আমাদের সমাজে রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবার সংস্কৃতিটা সেইভাবে প্রচলিত না বটে। তবে এটা মোটামুটি কমন ঘটনা। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে বেশ কয়েক বছর ধরে রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক হচ্ছে।
আপনি যদি পরিণত বয়সের কেউ হোন এবং আপনার সাথে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এমন কোনো নিকটাত্মীয়কে বিয়ে করবেন কিনা এই ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন, তবে আজকের এই লেখাটি আপনার জন্য। একটু ধৈর্য্য ধরে পুরো লেখাটি পড়লে আমি নিশ্চিত আপনার মনে থাকা সব কনফিউশন দূর হয়ে যাবে। আপনি অতি সহজেই ভেবে চিন্তে একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন। চলুন শুরু করা যাক।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের প্রচলন
কাজিন ম্যারেজ বা নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে নিয়ে নানা তথ্য নিচে দেয়া হলো।
১. বাংলাদেশ: আমাদের বাঙালি সোসাইটিতে চাচাতো, খালাতো, ফুুফাতো, মামাতো ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ের প্রচলন রয়েছে। তবে তুলনামূলক শহরাঞ্চলে এই সংখ্যাটা কম। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এই ধরনের বিয়ের সংখ্যা মোটামুটি ভালোই বলা যায়।
সাধারণত গ্রামের পরিবেশে ছেলেমেয়েদের মধ্যে খোলামেলা বন্ধুত্ব সর্বসাধারণের কাছে গ্রহনযোগ্য হয় না। সেখানে ছেলেমেয়েদের মধ্যে সামাজিক ভাবে মেলামেশা করার সুযোগ খুব কম থাকার ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের জীবনের প্রথম প্রেমটা হয় কোনো কাজিন বা রক্ত সম্পর্কীয় কোনো নিকটাত্মীয়ের সাথে।
তাছাড়া অনেক মানুষ দূরবর্তী কারোর সাথে বিয়ের সম্পর্কে যেতে নারাজ। একদম পরিচিত নিজস্ব গন্ডির মধ্যে থাকতে চায়। তারাই সাধারণত রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে করার বেশি পক্ষপাতী।
২. ভারত: আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অসংখ্য জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়কে বিয়ে করা অর্থাৎ Cousin Marriage বিষয়ে বেশ আগ্রহী। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩০% থেকে ৫০% জনগোষ্ঠী কাজিন ম্যারেজ করে থাকে। বিশেষ করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে এর প্রচলন বেশি। হিন্দু জনগোষ্ঠী আবার কাজিন ম্যারেজের বিপক্ষে।
ভারতের তামিল নাড়ু অঞ্চলে যুগের পর যুগ ধরে কাজিন ম্যারেজ, রক্ত সম্পর্কিত অন্যান্য আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে প্রচলিত। সেখানে নিজস্ব গোত্রের বাহিরে কেউ বিয়েই করে না। সেখানে এত মারাত্মক ভাবে এটা প্রচলিত যে, আপন মামা পর্যন্ত ভাগ্নিকে বিয়ে করতে পারে। অর্থাৎ তামিল নাড়ু জনগোষ্ঠী তাদের পূর্বপুরুষ থেকেই বিয়ের এই রীতিনীতি মেনে আসছে। সেখানে বিয়ে মানেই একদম কাছের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে হতে হবে।
আরও দেখুন: কেমন ছেলে বিয়ে করা উচিত
ভারতের কেরালায় এই রীতি চালু রয়েছে। কিন্তু সেখানে কেবল আপন ফুপাতো ভাই/বোন অথবা আপন মামাতো ভাই-বোনকে বিয়ে করা যাবে। বাকী কাজিনরা আপন ভাইবোনের মতো গণ্য হবে।
কিন্তু সম্প্রতি ভারতের পাঞ্জাব ও হারিয়ানা হাইকোর্ট এই কাজিন ম্যারেজকে পুরোপুরি অবৈধ ঘোষণা করেছে। নর্থ ইন্ডিয়াতেও এটি অবৈধ বলে গণ্য। [ তথ্যসূত্র১ ]
