি হয়।

কেননা ১৫/২০ লাখ টাকা মোহরানা লিখতে গিয়ে পাত্রী পক্ষকে কম করে হলেও ১০/১২ লাখের উপর খরচ করতে হয়। এখন যদি কোনো কারণে এই সংসার ভেঙ্গে যায়। তাহলে পাত্রী পক্ষ কখনোই ১৫/২০ টাকা ফেরত পায় না।

এইক্ষেত্রে বিভিন্ন হিসাবপত্র করে ৬০/৭০ শতাংশ টাকা ফেরত পেলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ টাকাও পাত্র পক্ষ দেয় না। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন আইনী মারপ্যাঁচে স্বামী এতো টাকা একসাথে দিতে অপারগ হলে তা মাসে মাসেও দেওয়ার সিস্টেম আছে। যা মাসে ৫০০/১০০০ ও হতে পারে।

সুতরাং ১০/২০ লাখ টাকা মোহরানা দিলেও কখনোই তা আদায় করা সম্ভব নয়। তাই এতো টাকা মোহরানা দাবি না করে অল্প টাকা মোহরানা ধরলেও তা নগদে আদায় করা উত্তম। এতে পারিবারিকভাবে সম্প্রীতি বাজায় থাকে।

পরোপকারী কিনা

সঠিক মানুষ চেনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, পরোপকারী হওয়া। যে মানুষ মানুষের বিপদে আপদে এগিয়ে এসে মানুষের উপকার করে। তিনি একজন অবশ্যই ভালো মানুষ। আর এই ধরনের পরোপকারী মানুষ পাত্র হিসাবে অর্থাৎ স্বামী হিসাবে খুবই ভালো। কেননা এদের মন হচ্ছে সৎ। আর সৎ মানুষের সংসারে অশান্তি থাকে না। 

মিতব্যয়ী কিনা

মিতব্যয়ী এমন একটি গুণ যা মানুষকে সামনে এগিয়ে যেতে এবং জীবনে উন্নতি সাধন করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। তাই যেসব পাত্ররা জীবনে মিতব্যয়ী হয়, তারা জীবনের একসময় না একসময় প্রভূত উন্নতি লাভ করে। এদের সাথে সংসার করে সাময়িক কষ্ট হলেও, একসময় না একসময় এদের সংসারে সুখ শান্তি অবশ্যই আসে। 

রুচিশীলতা ও ভদ্রতা

বিয়ের বাজারে ভ্রদ্র মানুষের চাহিদা সব সময়ই বেশী। কেননা যারা প্রকৃতভাবে ভ্রদ্র তারা সহজে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করে না। এরা নিজের দোষ হলে যেমন স্বীকার করে ঘরে শান্তি আনে। ঠিক তদ্রুপভাবে অন্যের ভুল হলেও ক্ষমা করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। তাই বিয়ে করার আগে পাত্র বাছাই করতে হলে অবশ্যই পাত্র নম্র ভ্রদ্র এবং রুচিশীল কিনা দেখা উচিত। 

ইগো সমস্যা না থাকা

আমাদের বর্তমান সংসার গুলো ভেঙ্গে যাওয়া অন্যতম কারণ হচ্ছে ইগো সমস্যা। পাত্র পাত্রী উভয়ই শিক্ষিত, চাকুরিজীবী। কেউ কারো চেয়ে কম নয়। তাই যেকোনো ভুল ত্রুটিতে কেউ কাউকে ছাড় দিবে না। কেউ এগিয়ে এসে ঝগড়া মিটমাট করবে না।

অথবা স্ত্রী চাকরি বাকরি না করলেও ভালো পয়সাঅলা ফ্যামিলির মেয়ে বলে সহজে স্বামীর কাছে ছোট হতে পারবে না। আবার স্বামীও চাকরি বাকরি ইত্যাদি করে টাকা ইনকাম করছে বলে, সেও স্ত্রীর কাছে ছোট হবে না।

এইযে একজন আরেকজনের কাছে নিজেকে স্বীকার না করাই হচ্ছে ইগো সমস্যা। যার কারণে আমাদের দেশে প্রচুর সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। আমি কি ওর থেকে কম নাকি? এই শয়তানী বাক্যের কারণে আমরা একে অন্যকে সরিও বলি না।

যারফলে আমাদের সংসার গুলোতে দূরত্ব দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। যার কোনো সমাধান কারো কাছে নেই। তাই এমন একজন পাত্র বাছাই করা উচিত, যার মধ্যে ইগোগত কোনো সমস্যা না থাকে। 

