Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পরকীয়া প্রেম থেকে মুক্তির উপায় | পরকীয়া প্রেমের কারণ, লক্ষণ ও সমাধান

Last updated on April 12th, 2024

পরকীয়া থেকে মুক্তির উপায়

পরকীয়া থেকে মুক্তির উপায়: “পরকীয়া” বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে আলোচিত একটি শব্দ। যে শব্দের পজিটিভ কোনো অর্থ নেই। যে মানুষের সাথেই এই শব্দটি জড়িত হয়, তার পারিবারিক জীবনই হয়ে যায় অতিষ্ঠ। আর এই কারণেই অনেকের জীবন একসাথে নষ্ট করতে পরকীয়া বদ্ধপরিকর। তাই আমাদের পরকীয়া সম্বন্ধে জানা, সাবধানতা অবলম্বন করা এবং এর থেকে মুক্তির পথ কী সেই সম্পর্কে জানা উচিত। 

পরকীয়া অর্থ কী

সোজা বাংলায় পরকীয়া একটি  বিশেষণ পদ। যা স্ত্রীলিঙ্গ হিসাবে দেখা হয়। যার  বিশেষ্য পদ হয়,  নায়িকাবিশেষ, প্রণয়াসক্তা,  পরস্ত্রী ইত্যাদি। 

পরকীয়া প্রেম কাকে বলে?

পরকীয়ার সহজ অর্থ হলো পরের স্বামী-স্ত্রীর   সাথে অবৈধ শারীরিক ও মানসিক সম্পর্ক। যার সহজ সংজ্ঞা দাঁড়ায় বিবাহিত যেকোনো স্বামী স্ত্রীর সাথে অন্য কোনো বিবাহিত বা অবিবাহিত যেকোনো নারী পুরুষের অবৈধ অনৈতিক শারীরিক ও মানসিক সম্পর্ক। 

পরকীয়াকে ইংরেজিতে Adultery বা Extramarital affair বা Extramarital sex ও বলা হয়। মোটকথা পরকীয়া হল বিবাহিত যেকোনো  ব্যক্তির (নারী কিংবা পুরুষ) স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির (পুরুষ কিংবা নারী) সাথে বিবাহোত্তর কিংবা বিবাহবহির্ভূত অবৈধ, অনৈতিক প্রেম, ভালোবাসা, যৌন সম্পর্ক ও যৌন কর্মকাণ্ড ইত্যাদি। 

কেন পরকীয়া সম্পর্ক দিন দিন বাড়ছে?

আমাদের সামাজিক সুন্দর সম্পর্ক গুলো আজ পরকীয়ার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ। প্রায় সংসারেই আজকাল স্বামী স্ত্রীর নানান পরকীয়ার কাহিনী শোনা যাচ্ছে। বর্তমান অস্থিরতার সময়ে আমাদের নিজেদের জন্যই দুদন্ড সময় নেই। যার কারণে আমরা আমাদের পরিবারে তেমন সময় দিতে পারি না। আর তাই দিনদিন আমাদের সমাজে পরকীয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা এখন দেখব কী কী কারণে আমাদের পরিবার গুলোতে দিনদিন পরকীয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অল্প বয়সে বিয়ে

পরকীয়ার মূল কারণই থাকে অল্প বয়সে বিয়ে কিংবা বেশী বয়সে বিয়ে। যদি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বয়সের ব্যবধান বেশী হয় তাহলে অল্প বয়সী স্ত্রী পরবর্তীতে পরকীয়াতে জড়িয়ে পড়তে পারে। 

বিয়ের ক্ষেত্রে ভুল মানুষ কে নির্বাচন করা

আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট হলো পারিবারিক ভাবে ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেওয়া। এরফলে অনেক ক্ষেত্রেই স্বামী স্ত্রীর সাথে মনের মিল হয়না। ফলে তারা মনের শান্তির আশায় পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। 

বিয়ের পরপরই সন্তানের বাবা মা হওয়া 

আমাদের দেশে রেওয়াজ হলো বিয়ের পরপরই সন্তান নিয়ে ফেলা। বিয়ের পরপরই সন্তান নেওয়ার কারণে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যে ভালোবাসা তৈরি হওয়ার কথা থাকে সেটা হয়ে উঠে না। ফলে সঙ্গীরা ভালোবাসার জন্য পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে যায়। 

স্বামী-স্ত্রীর মতের অমিল

স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য এবং মতের অমিলের কারণেও মানুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। 

পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে উঠতে না পারা

হঠাৎ করেই বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই নতুন সংসারে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। ফলে সংসার তার কাছে অভিশপ্ত হয়ে উঠে। এই সময় কারো না কারো সঙ্গ তার কাছে মধুর হয়ে উঠে। আর এভাবেই একজন মানুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। 

