বিস্তারিত: পাসপোর্ট (Passport) শব্দটি এসেছে ফরাসি ভাষা থেকে। আগেই বলেছি যেকোনো দেশে বৈধভাবে গমন করার জন্য পাসপোর্ট লাগে। পাসপোর্ট ছাড়া কোনো দেশে গমন করা যায় না। পাসপোর্ট ছাড়া কেউ কোনো দেশে আকাশপথ, নদীপথ বা রেলপথ যে পথেই যাক না কেনো সেটাকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ বলে গণ্য করা হয়। আর এই অনুপ্রবেশের জন্য জেল পর্যন্ত হতে পারে। তাই আজকের সময়ে প্রায় প্রতিটি মানুষেরই পাসপোর্ট থাকা জরুরি। চলুন তাহলে জেনে নেই পাসপোর্ট কী, কেন গুরুত্বপূর্ণ, এবং কীভাবে পাসপোর্ট তৈরি করা যায় তার কিছু তথ্য।
পাসপোর্ট কী?
পাসপোর্ট (Passport) হলো সরকার অনুমোদিত একটি ভ্রমণ নথি বা আকারে ছোট একটি বই, যার মাধ্যমে এক দেশের নাগরিক অন্য দেশে বৈধভাবে ভ্রমণ করতে পারে। পাসপোর্টে নাগরিকের সকল তথ্যসহ নিজ দেশের সকল তথ্য থাকে। যেখানে সরকার নাগরিককে অন্য দেশে ভ্রমণের অনুমতি দিয়ে থাকে।
পাসপোর্ট কত প্রকার
বাংলাদেশি পাসপোর্ট তিন প্রকার। যথা-
- সাধারণ পাসপোর্ট (General Passport)
- সরকারি পাসপোর্ট (Official Passport)
- কূটনৈতিক পাসপোর্ট (Deplomatic Passport)
১. সাধারণ পাসপোর্ট: যেসব পাসপোর্ট বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, চাকুরিজীবী বা অন্যান্যরা ব্যবসা, লেখাপড়া, বা ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করে। সাধারণ বা অর্ডিনারী পাসপোর্ট সবুজ রঙের হয়ে থাকে। জন্মসূত্রে বা বৈবাহিক কারণে নাগরিকত্ব অধিকারের মাধ্যমে এই পাসপোর্ট পাওয়া যায়। সাধারণত বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের সাধারণ পাসপোর্ট থাকা উচিত। তবে সাধারণ পাসপোর্টের ক্ষেত্রে যে দেশে ভ্রমণ করবে সে দেশের ভিসা প্রয়োজন হয়।
২. সরকারি বা অফিসিয়াল পাসপোর্ট: সরকারি কাজে ভ্রমণ করার জন্য প্রয়োজন সরকারি বা অফিসিয়াল পাসপোর্ট। সরকারি পাসপোর্টের রঙ হয় নীল। যাদের সরকারি পাসপোর্ট থাকে তারা বিনা ভিসায় দেশ গমন করতে পারে। এই পাসপোর্টে বিনা ভিসায় মোট ২৭টি দেশ গমনের অনুমতি দেওয়া আছে।
৩. কূটনৈতিক পাসপোর্ট: কূটনৈতিক পাসপোর্টের রঙ লাল। এটি ব্যবহার করে সংসদ সদস্য এবং তাদের স্বামী-স্ত্রী বা সন্তানেরা। তাছাড়াও এটি ব্যবহার করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ, মন্ত্রণালয়ের সচিব বা বাংলাদেশি মিশন কর্মকর্তারা। এই কূটনৈতিক বা ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট থাকলে সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসার প্রয়োজন হয় না।
আরো দেখুন: জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম
ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণের নির্দেশাবলী
- ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র অনলাইনে পূরণ করা যাবে।
- ই-পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে কোন কাগজপত্র সত্যায়ন করার প্রয়োজন হবে না।
- ই-পাসপোর্ট ফরমে কোন ছবি সংযোজন এবং তা সত্যায়নের প্রয়োজন হবে না।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version) অনুযায়ী আবেদন পত্র পূরণ করতে হবে।
- অপ্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী যার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নাই, তার পিতা অথবা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version) নিম্নোক্ত বয়স অনুসারে দাখিল করতে হবে-
- ১৮ বছরের নিম্নে হলে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version)।
- ১৮-২০ বছর হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version)
- ২০ বছরের উর্ধে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) আবশ্যক। তবে বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন হতে আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version) গ্রহণযোগ্য হবে।
- তারকা চিহ্নিত ক্রমিক নম্বরগুলো অবশ্যই পূরণীয়।
- দত্তক/অভিভাবকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের আবেদনের সাথে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে জারিকৃত আদেশ দাখিল করতে হবে।
- আবেদন বর্তমান ঠিকানা সংশ্লিষ্ঠ বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস/আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস/বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনে দাখিল করতে হবে।
- ১৮ বছরের নিম্নের এবং ৬৫ বছরের উর্ধ্বে সকল আবেদনে ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ০৫ বছর এবং ৪৮ পৃষ্ঠার।
- প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল সনদসমূহ (যেমন: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার ইত্যাদি) আপলোড/সংযোজন করতে হবে।
- প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক জিও (GO)/এনওসি (NOC)/ প্রত্যয়নপত্র/ অবসরোত্তর ছুটির আদেশ (PRL Order)/ পেনশন বই আপলোড/সংযোজন করতে হবে যা ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের নিজ নিজ Website এ আপলোড থাকতে হবে।
