স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়া এটি বহু নারী পুরুষেরই সুপ্ত ইচ্ছা। আমাদের সমাজে সব শ্রেণীর নারী-পুরুষের মাঝেই স্থায়ীভাবে ফর্সা হতে চাওয়ার আগ্রহ ও প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ফর্সা গায়ের রঙকেই যেন সৌন্দর্যের মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়। তবে বস্তুত সৌন্দর্য বিষয়টি পুরোপুরিই আপেক্ষিক। এর কোন নির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। সৃষ্টিকর্তার প্রত্যেকটি সৃষ্টিই তার নিজ নিজ জায়গা থেকে সুন্দর ও অনন্য।
গায়ের রঙ চাপা হোক বা ফর্সা; দুটিই হতে পারে সৌন্দর্যের মূর্ত প্রতীক যদি তা হয় দাগহীন ও জেল্লাময়। দাগহীন উজ্জ্বল চেহারা কোনো নারী বা পুরুষের আত্নবিশ্বাসকে যেন কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে।
আমাদের কোষে বিদ্যমান মেলানিন (Melanin) নামক রঞ্জক পদার্থের তারতম্যের কারণে গায়ের রঙ ফর্সা বা কালো হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির গায়ের রঙ কেমন হবে তা নির্ধারণ করে “মেলানিন”, যার উপর আমাদের সরাসরি কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।
তবে কিছু ঘরোয়া উপায় ও সঠিক খাদ্যভ্যাসের মাধ্যমে চাইলে এই মেলানিনকে কিছুটা কমিয়ে এনে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা ও দাগহীন ত্বক পাওয়া সম্ভব।
আজকের আর্টিকেলে, আমরা সেসব ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো যা অনুসরণ করে খুব সহজেই আপনিও হতে পারবেন দাগহীন ও উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী।
কেউ চায় মোটা হতে বা ওজন বৃদ্ধি করতে আবার কেউ চায় কালো থেকে স্থায়ীভাবে ফর্সা হতে। আজকে জানবো কিভাবে ত্বক ফর্সা করা যায় সে বিষয়ে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক আজকের আলোচনা-
গায়ের রঙ ফর্সা বা কালো হওয়ার কারণ
ফর্সা হতে কে না চায়? একটি সুন্দর, দাগহীন, উজ্জ্বল ত্বক সকলেরই কাম্য। তবে আজকাল যেন হেলদি ত্বকের চেয়ে ফর্সা ত্বকের চাহিদাই বেশি। আর সাধারণের এই চাহিদাকে পুঁজি করেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনিয়ন্ত্রিত কেমিক্যাল ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্রিম, লোশন ও সাপ্লিমেন্ট বাজারজাত করছে।
যা বহু নারী-পুরুষ সোশ্যাল মিডিয়াসহ নানা মাধ্যমের বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ক্রয় করছে। এসকল মার্কেটাররা প্রোডাক্ট এর পাবলিসিটির উদ্দেশ্য দাবী করে যে এগুলো আপনাকে স্থায়ীভাবে ফর্সা করবে। তবে বস্তুত, অনিয়ন্ত্রিত কোন কেমিক্যাল প্রোডাক্টের মাধ্যমে আদৌ ফর্সা হওয়া সম্ভব নয়।
স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার উপায় জানার আগে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে যে, কি কি কারণে গায়ের রঙ কালো বা ফর্সা হয়ে থাকে। এতে করে আমরা স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার জন্য কি করা উচিৎ বা উচিৎ নয় তা খুব সহজেই বুঝতে পারবো।
আমাদের ত্বকে রয়েছে মেলানোসাইট (Melanocyte) নামের একটি বিশেষ কোষ যা মেলানিন (Melanin) নামক একটি বিশেষ রঞ্জক পদার্থ বা পিগমেন্ট তৈরি করে থাকে। আর এই মেলানিন নামক পিগমেন্টই মূলত আমাদের গায়ের রঙ নির্ধারণ করে দেয়। এটি আমাদের ত্বককে ক্ষতিকর “ইউভি-রে” সহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা করে থাকে। তবে কোন ব্যক্তির শরীরে মেলানিন এর মাত্রা যত বেশি থাকে সে ব্যক্তির গায়ের রঙ ততটাই চাপা বা কালচে হয়ে থাকে।