৩. পাকিস্তান: পাকিস্তান হলো একটা মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। সেখানেও কাজিন ম্যারেজ বা রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে কমন ও খুব জনপ্রিয় একটি প্রথা। Malakand District of Khyber Pakhtunkhwa Province (KPK) এর দেয়া ডাটা ও উপাত্ত থেকে জানা যায় পাকিস্তানের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬০% থেকে ৬৬% মানুষ বিয়ে করে তাদের খুব নিকটাত্মীয়ের সাথে, যাদের সাথে রয়েছে রক্তের সম্পর্ক।
৪. মধ্যপ্রাচ্য: সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে Middle East বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কাজিন ম্যারেজ। সৌদি আরবের একটি সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, সেখানে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০% মানুষ বিয়ে করে তাদের ফার্স্ট কাজিন অথবা সেকেন্ড কাজিনের মধ্যে কাউকে।
সৌদি আরবের পরে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে ইরাক। ইরাকে ৩৩% এবং আফগানিস্তানে ৩০-৪০% মানুষ বিয়ে করে তাদের ফার্স্ট কাজিন (আপন চাচাতো, খালাতো, মামাতো, ফুফাতো ভাই-বোন) অথবা সেকেন্ড কাজিনকে (মা-বাবার কাজিনদের ছেলে-মেয়ে)। এছাড়াও আলজেরিয়া, বাহরাইন, মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশেই রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের সংস্কৃতি পৃথিবীর অন্য সব দেশগুলোকে হার মানায়। [ তথ্যসূত্র২ ]
৫. পূর্ব এশিয়া: East Asia বা পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কাজিন ম্যারেজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। চীন, তাইওয়ান, নর্থ কোরিয়া, সাউথ কোরিয়া, ফিলিপাইনসহ আরো বিভিন্ন দেশে রক্তের সম্পর্কের নিকটাত্মীয়কে বিয়ে করা ক্লিয়ার নিষেধ। তবে জাপানে ফার্স্ট কাজিন বিয়ে নিষিদ্ধ। কিন্তু সেকেন্ড কাজিন বা রক্তের সম্পর্কের একটু দূরবর্তী আত্মীয়কে বিয়ে করার ক্ষেত্রে জাপানে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। [ তথ্যসূত্র৩ ]
৬. আমেরিকা: আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়া, ফ্লোরিডা, আলাবামা, কলোরাডো সহ আরো ২৪টি State বা প্রদেশে ফার্স্ট কাজিনকে বিয়ে করা সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু বাকী প্রদেশগুলোতে কিছু শর্ত সাপেক্ষে ফার্স্ট কাজিনকে বিয়ে করা যায়। আমেরিকার কয়েকটি প্রদেশে বয়স ৫০ বা ৬৫ এর বেশি হলে কেবল ফার্স্ট কাজিনকে বিয়ে করতে পারবে, অন্যথায় নয়। [ তথ্যসূত্র৪ ]
৭. ইউরোপ: ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে কাজিন ম্যারেজের প্রচলন রয়েছে। কেবল জার্মানি, পোল্যান্ড সহ খুব কম সংখ্যক কয়েকটি দেশে ফার্স্ট কাজিনকে বিয়ে করা নিষেধ। ইংল্যান্ডেও এর প্রচলন রয়েছে, তবে সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে সরকারি ভাবে ফার্স্ট কাজিন ম্যারেজের বিরুদ্ধে প্রচারণা চলছে। [ তথ্যসূত্র৫ ]
৮. আফ্রিকা: আফ্রিকা মহাদেশের ম্যাক্সিমাম দেশেই কাজিন ম্যারেজের ব্যাপারে কোনো বাঁধা নেই। সেখানে ফার্স্ট কাজিনকে বিয়ে করার কালচার রয়েছে। মোটকথা– সেখানে পরিণত বয়সের যেকোনো মানুষ, সে কাকে বিয়ে করবে, কার সাথে লিভ টুগেদার করবে এটা সম্পূর্ণ নিজস্ব স্বাধীনতা। একটি পরিসংখ্যানে পাওয়া গেছে, আফ্রিকার ৩০-৩৫% মানুষ কাজিন ম্যারেজ করে থাকে। আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়ায় এমন অনেক বিশাল সংখ্যক উপজাতি সম্প্রদায় রয়েছে যারা অনায়াসে ফার্স্ট কাজিনকে বিয়ে করে। [ তথ্যসূত্র৬ ]

