টেস্টটিউব বেবি: বর্তমান সময়ে বন্ধ্যাত্বের সবথেকে উন্নত ও সার্বজনীন স্বীকৃত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে আইভিএফ (IVF) বা টেস্ট টিউব বেবি চিকিৎসা পদ্ধতি। স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়া একটি শিশুর প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হয় মায়ের জরায়ুতে। কিন্তু এই চিকিৎসা পদ্ধতিটির মাধ্যমে মানবদেহের বাইরে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষেক ঘটিয়ে তারপর মায়ের জরায়ুতে সংস্থাপন করা হয়।

টেস্ট টিউব বেবি কি
টেস্ট টিউব বেবি বলতে টেস্টটিউবের ভিতর বেবির জন্মানোকে বুঝানো হয় না। টেস্ট টিউব বেবি হচ্ছে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (In vitro fertilization) এর সহজ ও সংক্ষিপ্ত রূপ IVF. দেহের বাইরে কোনো গবেষণাগারে একটি টেস্টটিউব বা কাঁচের পাত্রে সন্তান জন্মদানে অক্ষম দম্পতির দেহ থেকে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু নিয়ে মিলন ঘটিয়ে নিষিক্ত ডিম্বাণুকে জরায়ুতে সঠিকভাবে স্থাপন করে সন্তান উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বলে; সংক্ষেপে আইভিএফ। তবে এটি টেস্ট টিউব বেবি নামেই বহুল প্রচলিত।

টেস্টটিউব বেবি তৈরির ইতিহাস
সাধারণত নারীদেহের অভ্যন্তরে শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর মিলনের ফলে নিষেক সম্পন্ন হয়। বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণে যখন এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়। তখনই এই সমস্যাকে সমাধান করার উদ্যোগ নেন লন্ডনের দুইজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী। তারা হচ্ছেন রবার্ট জি. এডওয়ার্ডস (Robert G. Edwards) এবং প্যাট্রিক স্টেপ্টো (Patrick Steptoe)। ১৯৭৮ সালের ২৫ জুলাই লন্ডনের ওল্ডহ্যাম জেনারেল হসপিটালে এই দুইজন চিকিৎসা বিজ্ঞানীর তত্ত্বাবধানে জন্ম নেয় বিশ্বের সর্বপ্রথম টেস্টটিউব বেবি লুইস ব্রাউন নামের কন্যা শিশু।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই অবদানের জন্য রবার্ট জি. এডওয়ার্ডসকে ২০১০ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। বাংলাদেশে প্রথম ২০০১ সালের ৩০মে টেস্টটিউব বেবি হিসেবে তিন জন টেস্টটিউব বেবির জন্ম হয় এবং তাদের নাম ছিল হীরা, মণি ও মুক্তা। তাদের পিতা আবু হানিফ এবং মাতা ফিরোজা বেগম Bangladesh Assisted Conception Center (BACC) এবং Women’s Hospital (WH) ঢাকা এর Dr. Fatema Parveen এর তত্ত্বাবধানে ১৯৯৪ সাল থেকে চিকিৎসা নেওয়া শুরু করেন। এর দীর্ঘ ৬ বছর পর তারা সন্তান জন্মদানে সক্ষম হন।
টেস্ট টিউব বেবি কেন নেওয়া হয়
যখন কোনো দম্পতির একজন অথবা উভয়েই সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয় তখন আইভিএফ প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা নিয়ে সন্তান জন্ম দেওয়া হয়।

