ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় | ডিপ্রেশন দূর করার কার্যকরী উপায়

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

সূচিপত্র

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়: শরীরের ক্ষত দেখা যায় কিন্তু মনের ক্ষত কেউ দেখে না। তাই তো আমরা শুধু শরীরের যত্ন নিতেই অভ্যস্ত কিন্তু মনের খরব কি আমরা রাখি? শরীরের যেমন রোগ হয় ঠিক তেমনি হয় মনের রোগ। মনের রোগ বা মানসিক রোগের প্রভাব শারীরিক রোগের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। মানসিক রোগের ভাগ অনেক, তার মধ্যে ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা অন্যতম একটি অবসাদের নাম। আজকাল প্রতিটি মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময়ে গিয়ে ডিপ্রেশনে পড়ছেন। সময়ের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে বাড়ছে ডিপ্রেশন। আধুনিকতার সাথে ভারী হচ্ছে ডিপ্রেশনের পাল্লা। এই ডিপ্রেশন মানুষকে ধীরে ধীরে ধূসরতায় ঠেলে দেয়। রঙীন মানুষকে করে দেয় বর্ণহীন। চলুন আজ না হয় আলোচনার বিষয়বস্তু হোক ডিপ্রেশন।

ডিপ্রেশন কী?

ডিপ্রেশন শব্দটি বর্তমানে বহুল প্রচলিত। এটি শুধু শব্দ নয় এটি একটি মারাত্মক মানসিক রোগ। বর্তমান সময়ে ভয়ংকর হারে ডিপ্রেশন বেড়েই চলেছে। মানুষের হতাশার শেষ নেই। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ডিপ্রেশন মানুষের পিছু ছাড়ছে না।

সাধারণত মন খারাপ, কাজে অনীহা, উদাসীনতা এগুলো থেকে ডিপ্রেশনের শুরু হয়। অনেক সময় বেশি স্ট্রেসেও ডিপ্রেশন তৈরী হয়। এমন ডিপ্রেশন মাঝেমধ্যে আসে আবার চলেও যায়। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি ২ সপ্তাহ বা ১৪ দিনের অধিক এক নাগাড়ে মন খারাপ থাকে তবে তাকে ডিপ্রেশন বলে। এ ধরনের ডিপ্রেশনকে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনও বলে। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তির কোন কাজে মন বসে না, কোথাও বেড়াতে গেলে ভালো লাগে না, সব সময় চুপচাপ থাকেন, নিজেকে গুটিয়ে রাখেন।

World Health Organisation এর মতে, “২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে বিষন্নতা ভয়াবহভাবে ছড়াবে।” বিশ্বে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমশঃ বাড়ছে। দীর্ঘদিন ডিপ্রেশনে থাকা মানুষগুলোর কোন আবেগ-অনুভূতি থাকে না। অনেকেই খুব সহজে স্বেচ্ছামৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেয়।

বিষন্নতা থেকে মুক্তির উপায় কি
Depression Man Vectors by Vecteezy

ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলো কী কী?

ডিপ্রেশন হলে কী কী সমস্যা হয় দেখুন-

১. খিটখিটে মেজাজ।
২. প্রচন্ড মুড সুইং।
৩. সবসময় নেগেটিভ চিন্তা করা।
৪. একাকীত্বের অনুভূতি।
৫. যেকোন বিষয়ে আগ্রহ হারানো।
৬.কাজ-কর্মে মনোযোগ হারানো।
৭. অতিরিক্ত খাবারে আসক্তি আবার অনেক সময় খাবারে অনীহা।
৮. কোন কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া।
৯. সবসময় হাতাশাগ্রস্ত থাকা।
১০. অস্থিরতা কাজ করা।
১১. অনুভূতি না থাকা।
১২. আড্ডা-গল্পের আসরেও নিজের মতো চুপ থাকা।
১৩. সিদ্ধান্তহীনতা।
১৪. সবসময় উদাসীন থাকা।
১৫. পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের অবনতি।
১৬. ধীরে ধীরে মৃত্যু চিন্তা করা।

মানুষ কেন ডিপ্রেশনে ভোগে

প্রতিটি মানুষই জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে গিয়ে ডিপ্রেশনে পড়েন। চলুন জেনে নেওয়া যাক মানুষ কেন ডিপ্রেশনে ভোগে-

১. অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপ: ছাত্রাবস্থায় মানুষ বেশি ডিপ্রেশনে ভোগে অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপের কারণে। আজকাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এতো এতো চাপ যে দম ফেলার সময় নেই। ক্লাস, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, মিড টার্ম, ল্যাব, সেমিস্টার ফাইনাল সহ আরও কত কি! অনেক ছাত্রই এতো পড়ার চাপ নিতে পারে না। অনেকে ডাক্তার হবার বদলে ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছেন পরিবারের চাপে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও এটা পড়ার ফলে আস্তে আস্তে ডিপ্রেশনে চলে যায়। বাবা-মা প্রায়শই নিকট আত্মীয়-স্বজনের ছেলে মেয়ের সাথে তার সন্তানের পড়াশোনার তুলনা করে, আশানুরূপ সাফল্য না পাবার কারণে। এতে সন্তানের মনে প্রভাব পড়ে ও ডিপ্রেশন কাজ করে।

২. বয়ঃসন্ধিকালীন: বয়ঃসন্ধি প্রতিটি মানুষের জীবনের একটি অন্যতম অংশ। এ সময় ছেলে-মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মানসিক পরিবর্তনও হয়। কিন্তু বাবা-মায়েরা শুধুমাত্র শারীরিক পরিবর্তনের দিকেই গুরুত্ব দেন, কিন্তু মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন নয়। চুপচাপ থাকা, অনীহা, নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, রাগ প্রভৃতি এসময়ে দেখা দেয়। এমন ডিপ্রেশন অনেকের কেটে যায় আবার কারও কারও থেকেও যায়।

৩. বেকারত্বের কারণে: পড়াশোনা শেষ করে স্বাবলম্বী না হওয়া বা চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত সময়টাতে মানুষ খুবই ডিপ্রেশনে ভোগে। বেকার অবস্থায় বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে চলতে লজ্জা করে আবার না নিয়েও অনেক সময় উপায় থাকে না৷ ফলে ডিপ্রেশনের শুরু। বারবার জব ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি না পাবার হতাশা বড্ড ভয়াবহ। আশেপাশে মানুষের কটাক্ষের বিষয়টি অনেকেই নিতে পারেন না। ফলে কাঙ্খিত ফলাফল পেতে অনেক সময় দেরি হয় বা হয়তো সেই পর্যন্ত অনেকেই পৌঁছাতে পারে না। অনেকেই বেকার অবস্থায় শুধুমাত্র ডিপ্রেশনে পড়ে নেশাগ্রস্ত হয়, আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়।

৪. কর্মজীবনে অতিরিক্ত কাজের কারণে: বেকারত্বের চড়াই-উৎরাই পার করে মানুষ যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করে তখনও ডিপ্রেশন সৃষ্টি হয়। ধরুন একজন ব্যক্তি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কাজের চাপ, স্ট্রেস, যোগ্যতানুসারে কাঙ্খিত জবটি না পেলে, কম বেতন, জবে একঘেয়েমি বিষয়গুলোর সাথে ডিপ্রেশন সম্পর্কিত। প্রতিষ্ঠানের মালিক বা ব্যবসায়ীর চিন্তা প্রতিষ্ঠান কিভাবে চলবে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিভাবে ম্যানেজ করবেন, বেতন দিবেন, ব্যবসা কিভাবে বাড়বে ইত্যাদি। এমন বিভিন্ন কারণে কর্মজীবী মানুষও ডিপ্রেশনে পড়ে।

৫. দাম্পত্য কলহের কারণে: দাম্পত্য কলহ জীবনকে বিষাদময় করে তোলে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া, কলহ, মন খারাপ, মনোদ্বন্দ্ব, পাওয়া, না-পাওয়া হিসাব মেলানো প্রভৃতি কারণে ডিপ্রেশনের শুরু। দাম্পত্য জীবনের ডিপ্রেশন এতোটাই ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করে যেখানে ডিভোর্স ও আত্মহত্যার মতো বিষয়গুলো অহরহ ঘটে থাকে।

অনেক গৃহিণী তাদের জীবদ্দশায় সুখী নন। মেনে নেওয়া মানিয়ে নেওয়ার বিষয়গুলোর সাথে এডজাস্ট করতে করতেই একসময় তারা ডিপ্রেশনে পড়ে। যখন নিজেদের অস্তিত্ব যখন হারাতে বসে তখনই তারা প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ভোগে।