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের ফলাফল
জেনেটিক ডিসঅর্ডার: চিকিৎসা বিজ্ঞান রক্তের সম্পর্কের নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে করাকে সমর্থন করে না। বিভিন্ন গবেষণায় এরকম অনেক তথ্য উঠে এসেছে যে, একই বংশের বিশেষ করে ফার্স্ট কাজিনদের মধ্যে বিয়ে হলে তাদের সন্তানের জেনেটিক ডিসঅর্ডার হবার সম্ভাবনা অনেক।
যুক্তরাজ্যের ব্রাডফোর্ড শহরে বসবাসরত পাকিস্তানি বংশদ্ভূত প্রচুর মানুষের উপরে গবেষণা করে পাওয়া গেছে, যারা অতি নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে করেছে, সেখানে জন্মগ্রহনকারী শিশুদের মধ্যে জিনগত ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা অন্যান্য সাধারণ শিশুদের তুলনায় ৩০% বেশি। Genetic Disorder বা জিনগত ত্রুটি থাকলে অনেক শিশুর হাত বা পায়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আঙুল গজানো, হৃৎপিন্ডে ছিদ্র, মস্তিষ্কের গঠনে ত্রুটিসহ আরো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরও দেখুন: বিয়ের জন্য পাত্রী নির্বাচনে করণীয়
বংশগত রোগের প্রাদুর্ভাব: আধুনিক জেনেটিক বিদ্যার জনক স্যার গ্রেগর মেন্ডেলের মানুষের জিনতত্ত্বের উপরে একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, একই জিন ধারণকারী মানুষগুলোর মধ্যে একই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
অর্থাৎ একই বংশের মানুষগুলোর মধ্যে জিনগত সম্পর্ক থাকার ফলে তাদের জিনগত সমস্ত বৈশিষ্ট্যই বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে। পরিবারের কারোর যদি কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি থাকে, এটা খুবই সম্ভব যে, সেই রোগটি তার পরবর্তী বংশধরদের মধ্যেও বিস্তার লাভ করবে। আর যদি বিয়ে করা হয় ফার্স্ট কাজিন বা সেকেন্ড কাজিনকে, তবে তো বংশগত রোগগুলোর বিস্তার লাভ করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
এই ধরনের বিয়ের ফলে জন্ম নেয়া অধিকাংশ নবজাতকদের মধ্যে ডায়াবেটিস মেলিটাস, ব্রেস্ট ক্যানসার, আর্থ্রাইটিস, ভিটামিন ‘ডি’ ডেফিসিয়েন্সি, চোখে কম দেখা, কানে কম শোনা ইত্যাদি আরো অনেক রোগ বেশি দেখা যায়।
বিজ্ঞান বলে, ফার্স্ট কাজিনদের মধ্যে অন্তত ১২% জিনগত মিল থাকে। ফলে এটার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে যে, কাজিন ম্যারেজের ফলে জন্ম নেয়া শিশুরা বংশগত রোগগুলোতে বেশি আক্রান্ত হয়।মিশরে কাজিন ম্যারেজের মারাত্মক প্রচলন রয়েছে। একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, মিশরে জন্ম নেয়া অধিকাংশ নবজাতকের Recessive বা প্রচ্ছন্ন জন্মগত রোগের হার তুলনামূলক অনেক বেশি।
কাতারে প্রচুর সমগোত্রীয় বিয়ে হয়। এর ফলে সেখানেও প্রচুর নবজাতক জেনেটিক ডিসঅর্ডার, ডায়াবেটিস, মৃগী রোগ, শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা– এই রোগগুলো নিয়েই তারা জন্মগ্রহণ করে। বিশ্বের বহু দেশে বসবাসরত দম্পতি ও তাদের সন্তানদের উপরে গবেষণা চালিয়ে এটা জানা গেছে, রক্তের সম্পর্কের মধ্যে কিংবা সমগোত্রীয় বিয়ের ফলাফল অন্যান্য সাধারণ বিয়ের তুলনায় যথেষ্ট খারাপ হয়।