মতামত ও আদর্শের মিল

সংসারে শান্তি বজায় রাখতে চাইলে, কিংবা শান্তিতে সংসার করতে চাইলে। অবশ্যই আমাদের এমন পাত্রকে স্বামী হিসেবে পছন্দ করতে হবে। যার সাথে আমাদের আদর্শগত মিল থাকবে। যার যেকোনো বিষয়ের মতামতের সাথে আমাদের মতামতও মিলে, এমন পাত্রকে বাছাই করে বিয়ে করতে হবে।

যাতে ভবিষ্যতে সংসার এবং সংসারের বাইরে কোনো বিষয় নিয়েই ঝামেলা মতানৈক্য মনোমালিন্য ইত্যাদি না হয়। তাই জীবনের শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই আমাদের এই বিষয়টি জেনে নেওয়া উচিত।

শখ ও পছন্দ

আমাদের প্রতিটি মানুষের মধ্যেই নানান শখ ও পছন্দের বিষয় রয়েছে। আমরা সমগোত্রীয় পছন্দের বিষয়কে ভালোবাসি। আমি ব্রাজিল সাপোর্ট করলে আরেকজন ব্রাজিল সাপোর্টার খারাপ হলেও তাকে আমার ভালো লাগে। কারণ সে ব্রাজিল সাপোর্ট করে।

এই কারণে আমাদের এমন মানুষকে পাত্র হিসাবে নির্বাচন করতে হবে, যার সাথে আমাদের শখ ও পছন্দ গুলো মিলে যায়। যদিও প্রতিটি মানুষের সাথে অন্যের মিল শতভাগ কখনোই হতে পারে না। তবুও আমাদের চেষ্টা করতে হবে যাতে বেশিরভাগ বিষয় যেন মিলে যায়।

একজন বর্ষা পছন্দ অন্যজন করল শীত! তাহলে তারা কখনোই নিজেদের ভালোলাগাটা উপভোগ করতে পারবে না। তাই চেষ্টা করতে হবে পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের শখ ও পছন্দের বিষয় গুলো যাতে কাছাকাছি থাকে।

পাত্র পছন্দ হলে করণীয়

উপরোক্ত বিষয়গুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে যদি আমরা আমাদের পাত্র নির্বাচন করতে পারি। তাহলে আমাদের পরবর্তী করণীয় হবে বিয়ে করা। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ মানুষই বিয়ে করার সময় বিভিন্ন কারণ নানান ভুলত্রুি করে ফেলে। যা কখনোই উচিত নয়। এমনকি এইবার ভুলের মাশুল আজীবন দিতে হয়। তাই পাত্র পছন্দ হলেই করণীয় কী?

বিয়েতে তাড়াহুড়া না করা 

আমরা যদি উপরোক্ত পয়েন্টে আলোকে পাত্র নির্বাচন করতে পারি। তাহলে এর পরবর্তীতে আমাদের কিছু করণীয় রয়েছে। যার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিয়েতে তাড়াহুড়া না করা।

এই বিয়ে প্রেমের হোক কিংবা পারিবারিক সম্মতিতে হোক। আমরা বিয়েতে তাড়াহুড়া করব না। খুবই ধীরে সুস্থে একে অপরের সাথে সার্বিক আলাপ আলোচনা করে বিয়ের প্রতিটি ধাপ এগোব। 

চাকুরী না কি সংসার সিদ্ধান্ত আগে

যারা চাকুরিজীবী মহিলা আছেন, তারা বিয়ের আগেই এটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবেন যে, আপনি সংসার কীভাবে করবেন? চাকরি করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনার পরিপূর্ণ সংসার করা সম্ভব নাও হতে পারে।

আবার সম্ভব হলেও তা আপনার উপর জবর হতেও পারে। তাই সিদ্ধান্ত আগে নিন। স্বামী কী চাই বা তার এবং আপনার পরিবার কী চাই। যদি চাকরি করা পছন্দ করে, তাহলে সংসারের সমস্যার সমাধান কী? সেটাও আগে আলোচনা করেই ঠিক করে নিন।

আপনি মনে মনে আপনারটা ভেবে বিয়ে করে ফেলেছেন। প্রথম দিকে স্বামীও কিছু বলেনি। কিন্তু ধীরে ধীরে স্বামীর চাহিদা, পরিবারের চাহিদা শ্বশুর শ্বাশুড়ির চাহিদা কিংবা সন্তানের চাহিদা ইত্যাদি বেড়ে গেলে আপনি কী করবেন?