এই মেলানিন এর মাত্রা কেমন হবে তা আবার নির্ভর করে তিনটি মূল বিষয়ের উপর। এই তিনটি কারণে কোন ব্যক্তির শরীরে মেলানিন এর মাত্রা কম বা বেশি হয়ে থাকে।
- জাতিসত্তাগত কারণ
- জীন বা বংশগত কারণ
- সূর্যালোকের প্রভাব
জাতিসত্তাগত কারণ: পৃথিবীতে বহু জাতি ও বর্ণের মানুষ রয়েছে। প্রত্যেকটি জাতি তার ভৌগোলিক অবস্থানের ভিন্নতার কারণে অন্যান্য জাতিদের থেকে দেখতেও কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। এই বিষয়টি আমরা অন্যান্য জাতিদের দেখলে খুব সহজেই বুঝতে পারবো। যেমন: আফ্রিকার বাসিন্দারা অনেকটাই ডার্ক স্কিনের হয়ে থাকে, অপরদিকে ইংল্যান্ডের বাসিন্দারা অনেকটাই উজ্জ্বল স্কিনের অধিকারী হয়ে থাকে। এর পিছনের একমাত্র কারণ ভৌগোলিক অঞ্চল ও অঞ্চলভিত্তিক আবহাওয়া।
জীন বা বংশগত কারণ: গায়ের রঙ কালো বা ফর্সা হওয়ার ক্ষেত্রে দায়ী দ্বিতীয় কারণটি হলো জীন বা বংশগত কারণ। কোনো ব্যক্তির ডিএনএ তার
মাতা-পিতা ও আত্নীয় থেকে প্রাপ্ত শারীরিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ করে থাকে। অর্থাৎ গায়ের রঙ কালো বা ফর্সা হওয়ার ক্ষেত্রে বংশগত বৈশিষ্ট্যও দায়ী হতে পারে। কোন ব্যক্তির পিতা-মাতা, দাদা-দাদী যদি কালো হয়ে থাকে তবে তার গায়ের রঙও কালো হতে পারে, এটিই জীন বা বংশগত কারণ।
সূর্যালোকের প্রভাব: সূর্যালোক মেলানিনের মাত্রার সবচেয়ে বড় নির্ধারক যা বাকি দুটি বিষয়কেও প্রভাবিত করে। দুটি ভৌগোলিক অঞ্চলের আবহাওয়ার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকে। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি যে অঞ্চলে যত বেশি পড়ে সে অঞ্চলের মানুষের গায়ের রঙ ততটাই কালচে বর্ণের হয়ে থাকে। আর কালচে বর্ণের অধিকারীদের সন্তানাদিও জীনগত ভাবেই কালচে বর্ণের হয়ে থাকে। তাই ফর্সা বা কালো হওয়ার পিছনে এটিও একটি বড় কারণ।

প্রাকৃতিক নিয়মে স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার উপায়
স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার এটিই একমাত্র উপায়। প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় আমাদের ত্বককে অনেক কিছুই সহ্য করতে হয়। রোদ, ধুলাবালি, দূষণ এর ফলে আমাদের ত্বক হারিয়ে ফেলে নিজের স্বাভাবিক রং ও উজ্জ্বলতা। এই অবস্থাতে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে অনেকেই ঝুঁকে পড়েন বাজারের বিভিন্ন প্রসাধনীর দিকে, যেগুলোর বেশিরভাগই থাকে বিভিন্ন চড়া রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি যা স্থায়ীভাবে ফর্সা ত্বকতো দেয়ইনা বরং পরবর্তীতে ত্বকের নানাবিধ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এসব প্রসাধনীতে বেশিরভাগই স্টেরয়েড, হাইড্রো-কুইনাইন সহ অতিমাত্রায় মার্কারি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া, ব্রণ, বলিরেখা, মেছতা, ফুঁসকুড়ির মতো সমস্যা তো দেখা দেয়ই উপরন্তু এসব উপাদান বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগসহ মরণব্যাধি স্কিন ক্যান্সারেরও কারণ হয়ে থাকে।
এখন প্রশ্ন এটাই যে, কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত উপাদান কি নেই যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারে? উত্তর হবে; হ্যাঁ অবশ্যই আছে।
বিভিন্ন ঘরোয়া উপাদানের মাধ্যমে আপনি স্থায়ীভাবে উজ্জ্বল ত্বক পেতে পারেন যা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত। এ অংশে আমরা এমন কিছু উপাদানের কথা উল্লেখ করবো।
