পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায়: বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর সমস্যা তারা পড়াশোনায় মনোযোগ বসাতে পারছেনা। অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে শোনা যায় পড়াশোনায় তাদের মন বসে না। চিন্তা করবেন না, এটি আপনার একার সমস্যা নয়, এটি একটি সাধারণ সমস্যা—যেটা হওয়াই স্বাভাবিক। আজকের পোস্টে আমরা পড়াশোনায় মনোযোগ বসানোর উপায় জানাব। পড়াশোনায় মন বসানোর কয়েকটি সহজ উপায় আছে। আজ আমরা জানাব পড়ালেখায় মনোযোগ আনার ইসলামি উপায়গুলো। আশাকরি এগুলো অনুসরণ করলে আপনারা উপকৃত হবেন।
পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায়
পড়ালেখায় মনোযোগী হতে বেশকিছু মেনে চলতে হবে। নিম্নে পড়াশোনায় মনোযোগ বসাতে করণীয় বিষয়সমূহ উল্লিখিত হয়েছে-
১. লক্ষ্য স্থির করা
আপনাকে পড়তে বসার আগে আপনার আজকে পড়তে বসার উদ্দেশ্য এবং কী কী পড়বেন তা ঠিক করে নিতে হবে। মনে রাখবেন যেকোনো কাজের আগে কাজের আগে লক্ষ্য ঠিক করা বেশি জরুরি।
রাসুল (স.) বলেন, কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়্যাত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।
তাই যেকোনো কাজের আগে লক্ষ্য স্থির করুন। আপনি বাসা থেকে হাঁটতে বের হলেন, কিন্তু আপনি কেন হাঁটবেন বা হাঁটলে কি হবে আপনি জানেন না। তাহলে, খুব বড়োজোর ২/৩ দিন হাঁটার পর আপনি আর হাঁটবেন না। কারণ, আপনি জানেন না আপনি কেন হাঁটছেন। পড়াশোনার ব্যাপার ঠিক তেমনই—আপনি কেন পড়ছেন, পড়ালেখা করে আপনি কী হতে চান, এই লক্ষ্য আগে ঠিক করে নিতে হবে; না হলে উদ্দেশ্যহীনভাবে যদি আপনি বল ছুড়েন সেই বল যেমন গোল পোস্টে ঢুকবে না, ঠিক উদ্দেশ্যহীন পড়ালেখায় মন বসবে না এটাই স্বাভাবিক।
আরও দেখুন: বাচ্চাদের পড়ালেখায় মনোযোগী করার উপায়
২. রুটিন তৈরি করা
পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়ার জন্য রুটিন করে পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের একদিন পড়লে অন্য দিন আর পড়তে মন চায় না অথবা কী পড়ব তা ভেবে পান না। এর জন্য রুটিন করা প্রয়োজন। সাধারণত রুটিন-বিহীন মানুষ সফলতার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে থাকেন। রুটিন মাফিক সূর্য প্রতিদিন পূর্ব দিক থেকে উঠে আবার পশ্চিমে অস্ত যায়। তাই, প্রতিদিন দিন হয় এবং দিন শেষে রাত নেমে আসে। আপনাকেও তাই পড়াশোনা রুটিন মাফিক করতে হবে। আপনার মন মত আপনার রুটিন তৈরি করুন। পড়ার মাঝে অল্প সময় বিরতি দিতে হবে। মানুষের ব্রেইন ৩০/ ৪০ মিনিট এর বেশি মনোযোগ রাখতে পারে না। সেজন্য মাঝেমাঝে, বিরতি দিয়ে দিয়ে পড়লে পড়াটা খুব ভালো মুখস্ত হয়।
আরও দেখুন: আবেদন পত্র লেখার নিয়ম
৩. স্যোশাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন
অধিকাংশ মানুষের অন্যতম একটা সমস্যা হলো কিছুক্ষণ পর পরই ফোন ধরা। আর ফোনের দেশেই হারিয়ে যান আর ফিরে আসার পথ খুঁজে পাননা। পড়তে পড়তে বিরক্ত হলেই অনেকেই ফোন হাতে নেয়। ফেসবুক ঘাটতে থাকে আর স্ক্রল করতেই থাকে, করতেই থাকে। এভাবেই সময় কেটে যায়। যখন ফোনে পছন্দের জিনিসগুলো আপনার সামনে আসতে থাকে আর তখন মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নিঃসরণ হতে থাকে। যার কারণে ভালো লাগতে থাকে। কিন্তু ফোনের আলোতে মাথা ব্যথাসহ আরও নানান সমস্যা হয় যেটা তাৎক্ষণিক বুঝা যায়না। যখন ফোন টিপা হয়ে যায় বা খারাপ লাগে তখন আর পড়াশোনা করার মুডই থাকে না।
তাই আপনার কখনোই উচিৎ না পড়তে বসার পরে আর পড়া শেষ হওয়ার আগে ফোন ধরা , ফেসবুকিং করা ইত্যাদি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
৪. পর্যাপ্ত পানি পান করা