যৌন আবেগ অনুভূতির ঘাটতি: একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে বিশেষ করে ফার্স্ট কাজিনদের মধ্যে বিয়ে হলে, সেই দম্পতির মধ্যে যৌন আবেগ ও অনুভূতি বাকী সাধারণ দম্পতির চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম থাকে। কারণ এদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক থাকে বিধায় জিনগত অনেক মিলও থাকে।
দুজন নারী-পুরুষের মধ্যে জিনগত যতো মিল থাকবে, তাদের মধ্যে যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা ততোই কম। আপনি ভেবে দেখুন, একই পরিবারের মধ্যে ছোটোবেলা থেকে বেড়ে ওঠা দুজন মানুষ, যারা অনেকটা ভাই-বোনের মতো বড় হয়েছে; তাদের মধ্যে খুব স্বাভাবিক ভাবেই যৌন অনুভূতি খুব কম থাকাটাই স্বাভাবিক, যেটা পরিবারের বাহিরে অন্য কোনো নারী বা পুরুষের সাথে বিয়ে হলে হতো না।
সামাজিক বন্ধন কমে যাওয়া: সাধারণত নিজস্ব গোত্র, বংশ বা ফ্যামিলির বাহিরে বিয়ে করলে নতুন নতুন অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয়, আত্মীয়তার বন্ধন তৈরী হয়। এর ফলে পরিচিত মানুষের গন্ডি বৃদ্ধি পায়, সামাজিক বন্ধন আরো দৃঢ় হয়।
অন্য বংশ বা পরিবারের থেকে নতুন নতুন অনেক জিনিস শেখা যায়, জানা যায়। কিন্তু রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে করার প্রচলন থাকলে মানুষ নিজস্ব গন্ডির বাহিরে যেতে পারে না। সামাজিক ভাবে অন্যদের থেকে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। মানুষ হলো সামাজিক জীব, সেই হিসেবে কেবল নিজের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকার তেমন কোনো বেনিফিট নেই।

ইসলামের দৃষ্টিতে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের ফলাফল
মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআনের কোথাও রক্তের সম্পর্কের নিকটাত্মীয়কে বিয়ে করাকে সরাসরি ‘হারাম’ বা ‘নিষেধ’ বলে উল্লেখ করা হয় নি। এমন কোনো আয়াত নেই, যেখানে সরাসরি কাজিন ম্যারেজকে ‘হারাম’ বলা হয়েছে।
সূরা নিসার ২৩-২৪ নং আয়াতে ১৪ জন নারীর কথা উল্লেখ আছে, যাদেরকে বিয়ে করা পুরুষের জন্য সরাসরি নিষেধ করা হয়েছে। সেই ১৪ জন নারীর মধ্যে আপন চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুপাতো বোনের কথা বলা হয় নি। তাই বলা যায়, ইসলামে কাজিন ম্যারেজের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কখনো উৎসাহ দেয়া হয় নি।
মনে করুন, আপনার ফ্রিজে কিছু খাবার নষ্ট অবস্থায় পেলেন। এখন যদি আপনাকে প্রশ্ন করি যে, সেই নষ্ট খাবার খেলে ইসলামের দৃষ্টিতে পাপ হবে কি-না? উত্তরটা নিশ্চয়ই বলবেন– ‘নষ্ট খাবার খেলে কোনো পাপ হবে না।’ কিন্তু পাপ হবে না বলে ইচ্ছে করেই কি আপনি সেই নষ্ট হওয়া খাবারটা খাবেন? নিশ্চয়ই খাবেন না। কারণ আপনি জানেন, সেই খাবার খেলে আপনার অসুস্থ হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
এই কথাগুলো শুধু এটা বুঝানোর জন্য বললাম যে ইসলামে কাজিন ম্যারেজ নিষিদ্ধ নয়। বরং অনেক সাহাবী-পয়গম্বর ছিলেন, যারা এমন বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে, পরিবেশ পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে আমরা এখন দেখছি যে, রক্তের সম্পর্কের নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের ফলাফল ভালোর চেয়ে খারাপ হবার সম্ভাবনা বেশি।