- প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিবাহ সনদ/নিকাহনামা এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তালাকনামা দাখিল করতে হবে।
- দেশের অভ্যন্তরে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ফি এর উপর নির্ধারিত হারে ভ্যাট (VAT) সহ অন্যান্য চার্জ (যদি থাকে) অতিরিক্ত হিসাবে প্রদেয় হবে। বিদেশে আবেদনের ক্ষেত্রেও সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি প্রদেয় হবে।
- কূটনৈতিক পাসপোর্টের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার উইং (Consular and Welfare Wing) অথবা ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় বরাবর আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে।
- বৈদেশিক মিশন হতে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হলে স্থায়ী ঠিকানার কলামে বাংলাদেশের যোগাযোগের ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
- অতি জরুরী পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে (নতুন ইস্যু) নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ পূর্বক আবশ্যিকভাবে আবেদনের সাথে দাখিল করতে হবে-
- দেশের অভ্যন্তরে অতি জরুরী পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ২ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।
- দেশের অভ্যন্তরে জরুরী পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।
- দেশের অভ্যন্তরে রেগুলার পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।
- আবেদনের সময় মূল জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version) এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সনদ, সরকারি আদেশ (GO)/অনাপত্তি (NOC) প্রদর্শন/দাখিল করতে হবে।
- পাসপোর্ট রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে মূল পাসপোর্ট প্রদর্শন করতে হবে।
- হারানো পাসপোর্টের ক্ষেত্রে মূল জিডির কপি প্রদর্শন/দাখিল করতে হবে।
- ০৬ বছর বয়সের নিম্নের আবেদনের ক্ষেত্রে ৩ আর (3R Size) সাইজের ( ল্যাব প্রিন্ট গ্রে ব্যাকগ্রউন্ড ) ছবি দাখিল করতে হবে।
- পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে অথবা চুরি হলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় জিডি করতে হবে। পুনরায় পাসপোর্টের জন্য আবেদনের সময় পুরাতন পাসপোর্টের ফটোকপি এবং জিডি কপিসহ আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে।
তথ্যসূত্র১
ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম
পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হয়। এসব নিয়ম বা শর্ত পূরণ সাপেক্ষে পাসপোর্ট হাতে আসে। এক্ষেত্রে নিয়মগুলো হলো-
- পাসপোর্ট তৈরির ফি জমা দেওয়া
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ
- আবেদন ফরম পূরণ
- আবেদন পত্র জমা দেওয়া
- পুলিশ ভেরিফিকেশন
- পাসপোর্ট সংগ্রহ করা
পাসপোর্ট তৈরির ফি জমা দেওয়া
পাসপোর্ট তৈরি করতে হলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি জমা দিতে হয়। তবে সেটা নির্ভর করবে সময়ের উপর। সাধারণ প্রয়োজনের ভিত্তিতে পাসপোর্ট করতে চাইলে ফি লাগে তুলনামূলক কম, কিন্তু পাসপোর্ট আসতে সময়ও লাগে ২২ দিন থেকে ১ মাস বা তার বেশি। আবার জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করতে চাইলে টাকা তুলনামূলক বেশি লাগলেও ২ থেকে ৭ দিনের ভিতর পাসপোর্ট তৈরি হয়ে যায়। পাসপোর্ট সাধারণত ৪৮ ও ৬৪ পাতার হয়ে থাকে।
এইখানে কত বছর মেয়াদি এবং কত তারাতাড়ি পাসপোর্ট হাতে পাবে তার ভিত্তিতে পাসপোর্ট তৈরির টাকাটা হিসাব করা হয়ে থাকে। তবে এখানে একটা সাধারণ হিসাব হতে পারে ৬৪ পাতার পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৫৫০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৩৫০০ টাকার মধ্যে খরচ হয় একটি পাসপোর্ট করতে। আবার ৪৮ পাতার পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৪৫০০ থেকে ১০৫০০ টাকার মত খরচ হয়।
পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ারও দুইটা মাধ্যম আছে। একটি অফলাইন অন্যটি অনলাইন। অফলাইনে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকে টাকাটা জমা দিতে হয়। আবার অনলাইনে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণের সময় ফি জমা দেওয়ার অপশন আসে ওইখানে জমা দিতে হয়। মূলত ফি দেওয়ার পর পাসপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়। তাই পাসপোর্ট তৈরির প্রথম ধাপ হিসাবে ফি প্রধানকে ধরা হয়।
ব্যাংকে পাসপোর্টের ফি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট জমা নেওয়ার আগে একটা স্লিপ দেওয়া হয়। সেটা পূরণ করে টাকা জমা দিতে হয়। তারপর ব্যাংক থেকে দুই পার্টের একটি রশিদ দেয়।
আরো দেখুন: ABC লাইসেন্স কীভাবে করতে হয়
নতুন পাসপোর্ট করতে কী কী কাগজপত্র লাগে?