পুরুষের ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদানে অক্ষমতার কারণ
একজন পুরুষ নানাবিধ কারণে সন্তান জন্মদানে অক্ষম হতে পারে। নিচে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো দেয়া হলো–
১) বীর্যে শুক্রাণু সংখ্যার স্বল্পতা: যখন বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গিয়ে তা প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটার বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা ২০ মিলিয়নের কম থাকে তখন পুরুষের প্রজননের সমস্যা হয়ে থাকে। বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যার স্বল্পতাকে বলা হয় অলিগোস্পার্মিয়া।
২) বীর্যে শুক্রাণুর অনুপস্থিতি: অনেক পুরুষের বীর্যে অনেকসময় শুক্রাণু উৎপাদন হয় না। যার জন্য তারা সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হয়। বীর্যে শুক্রাণুর অনুপস্থিতিকে বলা হয় অ্যাজুস্পার্মিয়া।
৩) অটোইম্যুনিটি: অনেক সময় নিজের দেহের শুক্রাণুকে দেহের কিছু শুক্রাণু প্রতিরোধী আয়ন বহিরাগত শত্রু ভেবে অ্যাটাক করে এবং মেরে ফেলে। ৫-১০% পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ হচ্ছে নিজের শুক্রাণুর প্রতি অটোইম্যুনিটি।
৪) শুক্রাণুর অস্বাভাবিকতা: অনেক শুক্রাণু ডিম্বাণুর কাছে পৌছানোর আগেই মারা যায় অস্বাভাবিকতার কারণে। দুটি লেজ, লেজবিহীন, মস্তকবিহীন বা অস্বাভাবিক আকৃতি হলো শুক্রাণুর অস্বাভাবিকতা। এই অস্বাভাবিকতার কারণেও প্রজনন অক্ষমতা হতে পারে।
৫) বীর্যপাতে অক্ষমতা: কিছু অসুস্থতা যেমন- ডায়াবেটিস, স্পাইনাল ইনজুরি, প্রস্টেট সার্জারি, সেমিনাল ভেসিকলের ক্ষত বা মুখ বন্ধ থাকার কারণে শুক্রাণু উৎপাদনে সক্ষম পুরুষও অনেক সময় বীর্যপাত করতে পারে না বা কম বীর্যপাত করে। অনেক সময় বীর্য নিজদেহে পশ্চাৎমুখী হয়ে মূত্রথলিতে পতিত হয়।
৬) পুরুষত্বহীনতা: অনেক সময় বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার জন্য অকাল বীর্যপাত কিংবা লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যার কারণে পুরুষত্বহীনতা দেখা যায় যা সন্তান জন্মদানে অক্ষমতার কারণ।
৭) ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ক্যান্সার, পেটের আলসার, যক্ষ্মা, ডিসলিপিডেমিয়া, খিচুনি, নিদ্রাহীনতা প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জন্যও পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়। এছাড়াও এক্সরে, অতিমাত্রায় চাপ, শুক্রাশয়ে আঘাত, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা, স্থূলতা, মাদক সেবন, দীর্ঘসময় সাইকেল চালানো ইত্যাদি কারণেও অনেক সময় পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।

মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রজনন অক্ষমতার কারণ
নারী-পুরুষ উভয়েই অনেক কারণে সন্তান জন্মদানে সাময়িক অক্ষম বা স্থায়ীভাবে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। একজন নারী সাধারণত যে সকল কারণে সন্তান জন্মদানে অক্ষম হতে পারে তা নিচে দেয়া হলো–
১) জরায়ুর ক্ষত: জরায়ু ক্ষতজনিত সমস্যার কারণে গর্ভধারণে সমস্যা না হলেও সমস্যা দেখা যায় গর্ভাবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে বা গর্ভপাত ঠেকানোতে। জরায়ুতে টিউমার হলেও গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও জরায়ুতে জন্মগত ত্রুটির কারণে প্রজনন অক্ষমতা হতে পারে অনেকের।
২) ডিম্বনালির ক্ষত: ডিম্বনালিতে জীবাণু সংক্রমণ, পেলভিক সার্জারি কিংবা অন্য কোনো কারণে ডিম্বনালি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ডিম্বনালি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জরায়ুতে ডিম্বাণু পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। প্রায় ৩৫% নারী এই সমস্যার জন্য প্রজনন জটিলতায় ভুগে।
৩) ডিম্বপাতে ব্যর্থতা: ডিম্বপাতে ব্যর্থ হওয়ার সমস্যাটি হচ্ছে হরমোনজনিত। কখনো কখনো হাইপোথ্যালামাস বা পিটুইটারি গ্রন্থি স্বাভাবিকভাবে হরমোন নিঃসরণ করতে পারে না। যার জন্য ডিম্বথলি বিকশিত হতে পারে না। আর ডিম্বপাতও ঘটে না।
৪) সার্ভিক্স বা জরায়ু গ্রীবার ক্ষত: জরায়ু মুখের জীবাণু সংক্রমণ বা ক্ষতের কারণে অস্বাভাবিক রজঃচক্রের সৃষ্টি হয়। এবং প্রজননে সমস্যা দেখা দেয়।
৫) উচ্চ মাত্রার LH বা প্রোল্যাকটিন: প্রজননের ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রার লুটিওট্রপিক (LH) হরমোনও অনেক সময় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং ডিম্বাণুজননে বাধা সৃষ্টি করে। অনেক সময় জন্ম নিয়ন্ত্রণের পিল এর জন্যও লুটিওট্রপিক হরমোন বেড়ে যায়। এবং প্রজননে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
৬) শুক্রাণুর প্রতি এন্টিবডি: কিছু কিছু নারীদের ক্ষেত্রে তাদের দেহ স্বামীর শুক্রাণুর বিরুদ্ধে এন্টিবডি সৃষ্টি করে। যার জন্য শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার আগেই মারা যায়। অনেক সময় নারীদের ডায়াবেটিস,স্টেরয়েড ওষুধ, মদ্যপান, দেহের অতিরিক্ত ওজন, মাদকদ্রব্য সেবনের কারণেও প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়।

টেস্টটিউব বেবি কিভাবে জন্ম নেয়
ধাপ-১ স্বাভাবিক রজঃচক্র দমানো: টেস্টটিউব বেবি নেওয়ার জন্য প্রথমে স্ত্রীর রজঃচক্রকে থামাতে হয়। এর জন্য স্ত্রীর নাকের ভিতর একটা ওষুধ স্প্রে করা হয়।
ধাপ-২ ডিম্বাণুর সরবরাহ বৃদ্ধি: টেস্টটিউব বেবির সৃষ্টির জন্য একাধিক ডিম্বাণুর প্রয়োজন হয়। কিন্তু সাধারণত নারী দেহে প্রতি মাসে একটি ডিম্বাণুর সৃষ্টি হয়ে থাকে। অনেক সময় একটি ডিম্বাণু নিয়ে চিকিৎসা শুরু করলে যদি কোন কারণবশত ডিম্বাণুটি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তার জন্য ঝুঁকি না নিয়ে একাধিক ডিম্বাণু নিয়ে কাজ শুরু করতে হয়। এ কারণে ডিম্বাণুর উৎপাদন বাড়াতে FSH (ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন) নামে একটি ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয় ডিম্বাশয় থেকে বেশী ডিম্বাণু উৎপাদনের জন্য।
ধাপ-৩ চিকিৎসার অগ্রগতি পরীক্ষা: ডিম্বাণু উৎপাদনের জন্য যে হরমোন প্রয়োগ করা হয়েছে তা ঠিকমতো কাজ করছে কি-না বা ডিম্বাণু উৎপাদন হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয় এই ধাপে। এর জন্য হরমোনের মাত্রা যাচাইয়ের জন্য রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা করা হয় এবং আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করা হয়।
ধাপ-৪ ডিম্বাণু সংগ্রহ: নারী দেহ থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহের জন্য প্রথমে একটি ব্যথ্যানাশক ওষুধ খাওয়ানো হয়। এবং ডিম্বাণু সম্পূর্ণ পরিপক্কতার জন্য আরেকবার ডিম্বাণু সংগ্রহের ৩৪-৩৮ ঘন্টা আগে হরমোন ইনজেকশন করা হয়। আলট্রাসাউন্ড ছবির সাহায্যে স্ত্রীর যোনি পথে একটি সূক্ষ্ম সূচঁ প্রবেশ করিয়ে ডিম্বথলি থেকে সামান্য তরল পদার্থ সহ ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয়। ডিম্বাণু সংগ্রহের পর নিষেকের পূর্ব পর্যন্ত নারীদেহের সমান তাপমাত্রায় নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষিত থাকে।
ধাপ-৫ শুক্রাণু সংগ্রহ: ডিম্বাণু সংগ্রহের পর পুরুষ সঙ্গীকে শুক্রাণু দানের জন্য প্রস্তুত করা হয়। শুক্রাণু সংগ্রহের পর তা থেকে বীর্যরস পরিষ্কার করে সুস্থ ও সচল শুক্রাণুগুলোকে কালচার মিডিয়ামে জমা রাখা হয়।
ধাপ-৬ ডিম্বাণু নিষিক্তকরণ: সংরক্ষিত শুক্রাণু ও ডিম্বাণু থেকে সর্বোচ্চ গুনাগুণ যুক্ত শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গুলোকে নিষেকের জন্য প্রস্তুত করা হয়। এর জন্য একটা কাচেঁর টিউবে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুগুলোকে একসাথে ১৬-২০ ঘন্টা রাখা হয়। একটা শুক্রাণুর জন্য এক লক্ষ শুক্রাণুর ব্যবস্থা করা হয়। নিষেক সম্পন্ন হয়েছে এবং ক্লিভেজ শুরু হয়েছে এমন দেখা গেলে নিষিক্ত ডিম্বাণুকে ভ্রূণ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
ধাপ-৭ ভ্রুণ প্রতিস্থাপন: নিষিক্ত ডিম্বাণু সাধারণত ২-৩ দিনের মধ্যে নারীর জরায়ুতে স্থাপন করতে হয়। ভ্রূণ যদি গর্ভাশয়ে স্থাপন হয় তাহলে গর্ভসঞ্চার হয়েছে বুঝায়। কেউ কেউ একাধিক ভ্রূণও সংস্থাপন করতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত অবস্থাও একটি বিবেচনার বিষয়। এছাড়াও অনেকে ভ্রূণ কাউকে দান করার জন্য অথবা পরবর্তীতে সংস্থাপনের জন্য গবেষণাগারে জমা রাখেন। এই প্রক্রিয়াগুলো শেষ হওয়ার পর ভ্রূণ সংস্থাপিত স্ত্রীকে নজরদারির মধ্যে রাখতে হয় এবং কিছুদিন পরপর ভ্রূণের অবস্থা চেক করতে হয়।