৬. হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে: হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হয়। খিটখিটে ভাব, অনীহা, মনমেজাজ ভালো না থাকা, মুড সুইং প্রভৃতি বিষয়গুলো হরমোনাল ইমব্যালেন্সের সাথে সম্পর্কিত। তাছাড়া মেয়েদের পিরিয়ড চলাকালীন সময় ও মেনোপজের পূর্ববর্তী-পরবর্তী সময় হরমোনের ইমব্যালেন্স হয়, যার ফলে ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হয়।

৭. গর্ভাবস্থায়: গর্ভাবস্থায় একজন নারী সবচেয়ে বেশি ডিপ্রেশনে ভোগেন। এই সময় এতো পরিমাণে হরমোনের ওলট-পালট হয় সেটা অবর্ণনীয়। একজন নারী ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে যদি অধিক পরিমাণ ডিপ্রেশনে ভোগেন তাহলে তার প্রভাব পড়ে গর্ভের বাচ্চার উপর। ফলে পরবর্তীতেও বাচ্চাটি হয় খিটখিটে, বদমেজাজী। কর্টিসল হরমোনের প্রভাবে এটি হয়ে থাকে। তাছাড়া গর্ভবতী মায়ের খিটখিটে মেজাজ, মুড সুইং, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, অল্পেই রেগে যাওয়া, কান্না করা প্রভৃতি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। প্রসব পরবর্তীকালীন সময়েও মা ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হন যদিও তা সাময়িক। তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন দীর্ঘদিন না চলে। কারণ নতুন একজন শিশুর পুরো দায়িত্ব তার থাকে ফলে পরিবর্তন আসবে এটিই স্বাভাবিক।

৮. শারীরিক রোগ: দীর্ঘদিনের শারীরিক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি, কোলেস্টেরল, থাইরয়েড, পিসিওডি, মেটাবলিজম ডিসঅর্ডার প্রভৃতি সহ আরও অনেক ক্রনিক রোগের কারণে মানুষ ডিপ্রেশনে থাকে।

৯. বডি শেমিং: অনেকেই একটু স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকেন বলে অন্যের কটুক্তির স্বীকার হন। সামাজিক ভাবে তাদের হেয় করা হয়। তাদের স্থূলতা নিয়ে কথা বলা হয়। আবার মোটা, কালো, বেঁটে, চিকন, দেখতে সুশ্রী নয় এমন মানুষদেরও কটু কথার স্বীকার হতে হয়, ফলে এমন শ্রেণির মানুষগুলো ডিপ্রেশনের স্বীকার হন।

১০. রিলেশনশীপ: ইদানীং তরুণ সমাজে ডিপ্রেশনের অন্যতম মূল কারণ রিলেশনশীপ। একতরফা রিলেশনশীপ, মান-অভিমান, ঝগড়া-বিবাদ, কম্পেয়ার করা, ব্রেক-আপ, বিয়ে নিয়ে জটিলতা প্রভৃতি কারণে ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হয়।

১১. প্রায়োরিটি: শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই অন্যের প্রায়োরিটি চায়। অনেকেই মনে করেন তাকে হয়তো পরিবার-আত্মীয়-প্রিয়জন প্রায়োরিটি দিচ্ছে না। পছন্দের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ ও অন্যের প্রাধান্যকে প্রধান করে দেখতে গিয়ে মানুষ ডিপ্রেশনে পড়ে।

১২. বৃদ্ধ বয়সে: ডিপ্রেশন যে শুধু তারুণ্যের সেটি নয়, বৃদ্ধ বয়সেও মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগে। বয়সের ভারত্ব, বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি, আর্থিক স্বাচ্ছন্দের অভাব ও টানাপোড়েন থাকলে, পারিবারিক সমঝোতা না থাকলে, সন্তানদের সাথে ভালো সম্পর্ক না থাকলে, চলাফেরায় অন্যের উপর নির্ভর করতে হলে, জীবনের অর্জন কম হলে বৃদ্ধ বয়সেও মানুষ ডিপ্রেশনে পড়ে।

১৩. সামাজিক কটাক্ষের কারণে: অনেকেই আছেন যারা অন্যের সমালোচনা করতে পছন্দ করেন। পড়াশুনায় ভালো না হলে, ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চান্স না হলে, বিয়ে না হওয়া, চাকরি না হওয়া, সন্তান না হওয়া বা দেরিতে হওয়া, বাহ্যিক সৌন্দর্য প্রভৃতি কারণে অনেকেই সমালোচনাসহ মানুষের কটাক্ষের স্বীকার হন। ফলে উক্ত ব্যক্তি ডিপ্রেশনে পড়ে যায়।

