কেমন হয় যদি আমরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি? বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। দরিদ্র থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরাও নিজেদের চাহিদা পূরণে অক্ষমতা প্রকাশ করছে। তাই আজকের নিবন্ধে আমরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ ও প্রতিকারের উদ্দেশ্যে সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য প্রতিবেদন লেখা শিখব।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি
প্রায়ই পরীক্ষার খাতায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে প্রতিবেদন লিখতে হয়। “দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিবেদন” লেখার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষার জন্য ও একই সাথে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য এই বিষয়ে একটি সুন্দর প্রতিবেদন লিখতে পারবে এই লেখাটি পড়ে।
তাহলে শুরু করা যাক…
সাধারণত কোনো পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়াকেই বলা হয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কোনো পণ্যের মূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষের জীবনধারণ কষ্টের হয়ে যায়। তাই এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। আজকের নিবন্ধে “দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি” প্রতিবেদনের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আমরা আপনার জন্য পরীক্ষায় আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিবেদন লিখেছি। প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ না জেনে থাকলে এখনই এই বিষয়ে লেখা পোস্টটি পড়ুন।
প্রশ্ন: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য একটি প্রতিবেদন লেখ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: না খেয়েই কি মরবে মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক ।। ময়মনসিংহ: বাংলাদেশের একটি নিয়মিত সংবাদের মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অন্যতম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললেই চোখের সামনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সংবাদ পরিলক্ষিত হয়। এটি যেন বাংলাদেশের মত দুর্বল অর্থনীতির দেশে এক বিশাল বড় সমস্যা—যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করছে নিজেদের স্বার্থে। দ্রব্যমূল্য একবার বেড়ে গেলে তা আর নিয়ন্ত্রণে আসে না। এটা নিয়ে সরকারি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও কিছু সীমাবদ্ধতার জন্য কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। পহেলা জুন ২০২৩ বাজারমূল্য কেজি বা লিটারে নিচে উপস্থাপন করা হলো।
দেশি পেঁয়াজ ৭০-৮০, চিনি ১৩০-১৪০, ছোলা ৮০-৮৫, বেগুন ৪০-৬০, আমদানি করা পেঁয়াজ ৭৫-৮৫, দেশি রসুন ১৪০-১৬০, দেশি শুকনা মরিচ ৩৯০-৪২০, ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২১০, খাসির মাংস ১ হাজার-১ হাজার ১০০, গরুর গোশত ৭৫০-৭৮০ টাকা, ব্রয়লার ডিম ৪৭-৫০ টাকা হালি, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭৫-১৮৫ ও সরিষার তেল ৩৬০, দেশি আদা ৩২০-৩৪০, আয়োডিনযুক্ত লবণ ৩৮-৪২, মসুর ডাল ১৩০-১৩৫ টাকা। (সূত্র: প্রথম আলো[১])
মুদির দোকানগুলোতে খোঁজ নিলে দেখা যায় গত কয়েক মাসে আটা ময়দাসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের মূল্য কেজিতে ১৫-২০ টাকা করে বেড়েছে। এছাড়াও শিশু খাদ্যসহ মাছের খাদ্য, মুরগীর খাদ্য ইত্যাদির দাম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে উৎপন্ন পণ্যে। পারিপার্শ্বিক দিকে লক্ষ করে ও ভোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় বর্তমান বাজার পরিস্থিতি স্বল্প আয়ের মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে আর এর ভয়াবহতা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে।
উৎপাদক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষক যে পরিমাণ মূলধন নিয়ে দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করে তার চেয়ে ৪/৫ গুণ বেশি মূল্যে ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা জানান পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকে তাদের এই অধিক মূল্যেই পণ্য ক্রয় করতে হয়। পাইকারি বিক্রেতারা আবার এই ব্যাপারের দায়ভার চাপানোর চেষ্টা করছে পণ্যের পচনশীলতা আর জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির উপর। তারা আরও বলেছে যানবাহনের খরচ বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিতে গিয়ে যে সবজি পচনশীল বা পচে যায় তার ক্ষতিপূরণ হিসাবে তাদের দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে হয়।