বৈবাহিক জীবনে যৌন অতৃপ্তি

কিছু মানুষের জীবনে শুধু যৌন তৃপ্তিই তার সমস্ত আনন্দের উৎস। তাই এরা বিয়ে পরবর্তী জীবনে পরিপূর্ণ যৌন তৃপ্তি না পেলে সংসারের প্রতি উদাসীন হয়ে যায়। এরফলে তারা নতুন যৌন সঙ্গীর জন্য পরকীয়ায় জড়িত হয়।

বিয়ের অল্পকিছু দিন পরই অভিভাবক হওয়া

বিয়ের পরে স্বামী স্ত্রী নিজেদের মধ্যে জানাশোনা হওয়ার আগেই সন্তান নিয়ে ফেললে, স্ত্রীকেই সন্তানের দায়িত্ব নিতে হয়। ফলে নতুন অভিভাবক হওয়ার কারণে স্ত্রী স্বামীকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারে না। এর  ফলে স্বামী পরকীয়ায় লিপ্ত হতে উৎসাহিত হয়। 

ক্যারিয়ার ভাবনা 

আমরা যারা কর্পোরেটে ক্যারিয়ার গড়তে চাই। তারা তাদের ক্যারিয়ারের জন্য যেকোনো কিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকি। যেকারণে বিয়ের পরে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য অনেক নারী পুরুষ পরকীয়ায় জড়ায়।

ভারতীয় চ্যানেলের দৌরাত্ম্য 

আমাদের দেশের মহিলারা ভারতীয় সিরিয়ালের দারুণ ভক্ত। আর ভারতীয় চ্যানেল গুলোতে শুধু পরকীয়া নির্ভর সিরিয়ালে ভরপুর। এইসব সিরিয়াল থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেকেই পরকীয়াতে লিপ্ত হয়। 

ডিআরডিফোর জিন

মানুষের শরীরের এক প্রকার জিন রয়েছে। যা মানুষকে নতুন নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে উৎসাহিত করে। এমন একটি জিন হলো ডিআরডিফোর। মেডিকেল সায়েন্সের গবেষকদের দাবি যদি কোনো মানুষের শরীরে এই ডিআরডিফোর জিনের উপস্থিতি অতিরিক্ত থাকে। তাহলে সে  পরকীয়া বা বাড়তি সম্পর্কে জড়াতে চেষ্টা করবে।

মানসিক সমস্যা

কিছু কিছু মানুষ রয়েছে। যারা এক সবসময় একজনের সাথে ভালো থাকতে পারে না। তাদের নিত্যনতুন বন্ধুর প্রয়োজন হয়। এটা একটা মানসিক সমস্যা। এই রোগের নাম বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার। এরা কোনো কিছুর মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে পারে না। তাই এইজাতীয় মানুষ বিয়ের পর পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে।

বন্ধুর প্ররোচনা 

আমরা যখন পারিবারিক মানসিক সমস্যা থাকি। তখন কাছের বন্ধুকেই সবকিছু খুলে বলি এবং পরামর্শ চায়। যখন আমাদের সংসারেও এমন কিছু হয় তখন আমরা বন্ধুর সাথে আলাপ করি। তখন বন্ধুর ভুল পরামর্শে আমরা বর্তমান সম্পর্ককে গুরুত্ব না দিয়ে নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলি। আর এভাবেই আমরা পরকীয়ায় জড়িত হয়ে যায়। 

পশ্চিমা অপসংস্কৃতির আগ্রাসন

আমরা সবকিছুতেই আজকাল পশ্চিমা সংস্কৃতিকে ফলো করি। আর পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি হলো পরকীয়া একটি স্বাধীন বিষয়। যেকোনো মানুষ যেকোনো সময় যেকোনো কাউকে ভালো লাগতে পারে। এটি কোনো অপরাধ নয়। ঠিক এই মনমানসিকতার জন্য আমাদের সমাজেও আজকাল পরকীয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরও দেখুন: প্রবাসীদের করণীয়: বিদেশ যাওয়ার আগে একবার হলেও পড়ুন!

কৌতূহল থেকে পরকীয়া

আমাদের অনেক ছেলেমেয়ে আছে যারা নিজেদের জাহির করতে পছন্দ করে। কিংবা নিজেদের প্রসংশা শুনতে ভালোবাসে। এরফলে তারা যখন সংসার জীবনে পদার্পণ করে তখন বিপরীত লিঙ্গের নানান মানুষ থেকে নিজেদের অতুলনীয় প্রসংশা ও স্তুতি শুনে নতুন সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যায়

দূরত্ব ও শূন্যতা

সংসারের বিভিন্ন কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন শূন্যতা তৈরি হয়, তখন এর মধ্যে আরেকজন খুব সহজে প্রবেশ করে। এই শূন্যতার কারণে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক একটু ঢিল পড়লেও মানুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে।

উচ্চ বিলাসিতা

বিয়ের আগে অনেকেই নিজের সম্পর্কে তেমন জানতে পারে না। তাই বিয়ের পর যখন অন্যের মুখে নিজের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা তৈরি হয়, তখন ভুল মানুষের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে মানুষ পরকীয়ায় আশক্ত হয়ে যায়।