অতিরিক্ত ডিভাইস ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ডিপ্রেশন
Mobile Addiction Vectors by Vecteezy

১৪. অতিরিক্ত ডিভাইস ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার: বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত ডিভাইস ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ডিপ্রেশন ও একাকীত্বের সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত গেমে আসক্তি, ইন্টারনেটে আসক্তি, ফেসবুক, ইউটিউবে আসক্তি একসময়ে ডিপ্রেশনের জন্ম দেয়। অনেকেই ঘন্টার পর ঘন্টা ফেসবুক স্ক্রল করেন ও ডিপ্রেশন বাড়তে থাকে। কারও জব হচ্ছে, বিয়ে হচ্ছে, বেবি হচ্ছে, ঘুরতে যাচ্ছে, রেস্টুরেন্টে যাচ্ছে প্রভৃতি দেখে অনেকেই ভাবছে তারা কতই না সুখে আছে আমার কেন এটা নাই ওটা নাই কিন্তু তারা ভাবেন না মানুষের ফেসবুকের বাহিরের একটা জীবন আছে। যেটি সমস্যাপূর্ণ, যা অনেকেই শেয়ার করেন না শুধু আনন্দের অংশটুকু শেয়ার করেন। ডিপ্রেশন, রাগ, দুঃখ অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার করেন। কেউ বিরূপ মন্তব্য করলে তখনও ব্যক্তির ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত গেম ও ইন্টারনেট আসক্তি মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়াবহ।

আরো দেখুন

নানান সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে কীভাবে সুস্থ সুন্দর জীবনযাপন করা যায় এবিষয়ে আর্টিকেল দেখতে ভিজিট করুন জীবনধারা ক্যাটাগরিতে।

অফিসের কাজে বিষন্নতা
Human Vectors by Vecteezy

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

ডিপ্রেশন থেকে পরিত্রাণের জন্য সর্বপ্রথম নিজেকে এগিয়ে আসতে হবে। আপনি চাইলেই ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে পারেন। প্রয়োজন শুধুমাত্র আপনার ইচ্ছাশক্তির। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন দূর করার উপায়সমূহ:

১. নিজেকে ব্যস্ত রাখুন: যেহেতু ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে গেলে সর্বপ্রথম আপনাকে নিজেকে এগিয়ে আসতে হবে তাই নিজের ভালো থাকাটা এক্ষেত্রে জরুরী। আপনার উচিত নিজেকে কোন না কোন কাজে সব সময় ব্যস্ত রাখা। তবে অবশ্যই তা চাপ নিয়ে নয়। আপনি যেটা করতে পছন্দ করেন সেই কাজটি করুন। শখের কাজগুলো করুন। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারলে আস্তে আস্তে ডিপ্রেশন কেটে যায়।

২. নিজেকে ভালোবাসুন: নিজেকে যারা ভালোবাসে না তারা সবচেয়ে বেশি ডিপ্রেশনে ভোগে। একাকীত্ব ঘিরে ধরে তাদের। তাই নিজেকে নিজেই সময় দিন ও ছোট ছোট সফলতার জন্য নিজেকে পুরষ্কৃত করুন। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কি চান। সর্বোপরি নিজের ভালোলাগা ও ভালোথাকাকে প্রাধান্য দিন।

৩. সঠিক ডায়েট: ডিপ্রেশনের সাথে সঠিক ডায়েটের বিষয়টিও জড়িত। চেষ্টা করুন পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার, ওমেগা থ্রি, ওমেগা ফ্যাটি-এসিডযুক্ত খাবার, ভিটামিন-এ, বি কমপ্লেক্স, ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সামদ্রিক মাছ, ফল, সবুজ ও রঙীন শাক-সবজী, বাদাম, ডাল প্রভৃতি পরিমিতভাবে গ্রহণ করুন। দিনে অন্তত তিন লিটার পানি খান। যা আপনার মেটাবলিজমকে ব্যালেন্স করবে ও শরীরের দূষিত টক্সিক বের করতে সাহায্য করবে। চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার, তেল-চর্বি জাতীয় খাবার, লাল মাংস, ফাস্ট ফুড অতিরিক্ত চা-কফি যতটা পারবেন পরিত্যাগ করুন। মানুষ ডিপ্রেশনে পড়লে এসব খাবারে আকৃষ্ট হয়। তাই এসব খাবার গ্রহণ না করে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন।

