শারীরিক শিক্ষা বলতে শরীর বিষয়ক শিক্ষা যেমন- সুস্থ থাকার জন্য বিভিন্ন রকম ব্যায়াম বা অনুশীলনকে বুঝায়। মানুষের সুস্থভাবে জীবন-যাপন করার ক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। প্রকৃতপক্ষে শারীরিক শিক্ষা বা ব্যায়াম অনুশীলন ছাড়া মানুষ সুস্থভাবে বাঁচতে পারে না। আজকের আর্টিকেলে শারীরিক শিক্ষার আনুষাঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করার মাধ্যমে এর প্রয়োজনীয়তা জানানোর চেষ্টা করব। শারীরিক শিক্ষা কাকে বলে এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে পুরো কন্টেন্টটি মনোযোগসহকারে পড়ুন।
Table of Contents
শারীরিক শিক্ষা কাকে বলে?
বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক দক্ষতার উন্নতি সাধনের প্রক্রিয়াই হলো শারীরিক শিক্ষা। শরীর ও মন একই সুতোয় বাঁধা। তাই শারীরিক শিক্ষা শারীরিক কিছু কার্যকলাপের মাধ্যমে মানুষকে শারীরিক বিকাশে সাহায্য করার পাশাপাশি মানসিক বিভিন্ন চাপ কমিয়ে একটি সুস্থ মস্তিষ্ক দিতে সাহায্য করে। এটি মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি, মানসিক চাপ কমানোর পাশাপাশি নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়াও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বিকাশে এই শারীরিক শিক্ষার বিকল্প নেই।
শারীরিক শিক্ষার বেশিরভাগ বিষয় মূলত স্কুলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হয়। তবে সঠিক সুযোগ সুবিধার অভাব বা দক্ষতার অভাবে প্রায় সময়ই শিক্ষার্থীরা শারীরিক শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য, এর প্রয়োজনীয়তা এবং অনুশীলন পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান পায় না। তাই শারীরিক শিক্ষার মান অবশ্যই উন্নত হতে হবে। একটি ভালো মানের শারীরিক শিক্ষা ও অনুশীলন আপনাকে আপনার উদ্দেশ্যে পৌঁছে দিতে সাহায্যে করবে। তাছাড়াও আরো কিছু বিষয়ে সাহায্য করবে যা আপনার জন্য খুবই জরুরি।
আমাদের আরেকটা পোস্ট বীজগণিতের সূত্র সমূহ জানতে ঘুরে আসুন।
শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটি বিশাল আয়তন নিয়ে প্রসারিত। কারণ জীবনের বড়ো বড়ো অর্জনগুলো আপনি শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে অর্জন করতে পারবেন। শারীরিক শিক্ষা আপনাকে সাহায্য করবে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে ও উদ্দেশ্য পূরণ করতে।
শারীরিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের সর্বাত্মক শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধন করা। শিশুদের খেলাধুলার মাধ্যমে আনন্দ দেওয়াও শারীরিক শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য। তাছাড়াও আরো বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য আছে শারীরিক শিক্ষার। যেমন-
- মনকে স্থির করা
- মানসিক চাপ মুক্ত থাকা যার ফলে যেকোনো কাজে মন বসবে
- শারীরিক ফিটনেসের উন্নতি ঘটানো
- নিয়মানুবর্তিতা অনুশীলন
- আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলা
- আত্মসম্মান বৃদ্ধি
- শারীরিক স্বাস্থ্যকর কার্যকলাপে সাহায্য করা
- দক্ষতার উন্নয়ন
- বিচার দক্ষতা অর্জন
- শারীরিক সুস্থতা অর্জন
- সামাজিক গুণাবলি অর্জন
- খেলাধুলার মাধ্যমে নেতৃত্বদানের দক্ষতা অর্জন করা
- শিশুর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা
- শিশুর সৃজনশীল দক্ষতা বৃদ্ধি
- জীবনের লক্ষ্য নির্বাচন ও লক্ষ্যে পৌঁছানোর মনোবল তৈরি ইত্যাদি।
এই বিশেষ কাজ গুলো ছাড়াও শারীরিক শিক্ষার আরো অনেক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। বিভিন্ন বিশেষ ব্যক্তিগণ এ সম্পর্কে নিজেদের বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। যেমন-
বুক ওয়াল্টার এর মতে, ‘শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য হলো শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক দিক সমূহের সুসমন্বিত বিকাশ সাধন করা’।
আবার উইলিয়ামস বলেছেন, ‘শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য হলো ব্যক্তির শারীরিক, সামাজিক ও অন্যান্য দিকের সুষম উন্নতি ঘটিয়ে ব্যক্তিসত্তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধনের চেষ্টা করা’।
এ থেকে বুঝা যায় শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অনেক যাকে বিশেষায়িত করলে বুঝা যায় জীবনের সকল কিছু সাধনের হাতিয়ার শারীরিক শিক্ষা। শারীরিক শিক্ষা এটা নিশ্চিত করে যে এর মাধ্যমে মানুষ সামাজিক, রাজনৈতিক, নেতৃত্বাধীন, বিচারবুদ্ধি, খেলাধুলা, মনুষ্যত্ববোধ ইত্যাদি গুণ অর্জন করবে।
শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা
এপর্যন্ত আমরা শারীরিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জেনেছি। এপর্যায়ে জানব শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা। তবে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বুঝা যায় শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কি।
যেসব গুণ থাকলে মানুষ নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে দেশ ও মানুষের কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে কাজ করে এবং নিজেকে আদর্শ মানুষরূপে গড়ে তুলে সেসব গুণের সমন্বয় হলো শারীরিক শিক্ষা। শারীরিক শিক্ষা শুধু মাত্র একটি উদ্দেশ্য সাধন করে না, এটি দেহ ও মনের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখে। এর ফলে যেকোনো কাজে মানুষের মনযোগ দৃঢ় হয় এবং কাজে সফল হয়। মানুষের দেহ কতগুলো বিশেষ অঙ্গ নিয়ে গঠিত। যেমন- হাত, পা, ফুসফুস, মাংসপেশি, শিরা,ধমনি ইত্যাদি। এগুলো সবসময় নিজেদের কার্য প্রক্রিয়া চালায়। আর এসব কার্য প্রক্রিয়া যাতে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয় সেদিকে সাহায্য করে শারীরিক শিক্ষা। এ শিক্ষা ছাড়া জীবনে পূর্ণতা আসে না। শারীরিক শিক্ষা ছাড়া শরীরের জন্য উপযুক্ত খাবার তালিকা, ব্যায়াম, পরিশ্রমের মাত্রা সম্পর্কে জানা যায় না।
বর্তমান সময়ে শিশুরা আধুনিক যন্ত্রপাতি, খেলনা বা স্মার্ট ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে যা শিশুদের মানসিক বিকাশের অন্তরায়। তবে শারীরিক শিক্ষার জ্ঞান শিশুদের এসব চাপ থেকে বেড়িয়ে আসতে সাহায্য করে। এর জ্ঞান শিশুদের খেলার মাধ্যমে আনন্দ খোঁজতে সাহায্য করে যার ফলে শিশুর সঠিক মানসিক বিকাশ গঠে।
নিচে শারীরিক শিক্ষার বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ব্যাখা দেওয়া হলো।
- শারীরিক শিক্ষার জৈবিক প্রয়োজনীয়
- শারীরিক শিক্ষার মানসিক প্রয়োজনীয়তা
- শারীরিক শিক্ষার সামাজিক প্রয়োজনীয়তা
- শারীরিক শিক্ষার রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা
- শারীরিক শিক্ষার অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা
১. শারীরিক শিক্ষার জৈবিক প্রয়োজনীয়তা: শারীরিক শিক্ষার জৈবিক অনেক প্রয়োজনীয়তা আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- সুষম শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশ
- দেহের প্রতিটি অঙ্গের সুগঠন
- স্নায়ু-পেশির সমন্বয়
- শারীরিক ক্ষমতার উৎকর্ষ সাধন করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- সুস্থ দেহ গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে
২. শারীরিক শিক্ষার মানসিক প্রয়োজনীয়তা: শারীরিক শিক্ষার মানসিক প্রয়োজনীয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মন ও দেহের সমন্বয়েই কার্য সাধন হয়। শারীরিক শিক্ষার মানসিক প্রয়োজনীয়তাগুলো হলো:
- মনকে স্থির বা শান্ত রাখা
- যেকোনো কাজে মননিবেশ করা
- মানসিক চাপ কমানো
- চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায়
- আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে
৩. শারীরিক শিক্ষার সামাজিক প্রয়োজনীয়তা: শারীরিক শিক্ষার সামাজিক প্রয়োজনীয়তাগুলো হলো:
- মানুষকে সম্মান করে
- ভালো মন্দের পার্থক্য করতে পারে
- সঠিক বন্ধু নির্বাচন করতে পারে
- মানুষের সাথে চলতে সাহায্য করে
- নেশা নামক মরণব্যাধি থেকে দূরে থাকে
- পড়াশুনার একঘেয়েমি দূর করে
- পড়াশুনার আনন্দ বৃদ্ধি করে
৪. শারীরিক শিক্ষার রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা: রাজনৈতিক জীবনে শারীরিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন:
- বিচারবুদ্ধি বাড়িয়ে দেয়
- দেশের ভালোর চেষ্টায় সচেষ্ট থাকে
- দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে
- রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করে
৫. শারীরিক শিক্ষার অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা: শারীরিক শিক্ষা মানুষের অর্থনীতিতেও অবদান রাখে। যেমন-
- মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে সচল করে
- দেশের সার্বিক উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজ করা।
উপসংহার
সম্পূর্ণ আলোচনায় এ কথা স্পষ্ট যে, শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনেক। আবার শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে জীবনের প্রায় সকল বড়ো বড়ো উদ্দেশ্য সফল হয়। তাই সকলকে শারীরিক শিক্ষা সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে হবে এবং তা নিজ জীবনে অনুশীলন করতে হবে।