যেই কাজের ফলাফল আমাদের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর হবার সম্ভাবনা রয়েছে, জেনে-বুঝে সেই কাজ করার কি অর্থ থাকতে পারে? সূরা আল বাক্বারাহ-১৯৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
"আর নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের পথে ছুঁড়ে দেবে না। ভালো কাজ সুন্দরভাবে করো। যারা ভালো কাজ সুন্দরভাবে করে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ভালবাসেন।"
এই আয়াত আমাদেরকে কী শিক্ষা দিলো? আমরা আমাদের বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে যদি বুঝতে পারি যে, কোনো একটা কাজ আমাদের জীবনের জন্য কোনো না কোনো ভাবে উপকারের চেয়ে ক্ষতিটাই বেশি ডেকে আনছে, তবে সেই কাজটি পরিহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
কাজিন ম্যারেজ সম্পর্কে হাদিস
আমরা এতক্ষণে জানলাম আল কুরআনের কোনো আয়াতে কাজিন ম্যারেজকে নিষিদ্ধ করা হয় নি। আর হাদিসেও এধরনের কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে একটা কথা লক্ষ্য রাখা উচিৎ– কোরআন ও হাদিসে কাজিন ম্যারেজকে নিষিদ্ধ না করলেও, কোথাও কিন্তু উৎসাহও দেয়া হয়নি।
অর্থাৎ এটাকে মুবাহ বা ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে। তাই কাজিন ম্যারেজকে ভুলেও ইসলামিক কালচারের মধ্যে গণ্য করা যাবে না। বরং এটা এমন একটা কাজে, যেটাতে কোনো পাপ হবে না, আর এমন বিয়ে করলে অতিরিক্ত কোনো পূণ্যও হবে না। এটা আপনার জন্য ঐচ্ছিক একটা কাজ।
কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পাওয়া গেছে এমন বিয়েতে যথেষ্ট স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি রয়েছে। তাই এটা থেকে দূরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
কাজিন ম্যারেজ সম্পর্কে ইসলামিক স্কলারদের মতামত
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেছেন, “যে সম্প্রদায়ের মহিলারা বাইরের কোন পুরুষকে বিবাহ করে না এবং পুরুষেরা বাইরের কোন মেয়েকে বিবাহ করে না, তাদের সন্তান হয় বোকা ধরনের।” (আল ইনতিকা ফি ফাদায়িলিস ছালাছাতিল আয়িম্মাঃ ১/৯৮)
ইমাম গাযযালী (রহঃ) পাত্রী পছন্দ করার ব্যাপারে যেসব দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, তার মধ্যে একটা হল- পাত্রী যেন নিকটবর্তী আত্মীয় না হয়। কেননা, তা তাদের জৈবিক কামনাকে কমিয়ে দেবে। (ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন:২/৪১)
তো প্রিয় পাঠক, সবশেষে একটা কথাই বলতে চাই– আমরা মানুষ, আমাদের রয়েছে উন্নত চিন্তাশক্তি। যেকোনো কাজ করার আগে বা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সেটার পজেটিভ ও নেগেটিভ দিকগুলো ভালো করে ভেবে নেয়া উচিত। রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়কে বিয়ে বা কাজিন ম্যারেজের ক্ষেত্রে যেসব ঝুঁকি রয়েছে, সেগুলো উল্লেখ করলাম। এমনটা যে হবেই হবে, তা কিন্তু নয়। কিন্তু হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এবং ইতিমধ্যে এর প্রমাণের সংখ্যাটাও কিন্তু কম নয়। তাই সবকিছু ভেবে সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে।
Its an amazing news for us..thanks for this content.
Thank you so much for your comment.
নিকটাত্মীয় বিয়েতে সমস্যা জানার পরও একদল লোক এবিয়ে করবেই।
ঠিক বলেছেন।