জীবন যাত্রার উচ্চমূল্য

আমাদের দেশে দিনদিন আর্থসামাজিক অবস্থা খুবই করুন হয়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষের জীবনযাপনের আর্থিক মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। এরফলে সংসার টিকিয়ে রাখতে এবং সংসার চালাতে উপার্জনক্ষম পুরুষের হিমসিম খেয়ে যেতে হচ্ছে। এরফলে ব্যায়ের সাথে আয়ের সামঞ্জস্য করতে পুরুষের বাড়তি কাজের প্রয়োজন হয়। অথবা স্ত্রীকেও আয় করতে কাজে নামতে হচ্ছে।  

এই বাড়তি কাজ করতে গিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি এবং সময়ের আদানপ্রদান ঠিকমতো হয়ে উঠে না। যারফলে নতুন সম্পর্কের দিকে মানুষ ছুটে যায়। আর এই কারণেই মানুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে।

সম্পর্কে টানাপোড়েন

স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন থাকলেও ঐ সংসারের সদস্যদের মধ্যে পরকীয়ার প্রভাব চলে আসে। তাই যেসব সংসারে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক নেই তারা খুব সহজে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়।

একঘেয়েমি শারীরিক সম্পর্ক

অনেক সময় স্বামী স্ত্রীদের মধ্যে একঘেয়েমি শারীরিক সম্পর্কের কারণেও তারা পরকীয়ায় আশক্ত হয়ে পড়ে। 

অতিরিক্ত স্বাধীনতা

যেসব স্বামী স্ত্রী ব্যক্তি জীবনে আর্থিক ও পারিবারিক জীবনে স্বাধীনতা ভোগ করে তারা খুব সহজে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। 

সোস্যাল মিডিয়ার সহজলভ্যতা

বর্তমান আধুনিক জীবনের অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির কারণে মানুষ খুব সহজেই একে অপরের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ করতে পারছে। এরফলে যেকেউ পরকীয়ায় জড়িত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করেও আমাদের দেশে ব্যাপকহারে পরকীয়া ছড়িয়ে পড়ছে।

দায়বদ্ধতা না থাকা

যাদের সংসারের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে না তারা খুব সহজেই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে।

উপরোক্ত কারণ গুলোর প্রভাবে আমাদের দেশে দিনদিন পরকীয়ার হার বেড়ে যাচ্ছে। এইসব কারণ গুলোর মধ্যে যেমন ব্যক্তিগত কারণ রয়েছে। তেমনি রয়েছে সামাজিক ও পারিবারিক কারণও। 

স্ত্রী পরকীয়া করলে বোঝার উপায়

আমাদের দেশে পুরুষরা উপার্জন করে বিধায় তাদের সবসময়ই বাইরে থাকতে হয়। এই কারণে তারা পরিবারে ঠিকমতো সময় দিতে পারে না। ফলে তাদের স্ত্রীরা পরকীয়ায় লিপ্ত হওয়ার সুযোগ বেশী থাকে। এই পৃথিবীতে মানবিক আবেগীয় বিষয় সম্পর্কে কোনো কিছুই আগে থেকেই বলা যায় না। কখন মানুষ কার প্রেমে পড়ে যায়। তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।

তারপরও আমরা সাধারণ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে একটা ধারণা নিতে পারি মাত্র। এই হিসাবে মহিলাদের বাহ্যিক কিছু বিষয়ের উপর তাদের পরকীয়া কিছুটা হলেও টের পাওয়া যায়। আমরা খুব সংক্ষেপে কিছু টিপস আলোচনা করব।

স্বামীর সাথে অহেতুক ঝগড়া

হঠাৎ করে কিংবা ধীরে ধীরে কোনো স্ত্রী তার স্বামীর সাথে ছোটখাটো বিষয়ে ঝগড়া ঝাঁটি শুরু করলে বুঝতে হবে স্বামীর প্রতি তার অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। আর এই অনীহার কারণ হতে পারে তার নতুন কোনো সম্পর্ক। 

স্বামীর প্রতি অযত্ন

যে স্ত্রী আগে স্বামীর খুব টেককেয়ার করত। কিন্তু হঠাৎ করে এই টেককেয়ার কমে গেলে কিংবা স্বামীর প্রতি অমনোযোগী হলে বুঝতে হবে তার নতুন কোনো সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে কিংবা হচ্ছে।

সন্তানের প্রতি অনীহা 

অনেক সময় দেখা যায় নারীরা পরকীয়ায় পড়লে স্বামীর সন্তানদের প্রতি অবহেলা শুরু করে। কিংবা রুটিন কাজ গুলোতে ঢিল দেয়। ফলে সন্তানদের প্রতি অযত্ন শুরু হয়। 