মধু
ত্বকের যত্নে মধু একটি বহুল প্রচলিত উপাদান যা সত্যিই অত্যন্ত কার্যকরী। প্রতিদিন এক চামচ মধু নিয়ে মুখে লাগিয়ে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করবেন। ফলাফল কিছুদিনের মধ্যেই দেখতে পাবেন। এটি ত্বককে ময়শ্চারাইজ রাখার পাশাপাশি ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করবে। এটি বিশেষ করে ড্রাই স্কিনের জন্য খুবই উপকারী।
কাঠবাদামের তেল
রুপচর্চায় কাঠবাদামের তেল খুবই উপকারী যা আমন্ড অয়েল নামে পরিচিত। ওমেগা-৯ ফ্যাটি এসিড, এসেনশিয়াল ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ এই তেল ত্বকের ময়শ্চার ধরে রাখতে ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে কার্যকরী। এই তেল নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়, বলিরেখা-চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়। এছাড়া একজিমা, ব্রণ, সোরিয়াসিস সহ সকল প্রকার চর্মরোগ দূর করতে এই তেলের জুড়ি নেই।
প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে পরিমাণমতো আমন্ড অয়েল মুখে লাগিয়ে ঘুমাতে পারেন। এটি আপনার নাইট স্কিন কেয়ার এর কাজ করবে।
হলুদ
হলুদকে ন্যাচারাল কসমেটিকস বলা যেতে পারে। প্রচুর পরিমাণে এন্টি-এক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই মসলাটি ত্বকের যত্নেও ব্যবহার উপযোগী। এটি এলার্জি, ব্রণ, র্যাশ দূর করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও ত্বককে মসৃণ করে। হলুদে এন্টিসেপটিক ও এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান থাকার কারনে এটি ত্বকের ফাংগালজনিত সমস্যা দূর করে। এছাড়া ত্বকের পিগমেন্টেশনজনিত সমস্যা দূর করতেও হলুদ অত্যন্ত কার্যকরী।
সপ্তাহে একবার কাঁচা হলুদ বেটে মুখে লাগাতে পারেন। যদি হাতের কাছে কাঁচা হলুদ পাওয়া না যায় তবে রান্নায় ব্যবহার করার হলুদ গুড়োকেও একটুখানি পানি মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে লাগাতে পারেন।
টমেটো
টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে “লাইকোপিন” যা ব্রণের দাগ দূর করে ও ব্রণের গর্ত ভরাট করে। এটি ত্বকের মৃত কোষকে সরিয়ে ত্বকের ট্যান দূর করে ও ত্বককে উজ্জ্বল করে। প্রতিদিন এক চামচ পরিমাণ টমেটোর পাল্প বা রস আপনার ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়াকে প্রতিরোধ করবে।
গোলাপজল
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে গোলাপজল বা রোজ ওয়াটারের অনেক উপকারিতা রয়েছে। গোলাপজলের এন্টি-ব্যাক্টেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ত্বকের খোলা লোমকূপ বন্ধ করে। এটি ত্বকের পিএইচ (PH) ভারসাম্য বজায় রাখে ফলে ত্বক অতিরিক্ত অয়েলি বা ড্রাই হয়না। গোলাপজলকে ন্যাচারাল টোনার বলা হয়। এটি ত্বকের ক্লিনজিং এর কাজেও ব্যবহার করা যায়। এটি ত্বকের মৃত কোষকে সরিয়ে ত্বককে পুনঃজীবিত করে।
প্রতিবার মুখ ধোবার পর তুলোতে একটুখানি রোজ ওয়াটার নিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। এটি ব্যবহার করলে আলাদা করে টোনার ব্যবহারের প্রয়োজন হবেনা।
অ্যালোভেরা
ত্বক পরিচর্যায় অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী একটি অন্যতম ও সেরা উপাদান। অ্যালোভেরা একই সাথে ত্বকের সব রকম সমস্যারই সমাধান। এটির এতোই উপকারিতা রয়েছে যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা। এটিকে ন্যাচারাল ময়শ্চারাইজার বলা চলে। কেননা এটি সহজেই ময়শ্চারাইজারের পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়। অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী পাতার রস ত্বকের মেছতা ও দাগ ছোপ সহ ত্বকের বিভিন্ন রকম সমস্যা দূর করে। এটি ত্বককে কোমল ও মসৃণ করে। এটি নরমাল স্কিন থেকে শুরু করে সব ধরনের স্কিনের জন্যই উপযোগী।
