রসুন আমরা কে না চিনি! তবে আমরা কি সবাই রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে জানি? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শারীরিক অক্ষমতায় যে এই রসুন আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হিসাবে কাজ করে।
আমরা প্রায়শই নানা রোগের সম্মুখীন হই। সব রোগের চিকিৎসা অনায়াসে করালেও শারীরিক অক্ষমতার কথা ডাক্তারকে বা অন্য কাউকে বলতে লজ্জা পাই। অথচ এটা অতি সামান্য কোনো রোগ না। তুচ্ছ করে দেখার মতোও কোনো রোগ না শারীরিক অক্ষমতাটা। এটা অনেক সময় সাংসারিক অশান্তির কারণও হয়ে দাঁড়ায়।
যাহোক সব রোগেরই সমাধান আছে। তেমনি আমরা এসব সমস্যার সমাধানের জন্য আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব সেক্সে রসুনের উপকারিতা নিয়ে। সেক্সে রসুনের উপকারিতা, আবার রসুনের অপকারিতার দিক জানার পাশাপাশি কী কী খেলে শারীরিক অক্ষমতা দূর হবে সে সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
রসুনের উপকারিতা
কিছুদিন আগ পর্যন্তও মানুষ রসুনের বৈজ্ঞানিক গুণাগুণ না জেনেও তা সর্দি কাশি কমাতে ব্যবহার করেছে। তবে এখন প্রমাণিত যে রসুন সর্দি কাশি কমাতে অনেক সাহায্য করে থাকে। তেমনি রসুনের কিছু উপাদান শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। থিয়ামিন (ভিটামিন বি১), রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২), নায়াসিন (ভিটামিন বি৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (ভিটামিন বি৯) ও সেলেনিয়াম এই উপাদানগুলো রসুনে বিদ্যমান। এর মধ্যে সেলেনিয়াম শরীরে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।
খাবারে স্বাদ বাড়াতে যেমন রসুন অতুলনীয় তেমনি উচ্চরক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে এই মহৌষধ রসুন। রসুন যৌন শক্তি বাড়াতে বা যৌন সম্পৃক্ত রোগ সারাতেও কার্যকরী।
আরও দেখুন: কীভাবে আজীবন সুস্থ থাকা যায়?
সেক্সে রসুনের উপকারিতা
যে রসুন ব্যবহার করা হয় খাবারের স্বাদ বাড়ানোর কাজে সেটা যৌন সমস্যার সমাধান! সত্যিই তাই রসুন যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে এক অতুলনীয় সমাধান। আজকাল বিভিন্ন কারণে পুরুষের যৌন শক্তি ক্রমশ কমছে। আর তার জন্য সংসারে অশান্তি লেগে থাকা বা মানসিক অবসন্নতা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। তবে কিছু নিয়ম মানার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা যায়। তার মধ্যে নিয়মিত রসুন খাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
শুধু পুরুষের জন্যই না নারীর ক্ষেত্রেও রসুন যৌন শক্তি বাড়াতে কাজ করে থাকে।
সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি
Benefits of Garlic in sex: আচ্ছা এখন আসা যাক সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি সেই বিষয়ে। বিভিন্ন অভ্যাসগত বা পরিবেশগত কারণে দিন দিন পুরুষের যৌন শক্তি কমে যাচ্ছে। অথবা অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ বা নারী সেক্সে অনীহা প্রকাশ করছে। এগুলো হয়ে থাকে কিছু নির্দিষ্ট কারণে যা রসুন খাওয়ার মাধ্যমে সারানো সম্ভব। তাছাড়া এসব যৌন সমস্যার জন্য ডাক্তারি ঔষধ সেবনের ফলে অনেক সময় ক্ষতিকর প্বার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ পর্যায়ে আমরা সেক্সে রসুনের কিছু প্রয়োজনীয় দিক নিয়ে আলোচনা করব।
ইরেক্টাইল ডিসফাংশন (E.D): ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বলতে বোঝায় যে অবস্থায় একজন পুরুষ যৌন মিলনের জন্য যথেষ্ট সময় ধরে লিঙ্গের দৃঢ়তা ধরে রাখতে পারে না বা যৌনমিলনের সময় লিঙ্গ দৃঢ় হয় না। তার জন্য সেক্সে বাঁধা আসে। এই সমস্যা সমাধানে রসুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ায়: টেস্টোস্টেরন হলো সেক্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যা সেক্স করতে সাহায্য করে। এই হরমোনের মাত্রা কমে গেলে যৌন অক্ষমতা দেখা যায়। তাই টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধিতে রসুন কাজ করে।
