ছাত্রজীবনে অ্যাসাইনমেন্ট বহুল পরিচিত একটি বিষয়। ভার্সিটি লাইফের অ্যাসাইনমেন্টের প্যারা সম্পর্কে সবারই জানা আছে। তবে বর্তমানে করোনা মহামারিতে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও অ্যাসাইন্টমেন্টের সম্মুখীন হয়েছেন। এক কথায় বলতে গেলে আমরা সবাই অ্যাসাইনমেন্টের সাথে পরিচিত। কিন্তু আমরা কি আসলেই জানি আ্যাসাইনমেন্ট এর সঠিক নিয়মগুলো কি কি? কীভাবে অ্যাসাইনমেন্ট লিখলে ভালো মার্কস পাবো?
অনেকেই কষ্ট করে অ্যাসাইনমেন্ট করেন, কিন্তু ভালো মার্কস পাচ্ছেন না কেন জানেন? কারণ একটাই, আপনি অ্যাসাইনমেন্ট লেখার সঠিক নিয়ম ভালো করে জানেন না এখনও। আজ আমি আপনার সেই সমস্যাটি দূর করতে সাহায্য করবো। তবে এর জন্য আপনাকে একটু কষ্ট করে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
তাহলে চলুন জেনে নিই অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নিয়ম-কানুনগুলো।
অ্যাসাইনমেন্ট কি?
Assignment হলো শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রদের দেয়া কাজ, যেটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়। অ্যাসাইনমেন্টকে শেখার অংশ হিসাবে কাউকে দেওয়া কাজ হিসাবেও উল্লেখ করা যেতে পারে।

অ্যাসাইনমেন্ট লেখার সঠিক নিয়ম কী?
পরীক্ষায় যেমন ভালো নাম্বার পেতে বিশেষ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়, ঠিক তেমনি অ্যাসাইনমেন্ট লিখে ভালো নাম্বার তুলতেও আপনাকে কিছু ট্রিকস অবলম্বন করতে হবে। Assignment লেখার সেই ট্রিকস গুলো জানতে এই লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে যা করণীয়
- টপিক সম্পর্কে ধারণা নেওয়া।
- একজন শিক্ষার্থীকে কোনও বিষয়ের উপর অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির জন্য সেই সম্পর্কিত বিষয়ে প্রচুর রিসার্চ এবং বই পড়তে হয়।
- অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার ডেডলাইন সম্পর্কে সতর্ক থাকা।
- অ্যাসাইনমেন্ট লেখা শেষে রিভিশন দেওয়া।
অ্যাসাইনমেন্ট করার জন্য যে জিনিসগুলোর প্রয়োজন
- A4 সাইজের কাগজ।
- পেন্সিল ও রাবার।
- মার্জিন টানার জন্য স্কেল।
- নীল ও কালো কালির কলম (নীল ছাড়া অন্য কোনও রঙ্গিন কালারের কলম ব্যবহার করা যাবে না। আপনি চাইলে একটি নীল সাইন-পেন এবং একটি নীল বলপেন ব্যবহার করতে পারেন)।
- অ্যাসাইনমেন্ট এর বিষয় সম্পর্কিত বই অথবা তথ্য উপাত্ত।
আমি প্রত্যেকটি নিয়ম ধাপে ধাপে তুলে ধরবো আপনার সামনে। আশা করি নিয়মগুলো ঠিক মতো অনুসরণ করলে উপকৃত হবেন।
আরো দেখুন
অ্যাসাইনমেন্টের কভার পেইজ
অ্যাসাইনমেন্ট শুরুর আগে প্রথম কাজ কভার পেইজ তৈরি করা। কভার পেইজের নমুনা কপি কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান প্রিন্ট করে বা ফটোকপি করে দিয়ে থাকেন। এমন হলে কভার পেইজে শুধু ঠিক মতো সঠিক তথ্যগুলো দিলেই কাজ শেষ। কিন্তু যদি এমন কভার পেইজের নমুনা কপি না পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনার নিজেরই কভার পেইজ তৈরি করতে হবে।