আলুর রস
আলুতে থাকা ব্লিচিং উপাদান ত্বককে ব্লিচ করে প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে ফর্সা করে। আলুর রস ত্বকের জমে থাকা ময়লা ও মৃত কোষ দূর করে। পিম্পল, একনি, ডার্ক সার্কেল, পুরনো দাগ ছোপ, মেছতা, হাইপার পিগমেন্টেশন দূর করতে আলু অত্যন্ত কার্যকরী।
মুলতানি মাটি
মুলতানি মাটিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান যা ত্বককে ভেতর থেকে পরিশুদ্ধ করে তোলে। এছাড়াও তৈলাক্ত ত্বক ও ব্রণের সমস্যায় মুলতানি মাটি ব্যবহার করলে খুবই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। মুলতানি মাটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল সরিয়ে ত্বকের প্রাকৃতিক পিএইচ ব্যালেন্স বজায় রাখে। যাদের স্কিনে বয়সের ছাপ ও ট্যান পড়ে গেছে তাদের জন্য মুলতানি মাটির প্যাক খুবই উপকারী।
শসা
শসার রস খুবই ভালো টোনারের কাজ করে। শসায় প্রচুর পরিমাণে এন্টি-এক্সিডেন্ট রয়েছে। শসা ত্বককে হাইড্রেট করে। এটি নির্জীবতা দূর করে ত্বককে ভেতর থেকে কোমল ও ফর্সা করে। শসা ব্লেন্ড করে এর পানি নিংড়ে নিয়ে একটি স্প্রে বোতলে ভরে রাখতে পারেন। এটি দিনে যেকোনো সময় মুখে স্প্রে করতে পারেন। টোনারের পরিবর্তেও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপরোক্ত ঘরোয়া উপাদানগুলো, আপনার ত্বকের নানারকম সমস্যা দূর করে ত্বককে প্রাকৃতিক ভাবে ভিতর থেকে উজ্জ্বল, দাগহীন ও ফর্সা করে তুলবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী খাদ্য
এই অংশে আমরা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী কিছু খাদ্য নিয়ে আলোচনা করবো যা আমাদের ত্বককে স্থায়ীভাবে ভিতর থেকে ফর্সা ও উজ্জ্বল করবে।
পানি
শরীর ও ত্বকের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে পানি। পানি আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়। পরিমিত পরিমাণে পানি পেলে তা ত্বকের কোষে পৌঁছে যায় ফলে ত্বক অত্যন্ত সজীব হয়ে উঠে। পরিমিত পরিমাণে পানি পান ত্বকের ব্রণ ও একনির সমস্যা দূর করে। বিভিন্ন পানিজাতীয় খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিৎ।
ফলমূল
ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে যা শরীর ও ত্বকের জন্য খুবই জরুরি। নিয়মিত ফলমূল খেলে ত্বককে সজীব ও প্রানবন্ত দেখায়। বিভিন্ন মৌসুমি ফল বিশেষ করে ভিটামিন সি যুক্ত ফল ত্বককে ভিতর থেকে ফর্সা ও উজ্জ্বল করে। পেঁপেঁ, স্ট্রবেরি, পেয়ারা, ডালিম, আনারস, তরমুজ, লেবু ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
রঙিন শাকসবজি ও সালাদ
ত্বককে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে প্রচুর পরিমাণে রঙিন শাকসবজি ও সালাদ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বিভিন্ন রঙের শাকসবজি থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি ও ই পাওয়া যায়। ভিটামিন এ ও বি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে, ভিটামিন সি ও ই ত্বকের গভীর থেকে পুষ্টি যোগায় ও ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
বাদাম
বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, বিভিন্ন ওমেগা ফ্যাটি এসিড যা ত্বককে করে ভিতর থেকে কোমল, মসৃণ ও আকর্ষণীয়। প্রতিদিন বিকালের স্ন্যাকসে বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এটি ত্বকের তারুণ্য ও দীপ্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন ধরনের বীজ
বিভিন্ন ধরনের বীজ যেমন: চিয়া সীড, তোকমা, তিসি বীজ, কুমড়োর বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গুড ফ্যাট, জিংক, এন্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ই। যা ত্বকের ড্যামেজ হয়ে যাওয়া, ত্বকে ভাজ পড়ে যাওয়াকে প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এই বীজগুলো ত্বকের ফাংগালজনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে ও ত্বকে নিয়ে আসে ন্যাচারাল গ্লো।
উপরোক্ত খাবারগুলো ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত কার্যকরী। তাই ত্বকে ঘরোয়া উপাদান ব্যবহারের পাশাপাশি ত্বককে ভেতর থেকে ফর্সা ও উজ্জ্বল করতে ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় এসকল খাবার গ্রহণ করা উচিত।
নাইট ক্রিম বানানোর ঘরোয়া পদ্ধতি
ত্বককে ফর্সা ও উজ্জ্বল করতে নাইট ক্রিম ব্যবহার করা আবশ্যক। ত্বকের ড্যামেজ রিপেয়ারে নাইট ক্রিম খুবই কার্যকরী। আজকাল বাজারে বহু নাইট ক্রিম পাওয়া যায় যার বেশিরভাগই বিভিন্ন ক্ষতিকর ও চড়া কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি। আর যেসকল পণ্য আসলেই মানসম্মত ও ব্যবহার উপযোগী সেসকল পণ্য অনেকটাই দামী হয়ে থাকে যা হয়তো সবার পক্ষে ক্রয় করা সম্ভব হয় না।
এখানে আমরা একটি ঘরোয়া নাইট ক্রিম বানানোর পদ্ধতি দেখাবো, যা আপনি খুব সহজেই ঘরে থাকা উপকরণ দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারবেন। তো চলুন দেখে নেই এটি তৈরির পদ্ধতি-
যা যা লাগবে: একটি আপেল, এক টেবিল চামচ গোলাপ জল, আধা কাপ অলিভ অয়েল ও দু-তিন চিমটি জাফরান।
- প্রথমেই আপেল ও জাফরানকে একত্রে একটি স্মুথ পেস্ট বানিয়ে নিন।
- এবার পেস্টটিতে গোলাপ জল ও অলিভ অয়েল ভালো করে মিক্স করে নিন।
- মিক্সটিকে একটি এয়ারটাইট কন্টেইনারে ভরে নিন।
এটি ফ্রিজের নরমালে সাত দিন পর্যন্ত রেখে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাবার আগে একটুখানি ক্রিম মুখে লাগিয়ে নিন। এটি ত্বকের ময়শ্চারাইজ ধরে রাখবে ও স্কিনের ড্যামেজ রিপেয়ার করবে। এটি ড্রাই টু কম্বিনেশন অর্থাৎ সব ধরনের স্কিনের জন্যই ব্যবহার উপযোগী।
রোদে পোড়া ত্বকের যত্ন
আপনার ত্বক কি রোদে পুড়ে কালচে হয়ে গেছে? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারা নিজেই চিনতে পারছেন না বলে হতাশায় ভুগছেন? তবে জেনে নিন এটি বেশিরভাগ মানুষেরই একটি কমন সমস্যা, যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত বিপর্যয় ডেকে আনে।
অনেকেই রোদে পুড়ে যাওয়া ত্বককে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের ব্যয়বহুল ক্রিম ব্যবহার করেও ভালো ফলাফল পায়না, তবে এমন কিছু ঘরোয়া উপাদান রয়েছে যা আপনার রোদে পোড়া ত্বকের কালচে ভাবকে ভেতর থেকে ঠিক করবে।
তবে সর্বপ্রথমে আপনাকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি ত্বককে রোদ থেকে ঠিকঠাকভাবে প্রটেক্ট করছেন কিনা! আপনি যদি দিনের বেলায় সানস্ক্রিন ইউজ না করেন এবং কড়া রোদে বাইরে বেরোনোর সময় ছাতা ব্যবহার না করেন তবে আপনার স্কিনে সানবার্ণ হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই সানবার্ণ থেকে ত্বককে বাচাতে প্রথমেই এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে যেন আপনার ত্বক আর নতুন করে ড্যামেজ না হয়।