যৌনরোগ প্রতিরোধ: যৌনরোগ প্রতিরোধে রসুন কাজ করে। পুরুষ বা নারী উভয়েই বিভিন্ন যৌনরোগে ভুগতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই রসুন ভূমিকা রাখে।
শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে: অনেক সময় শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকার কারণে বাচ্চা নিতে সমস্যা হয় অথবা বাচ্চা হয় না। শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করতেও রসুন কাজ করে থাকে।
অকাল বীর্যপাতের ক্ষেত্রে উপকারি: মিলনের সময় যদি খুব অল্প সময়ের মধ্যে বীর্যপাত হয় তাহলে সেটাকে বলা হয় শারীরিক অক্ষমতা। যার অনেক কারণ আছে। তা সমাধানেও কাজ করে রসুন। যৌন শক্তি অনেকক্ষণ ধরে রাখতে বা বেশি সময় ধরে সেক্স করতে না পারার সমস্যা এড়াতে রসুন খাওয়া উপকারি।
যৌন ইচ্ছা বা যৌন চাহিদা বৃদ্ধি করে: রসুন যৌন চাহিদা বৃদ্ধি করে। যৌন মিলনে অনীহা দেখা দেয় পুরুষ বা নারীর ক্ষেত্রে। এসময় রসুন খেলে যৌন মিলনে ইচ্ছা বা যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
লিঙ্গ শক্ত করতে: অনেক সময় দেখা যায় যৌন মিলনের সময় লিঙ্গ কাঙ্ক্ষিতভাবে শক্ত হয় না। রসুন খেলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে: একটা বহুল প্রচলিত প্রবাদ বাক্য আছে, “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।” আসলেই তাই। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মন বা শরীর সব ভালো থাকে। তেমনি স্বাস্থ্য ভালো থাকলে সেক্সেও কোনো সমস্যা থাকার কথা না। তার জন্য প্রয়োজন প্রথমে স্বাস্থ্য ঠিক রাখা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতেও কি রসুন উপকারি? হুম স্বাস্থ্য ঠিক রাখতেও রসুন উপকারি ভূমিকা রাখে। রসুনে থাকা উপাদন অনেক কঠিন কঠিন রোগ সারাতেও সাহায্য করে। অনেকে এটাকে আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসাবেও সেবন করে থাকে।
আরও দেখুন: ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
রসুন খাওয়ার উপকারিতা
প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাবো তখন মানুষ না জেনেও রসুন খেয়েছে এবং তারা খুব কম অসুস্থ হয়েছে। এতবছর পর এসে বিজ্ঞান তা প্রমাণ করেছে এবং রসুনকে আয়ুর্বেদিক ঔষধ নামে আখ্যায়িত করেছে। রসুনকে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর ভেষজ হিসেবে দেখা হয় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা মতে, যা আপনার শরীরের যেকোনো অক্সিডেটিভ ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাবের কো-অর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান এই রসুন সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছে যার মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রসুন আয়ুর্বেদিক ঔষধ নামে খ্যাত হয়েছে। রসুন খাওয়ার উপকারিতা অনেক তার মধ্যে কিছু হলো—ক্যান্সার বা হার্টের অসুখ প্রতিরোধে। যৌন শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে। রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমায়, সর্দি কাশি জনিত সমস্যার সমাধান করে রসুন। আবার রসুন মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ হিসাবে কাজ করে।
রসুন খাওয়ার নিয়ম
বলা বাহুল্য আমরা প্রতিদিনেই রান্না করা খাবারের সাথে রসুন খেয়ে থাকি। এখন কি প্রশ্ন আশা স্বাভাবিক না যে, তাহলেও কেন আমরা এসব রোগে আক্রান্ত হই? আসলে আমরা নিয়মমাফিক রসুন খাই না। রসুন খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী রসুন খেলে এসব রোগ এড়ানো সহজ।