৪. মেডিটেশন, ইয়োগা ও ব্যায়াম: প্রতিটি মানুষের উচিত নিয়মিত শরীরচর্চা করা। এতে মন ভালো থাকে, কাজে উদ্যম আসে, কনফিডেন্স বাড়ে। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ডিপ্রেশন দূর হয়। প্রতিদিন নিয়ম করে মেডিটেশন করলে মন শান্ত ও প্রফুল্ল হয়। তাই মনের অস্থিরতা কাটাতে মেডিটেশন করা উচিত। এছাড়া ইয়োগা করলে আপনার শরীর যেমন ফিট থাকবে তেমনি আপনি সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবেন। তাছাড়া আপনি কিছু না করলেও নিয়মিত ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটুন। সাইকেলিং, সুইমিং এগুলোও করতে পারেন। তাছাড়া মাঝেমধ্যে ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাটমিন্টন, টেবিল টেনিস এসব খেলাধূলা করতে পারেন। এগুলো করলে ডিপ্রেশন কাটে।

Depression থেকে মুক্তি পেতে ডাক্তারের কাছে কাউন্সিলিং গ্রহণ
Doctor Counselling Vectors by Vecteezy

৫. কাউন্সিলিং করুন: ডিপ্রেশনের মাত্রা বেশি হলে অবশ্যই ক্লিনিক্যাল কাউন্সিলিং করা জরুরী। একজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের অধীনে থেকে এটি আপনি ব্যক্তিগতভাবে বা দলগতভাবে করতে পারেন। কাউন্সিলিং এমন একটি থেরাপি যার মাধ্যমে আপনাকে আপনার সাইকোলজিস্ট শুধুমাত্র পথনির্দেশনা দিবেন কিন্তু সমাধানের পথ আপনার কাছ থেকেই উনি বের করে নিবেন। তবে এক্ষেত্রে সাইকোলজিস্ট আপনাকে সহায়তা করবেন। নিয়মিত কাউন্সিলিং করে অনেকেই ডিপ্রেশন কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন নতুন উদ্যমে।

৬. মিউজিক থেরাপি: ডিপ্রেশন কাটাতে মিউজিক থেরাপি খুবই কাজের। এটি মন ভালো রাখতে সহায়ক। আপনি সফট মিউজিক থেরাপি নিতে পারেন। যা আপনার মস্তিষ্ককে শান্ত করবে অথবা আপনার পছন্দসই গানও আপনি শুনতে পারেন।

৭. ইতিবাচক চিন্তা: যারা ডিপ্রেশনে ভোগেন তারা সবসময় নেতিবাচক চিন্তা করেন, যা ডিপ্রেশনকে আরও বাড়িয়ে তোলে। নেগেটিভ চিন্তা বাদ দিয়ে সবসময় পজেটিভ চিন্তা করুন। কোন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা বাদ দিন। আমি পারবোনা, আমাকে দিয়ে হবে না, এটা না হলে কি হবে প্রভৃতি চিন্তা বাদ দিয়ে আপনি পারবেন ও চেষ্টা করবেন এমন ইতিবাচক চিন্তা করুন।

৮. ডিভাইস দূরে রাখুন: অতিরিক্ত ডিভাইস ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ডিপ্রেশন সৃষ্টিতে সহায়ক। তাই দিনের নির্দিষ্ট সময় ভিডাইস ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন। দরকার ছাড়া এগুলোর অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমিয়ে দিন। কাজের তাগিদে এগুলো ব্যবহার করুন।

৯. বিনোদনপূর্ণ ও শিক্ষানীয় ভিডিও দেখুন: বিনোদনপূর্ণ মুভি, কার্টুন, নাটক, ভিডিও যেগুলো আপনাকে হাসাবে বা শিক্ষনীয় ভিডিও সেগুলো দেখুন। আপনার পছন্দসই মুভি, নাটক যা আপনার মন ভালো করে এগুলো দেখুন এতে ডিপ্রেশন কাটবে, তবে এমন কিছুই দেখা উচিত নয় যেগুলো দেখলে উল্টে আপনার ডিপ্রেশন বেড়ে যাবে।