পাসপোর্ট করতে হলে প্রয়োজন নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্রের। এগুলো আগে থেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য সংগ্রহ করে রাখা প্রয়োজন। পাসপোর্ট তৈরি করতে যেসব কাগজ লাগে-
১. জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (১৮+ হলে)
২. জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি ইংরেজি ভার্সন (জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে)
৩. ই-পাসপোর্টের আবেদন করে থাকলে তার অনলাইন কপি (প্রিন্ট কপি)
৪. পাসপোর্ট এপ্লিকেশন সামারি (প্রিন্ট কপি)
৫. নাগরিক সনদ
৬. ফি প্রদানের মূল কপি
৭. পূর্বে কোনো পাসপোর্ট থাকলে তার মূল কপি বা ফটোকপি
৮. ছোটদের ক্ষেত্রে তার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
আবেদন ফরম পূরণ
অফলাইনে আবেদন ফরম পূরণের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিস থেকে বিনামূল্যে দেওয়া একটি ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে। সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। আর তার কিছু কপি করে রাখা উচিত।
আবার অনলাইনেও আবেদন ফরম পূরণ করা যায় সেক্ষেত্রে Bangladesh e‑Passport ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফরমটা পূরণ করতে হবে। ফরমটি ফিল আপ করে সেটি ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট করে নিতে হবে।
পাসপোর্ট ফরম পূরণের সকল কাজ শেষ হলে সেটিকে সত্যায়িত করতে হয়। সত্যায়িত করতে হয় এমন কিছু ব্যক্তিদের দিয়ে যাদের এটার অনুমতি আছে যেমন- চেয়ারম্যান, উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, অধ্যাপক বা এমন কোনো ব্যক্তি যারা সরকারি সপ্তম স্কেলের ঊর্ধ্বে চাকরি করে।
পাসপোর্ট অফিসে আবেদন পত্র জমা দেওয়া
আবেদন ফরম পূরণ করার পরের কাজ হলো তা জমা দেওয়া। তা জমা দেওয়ার জন্য তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী অফিসে যেতে হবে। আর অবশ্যই যাওয়ার সময় সাথে সব কাগজপত্রের অরিজিনাল কপি নিতে হবে। সেখানে কিছু প্রশ্ন করতে পারে। তারপর আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হবে, ছবি তুলা হবে আর সিগনেচার নেওয়া হবে।
এসব করা হলে একটি রশিদ দেওয়া হবে যেখানে আপনার সব তথ্য দেওয়া হবে। আপনি তা ভালোভাবে যাচাই করবেন, কারণ প্রাথমিক পর্যায় যাচাই করে ভুল থাকলে তা সংশোধন করা যায়। নয়তো পরে এটা নিয়ে অনেক জামেলা পোহাতে হয়। তাছাড়া কিছু তথ্য আছে যা পরবর্তীতে সংশোধন করা যায় না।
পুলিশ ভেরিফিকেশন
পাসপোর্ট তৈরির এসব সাধারণ নিয়ম শেষ করার পর আসে পুলিশ ভেরিফিশনের পালা। পুলিশ ভেরিফিকেশন বলতে বোঝায় পাসপোর্ট তৈরি কারীর সম্পর্কে ভালোভাবে জানা। পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশ আবেদনকারীর বাড়িতেও আসতে পারেন অথবা আবেদনকারীকে অফিসেও ডাকতে পারেন। এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে। কারণ পাসপোর্টের আবেদনকারী হতে পারে কোনো অপরাধী যে কিনা অপরাধ করে দেশ ত্যাগ করতে চায়।
পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্যও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ লাগে। লাগে তার বাসস্থান সম্পর্কে কিছু তথ্য বা আরো অনেক কাগজপত্র লাগতে পারে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরির অফিসিয়াল কাজের সমাপ্তি ঘটে। তারপর অপেক্ষা করতে হয় পাসপোর্ট কবে আসবে তার জন্য।
তারপর মাঝে মাঝে অনলাইনে আপনার পাসপোর্ট কী অবস্থায় আছে, কত দিন লাগবে এসব চেক করতে পারবেন।
পাসপোর্ট সংগ্রহ করা
আপনি যতদিনের ভিত্তিতে পাসপোর্ট পাওয়ার আবেদন করেছিলেন তার মধ্যেই আপনার পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। তার জন্য আপনাক অনলাইনে নজর রাখতে হবে কবে পেতে পারেন পাসপোর্ট তার জন্য। আবার মেসেজ দেওয়ার মাধ্যমেও সময় জানিয়ে দেওয়া হবে।
পাসপোর্ট সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর
পাসপোর্ট করার আগে-পরে নানা প্রশ্ন জাগে আমাদের মনে। এজন্য নিচে ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত বেশকিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো। এছাড়াও আরও কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন।
ই-পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ই-পাসপোর্ট ফি (১৫% ভ্যাট সহ) তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
৪৮ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছরের মেয়াদসহ ই-পাসপোর্ট
নিয়মিত ডেলিভারি: ৪০২৫ টাকা
এক্সপ্রেস ডেলিভারি: ৬৩২৫ টাকা
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি: ৮৬২৫ টাকা
৪৮ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছরের মেয়াদসহ ই-পাসপোর্ট
নিয়মিত ডেলিভারি: ৫৭৫০ টাকা
এক্সপ্রেস ডেলিভারি: ৮০৫০ টাকা
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি: ১০৩৫০ টাকা
৬৪ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছরের মেয়াদসহ ই-পাসপোর্ট
নিয়মিত ডেলিভারি: ৬৩২৫ টাকা
এক্সপ্রেস ডেলিভারি: ৮৬২৫ টাকা
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি: ১২০৭৫ টাকা
৬৪ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছরের মেয়াদসহ ই-পাসপোর্ট
নিয়মিত ডেলিভারি: ৮০৫০ টাকা
এক্সপ্রেস ডেলিভারি: ১০৩৫০ টাকা
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি: ১৩৮০০ টাকা
বিশেষ দ্রষ্টব্য: উল্লিখিত ই-পাসপোর্ট ফি যেকোনো সময় পরিবর্তিত হতে পারে, সেজন্য Bangladesh e‑Passport Online Portal থেকে সর্বশেষ e-Passport Fees দেখতে ক্লিক করুন।
অতিজরুরি পাসপোর্ট কত দিনের মধ্যে পাওয়া যায়?
বায়োমেট্রিক তালিকাভুক্তির তারিখ থেকে মাত্র ২ কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি অপশন বেছে নিন। (নির্দিষ্ট শর্ত ও ফি প্রযোজ্য)
পাসপোর্ট সংগ্রহের ঠিকানা:
Divisional Passport and Visa Office, Building-02
E-7, Sher-E-Bangla Nagor, Agargaon, Dhaka-1207
Contact No: +880 2-8123788
কোথায় ই-পাসপোর্ট পাব?
আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিস থেকে আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য কী কী কাগজপত্র প্রয়োজন?
ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য নিম্নোক্ত কাগজপত্রের প্রয়োজন:
- প্রিন্টকৃত আবেদন ফরম।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল ও ফটোকপি।
- পূর্বের পাসপোর্ট ও এর ফটোকপি (যদি থাকে)।
- ১৮ বছরের নিম্মে আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ ও পিতামাতার এনআইডি।
- ৬ বছরের নিম্মে আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে ‘3R’ আর সাইজের ছবি।
- ১৫ বছরের নিম্মে আবেদনকারীদের পিতা-মাতার ছবি অথবা বৈধ অভিভাবকের পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
স্থায়ী ঠিকানা, বৈবাহিক অবস্থা, পেশা অথবা অন্যান্য তথ্যাদি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দলিলাদি দাখিল করতে হবে। আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করে এই বিষয়ে জেনে নিতে পারেন।
কীভাবে ই-পাসপোর্ট চেক করা যায়?
e-Passport Portal-এ ‘Status Check’ পেজে আপনার Application ID অথবা Online Registration ID ও date of birth দিয়ে সার্চ অপশনে ক্লিক করুন। আপনি আপনার অনলাইন পোর্টাল অ্যাকাউন্ট থেকে আপনার সমস্ত অ্যাপ্লিকেশনের অবস্থা দেখতে পারবেন।
শেষ কথা
আজকে আর্টিকেলটি ছিলো পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে। এখানে পাসপোর্ট করতে কী কী কাগজপত্র লাগবে বা কী কী করা লাগবে তার সব তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আজকের দিনে এই পাসপোর্ট প্রায় সবারই প্রয়োজন। তাই আার্টিকেলটিও ছিলো গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক কিছু জানা হল
জেনে খুশি হলাম। পরিচিতদের মাঝেও শেয়ার করুন।