অগোছালো সংসার

স্ত্রী পরকীয়ায় লিপ্ত হলে সংসারের প্রতি উদাসীনতা চলে আসে। এরফলে সংসারের কাজকর্মের প্রতি তার টান থাকে না। বিশেষ করে নতুন সংসার হলে। যেকারণে ঘরের কাজকর্মের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে ঘর অগোছালো হয়ে পড়ে।

কারণ ছাড়াই বাহিরে গমন

যে স্ত্রীকে সহজে বাইরে নিয়ে যাওয়া যেত না। কিংবা সহজে বাইরে না যাওয়া স্ত্রী যদি কারণে অকারণে বিভিন্ন অজুহাতে, অথবা যে কাজ স্বামী করত সেই কাজও স্ত্রী করতে যায়। তাহলে বুঝতে হবে ঘরের বাইরে তার আলাদা কোনো কাজ রয়েছে। আর এটা হতে পারে তার পরকীয়া।

রূপচর্চা বৃদ্ধি পাওয়া

আগে যেখানে বলে কয়েও স্ত্রীকে ভালো সাজগোজ করানো যেত না। সেখানে হঠাৎ করেই তার রূপচর্চা বৃদ্ধি পাওয়া পরকীয়ার লক্ষণ।

কোনো অনুষ্ঠানের পর হঠাৎ পরিবর্তন

আমাদের পারিবারিক বা সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানের পরপরই যদি স্ত্রীর মধ্যে হঠাৎ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তাহলে বুঝতে হবে তার সাথে নতুন কারো যোগাযোগ হয়েছে বা তার জীবনে নতুন কেউ এসেছে।

সোস্যাল মিডিয়ায় আসক্তি

হঠাৎ করে যদি স্ত্রী সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে বা আগে কম করলে এখন ব্যবহার বেড়ে গেছে। এরকম কোনো কারণ থাকলে তার সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে। কেননা সোস্যাল মিডিয়া হলো একমাত্র মাধ্যম, যার সাহায্যে শতকরা আশিভাগ পরকীয়ার জন্ম, বিস্তার এবং সফলতা লাভ করে।

স্বামীর প্রতি হঠাৎ আগ্রহ 

হঠাৎ করেই যদি কোনো স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে, তাহলে বুঝতে হবে এখানে কোনো ঘাপলা আছে। বিশেষ করে স্ত্রী যদি তার গতিবিধি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে।

হঠাৎ আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি

কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে স্ত্রী যদি তার আত্মীয়স্বজনের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে তাহলে বুঝতে হবে এখানে নিশ্চয়ই কারণ আছে। কেননা এইসব আত্মীয়স্বজনের বাহানা দিয়ে সে নানান জায়গায় যাওয়ার পারমিশন ক্লিয়ার করে। 

পরকীয়ায় আসক্ত পুরুষ চেনার উপায়

স্ত্রীদের যেমন হঠাৎ পরিবর্তন গুলো পরকীয়ার কারণ হতে পারে। ঠিক তেমনি স্বামীদেরও বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা তাদের পরকীয়ার ব্যাপারে সাক্ষী দেয়।

পরিবারে হঠাৎ সময় কমিয়ে দেওয়া

পুরুষরা এমনিতেই সারাদিন ব্যস্ত থাকে। তার উপর কোনো কারণ ছাড়াই যদি স্বামী ঘরে সময় না দেয় কিংবা আগের মতো স্ত্রীকে সময় দিতে না পারে। তাহলে বুঝতে হবে তার নতুন কোনো পরিনয় চলছে।

হঠাৎ স্ত্রীর দোষ ধরা

আগে যেমন তেমন দিলে বা চললে সমস্যা না হলেও হঠাৎ যদি ঐ স্বামী এটা ওটা নিয়ে প্রশ্ন করে বা নানান দোষত্রুটি খুঁজতে থাকে। তাহলে তার ব্যবহারে সন্দেহ রয়েছে।

ছোটখাটো বিষয়ে ঝগড়া করা

আগে বড় বড় বিষয় নিয়ে কথা না বললেও। হঠাৎ করে পান থেকে চুন খসলেই যদি স্বামী স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে। তাহলে বুঝতে হবে স্বামীটি এখন অন্যের দখলে।

সোস্যাল মিডিয়ায় আসক্ত

আমাদের দেশে পুরুষরা সাধারণত ঘরে কাজকর্ম করে না। তাই তারা ঘরে আসলেও মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। এটা একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু হঠাৎ করেই যদি স্বামী সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাহলে বুঝতে হবে তার সমস্যা আছে।

সন্তানদের সময় না দেওয়া

আগে বাবা ছেলেমেয়েদের সময় দিত। এখন কোনো কারণ ছাড়াই ঐভাবে সময় দেয় না। তারমানে তার সময় এখন অন্য কেউ নিয়ে নিয়েছে। 