অনেকে দেখা যায় কভার পেইজে নানা রকমের ডিজাইন করেন। অ্যাসাইনমেন্ট একটি শিক্ষণীয় অংশ। সেখানে আপনার এসব ডিজাইন অমানানশীল। এমন ডিজাইন করে সময় নষ্ট হয় ঠিকই কিন্তু শিক্ষকরা এসব অ্যাসাইনমেন্টে নাম্বার দেন না। আপনি যদি ভার্সিটি লেভেলের হোন তাহলে তো আপনার অ্যাসাইনমেন্ট দেখা-ই হবে না এমন কোনো কাজ করলে। তাই কভার পেইজে নিজের ট্যালেন্ট দেখাতে যাবেন না।
কভার পেজে যে বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে
- নিজের প্রতিষ্ঠানের নাম
- শিরোনাম
- নিজের নাম
- রোল
- শ্রেণী/সেমিস্টার
- জমাদানের তারিখ
- অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণকারী শিক্ষকের নাম
- বিষয় কোড ও বিষয়ের নাম
কভার পেইজ তৈরির একটি নমুনা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম
অ্যাসাইনমেন্টের ক্রমিক নং :
অ্যাসাইনমেন্টের শিরোনাম :
বিষয় কোড ও বিষয়ের নাম :
শিক্ষার্থীর রোল নম্বর :
শিক্ষার্থীর নাম :
পিতার নাম :
মাতার নাম :
শিক্ষার্থীর শাখা/ সেমিস্টার :
জমাদানের তারিখ :
জমা-দানকারী শিক্ষক :

অ্যাসাইনমেন্ট লেখা শুরুর আগে করণীয়
অ্যাসাইনমেন্ট লেখার কাজ শুরুর আগে আপনাকে অবশ্যই কিছু কাজ করতে হবে। যা না করলে আপনার অ্যাসাইনমেন্ট তথ্যহীন এবং কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়নহীন হবে। নিচে উল্লেখিত বিষয়গুলো বিশেষ করে লক্ষ্য রাখুন। এ বিষয়গুলো শিক্ষার্থীরা লক্ষ্য রাখে না বলেই কাঙ্ক্ষিত নাম্বার থেকে বঞ্চিত হোন।
অ্যাসাইনমেন্টের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন
আপনি যে বিষয়ে লিখবেন তা সম্পর্কে কিছু বই সংগ্রহ করুন অথবা ইন্টারনেটে সার্চ করে তথ্যগুলো আলাদা খাতায় পয়েন্ট করে লিখে নিন প্রথমেই। এতে পরবর্তীতে আপনার অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে সুবিধা হবে।
লেখার ধরনের দিকে লক্ষ্য রাখুন
- অ্যাসাইনমেন্ট লেখার ক্ষেত্রে আপনার লেখা যেমন-তেমন হলে কখনোই ভালো নাম্বার পাবেন না। সাজিয়ে সৃজনশীলতা দিয়ে লিখুন।
- লেখা কাটাকাটি ছাড়া সুন্দর ও পরিষ্কার পরিছন্নভাবে লিখতে হবে। খাতা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন।
- খাতাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য নীল কালি ব্যবহার করে পয়েন্টগুলো হাইলাইট করতে পারেন কিন্তু বাকি সব লেখা কালো বলপেন দিয়ে লিখতে হবে অবশ্যই। কালো কালির সাইন পেন ব্যবহার করা যাবে না।
- নাম্বারের উপর ভিত্তি করে উত্তর দিতে হবে। ২ নাম্বারের উত্তরে ৫ নাম্বারের সমান বড় উত্তর লিখলে অ্যাসাইনমেন্টের সৌন্দর্য নষ্ট হবে। সাথে শিক্ষক বুঝবে আপনি কোনও নিয়ম না বুঝেই মুখস্থবিদ্যা উঠিয়ে দিয়েছেন।
- বাক্য গঠন এবং বানান যেনো নির্ভুল হয় সেই দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখবেন।
- ধারাবাহিকতা রক্ষা করে লিখবেন।
- প্রয়োজনীয় চিত্র সংযুক্ত অথবা অংকন করতে পারেন। এতে অ্যাসাইনমেন্টের মান বৃদ্ধি পায়।
- অন্য কারো অ্যাসাইনমেন্ট নকল করা হতে বিরত থাকুন।
- অ্যাসাইনমেন্ট এর লেখা শেষে একটি এক্সট্রা পেইজ যুক্ত করবেন। এতে আপনার লাস্ট পেইজের লেখা নষ্ট হবে না এবং দেখতেও পরিপাটি লাগবে।
- খাতায় মার্জিন টানার সময় লক্ষ্য করতে হবে সব পৃষ্ঠার মার্জিন যেনো সমান সমান হয়। স্কেল ছাড়া কোনোভাবেই মার্জিন টানে যাবেন না।