টেস্টটিউব বেবি জন্ম সফলতার হার
বাংলাদেশে টেস্টটিউব বেবির সফলতার হার প্রায় ৩০-৪০%। যেসব দেশগুলো চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরো উন্নত সেসব দেশগুলোর এই হার ৪০-৪৫% হয়ে থাকে। কিন্তু নারীদের বয়সের সাথে এই হার অনেকটাই সম্পর্কিত। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই হার কমতে থাকে। ৪৩ বছর বয়সের পর এই হার একদম কমে যায় বলা যায়। ৪৩ বছর বা তার চেয়ে বেশী বয়সের নারীদের ক্ষেত্রে সফলতার হার মাত্র ৫% হয়ে থাকে।
- ৩৮-৪০% বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ২১%
- ৩৫-৩৭ বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে ৩১%
- ৩৪ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে ৪০%

টেস্টটিউব বেবি নিতে খরচ কত হয়
টেস্টটিউব বেবি একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি। দেশভেদে এর খরচও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তাছাড়া এক এক জনের সমস্যা এক একধরণের হওয়ার জন্য এক একজনের চিকিৎসার ধরণও মোটামুটি ভিন্ন হয়ে থাকে।
- বাংলাদেশে এর জন্য দুই থেকে তিন লাখ টাকার মতো খরচ হতে পারে। এর থেকে সামান্য কম বা বেশীও হতে পারে তা চিকিৎসার উপর নির্ভর করে।
- ইউরোপীয় দেশগুলোতে টেস্টটিউব বেবির খরচ বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৮-১০ লক্ষ টাকা।
- আমেরিকায় এই খরচ প্রায় ১০-১২লক্ষ টাকা।