হঠাৎ স্মার্টনেস বেড়ে যাওয়া

আগে যেখানে পোশাক পরিচ্ছেদের পাত্তা ছিলো না, সেখানে হঠাৎ করে পোশাক আশাকের সচেতনতা বেড়ে যাওয়া মানেই নতুন কারো প্রেমে পড়া।

অফিসে নতুন কলিগ

যদি শোনা যায় অফিসে বা কাজে ক্ষেত্রে নতুন মহিলা কলিগ যুক্ত হয়েছেন। এবং তার বিভিন্ন প্রসংশা শোনা যাচ্ছে। কিংবা তার উদাহরণ টেনে স্ত্রীর কাজের দোষ ধরা হচ্ছে বা স্ত্রীকে নারী জাতীয় কাজে কর্মে  বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছে। তাহলে বুঝতে হবে ডালমে কুচ কালা হে। 

জৈবিক সম্পর্কে অসন্তুষ্টি 

নিত্যদিনের জৈবিক সম্পর্কের মধ্যে হঠাৎ করেই যদি স্বামীর অসন্তুষ্টি জন্ম নেয়। কিংবা আগের মতো সম্পর্ক করতে ইচ্ছুক না হয়। অথবা  স্বাভাবিক সম্পর্ক করতে অনীহা প্রকাশ করে। তাহলে বুঝতে হবে নতুন স্বাদের গন্ধে বিভোর স্বামী।

হঠাৎ অনুতপ্ত হওয়া

যদি দেখেন যে স্বামী হঠাৎ করেই কেমন অনুতপ্ত বা অনুশোচনায় ভুগছে। তার মধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই অপরাধবোধ কাজ করছে। তাহলে হতে পারে সে বাধ্য হয়ে কিংবা শয়তানের প্ররোচনায় বিপথে পা দিয়েছে। 

ভালোবাসা কমে যাওয়া

কোনো ঝগড়া ঝাঁটি ছাড়াই যদি স্বামীর ভালোবাসা বা টেককেয়ার কমে যায়। তাহলে বুঝে নিতে হবে তার মতিগতি ঠিক নেই। একজন মানুষ হঠাৎ করে কোনো কিছু কমিয়ে বা বন্ধ করে দিতে পারে না। তার জন্য অবশ্যই কোনো কারণ রয়েছে। 

ঘরের চাইতে বাইরে বেশী সময় ব্যয়

আগে যে মানুষ সময় পেলেই ঘরে থাকত, সংসারে সময় দিত, ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করত। এখন সেই মানুষ যদি হঠাৎ করেই সুযোগ পেলে বাইরে চলে যায়। তাহলে তার মন ঘরের চাইতে বেশী পড়ে আছে বুঝতে হবে।

আরও দেখুন: ডিভোর্স কেন বাড়ছে? ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদ কমাতে ৮টি উপায়

দোষ বেশি কার: স্বামী না কি স্ত্রীর?

আমরা যদি নিরপেক্ষ দিক থেকে সবকিছু চিন্তা করি, তাহলে দেখব পরকীয়ায় স্বামী স্ত্রী উভয়েরই দোষ রয়েছে। কেউ কারো থেকে কোনো অংশেই কম নয়। তবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হিসাবে পরকীয়াতে স্বামীর দোষ একটু বেশী।

এর কারণ একজন স্বামী চাইলেই যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় পরকীয়া করতে পারে। কিন্তু একজন স্ত্রী তা কখনোই পারে না। একজন স্বামীর সকল স্বাধীনতা আছে। কিন্তু একজন স্ত্রীর তা কখনোই নেই।

তাই নারীর চাইতে পুরুষদের দোষ পরকীয়াতে বেশী। কেননা একজন স্বামী চাইলেই তার স্ত্রীর পরকীয়া ঠেকাতে পারে। কিন্তু একজন নারী কখনোই তা ঠেকাতে পারে না।

একজন পুরুষ যেসব কারণে পরকীয়াতে লিপ্ত হয়। সেইসব কারণ বা সুবিধা গুলো স্ত্রীর সাথে আলোচনা করলেই তার সমাধান পাওয়া যায়। কিন্তু একজন নারী পুরুষ থেকে কী আঘাতের কারণে পরকীয়ায় লিপ্ত হচ্ছে তা ঐ স্বামী চাইলেও অনেক ক্ষেত্রে দিতে পারবে না।

সুতরাং পরকীয়ার ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে স্ত্রীর চাইতে একজন স্বামীর দোষই বেশী। 

পরকীয়া আইন

এটা খুবই দুঃখজনক যে, বাংলানদের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে এখনো পর্যন্ত পরকীয়া কিংবা ব্যাভিচারের কোনো আইন প্রণয়ন হয়নি। এইক্ষেত্রে যা আইন আছে তা খুবই হাস্যকর। বাংলাদেশের আইনে দন্ডবিধি-৪৯৭ ধারায় পরকীয়ার শাস্তির ব্যাপারে বলা হয়েছে।