- হাতের লেখা সুন্দর করে লিখতে হবে। লেখা সুন্দর হলে শিক্ষকদের সুনজর পড়বে।
- উদাহরণ দিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট এর উপস্থাপনা করার চেষ্টা করবেন। এতে লেখায় আপনার দক্ষতা ফুটে উঠবে।
লেখা শেষে রিভিশন দিন
লেখা শেষে পুরোটা অ্যাসাইনমেন্ট পড়ে দেখুন, কোনো কিছু বাদ পড়েছে কিনা? কোনও ভুল আছে কিনা? রিভিশনটা অ্যাসাইনমেন্ট এর কাগজগুলো সেলাই বা এস্টাপলার করার আগে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে কোনও সমস্যা থাকলে তা ঠিক করতে পারবেন এবং আপনার অ্যাসাইনমেন্টাও নষ্ট হবে না।
আরো দেখুন
অ্যাসাইনমেন্টের লেখার অংশে কি কি থাকতে হবে
অ্যাসাইনমেন্টের লিখিত অংশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। সাধারণত অ্যাসাইনমেন্ট লেখাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
- প্রথমে ভূমিকা লিখতে হবে।
- এরপর অ্যাসাইনমেন্টের বিষয়ের মূল অংশটি লিখতে হবে।
- সর্বশেষে সারসংক্ষেপ/ উপসংহার লিখতে হবে।
লেখা শুরু করার আগে অবশ্যই পেন্সিল দিয়ে স্কেলের সাহায্যে A4 কাগজের দু’পাশে মার্জিন টানতে হবে। তারপর লেখা শুরু করবেন। খাতার পৃষ্ঠার শুধুমাএ একটি সাইডে লিখতে হবে। পৃষ্ঠার ডান সাইড হতে শুরু করবেন পৃষ্ঠার দুপাশে কখনও লিখতে যাবেন না।
ভূমিকার অংশে কি লিখবেন
অ্যাসাইনমেন্টটি যে বিষয়ের উপর লিখতে হবে তার ধারণা দিতে হবে কয়েক লাইনে। এই অংশটি যতোটা সহজ এবং সহজ বোধগম্য হবে ততোটাই আকর্ষণীয় হবে আপনার অ্যাসাইনমেন্ট। কারণ, শিক্ষক প্রথমেই আপনার ভূমিকাটা পড়েই বুঝতে পারবে আপনার অ্যাসাইনমেন্টটি কতোটা দক্ষতার সাথে লিখেছেন আপনি।
অ্যাসাইনমেন্টের মূল অংশটি
এই ধাপে অ্যাসাইনমেন্টের বিষয়ের উপর সকল তথ্য একএ করে বর্ণনা করতে হবে। অযথা কোনও লাইন যোগ করবেন না। লেখা যেনো সুন্দরভাবে এবং সহজ ভাষায় তথ্য সম্বলিত হয়। অযথা লাইন বাড়িয়ে লিখলে নাম্বার কাটা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
খুব কঠিন কোনও ভাষার ব্যবহার করা হতে বিরত থাকুন। যতোটা সম্ভব সহজ ও গোছালো ভাষায় অ্যাসাইনমেন্টকে তথ্য বহুল করুন যেনো শিক্ষক বা পাঠক সহজেই বুঝতে পারেন।
অ্যাসাইমেন্ট দেওয়া হয় যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতার বৃদ্ধি হয় এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে। তাই লেখাতে নিজের সৃজনশীল গঠনের প্রকাশ করুন।
শেষ কথা
আমি চেষ্টা করেছি অ্যাসাইনমেন্ট লেখার সকল খুঁটিনাটি নিয়মগুলোকে পরিপাটি করে আপনার বোধগম্য করে ফুটিয়ে তুলতে। নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে লিখতে পারলে আমি নিশ্চিত এবার আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ফলাফলটি পাবেন। আশা করি আপনি এই লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন। প্রিয় পাঠক, অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নিয়মকে কেন্দ্র করে আজকের এই আলোচনার এখানেই ইতি টানছি। এমন আরোও পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ স্যার।
আপনাকেও ধন্যবাদ।