বিয়ে করে কখনোই এইসব থেকে নিজেকে নিষ্কৃতি দিতে পারবেন না। তাই সিদ্ধান্ত আগেই নিতে হবে। কীভাবে কী করে এইসব আপনারা সামলাবে। তাও আবার স্বামী স্ত্রী দুজনকে মিলেই।

পাত্র নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দিক

আমরা এতক্ষণ পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে জাগতিক মানবিক সামাজিক ইত্যাদি গুণাবলী সমূহ আলোচনা করেছি। এখন আমরা যে বিষয় বা গুণ গুলো নিয়ে আলাপ করব, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যতম গুণাবলী। যা না হলে কখনোই ঐ পাত্রকে বিয়ে করা যাবে না। আর যা থাকলে বাকি গুণাবলী কম হলেও এই গুণাবলীর কারণে তাকে বিয়ে করা। 

দ্বীনদার ও চরিত্রবান

আমরা এখন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ের আলাপ আলোচনা করব। যার প্রথম শর্ত হচ্ছে, পাত্র অবশ্যই অবশ্যই দ্বীনদার ও চরিত্রবান হওয়া। অর্থাৎ মুসলিম ছেলে হলে, অবশ্যই তাকে ইসলামের দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। এবং সে ইসলামকে মেনে চলে কিনা তাও যাচাই বাছাই করতে হবে।

পাত্রকে অবশ্যই দ্বীনধর্ম পালন করতে হবে। যার মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ থাকবে না। সেই ছেলের বিয়ে দেওয়া কখনোই যৌক্তিক নয়। কেননা আমরা এতক্ষণ যেসব গুণাবলী গুলো আলাপ আলোচনা করলাম। সেই গুণাবলী গুলো দ্বীনদার হওয়া ছাড়া অর্থহীন।

তাই দ্বীনদার হওয়ার পাশাপাশি উপরোক্ত গুণাবলী গুলো পাওয়া যায়, তাহলে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দেওয়া হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা ভালো মন্দ বিষয় গুলো হচ্ছে আপেক্ষিক। একজন অপরাধীর কাছে খারাপ কাজ করা মানেই হচ্ছে ভালো। আরেকজন ভালো মানুষের কাছে খারাপ কাজ করাই হচ্ছে মন্দ।

সুতরাং ভালো মানুষের যা ভালো হবে, তাই হবে আমাদের জন্য ভালো। আর তাই বিয়ের পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্যান্য সকল গুণাবলীর সামনে এই দ্বীনদার এবং চরিত্রবান গুণটিই হবে সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ। 

প্র্যাকটিসিং মুসলিম কিনা যাচাই করুন

শুধু দ্বীনদার হলেও হবে না। অনেকেই আছেন ধর্মকর্ম করেন। কিন্তু শিরক বিদআত মেনে চলেন না। আনুষ্ঠানিক ইবাদত সব করেন ঠিকই। কিন্তু অন্তর থেকে ইসলামে ওতপ্রতভাবে জড়িত নয়। তাই আমাদের পাত্রকে দ্বীনদার হওয়ার পাশাপাশি সে প্র্যাকটিসিং মুসলিম কিনা তা যাচাই করতে হবে।

সে যদি আসলেই সত্যিকারের ইসলাম নিয়মিত পালন করে থাকে তাহলে তার চেয়ে উপযুক্ত পাত্র আর কেউ হতে পারে না। তাই আমাদের পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সে পাত্র পরিপূর্ণ ইসলাম মেনে চলে কিনা তা যাচাই বাছাই করতে হবে। 

নিজে দ্বীনদার হওয়া

পাত্র নির্বাচনে সর্বশেষ কথা হলো, নিজে একজন নারী হিসাবে উপযুক্ত দ্বীনদার পাত্রের জন্য নিজেকে দ্বীনদার হিসাবে তৈরি করা। আপনি নিজে দ্বীনদার না হয়ে, কখনোই আরেকজন দ্বীনদার পাত্রের স্ত্রী হতে পারেন না। তাই নিজেকে আগে একজন দ্বীনদার পাত্রের জন্য তৈরি করুন। এবং আরেকজন দ্বীনদার মানুষের খোঁজ করুন। তাহলেই সুখী সমৃদ্ধ দাম্পত্য জীবন আপনি গড়তে পারবেন।

সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে

এই প্রবাদ বাক্যটি আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। আসলেই এটা সত্য। একজন নারী কিংবা স্ত্রী, মা, বোন, শ্বাশুড়ি ইত্যাদি সকল নারীদের কারণেই মূলত সংসারে শান্তি বিরাজ করে। পুরুষের একক প্রচেষ্টায় কখনোই সংসারে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় না। যদি তাকে তার স্ত্রী এবং মা উভয়ই সাহায্য সহযোগিতা না করে।

আর তাই একজন নারীর শুধু তার স্বামীটি উপযুক্ত হিসাবে বেছে নিলেও, তার সংসারে যদি শ্বাশুড়ি নামক রমনীর সাহায্য সহযোগিতা না থাকে। তাহলে সেই সংসার শান্তির বদলে অশান্তি বিরাজ করবে।

কেননা স্বামী তো স্বামীই সে কি কখ‌নো তার মায়ের বিরুদ্ধে কিংবা উপরে কথা বলতে পারবে নাকি বলা উচিত? তাই পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১ নাম্বার পাত্র নির্বাচন করলেও তার শ্বাশুড়ি যদি ভালো না পড়ে। তাহলে তার কপালে দুঃখ আছে। যেকারণে পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে পাত্রের মাকেও যাচাই বাছাই করা খুবই জরুরী।

একহাতে তালি বাজে না 

কাউকে উৎসাহ কিংবা কারো প্রসংশার জন্য আমাদের তালি দিতেই হয়। আর এই তালি কখনোই এক হাতে হয় না। তাই সংসারের ক্ষেত্রেও কখনোই একজনের বিরামহীন প্রচেষ্টায়ও কিছুই হবে না। যদি স্বামী স্ত্রী উভয়ই যৌথ উদ্যোগে ভালো থাকার প্রচেষ্টা না করে।

তাই শুধু ভালো পাত্র নির্বাচন করলেই সব শেষ নয়। এই ভালো পাত্রকে ভালো রাখতে হলে, এবং এর থেকে ভালো কিছু পেতে হলে আমাদেরও যথেষ্ট পরিশ্রম এবং সাহায্য সহযোগিতা ও অধ্যবসায় করতে হবে।

একজন উপযুক্ত স্বামী ঘরের বাইরে সামলালে, আরেকজন উপযুক্ত স্ত্রীর কাজ হবে ঘরের ভিতরাটা সামলানো। তাই বিয়ে করতে শুধু উপযুক্ত পাত্র নির্বাচন করলেই সব অর্জন হয়ে যাবে না। এই অর্জনের বেনিফিট নিতে চাইলে, আমাদেরও সমান তালে সংসারের জন্য কাজ করে যেতে হবে। তাহলেই একটি সংসারে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠিত হবে। 

ঠান্ডা মাথায় কৌশলী হোন 

আমাদের দেশে দেখা যায় বিয়ের পরপরই স্ত্রীর নানান খুটিনাটি দোষত্রুটি ধরতে সবাই উঠেপরে লেগে যায়। পাত্র পক্ষের অধিকাংশ  লোকেরাই  বিয়ের পর লেগে যায় কনেপক্ষের  নানান ভুলত্রুটি বের করতে। শ্বশুরবাড়ির অধিকাংশ লোকজনই যেন একটি যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ।

বিশেষ করে বিয়েতে কে কী দিল, কেন দিল, কেন দিল না ইত্যাদি প্রশ্ন নিয়ে গবেষণাই চলে বহুদিন। এই জাতীয় সমস্যায় অনেক নারীই সবকিছু সামলে নিতে পারে না। তাই এইক্ষেত্রে নববধূকে অসম্ভব কৌশলে সবকিছু হ্যান্ডেল করতে হবে। যাতে সাপ মরবে কিন্তু লাঠি ভাঙ্গবে না।

এমতাবস্থায় স্ত্রীর প্রথম কাজ হবে স্বামীকে আয়ত্ত করা। আপনি যদি উপরের দিকনির্দেশনা মেনে একজন ভালো স্বামী নির্বাচন করতে পারেন। তাহলে আপনার জন্য সবকিছুই হবে সহজ। এখন স্বামীকে দিয়ে আপনাকে আপনার শ্বশুরবাড়ির পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

যে যত কৌশলে এই কাজ করতে পারে, সে ততবেশী সংসার করতে সফল। আর তাই সংসারের শুরুতে এইজাতীয় পরিস্থিতিতে কখনোই মন খারাপ না করে, কিংবা বাপের সবকিছু জানিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে না করে নিজেকেই সবকিছু সামলে নিতে হবে।