এখানে  বলা হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি, অপর কোনো ব্যক্তির স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক ব্যাতীত যৌন সঙ্গমে জড়িত হয় যা ধর্ষন বলে গন্য নয় তবে ঐ ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধি হিসেবে গন্য হবে। এই ক্ষেত্রে তার শাস্তি ধরা হয়েছে ৫ বছর পর্যন্ত সশ্রম /বিনাশ্রম বা অর্থদন্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।

এই আইনে মূল অপরাধীর কোনো শাস্তির কথা বলা হয়নি। অর্থাৎ কারো স্ত্রী অন্য কোনো পুরুষের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হলে তার কোনো শাস্তি হবে না। বরং যে পুরুষের সাথে (হোক বিবাহিত বা অবিবাহিত) স্ত্রীর সম্পর্ক হয়েছে তারই শুধু শাস্তি হবে।

অতএব বাংলাদেশের আইনে পরকীয়া করতে  আরও উৎসাহিত করা হচ্ছে। কেননা একজন স্বামী তার স্ত্রী পরকীয়া করলে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে না। তবে কোনো স্বামী পরকীয়া করলে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের শাস্তি রয়েছে।

মোটকথা পরকীয়ার আইনটি এখনো ব্রিটিস আমলেই পড়ে রয়েছে। যদি এর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার কথা উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশে নারী অধিকার বাস্তবায়নের জন্য তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। 

ব্যভিচারের শাস্তি

ইসলামে জিনা ব্যাভিচারে বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বিবাহিত এবং অবিবাহিত হলে ভিন্ন ভিন্ন শাস্তির বিধান রয়েছে। যদি কোনো নারী পুরুষ অবিবাহিত অবস্থায় জিনা করে। তাহলে তার শাস্তি হবে প্রকাশ্যে একশবার বেত্রাঘাত। একইভাবে কোনো বিবাহিত নারী পুরুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। তাহলে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। তবে তা অবশ্যই প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে।

এই বিষয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা দেন, 

“ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।” (সূরাঃ আন-নূর, আয়াতঃ ২)

স্বামীকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করার উপায়

কখনোই নিজেকে পরিবর্তন নয়

আমাদের দেশে বেশিভাগ মেয়েই বিয়ের পর বদলে যান। বিশেষ করে যখন সন্তান সন্তানাদি হয়, তখন তারা সংসারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যারফলে স্বামীকে আগের মতো সময় দিতে পারে না। তবে এই কাজটি করা যাবে না। এতে স্বামী অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে।

অহেতুক সন্দেহ না করা  

আমাদের দেশের মেয়েরা জাতিগতভাবে সন্দেহ বাতিক। তাই তারা যেকোনো কিছুতেই সন্দেহ করে বসে। যা অনেকক্ষেত্রে শুভফল বয়ে আনে না। তাই অতিরিক্ত অহেতুক সন্দেহ করা ছেড়ে দিতে হবে।

অতিরিক্ত মেজায পরিহার করা

যেসব স্বামী অফিস আদালতে বাইরে কাজ করে তাদের মেজাজ মর্জি বুঝে তবে কথা বলা উচিত। যেসব স্বামীর সাথে সবসময় স্ত্রীরা অতিরিক্ত মেজাজ নিয়ে কথা বলে। তারা আর স্ত্রীকে পছন্দ করে না। ফলে তারা বাইরে সুখ খুঁজতে চলে যায়।

ভালোবাসার ঘাটতি যেন না হয় 

যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, কখনোই যেন স্বামীর প্রতি ভালোবাসার ঘাটতি না হয়। কেননা পুরুষ মানুষরা ভালোবাসার পাগল। যদি কখ‌নো কারো থেকে ভালোবাসার ঘাটতি হয়, তাহলে তারা অন্য দিক থেকে তা পূরণ করে। সুতরাং এই ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

ঘরে শান্তি বজায় রাখুন

সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। এই কথাটি চরম সত্য। আর তাই প্রতিটি স্ত্রীরই উচিত হবে, যেকরেই হোক সংসারে শান্তি বজায় রাখা। কেননা সংসারে অশান্তি থাকলে যেকোনো পুরুষই বাইরে শান্তির অন্বেষণ করবে।

কারো কথায় স্বামীকে অবিশ্বাস নয়

কোনো কারণেই যেন সংসারে তৃতীয় কেউ প্রবেশ করতে না পারে। সংসারে যাই হোক না কেন স্বামীর বিরুদ্ধে এমন কাউকে কিছু না বলা, যার দ্বারা সংসারে ক্ষতি হতে পারে। কেননা যেকোনো সংসারে তৃতীয় ব্যক্তি খুবই খারাপ জিনিস। এতে স্বামী অন্য দিকে মোড় নিতে পারে।

