বর্তমানে বিভিন্নভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে মানুষ ঘরে বসে আয় করে যাচ্ছে। ডাটা এন্ট্রি-ও এর মধ্যে পড়ে। Data entry করে বর্তমানে অনেক তরুণ-তরুণী ঘন্টায় ১০০০-১৫০০ টাকা আয় করছে। এই আর্টিকেলে আমরা ডাটা এন্ট্রি কী, কীভাবে ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে হয়, data entry-এর কাজের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট, ডাটা এন্ট্রি করতে কী কী প্রয়োজন, কীভাবে কম সময়ে এর মাধ্যমে টাকা আয় করা যায় এসব নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
ডাটা এন্ট্রি কী?
বর্তমানে মানুষের মধ্যে ঘরে বসে টাকা আয় করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। বাড়বেই বা না কেন? ঘরে বসে আয় করার মজাই আলাদা। ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসে অসংখ্য কাজ করা যায়। Data entry-ও এর মধ্যে একটি।
Data entry হচ্ছে যেকোনো ধরনের ডাটা বা তথ্যকে Hard copy থেকে Digital copy-তে রূপান্তর করা। মানে, একজন টাইপিস্ট (Typist) তার টাইপিং এর সাহায্যে যেকোনো ধরনের physical তথ্যকে কম্পিউটারের মধ্যে Digital-এ এন্ট্রি করে। বর্তমানে এই জবের অনেক কদর বেড়ে গেছে।
ডাটা এন্ট্রির কাজ যেই ব্যক্তির দ্বারা করানো হয় তাকেই বলা হয় ডাটা এন্ট্রি অপারেটর (data entry operator)। ডাটা এন্ট্রি কাজে সফলতা পেতে হলে অপারেটরদের অনেক দক্ষ হতে হয়। অনেক দ্রুত হতে হয়।
Data Entry কত প্রকার
Data Entry অনলাইন ও অফলাইন দুই ধরনের হতে পারে। অনলাইন ডাটা এন্ট্রির থেকে অফলাইন ডাটা এন্ট্রি কষ্টকর।
Offline Data Entry
অফলাইন ডাটা এন্ট্রি হল ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন ছাড়াই স্প্রেডশীট, ডাটাবেস বা ওয়ার্ড প্রসেসিং প্রোগ্রামে তথ্য প্রবেশের প্রক্রিয়া। যদিও বেশিরভাগ সংস্থাগুলি অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করে, সেখানে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র রয়েছে যা এখনও তথ্য প্রক্রিয়াকরণের এই ফর্মটি ব্যবহার করে।
ডাটা এন্ট্রি এই পদ্ধতির জন্য কোম্পানিকে অতিরিক্ত সতর্ক হতে হয়। কারণ বর্তমানে সবকিছু অনলাইনে থাকায় অনেক কিছু সহজ হয়ে গেছে। Law firms, Medical Institutions, Financial companies, and Individual business people এরা অফলাইন ডাটা এন্ট্রি পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে।
আরো দেখুন: গ্রাফিক্স ডিজাইন কি? যেভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphics Design) শিখবেন
Online Data Entry
অনলাইন ডাটা এন্ট্রি বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ডাটা এন্ট্রি প্রক্রিয়া। কারণ এই এন্ট্রি প্রক্রিয়ায় Internet এর প্রয়োজন পড়ে, আর সবচেয়ে বেশি সুবিধা হল এই প্রক্রিয়ায় ঘরে বসে কাজ করা যায়। অনলাইনে ডাটা এন্ট্রি করে আয় করার জন্য কিছু সার্ভিস আছে।
- Data Processing: ডাটা প্রসেসিংয়ের অর্থ হল তথ্য সংগ্রহ ও পরিবর্তন করা, যাতে এটি বিশ্লেষণ করা যায় বা পরে ব্যবহার করা যায়।
- Data Cleansing: ডাটা ক্লিনজিং ভুল এবং ডুপ্লিকেট করা তথ্য অপসারণ করে সঠিক উপায়ে তথ্য সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। ডাটা ক্লিনজিংয়ের আরেকটি শব্দ হল ডেটা স্ক্রাবিং( Data Scrubbing)
- Data Conversion: ডেটা কনভারশন বা রূপান্তর এক ফরম্যাট থেকে অন্য ফরম্যাটে ডাটা রূপান্তর করার প্রক্রিয়া। ডাটা হার্ড কপি থেকে ডিজিটাল ফরম্যাটে বা ডিজিটাল ফরম্যাটে (.jpg থেকে .pdf, .pdf থেকে .xml, ইত্যাদি) ডেটা রূপান্তর করা যেতে পারে ম্যানুয়াল বা মেশিনের সাহায্যে।
- Data Classification: ডাটা ক্লাসিফিকেশন বা শ্রেণিবিভাগ হল আইটেমগুলির বৈশিষ্ট্য এবং বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে ডেটাকে বিভাগগুলিতে সংগঠিত করার প্রক্রিয়া।
Online Data Entry করে আয় করার জন্য উপরের সার্ভিসগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
ডাটা এন্ট্রি জবের জন্য যা যা জানা প্রয়োজন