১০. বই পড়ুন ও জ্ঞানচর্চা করুন: বই মানুষকে বিকশিত করে। তাই নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করুন ও ব্যক্তিজীবনে সেই জ্ঞান কাজে লাগান। আপনার ডিপ্রেশন কাটাতে বই অনেকটায় সহায়ক। এজন্য আপনাকে বইয়ের সাথে আত্মীক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

১১. স্ট্রেস কমান: ছাত্রজীবন, কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন। এজন্য আপনাকে অবশ্যই সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। কাজ ফেলে রাখলে স্ট্রেস বাড়ে৷ সময়ের কাজটুকু যথাসময়ে শেষ করার চেষ্টা করুন। নিয়মিত কাজ ভাগ করে কাজ করুন।

১২. পরিবারকে সময় দিন: নিয়মিত পরিবারকে সময় দিলে ডিপ্রেশন কাটে। সদস্যদের সাথে গল্প করুন, তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন, তাদের পাশে দাঁড়ান। আপনার কোন সমস্যা হলে পরিবারের সাথে শেয়ার করুন। সবসময় পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন। বিবাহিত হলে জীবনসঙ্গীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন। এতে দাম্পত্য জীবন সুখের হয়।

১৩. বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন: বয়স বাড়লে বন্ধু কমে তবে এমন ১/২ জন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখুন যারা আপনার বিপদে আপনার পাশে থাকবে। তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করুন, আড্ডা দিন, মজা করুন। এতে মন ভালো থাকবে।

ডিপ্রেশন কমাতে ভ্রমণ করুন
Travel Vectors by Vecteezy

১৪. ভ্রমণ করুন: বছরে অন্তত একবার ট্যুরে যান। এতে মন ভালো থাকবে, নতুন করে কাজে উদ্যম পাবেন। পরিবার বা বন্ধুেদর সাথে ট্যুরে গেলে মন ভালো থাকে।

১৫. ইতিবাচক মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখুন: সবসময় চেষ্টা করবেন ইতিবাচক মানুষের সাথে মেলামেশা করতে। এতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়৷ যতটা পারবেন নেগেটিভ মাইন্ডের মানুষ থেকে দূরে থাকবেন যাতে আপনার মধ্যে নেগেটিভিটির সৃষ্টি না হয়। যারা আপনাকে নিয়ে কটাক্ষ করে সেসব মানুষের থেকে দূরে থাকুন। ‘লোকে কি বলবে’- এ চিন্তা বাদ দিয়ে আপনার যেটি ভালো মনে হয় সেটি করুন, লোকের কথায় কান দিতে যাবেন না। পজেটিভ মানুষের সাথে মিশলে পজেটিভ মোটিভেশন পাবেন ও পজেটিভ মাইন্ডের হবেন ফলে ডিপ্রেশন কাটবে।

১৬. প্রার্থনা করুন: ডিপ্রেশন কাটানোর অন্যতম হাতিয়ার আপনার সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনা করা। প্রতিটি মানুষের উচিত তার ধর্মানুসারে সৃষ্টিকর্তার উপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠলাম না বলে বলা উচিত আজকের দিনটা সুন্দর এবং সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করুন সুন্দর একটি দিনের জন্য। নিয়মিত প্রার্থনা, ধর্মচর্চা ও ধর্মীয়গ্রন্থ পড়ুন এতে ডিপ্রেশন কাটে।

১৭. ডায়েরি লেখার অভ্যাস করুন: নিয়মিত ডায়েরি লেখার অভ্যাস থাকলে আপনি অনেক কিছুই লিখে রাখতে পারেন। অর্থাৎ যা আপনি মুখে বলতে পারেন না সেটিই লিখুন। কারও প্রতি রাগ-ক্ষোভ থাকলে ঝেড়ে ফেলুন ডায়েরিতে এতে দেখবেন আপনার রাগ কমে নাই হয়ে যাবে। আপনার যত রাগই থাকুক না কেন বিষয়টি আপনার কাছে তুচ্ছ মনে হবে।

১৮. রিলেশনশীপের বিষয়ে পজেটিভ থাকুন: রিলেশনশীপের বিষয়ে সবসময় ইতিবাচক থাকুন। সম্পর্কের প্রতি যত্নশীল হউন। তবে সেটি অবশ্যই দ্বিপাক্ষিক বিষয় হতে হবে। একপক্ষীয় কোন কিছুই ঠিক নয়। রিলেশনশীপকে সম্মান করুন তবে সবসময় এটি নিয়ে চিন্তা করতে করতে ডিপ্রেশনে চলে যাবেন না। আপনার সব কাজকর্ম বাদ দিয়ে রিলেশনশীপ নিয়ে সবসময় বিজি থাকাটা বোকামি। সম্পর্কের সাথে নিজের পড়াশোনা, ক্যারিয়ার ঠিক রাখুন সাথে নিজেকেও আলাদা করে সময় দিন, নিজের যত্ন নিন।