স্বামীর পরিবারকে ভালোবাসুন

প্রতিটি স্ত্রীরই উচিত তার স্বামীর ঘরকে আগলে রাখা। কেননা এটাই তার জীবনের একমাত্র স্থান। সুতরাং এখানে সুখে থাকলে হলে সবাইকে নিয়েই ভালো থাকতে হবে। অতএব সবাইকে ভালোবেসে থাকলে স্বামী কখ‌নোই পরনারী নিয়ে চিন্তা করতে পারবে না। আর করলেও পরিবার তা মেনে নিবে না এবং বাঁধা দিবে।

স্বামীকে অক্ষম মনে না করা

যত কিছুই হোক না কেন কখনোই স্বামীকে অক্ষম বলা যাবে না। আমাদের স্ত্রীদের একটি অভ্যাস হচ্ছে, কথায় কথায় স্বামীকে অক্ষম বলা কিংবা তার বিভিন্ন অক্ষমতাকে তুলে ধরা যাবে না। এইসব করলে অনেকক্ষেত্রে স্বামীরা নিজেদের যাচাই করতে এবং প্রতিশোধ নিতে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। 

স্বামীকে পর্যাপ্ত সময় দিন

সময়ে অসময়ে স্বামীর পাশে থাকুন। তাকে সময় দিন। মন খারাপ থাকলে আপনিও তার মন খারাপের ভাগিদার হোন। বন্ধুর মতো তার দুঃখ বেদনা গুলোতে তাকে শান্তনা দিন। এতেকরে সে কখনোই অন্য কারো কাছে গিয়ে শান্তনা খুঁজবে না।

ঘরোয়া কাজে স্বামীকে ইনভব করুন

অনেক পুরুষই ঘরের কাজ সম্পর্কে অবগত নয়। তাই আমাদের উচিত ঘরোয়া কাজে স্বামীর সাহায্য সহযোগিতা চাওয়া। এতে দুজনের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হবে। একইসাথে স্বামীও বুঝতে পারবে ঘরোয়া কাজ গুলোতে কত ঝক্কি ঝামেলা বা কতটুকু পরিশ্রম হয়। 

পরকীয়া প্রেম থেকে মুক্তির উপায়
পরকীয়া প্রেম থেকে মুক্তির উপায়

পরকীয়া থেকে মুক্তির উপায়

পরকীয়া থেকে মুক্তির প্রথম এবং একমাত্র উপায় হলো ধর্মীয় অনুশাসন। যাদের মধ্যে ধর্মীয় অনুশাসন থাকবে না, তারা কখনোই পরকীয়া থেকে মুক্তি পাবে না। কেননা ধর্মীয় অনুশাসন এমন একটি বিষয় যা একজন মানুষকে দুনিয়া এবং আখিরাতের রাস্তাকে প্রশস্ত করে। একজন মানুষ ধর্মীয় অনুশাসনে থাকলে শয়তান তাকে সহজে প্ররোচিত করতে পারে না।

ধর্মীয় অনুশাসনের পাশাপাশি আমাদের নিম্নোক্ত উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে। 

ব্যক্তি জীবনে সৎ থাকা

ধর্মীয় অনুশাসনের পাশাপাশি স্বামী স্ত্রী নিজেদের ব্যক্তি জীবনে যথেষ্ট সৎ থাকতে হবে। 

পশ্চিমা সংস্কৃতির নিষিদ্ধকরণ

আমাদের সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ পশ্চিমা সংস্কৃতির বাতাস বয়ে বেড়াচ্ছে। আর এই আধুনিক বাতাসের কারণে অনেক ঘরে পরকীয়ার চর্চা হচ্ছে বিনাহিসাবে। তাই পরকীয়া বন্ধ করতে হলে আমাদের অবশ্যই পশ্চিমা সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন বন্ধ 

ভারতীয় চ্যানেলের কারণে আমাদের দেশে আজকাল পরকীয়া একটা ডাল ভাতের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এইসব অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।

পরকীয়া আইনের সংশোধন

আমাদের দেশে পরকীয়ার আইন নড়বড়ে হওয়ার কারণে নারীরা অধিকমাত্রায় পরকীয়ায় লিপ্ত হচ্ছে। কেননা যে অপরাধের শাস্তি পাওয়া যায় না তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।

সামাজিক অস্থিরতা

সামাজিক পারিবারিক অর্থনৈতিক ইত্যাতির অস্থিরতার কারণেও পরকীয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এইসব দ্রুত বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। 

এইসব ছাড়াও আরও কিছু ছোট ছোট বিষয় মেনে চলতে পারলে পরকীয়া থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি। 

  • স্বামী স্ত্রী পরস্পরের সুসম্পর্ক বজায় রাখা 
  • অশ্লীল যাবতীয় বিনোদন পরিহার করা
  • গায়রে মাহরাম থেকে দূরে থাকা
  • হাত, মুখমণ্ডল ও পা ইত্যাদি ঢেকে রেখে চলাফেরা করা
  • স্ত্রীদের এমন সুগন্ধি ব্যবহার না করা যা মানুষকে আকর্ষণ করে।
  • এমন সাজসজ্জা গ্রহণ না করা যাতে পরপুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়।
  • এমন বোরকা ও হিজাব না পড়া যা চাকচিক্যপূর্ণ এবং পুরুষদের আকর্ষণ করে।
  • সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করা