বিয়ে যখন হয়েই গেছে, তখন পুরোনো কোনো কিছু নিয়ে কথা বাড়ানো কিংবা নতুন কোনো কিছু নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করা ভালো হবেনা। চেষ্টা করতে হবে দুই পরিবারের মধ্যে সর্বদা যেন সমঝোতা বজায় থাকে।

আর সবচেয়ে বেশী ভালো হবে শ্বশুরবাড়ির   সদস্যদের কার কী রুচি তা আগেভাগে জেনে সেইমতো তাদের বিভিন্ন সেবা ও সুবিধা প্রদান করা। একইভাবে নিজের কী রুচি অভিরুচি তা স্বামীকে জানানো। সেইসাথে শ্বশুরবাড়ির লোকদের মন জয় করতে স্বামীর সাহায্য সহযোগিতা কামনা করা।  

আর এভাবেই একটি ভালো মন মানসিকতা নিয়ে  শ্বশুরবাড়ির লোকদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে, একসময় না একসময় এরা সবাই আপনার অনুগত হয়ে যাবে। এইসব ক্ষেত্রে কখনোই ইগোগত বিষয় সামনে আনা যাবে না। 

আপনি কত বড় বাড়ির সন্তান। আপনার এতো এতো সার্টিফিকেট ডিগ্রী। আপনার বাপের বাড়ির এতো এতো টাকা পয়সা কখনোই আপনার সংসার সুখের হওয়ার নিয়ামক হবে না। আপনার সংসার আপনাকেই সুখী করতে হবে। সুতরাং সবকিছুতে নিজের ভবিষ্যৎ লাভের জন্য কৌশলী হতে হবে। 

প্রিয় বন্ধুরা আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম একটি সুখী সমৃদ্ধ দাম্পত্য জীবনে সঠিক পাত্র নির্বাচনে করণীয় কী। একইসাথে আমরা জানলাম একজন ছেলের কী কী গুণ থাকলে তা আমরা পাত্র হিসাবে নির্বাচন করতে পারি। তাই আসুন আপনারা উপরন্তু গুণাবলীর উপর আপনাদের হবু স্বামীকে নির্বাচন করুন।

যাতে করে এই এক বিয়ে করেই যেন আমরা সুখী সমৃদ্ধ সংসার করতে পারি তারজন্য পাত্র নির্বাচনে বিয়ের আগেই আমাদের নানান করণীয় রয়েছে। আর এইসব নির্দেশনা সঠিকভাবে মানতে পারলে বিয়ের পর আমরা আমাদের স্বামীদের সাথে নিয়ে একটি সুখী সমৃদ্ধ দাম্পত্য জীবন গড়ে তুলতে পারি। আশাকরি পাত্র নির্বাচন সংক্রান্ত এই আর্টিকেলটি আপনাদের সুখী দাম্পত্য জীবন গড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

Share this article

Content Writer
Lives in Chattogram, Bangladesh
জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলাম। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখছি। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস।
Comments
guest
2 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
Yasin Arafat
Yasin Arafat

সময়োপযোগী পোস্ট। এই পোস্টটি পড়ে পাত্র নির্বাচনে করণীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।

StudyKoro
Admin
StudyKoro
Reply to  Yasin Arafat

ধন্যবাদ আপনাকে।

Related articles

পিল খাওয়ার নিয়ম

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম: পিল খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে পিল খাচ্ছেন তো!

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম না জেনে নিজের খেয়াল খুশি মতো সাধারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা ইমার্জেন্সি পিল খেলে হতে পারে নানাবিধ সমস্যা। এই পোস্টের মাধ্যমে পিল বা জন্মনিরোধক বড়ি খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে পারবেন।

English blog

1. Images Source: Pxfuel

ক্যাটাগরি

অনুসন্ধান করুন

সঠিক কিওয়ার্ড লিখে খুঁজে নিন আপনার দরকারি পোস্টটি!

Share this page
কেমন ছেলে বিয়ে করা উচিত

পাত্র নির্বাচনে করণীয়: কেমন ছেলে বিয়ে করা উচিত | বিয়ের জন্য পাত্র দেখার নিয়ম

https://www.studykoro.com/groom-selection-for-marriage/

Report this book

Let us know if you notice any incorrect information about this PDF book. Also, please let us know if the given PDF file is banned for sharing; we will remove it as soon as possible. 

User Profile Picture

YourName