পানির অপর নাম জীবন। বেশি বেশি পানি খাওয়ার ফলে শরীর ঠান্ডা থাকে অর্থাৎ শরীরের তাপমাত্রা বজায় থাকে। আমরা যখন পড়াশোনা করি তখন আমাদের ব্রেন প্রচুর পরিমাণে কাজ করতে থাকে, যার ফলে আমাদের দেহের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
আর এ কারণে আমাদের অনেক সময় বিরক্তি বিরক্তি ভাব আসে, পড়াশোনার প্রতি অমনোযোগী ভাব আসে, শরীর খারাপ লাগে। এজন্য বেশি বেশি পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে আশা করি পড়ার প্রতি মন বসবে।
৫. চারপাশে পড়ার পরিবেশ তৈরি করা
পড়াশোনা খুব সহজ কাজ নয়। মাথা খাটিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। এর জন্য চাই নিরিবিলি পরিবেশ। এই জন্য আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আশপাশের সবকিছু ঠিক আছে কিনা।
শব্দহীন একটা পরিবেশ তৈরি করে পড়তে বসার চেষ্টা করতে হবে। যতটা সম্ভব নিরিবিলি ও ঠান্ডা পরিবেশে পড়ার চেষ্টা করবেন।
আরও দেখুন: ভালো ছাত্র হওয়ার সহজ উপায়
৬. রাত জেগে থাকার অভ্যাস ত্যাগ করুন
মহান আল্লাহ তা’আলা রাতকে ঘুমানোর জন্য সৃষ্টি করেছেন। যে সময়ের কাজ সেই সময়ে করতে হবে নতুবা কোনো কাজে মন বসবে না। অনেকেই বলে থাকে রাত নিরিবিলি থাকে তখন পড়লে পড়া তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়, কিন্তু এ দাবিটি সত্য নয়। দিনে, সন্ধ্যায় এবং সন্ধ্যার পর পড়লে এবং সকালে ফজরের নামাজ পড়ে পড়তে বসলে তাতেই অনেক পড়া যায়। এসময় মাইন্ড রিফ্রেশড থাকে। আপনি যদি রাত জেগে পড়াশোনা করেন তাহলে আপনার পুরো দিনটাই আলসেমিতে এবং দিনটাই ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে যাবে। এজন্য অবশ্যই রাত্রি জেগে পড়াশোনা করার বদ অভ্যাসটা থাকলে এটি বদলে ফেলুন।
পড়াশোনায় মনোযোগ আনার ইসলামি উপায়
আপনি যদি মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে এ উপদেশটি আপনার জন্য। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার জন্য সাহায্য চান। ৫ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করুন। মনে রাখুন, আল্লাহ ব্যতিত কেউ সাহায্য করার নেই। নিয়মিত কুরআন তিলওয়াত করুন। আশা করা যায় মনোযোগের উন্নতি হবে।
টেবিলে পড়তে বসুন
আমাদের অনেক সময়েই রাতে ঘুম আসেনা। কিন্তু যখনই আমরা পড়তে বসি, তখনই ঘুম চলে আসাটা একদম চিরন্তন সত্য। এজন্য অবশ্যই আপনারা পড়তে বসলে পড়ার টেবিলে বসবেন। আর নিজের পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় খাতা, কলম, ক্যালকুলেটর, ও অন্যান্য সকল উপাদান হাতের কাছে নিয়ে বসবেন; যাতে বারবার কোনো কিছু আনতে যাওয়ার জন্য ওঠার দরকার না পড়ে। কারণ পড়তে পড়তে উঠলে মনোযোগ বারংবার ব্যাহত হয়। এজন্য পড়ার সময়ের যাবতীয় উপাদান গুছিয়ে নিয়ে বসবেন ও বিছানায় পড়তে বসবেন না।
আরও দেখুন: পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার উপায়
ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম মনকে একাগ্র করার ভালো উপায় বলে মনে করা হয়। মন এবং শরীরের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে নিয়মিত ব্যয়াম করুন। মনকে একাগ্র করার জন্য কয়েন ট্রিকও অবলম্বন করতে পারেন, যাতে করে আপনার ফোকাস ঠিক থাকবে। এতে আপনার পড়ায় মনযোগ বাড়বে।
ঠিকমতো ঘুমানোর অভ্যাস করা
ঘুমের অভাব সহজেই একাগ্রতা ব্যাহত করতে পারে। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এর প্রভাব আপনার মেজাজ ও কাজের ওপর দেখা যায়। অনেক সময় ঘুমের অভাবে আমাদের সারাদিন খারাপ যায়। আমাদের মন ভারাক্রান্ত মনে হয় এবং কোনো কাজে মনোনিবেশ করতে পারিনা। তাই ঘুমানোর সময় ঠিক করে নিন, এর ফলে অলসতা ও ক্লান্তির মতো সমস্যা আপনার হবেনা এবং আপনার মনকে একাগ্র করতে পারবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।
দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার কৌশল
- ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে টিভি বন্ধ করুন এবং মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকাবেন না।
- আপনার রুমের তাপমাত্রা আরামদায়ক রাখুন।
- ঘুমানোর আগে গোসল করুন।
- ঘুমানোর আগে একটি বই পড়ুন।
- প্রতিদিন একই সময়ে উঠুন।
- প্রতিদিন ব্যায়াম করুন।
- ঘুমানোর আগে ভারি ব্যায়াম করবেন না।
ব্রেইন গেমস খেলুন
কিছু গেম আপনাকে আরও ভাল মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করতে পারে। এই গেমগুলির মধ্যে রয়েছে-
- জিগস পাজল
- স্ক্র্যাম্বল
- মেমরি গেম
- সুডোকু
- ওয়ার্ডপাজল
ব্রেইন গেমগুলি আপনার কাজের এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করতে পারে।
ব্রেইন গেইম শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নয়, শিশুদের জন্যও খুব উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্রেইন গেম খেলার মতো কার্যকলাপগুলি মনোযোগের উপর বিশাল ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
একসাথে দুটি কাজ করা থেকে বিরত থাকুন
একসাথে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এবং ব্যবসায়ী হওয়ার ব্যাপারটি যেমন হাস্যকর, ঠিক তেমনই পড়তে বসলে একসাথে অনেক কাজ করার চেষ্টা করলে কোনোটাই ঠিকভাবে হয় না। শুধু সময় নষ্ট হয়। অনেকেই মোবাইল/কম্পিউটার/টিভির সামনে পড়তে বসে কিন্তু এতে না হয় পড়া, আর না হয় ওইগুলা দেখা। তাই পড়ার সময় মোবাইল, কম্পিউটার, টিভি একেবারে বন্ধ করে পড়তে বসেন বা যে জায়গায় এগুলা আছে সে জায়গা ছেড়ে করে অন্য জায়গায় পড়তে বসুন। এতে পড়ার মনোযোগের পাশাপাশি পড়া তাড়াতাড়ি মুখস্থ হবে।
আরও দেখুন: ইংরেজি শেখার সহজ উপায়
পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না
আপনি যদি দুশ্চিন্তা করেন, তাহলে আপনি কখনোই পড়ায় মনোযোগ দিতে পারবেন না। আপনার মনে হবে, পরীক্ষার আর মাত্র ৭ দিন বাকি আছে, আমার তো কিছুই পড়া হয়নি, এবার নিশ্চিত ফেল করব! বা হয়তো মনে হবে, বন্ধুরা তো পড়ে ফাটিয়ে ফেলছে; আমি কী করলাম? এসব বিষয় নিয়ে মোটেও চিন্তা করবেন না। আপনি যখন এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন তখন আপনার আর পড়তে মন চাইবে না। বরং আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন আর বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেও আপনার কোনো পড়া মাথায় ঢুকবে না।
সবসময় পড়তে বসার আগে অবশ্যই আপনার মন ফ্রেশ রাখুন এবং সকল দুশ্চিন্তা মন থেকে মুছে ফেলে পড়ার টেবিলে বসুন।
নিজেকে পুরস্কার দিন
কোনো কাজ ভালোভাবে শেষ হলে নিজেদেরকে পুরস্কৃত করতে হবে এবং সেটা নিজেদেরকেই। মনে করুন, আপনি আজকের পড়া খুব ভালোভাবে শেষ করতে পেরেছেন বা কোনো একটা পরীক্ষায় ভালো পারফরম্যান্স করেছেন, কিন্তু সেখান থেকে কোন পুরস্কার পাননি। এখন আপনার কাজ হবে নিজেকে নিজেই পুরস্কৃত করা। এজন্য আপনি আপনার পছন্দের খাবার খেতে পারেন বা নিজেকে একটু বিশ্রাম দিতে পারেন বা কোথাও একটু ঘুরতে যেতে পারেন। এটা করলে আপনার পড়ালেখায় মনোযোগ বসবে, ইনশাআল্লাহ।
উপসংহার
এখানে পড়ালেখায় মনোযোগ আনার প্রায় ১৪টি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি উপরিউক্ত কাজগুলো করলেই আপনি অনেকটা উন্নতি করতে পারবেন।
উল্লিখিত পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায়গুলোর মাধ্যে পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার কোন উপায়টি আপনার কাছে সেরা মনে হয়েছে?
mash allah anek valo
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