পরকীয়ার অবসান

মানুষ মাত্রই ভুল। তাই মানুষ ভুল করবে আবার মানুষই নিজেকে সংশোধন করবে। তাই কোনো কারণে পরকীয়ায় জড়িয়ে তা অবসান করার জন্য নিম্নোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

নিজেকে নিজেই বোঝান

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আদালত হচ্ছে মানুষের বিবেক। আর এই বিবেককে বুঝালেই সবকিছুর সমাধান হাতের এক চুটকিতে সম্ভব। তাই নিজেকে নিজেই বুঝিয়ে এই পথ থেকে সরে আসুন।

সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করুন

যদি আপনাদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকা অবস্থায় যদি আপনারা পরকীয়া আসক্ত হন। তাহলে এটা নিয়ে দুজনে আলাপ আলোচনা করুন। কেন কী আপনি পরকীয়ায় পড়ছেন।

দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন

বর্তমান সংসার থাকা অবস্থায় যদি পরকীয়ায় লিপ্ত হন। তাহলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন কী করলে আপনার মঙ্গল হবে। সংসার করলে নাকি সংসার ভেঙে অন্য নৌকায় পা দিলে।

সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করুন

ইসলামে বিবাহিত নারী পুরুষের পরকীয়ার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। সুতরাং এই পাপে জড়ানোর আগে একবার চিন্তা করুন আপনি কতবড় পাপে জড়িত হচ্ছেন।

সন্তানদের কথা ভাবুন

আপনার সুন্দর একটি সংসার আছে। সেই সংসারে আপনার ছেলেমেয়েরা আছে। যাদের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছেন আপনি। কেননা আপনি মা কিংবা আপনি বাবা। যদি আপনি নতুন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারবেন না বুঝতে পারেন। তাহলে তা এখনই ছেড়ে দিন।

পরিবারের কথা ভাবুন

আপনার স্বামী সন্তান স্ত্রী ছাড়াও আপনার একটি পরিবার রয়েছে। চিন্তা করুন আপনার সংসার ভেঙে নতুন একটি সম্পর্ক করলে তা আপনার পরিবার মেনে নিবে কিনা।

সংসার আগে ত্যাগ করুন

কোনো কারণে আপনার বর্তমান সংসার  পছন্দ না হলে আগে সেই সম্পর্কটা ছিন্ন করুন। তার পর ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিন। কেননা অধিকাংশ পরকীয়া কখনোই সংসার করতে পারে না।

নিজেদের শোধরান

যদি সংসারের অশান্তির কারণে পরকীয়ায় জড়িত হন। তাহলে আগে সংসার সুন্দর করার চেষ্টা করুন সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগে নিন। 

আল্লাহমুখী হওয়া

শয়তানের প্ররোচনায় পাপে জড়িয়ে গেলে, সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহ মুখী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

আসুন সচেতন হই

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা এটা বুঝতে পারলাম পরকীয়ার কারণে আমাদের পরিবার এবং সমাজের কতবড় ক্ষতি সাধিত হয়। এই পরকীয়ার জন্যই হাজার হাজার পরিবার আজ ধ্বংস প্রায়। অসংখ্য ছেলেমেয়ে তাদের পিতৃ মাতৃ হারা। তাই আমাদের উচিত হবে প্রতিটি জায়গা থেকে পরকীয়ার বিরুদ্ধে কথা বলা। একইসাথে পরকীয়ায় জড়িত সকলকে এড়িয়ে চলা এবং অসমর্থন করা। আর তাহলেই আমরা একটি পরকীয়া মুক্ত সমাজ উপহার দিতে পারব। 

Share this article

Content Writer
Lives in Chattogram, Bangladesh
জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলাম। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখছি। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস।
Comments
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Related articles

পিল খাওয়ার নিয়ম

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম: পিল খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে পিল খাচ্ছেন তো!

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম না জেনে নিজের খেয়াল খুশি মতো সাধারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা ইমার্জেন্সি পিল খেলে হতে পারে নানাবিধ সমস্যা। এই পোস্টের মাধ্যমে পিল বা জন্মনিরোধক বড়ি খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে পারবেন।

English blog

ক্যাটাগরি

অনুসন্ধান করুন

সঠিক কিওয়ার্ড লিখে খুঁজে নিন আপনার দরকারি পোস্টটি!

Share this page
পরকীয়া থেকে মুক্তির উপায়

পরকীয়া প্রেম থেকে মুক্তির উপায় | পরকীয়া প্রেমের কারণ, লক্ষণ ও সমাধান

https://www.studykoro.com/porokiya-theke-muktir-upay/

Report this book

Let us know if you notice any incorrect information about this PDF book. Also, please let us know if the given PDF file is banned for sharing; we will remove it as soon as possible. 

User Profile Picture

YourName