এ অংশে আমরা এমন কিছু ঘরোয়া উপাদান নিয়ে কথা বলবো যা রোদে পুড়ে যাওয়া ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
গ্রীন-টি
রোদে পুড়ে যাওয়া ত্বককে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে গ্রীন টি খুবই কার্যকরী। গ্রিন টির মধ্যে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের ভেতর থেকে সমস্ত রকম টক্সিন পদার্থ বের করে ত্বককে পরিষ্কার রাখে এবং সূর্যের আল্ট্রা-ভায়োলেট বা অতি বেগুনি রশ্মির খারাপ প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
ডাবের পানি
ত্বক থেকে যেকোনো কালো দাগ দূর করতে ডাবের পানি অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। সাণবার্ণ বা রোদে পোড়া দাগ, বসন্তের দাগ, পোড়া দাগ, ব্রণের দাগ বা যে কোন ধরনের দাগের সমস্যা কিংবা বার্ধক্যজনিত রিংকেলস ফাইন লাইনস এর সমস্যা দূর করতে ডাবের পানি খুব ভালো কাজ করে। নিয়মিত ডাবের পানি ব্যবহারের ফলে ত্বক ফর্সা এবং দাগহীন হয়ে ওঠে।
অ্যালোভেরা
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরাও খুবই উপকারী। অ্যালোভেরা জেলে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ উপাদান উপযুক্ত পুষ্টি জুগিয়ে ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে তোলে। এছাড়াও ব্রণ, পিম্পলস-এর মত গুরুতর সমস্যাগুলির সমাধান করে। বিভিন্ন দাগসহ ত্বকের রং হালকা করে আরো ফর্সা করতে অ্যালোভেরার জুড়ি নেই।
শসা
শসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা ত্বকের ড্যামেজ সারিয়ে তোলে ও ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা প্রদান করে। শশা সবচেয়ে ভালো টোনারের কাজ করে। রোদ থেকে এসে শসার রস মুখে লাগিয়ে নিলে ত্বক হাইড্রেটেড থাকে ও রোদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বক সুরক্ষিত থাকে।
উপরোক্ত উপাদান ছাড়াও টমেটো, বিভিন্ন ফলের রস, টক দই, আইস কিউব রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে ব্যবহার উপযোগী। নিয়মিত এসকল ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করলে খুব অল্প সময়েই আপনি আপনার স্কিনে একটি ভালো ফলাফল লক্ষ্য করবেন।
মেয়েদের জন্য ফেসপ্যাক
এ অংশে আমি মেয়েদের সব ধরনের স্কিনের জন্য উপযোগী একটি ঘরোয়া ফেসপ্যাক তৈরির পদ্ধতি দেখাবো।
যা যা লাগবে: এক টেবিল চামচ মসুর ডাল, এক চা চামচ মধু, এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, এক চা চামচ গোলাপ জল, এক চিমটি হলুদ ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস।
তৈরির পদ্ধতি
- মসুর ডাল সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা ব্লেন্ড করে নিন বা বেটে নিন।
- এবার এতে একে একে মধু, ঘৃতকুমারীর রস, গোলাপ জল, হলুদ ও লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মিক্স করে নিন।
- মিশ্রণটি পুরো মুখে লাগিয়ে নিন।
- ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই প্যাকটি সব ধরনের স্কিনে ব্যবহার উপযোগী। তবে যাদের সেন্সিটিভ স্কিন তারা চাইলে লেবুর রস স্কিপ করতে পারেন। এটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করবেন। এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে খুব অল্প সময়েই আপনি একটি ভালো ফলাফল লক্ষ্য করবেন।
ছেলেদের জন্য ফেসপ্যাক
ছেলেদের ত্বক মেয়েদের তুলনায় অনেকটাই পুরু বা ভারী হয়ে থাকে। এছাড়া দেখা যায় দিনের বেশিরভাগ সময়ই তাদেরকে বাইরে কাটাতে হয়। যার ফলে সানবার্ণ, একনে, ট্যান পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো তাদেরকেই বেশি পোহাতে হয়।