আপনার সম্পূর্ণ চেষ্টা থাকার পরও যদি ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে বিয়ে না হওয়া বা সম্পর্কটি না টিকলে ডিপ্রেশনে পড়বেন না। পজেটিভ থাকুন, নিজেকে বোঝান- আপনার চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। ব্রেকআপের পর ভেঙে না পড়ে পড়াশোনা, কাজে উদ্যমী হন। নিজের ক্যারিয়ার, পজিশন ঠিক রাখুন। সম্পর্কের মানুষটিকে ঘৃণা না করে, দোষ না দিয়ে সবসময় শ্রদ্ধা ও সম্মান করুন। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন ও বিষয়টি মেনে নিতে শিখুন।

১৯. আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করুন: প্রতিটি মানুষেরই আবেগ আছে তবে অতিরিক্ত আবেগ ডিপ্রেশনের কারণ। অতিরিক্ত আবেগী মানুষগুলো অল্পতেই ভেঙে পড়ে। কিছু কিছু পরিস্থিতিতে আবেগকে ছাপিয়ে বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিতে হয়। আপনার পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন সেটায় মানিয়ে নিতে শিখুন। আবেগী হলে জীবনে পরিবর্তন আসবে না। তাই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন।

২০. সামাজিক কার্যকলাপ: আপনি চাইলেই বিভিন্ন সামাজিক কার্যকলাপে অংশ নিতে পারেন। দুঃস্থ-অসহায় মানুষ, অসহায় শিশু-বৃদ্ধদের পাশে দাঁড়ান, বন্যাকবলিত, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সরবারাবহ করুন, পথশিশুদের লেখাপড়া শেখান। এমন সামাজিক কাজ মনকে প্রফুল্ল করে। মানুষকে সহায়তা করলে মানসিক তৃপ্তি আসে।

ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার উপায়
Relax Vectors by Vecteezy

শেষ কথা

ডিপ্রেশন একটু জটিল ব্যাধির নাম। সময়মতো ডিপ্রেশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এটি জটিল থেকে জটিলতর আকার ধারণ করবে। তাই সময় থাকতেই আপনাকে নিজ থেকেই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। জীবনে সমস্যা থাকবেই তবে আপনি চাইলেই জীবনকে আরও সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করতে পারেন। সবসময় ইতিবাচক ভাবে চিন্তা করুন ও জীবনকে রাখুন বিষন্নতামুক্ত।

© Featured Image Credit: Frustrated Employee Vectors by Vecteezy
Share
Tweet
Share
Pin
Share
Share
Tweet
Pin
Share
Subscribe
Notify of
guest
4 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
সুব্রত সরকার

ধন্যবাদ ম্যাডাম

StudyKoro

আপনাকেও ধন্যবাদ।

Zarin Tasnim

লেখাটি পড়ে অনেক উপকৃত হলাম। ধন্যবাদ।

StudyKoro

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ইনশাআল্লাহ স্টাডিকরো এভাবে সকলের পাশে থাকবে।

অনুগ্রহ করে লেখাটি শেয়ার করুন।

এই নিবন্ধে কোনো তথ্যসূত্র সংযোজন করা হয়নি।
লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
social media
অন্যদের সাথে শেয়ার করুন
Post
Tweet
Pin
Email
Happy
আপনি উপকৃত হওয়ায় আমরা খুশি হয়েছি।

নিবন্ধটি থেকে আপনি কেমন উপকৃত হয়েছেন তা আমাদের জানাতে ভুলবেন না যেন।

Sad
দুঃখিত কী সমস্যা?

পরবর্তী নিবন্ধটি আরও ভালো করতে আপনার সমস্যাটি অনুগ্রহ করে আমাদের জানান।

নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন

স্টাডিকরো’র গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ই-মেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন।

আপনার প্রাইভেসি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ

Report about this product

Let us know if you notice any incorrect information about this product. Also, please let us know if the given PDF file is banned for sharing; we will remove it as soon as possible. 

User Profile Picture

YourName