যে ডাটা এন্ট্রি করে থাকে তাকে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বলে। এই ডাটা এন্ট্রি অপারেটরকে অনেক দক্ষ হতে হয়। কারণ বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিংয়ে অনেক প্রতিযোগিতা। তাই আপনাকে এগিয়ে থাকতে হলে অনেক স্কিল অর্জন করতে হবে। তবে একটি ভালো জিনিস হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিংয়ের এই পথে কোনো বড় বড় ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় শুধু দক্ষতা, সফটওয়্যার সম্পর্কে বেসিক জ্ঞান ও আরো কিছু।
- অপারেটরকে টাইপিং এর ব্যাপারে অনেক সতর্ক হতে হবে। কারণ অল্প সময়ে অনেক ডাটা এন্ট্রি করতে হয়। বলা হয়ে থাকে মিনিটে ৫০ থেকে ৮০টা শব্দ টাইপ করার স্পিড থাকতে হবে।
- অপারেটরকে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হবে। কারণ আপনি দেশের বাইরে থেকে ডাটা এন্ট্রি জব পেতে পারেন। তখন যোগাযোগ করার জন্য আপনার ইংরেজি ভাষার প্রয়োজন হবেই। আর ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে ইংরেজি তো জানতেই হবে।
- আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে কম্পিউটার সম্পর্কে বেসিক স্কিল থাকতে হবে। যেমন- MS WORD, MS EXCEL, SPREADSHEET।
- দ্রুত টাইপিং করার পাশাপাশি Accuracy ও থাকা লাগবে। কারণ দ্রুত টাইপিং করতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাই যতটা সম্ভব accurate টাইপিং হবে ততটাই অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকা যাবে।
আরো দেখুন: ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing) শেখার উপায়
কীভাবে দ্রুত কাজ পাওয়া যাবে?
ডাটা এন্ট্রি জবে নতুন পুরাতন অনেক কর্মী থাকে। অনেক কাজও থাকে। পুরাতন কর্মীরা খুব সহজে কাজ পেয়ে থাকে। নতুনদের জন্য কাজ পাওয়া প্রথমে একটু কঠিন হয়। তাই নতুনদের উচিত আকর্ষণীয় প্রোফাইল বানানো। যাতে সেলসম্যানদের নজরে পড়ে এবং তারা কাজ দেয়।
Data Entry কাজের কি চাহিদা আছে?
ডাটা এন্ট্রি সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার আগে এই প্রশ্নটি সবার আগে আসে- ডাটা এন্ট্রির কি চাহিদা আছে? ভবিষ্যতে থাকবে? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ। বর্তমানে তো আছেই। ভবিষ্যতেও থাকবে বলাই যায়।
কারণ বর্তমান পৃথিবীটা তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। প্রচুর কাজ এখন অনলাইন নির্ভর হয়ে গেছে। এর ফলে প্রচুর তথ্য ম্যানেজমেন্ট করার দরকার পড়ে। যার জন্য কোম্পানিগুলো ফ্রিল্যান্সারদের এই ডাটা এন্ট্রির কাজ দেয়। আমাদের পাশের দেশ ভারত ও পাকিস্তান এই ডাটা এন্ট্রি জবে পৃথিবীতে খুব শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। বাংলাদেশও এদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আরো দেখুন: ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করব? ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো | Freelancing করে আয় করুন
ডাটা এন্ট্রি কাজের ওয়েবসাইট
দেশি-বিদেশি ডাটা এন্ট্রির বিভিন্ন জনপ্রিয় ওয়েবসাইট আছে। যেখানে প্রতিদিনই ডাটা এন্ট্রির জন্য ফ্রিল্যান্সারদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
ডাটা এন্ট্রি জব করার ওয়েবসাইটগুলোর নাম দেওয়া হল:
- Rev
- Upwork
- Freelancer
- Flexjobs
- Clickworker
- Scribie
বাংলাদেশী সাইটগুলোর মধ্যে রয়েছে-
- Belancer
- Truelancer
- Outsourcemyjob
- Sadhinkaj
শেষ কথা
ফ্রিল্যান্সিংয়ের এই ডাটা এন্ট্রি সেক্টরের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে কাজ করার কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। যখন মনে চাইবে তখন এই কাজ করা যাবে। ডাটা এন্ট্রি জবের পারিশ্রমিকও খুব ভালো। এই সেক্টরে একটু অভিজ্ঞ হলে ঘন্টায় ১০০০-১৫০০ টাকাও আয় করা যায়। নতুনরা কাজের উপর ভিত্তি করে শুরুতে ঘন্টায় ৫০০ টাকাও আয় করতে পারে। তাই যারা ভালো টাইপিং করতে পারেন, যাদের কম্পিউটার সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আছে তাদের উচিত সময় নষ্ট না করে লেগে পড়া।