টেস্ট টিউব বেবি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে
টেস্ট টিউব বেবি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে তা বুঝতে পারবেন নিচের হাদিস দুইটা লক্ষ্য করলে।
রাসুল সাঃ বলেন,
"সন্তান তারই যার সাথে (বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে) ফিরাশ বা শয্যাযাপন করা হয়। আর ব্যভিচারকারীর জন্য রয়েছে পাথর।" [বুখারী, খ-৩,পৃ-৭০ হা:২০৫৩; মুসলিম, খ-৪, পৃ-১৭১, হা:৩৬৮৬]
হযরত রুয়াইফি বিন সাবিত আনসারী রাঃ একদা খুতবাদানকালে বলেন,
"আমি কি তোমাদের বলব না যা আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি হুনাইন যুদ্ধের দিন?" তিনি বলেছেন, "আল্লাহ ও আখেরাত বিশ্বাসী কোন ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় যে, সে তার পানি (বীর্য) দিয়ে অন্য কারো জমিতে (জরায়ু) প্রবাহিত করবে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৬০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬৯৯০, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৭৭৪৯, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৪৪৮২]
টেস্টটিউব বেবি ইসলামে হালাল তবে এর জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো হলো–
১. একই স্বামীর শুক্রাণু গ্রহণ: টেস্টটিউব বেবি নেওয়ার জন্য অবশ্যই নিজ স্বামীর শুক্রাণু ব্যবহার করতে হবে অন্য কারো শুক্রাণু ব্যবহার করলে সেটা ইসলামে জায়েজ হবে না।
২. একই স্ত্রীর ডিম্বাণু: এক্ষেত্রেও নিজ স্ত্রীর ডিম্বাণু ব্যবহার করে চিকিৎসা নিতে হবে। অন্য কারো ডিম্বাণু ব্যবহার করা যাবে না।
৩. নিজ স্ত্রীর দেহে ভ্রূণ সংস্থাপন: একই দম্পতির শুক্রাণু ও ডিম্বাণু থেকে তৈরি ভ্রূণ নিজ স্ত্রীর জরায়ুতে স্থাপন করতে হবে। অন্য আরেকজন নারীর দেহে ভ্রূণ স্থাপন করলে সেটা হারাম হিসেবে গণ্য হবে।

টেস্টটিউব বেবি সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
টেস্ট টিউব বেবি সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর নিচে দেয়া হলোঃ
বিশ্বে প্রথম টেস্ট টিউব বেবী কে?
বিশ্বে প্রথম টেস্ট টিউব বেবী লুইস ব্রাউন।
Test Tube Baby পদ্ধতির জনক কে?
টেস্ট টিউব পদ্ধতির জনক নোবেল পুরস্কারজয়ী ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রবার্ট এডওয়ার্ডস (Robert G. Edwards). টেস্ট টিউব পদ্ধতিকে বলা হয় IVF (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন)।
বাংলাদেশের প্রথম টেস্টটিউব বেবির নাম কী?
বাংলাদেশে প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম হয় ২০০১ সালের ২৯ মে ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালে। হীরা, মণি ও মুক্তা নামে ৩টি টেস্টটিউব বেবির জন্ম দেন ফিরোজা বেগম (৩৩)। তাদের বাবা হলেন আবু হানিফ। বিবাহিত জীবনের ১৬ বছর পর এ টেস্টটিউব বেবি পদ্ধতিতে একসঙ্গে তিন কন্যাসন্তান লাভ করেন।
শেষ কথা
এখনকার সময়ে বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় হতাশ না হয়ে যে কেউ খুব সহজেই আইভিএফ চিকিৎসা পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিয়ে সন্তান জন্ম দিতে পারেন। চিকিৎসাবিজ্ঞান এখন অনেক এগিয়ে গেছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির আবিষ্কার করছেন। তাই কেউ সন্তান নিতে চাইলে যেকোনো দেশে গিয়ে আইভিএফ পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিয়ে সন্তান জন্ম দিতে পারেন।
Resources