এদিকে দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও সেই তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে না মানুষের আয়। তাই মানুষের জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে উঠছে। অনেকে নিজেদের চাহিদা পূরণে অক্ষমতা প্রকাশ করছে। তবে এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কোনো সমাপ্তি নেই। তবে যারা অল্প বেতনে চাকুরী করেন বা যারা শিক্ষার্থী আছেন তাদের জীবনে এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।
রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে যানবাহনের খরচ বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের মূল্য।
সরকার টিসিবির মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের মধ্যে ন্যায্য মূল্যে খাদ্য বণ্টন করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। টিসিবির পরিচালকের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, “যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করে তা দরিদ্রদের মধ্যে ন্যায্য মূল্যে দেওয়া হবে।” এতে দরিদ্র মানুষের চাহিদা কিছু মিটলেও পুরোপুরি মিটছে না। দরিদ্র মানুষের সমস্যা সমাধানে সরকারের নজর রাখা উচিত যাতে টিসিবি থেকে পণ্য দরিদ্ররা ঠিকমত পায়। এবং টিসিবির পণ্য আরও বাড়ানো উচিত। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য যাতে স্বল্প আয়ের লোকজন না ভোগ। যদিও ইতিমধ্যে টিসিবির পরিচালক জানান, “সরকার এটা নিয়ে কাজ করছে এবং যত দ্রুত সম্ভব মনিটরিং শুরু করবে।”
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে এক ভ্যান চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন, তার দৈনিক আয় দিয়ে তার নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার খরচেই হয় না। এমন দেশে লাখো মানুষের একই বক্তব্য। যদিও উচ্চবিত্তরা এই সমস্যায় তেমন পড়ছে না, তবে নিম্নবিত্তদের মাছে-ভাতে বাঙালি কথাটা এখন স্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। মাছের দাম আকাশছোঁয়া, তেমনিভাবে যারা মাসে একবার মাংস খেতে পারত তাদের কাছে বিশেষ কোনো আয়োজন ছাড়া মাংস খাওয়া দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ যেখানে মানুষের প্রধান খাবার ভাত। সেখানে চালের মূল্য কেজিতে প্রায় ৫০-৮০ টাকা—যা জোগাড় করা সাধারণ মানুষের জন্য অনেক কষ্টসাধ্য। টিসিবির প্রদানকৃত চালের অংশও কিছু সুবিধাবাদী লোক দরিদ্রদের না দিয়ে নিজেরা ভোগ করছে। যার ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে সাধারণ দরিদ্র মানুষের উপর। তাছাড়া তেল, শাক সবজি, ফলমূলের দামও অধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব প্রভাব পড়ছে জনগণের উপর।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ ও প্রতিকার
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সমস্যাটি বর্তমানে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা যায়। এ পর্যায়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সমস্যার প্রতিকার করতে না পারলে তা জাতীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে বেশিদিন লাগবে না। তাই নিম্নে বর্ণিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা এখন সময়ের দাবি:
- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো অসাধু ব্যবসায়ী, সিন্ডিকেট, কালোবাজারি, দুর্নীতি ইত্যাদি শক্ত হাতে দমন করা। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কঠোর হাতে সব সমাধান করা উচিত। অসাধু ব্যবসায়ী যারা নিজেদের স্বার্থে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করছে তাদের আইনের আওতায় আনা হলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সমস্যাটা কিছুটা হলেও কমবে।
- উৎপাদন বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। চাইলেই বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। অধিক ফসল ফলানোর ফলে বাজারদাম কিছুটা কমে আসবে।
- কলকারখানায় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কাঁচামাল আমদানি যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
- মোবাইল কোডের সাহায্যে বাজারে অনিয়ম স্থিতিশীল রাখতে হবে। এবং অনিয়ম রুখতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- বাজারে গ্রাহকের প্রয়োজনের সাথে তাল মিলিয়ে পণ্যের যোগান দিতে পারলে পণ্যের অধিক মূল্য স্থিতিশীল হবে।
- টিসিবির পণ্য যেন দরিদ্ররা পায় সেদিকে প্রশাসনের কড়া নজর রাখতে হবে। এবং চেষ্টা করতে হবে টিসিবির দ্রব্য বাড়াতে যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ে বাধ্য হয় পণ্যের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করতে।
- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে কাজ করতে সরকারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাজারগুলোতে সরকারের প্রশাসন দ্বারা অনিয়ম রুখতে পারলেই বাজারদাম স্থিতিশীল হতে বাধ্য।
সরকারের উচিত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে যথাসম্ভব এই সমস্যার সমাধান করা। জনগণের পাশে সরকার না থাকলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না।
প্রতিবেদক
ইসরাত জাহান যুতি
ময়মনসিংহ, ঢাকা
২৪/০৮/২০২৩