তাই ছেলেদের দরকার একটু এক্সট্রা কিছু। এ অংশে আমরা ছেলেদের এসব বিষয় মাথায় রেখেই একটি ঘরোয়া ফেসপ্যাক বানানোর পদ্ধতি দেখিয়েছি। যা স্কিনের সকল রকম সমস্যার সমাধান করবে। তাহলে চলুন দেখে নেই ফেসপ্যাকটি তৈরির পদ্ধতি –
যা যা লাগবে:
- অর্ধেক টমেটো
- টক দই এক টেবিল চামচ
- বেসন এক চা চামচ
- এক চিমটি চিনি
যেভাবে এপ্লাই করবেন-
- কাটা টমেটোর টুকরার উপর চিনির গুঁড়া ছড়িয়ে নিন।
- এবার এটার উপরে টক দই ও বেসন নিন।
- এবার এই টমেটোর টুকরা রোদে পোড়া ত্বকে হালকা করে ম্যাসাজ করুন।
- চিনির দানা গলে গেলে ফেস প্যাক মুখে আরও ১০ মিনিট রেখে পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
এই প্যাকটি রোদে পোড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে খুবই ভালো কাজ করে। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে দু’বার ব্যবহার করবেন।
ত্বকের যত্ন বিষয়ক কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর
নিচে ত্বকের যত্ন বিষয়ক কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর সংযোজন করা হলো –
মেয়েদের জন্য কোন নাইট ক্রিম সবচেয়ে ভালো?
উত্তর: এখানে আমি মেয়েদের জন্য বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫টি সবচেয়ে ভালো ক্রিমের নাম উল্লেখ করেছি, যেগুলো ল্যাব টেস্টে স্কিনের জন্য নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে।
1. Ponds Age Miracle Cream
2. Lakme Youth Infinity skin sculpting Night cream
3. Olay Natural White All In One Fairness Night CCream
4. LOréal Paris White Perfect Night Cream
5. Himalaya Revitalising Night Cream
কি খেলে গায়ের রং ফর্সা হয়?
উত্তর: দুধ, ডিম, বিভিন্ন বীজ জাতীয় খাবার, রঙিন শাকসবজি ও ফলমূল, মাছের তেল সহ এজাতীয় খাদ্য উপাদানসমৃদ্ধ খাবারগুলো ত্বকের মেলানিন গ্রোথ কমিয়ে ত্বককে ভেতর থেকে ফর্সা করে।
ছেলেদের ত্বক ফর্সাকারী কোন ক্রিম আছে কি?
উত্তর: “Garnier Men Power White Anti-pollution Brightening Moisturiser” এই ক্রিমটি ব্যবহার করতে পারেন। ল্যাব টেস্টের রেজাল্টে এটির পিএইচ (PH) মান সেইফ পাওয়া গিয়েছে। এটি ত্বকের মেলানিন গ্রোথকে কমিয়ে ত্বককে ভেতর থেকে ফর্সা ও উজ্জ্বল করে। এখনো পর্যন্ত এটিতে কোনরকম ক্ষতিকর অনিয়ন্ত্রিত কেমিক্যাল পাওয়া যায়নি। এটি নাইট ক্রিম হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন এতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
শেষ কথা
ত্বক ভেতর থেকে স্বাস্থ্যজ্জল না হলে কোন প্রসাধনীর মাধ্যমেই একে স্থায়ীভাবে ফর্সা ও উজ্জ্বল করা সম্ভব না। তাই আমাদের উচিৎ কেমিক্যাল প্রোডাক্টের দিকে কম ঝুঁকে প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নেওয়া।
আজকের আর্টিকেলে চেষ্টা করা হয়েছে, ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত কিছু ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করতে যা ত্বককে ভেতর থেকে হেলদি রাখার পাশাপাশি ত্বককে ফর্সা ও উজ্জ্বল করবে। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ও কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না।
Reference
Girl Model Image Credit: Image by KamranAydinov on Freepik
Thanks for this useful content.
Thank you for your comment. Stay with us and learn new things.