- রসুন সাধারণত খেতে হয় খালি পেটে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া কাঁচা রসুন খেলে সেক্স ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সারাদিন শরীর থাকে সতেজ।
- প্রতিদিন রসুন কাঁচা বা আধা সেদ্ধ করে খেলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে আধা সিদ্ধ করে খাওয়ার চেয়ে কাঁচা খাওয়ার উপকারিতা বেশি। রসুন সিদ্ধ করা হলে এতে থাকা অ্যালিসিনের মাত্রা কমে যায়।
- ২-৩ কোয়া রসুন কুচি করে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এর ফলে প্রতিদিনের কার্য ক্ষমতা বেশি পাওয়া যায় সাথে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।
- রসুন কুঁচি করে সামান্য ঘিয়ে ভেজে খেলে শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা দূর হবে। আর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এটা সাহায্য করে।
- গরম পানির সাথে লেবুর রস ও রসুনের দুইটি কোয়া খাওয়ার ফলে শরীর থাকবে ফিট। সাথে শরীরে বিদ্যমান অতিরিক্ত মেদ ঝরে যাবে।
উপরে উল্লেখিত প্রতিটা বিষয়ই সেক্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রসুন এভাবে খাওয়ার ফলে সুস্থ থাকার পাশাপাশি যৌনশক্তি ঠিক থাকে বা যৌন রোগ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা
আগেও উল্লেখ করা হয়েছে যে আমরা সবসময় রান্নায় রসুন খেয়ে থাকলেও আলাদা করে আমাদের কাঁচা রসুন খেতে হয়। তার অবশ্য কিছু যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। যেমন- রান্নার ফলে রসুনের কিছু গুণাগুণ নিষ্ক্রিয় হয়ে আসে। তাই সরাসরি কাঁচা রসুন খাওয়াই সর্বোত্তম। কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা উপরে উল্লেখিত।
রসুনের অপকারিতা
সবকিছুরই প্বার্শপ্রতিক্রিয়া আছে। ঠিক তেমনি এই মহৌষধ রসুনেরও আছে কিছু ক্ষতিকর দিক। প্রথম থেকেই এইখানে বলা হয়েছে দুই কোয়া রসুন খাওয়ার কথা, তবে সে রসুন অতিরিক্ত খেলেও হতে পারে শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি। তাছাড়া কিছু বিশেষ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও রসুন নিষিদ্ধ।
- যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে বুক জ্বালাপোড়া, বমিভাব এমনকি বমিও হতে পারে। এটার জন্য রসুন খাওয়ার আগে দেখতে হবে তার এই কাঁচা রসুন খালি পেটে সয় কিনা। সমস্যা হলছ রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অতিরিক্ত রসুন খেলে আইরিস ও কর্নিয়ার মাঝে রক্তক্ষরণ ঘটে। ফলে দৃষ্টিশক্তি হারানোরও ঝুঁকি বাড়তে পারে। অতিরিক্ত রসুন খেলে হাইফিমা হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
- যারা ওয়ারফারিন, অ্যাসপিরিন ইত্যাদি ওষুধ সেবন করেন, তাদের অতিরিক্ত রসুন খাওয়া উচিত নয়। এতে বিপরীতক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- গর্ভবতী নারীদের কাঁচা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। তাছাড়া যারা বাচ্চাকে দুধ খাওয়ান তাদেরও কাঁচা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এতে দুধের স্বাদ পালটে যায়।
- যেহেতু রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমায়, কখনো কখনো রসুন আবার রক্তচাপও কমিয়ে ফেলতে পারে।
সর্বোপরি রসুন যতটা না স্বাস্থ্য বা সেক্সের জন্য ভালো তেমনি এর ক্ষতিকর দিকগুলোও বেশ লক্ষণীয়। তাই রসুন খাওয়া দেহের জন্য ভালো কিনা তা বিবেচনা করে রসুন খাওয়া উচিত।
শেষ কথা
আমাদের সকলের সুস্থতা কাম্য। তার জন্য প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা। তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা নিয়ে লিখা ছিলো আমাদের আজকের আর্টিকেলটি। রসুন নিয়মমাফিক খেলে আশা করা যায় যৌনরোগ সম্পৃক্ত সকল সমস্যা এড়ানো সম্ভব।