গর্ভবতী হওয়া মেয়েদের কাছে একটা বিশেষ পর্যায়। এ সময়টা মেয়েদের কাছে জীবনের সবচেয়ে মধুরতম অধ্যায়। একজন গর্ভবতী কিনা তা মেডিকেল টেস্ট থেকে জানা গেলেও ঘরোয়া অনেক উপায়েই জানা যায় সে গর্ভবতী কিনা। প্রেগন্যান্সির কিছু লক্ষণের মাধ্যমে তা জানা যায়। আপনি কি জানেন সে লক্ষণগুলো কী কী? না জানলে চলুন আলোচনা করা যাক কনসিভ করার কিছু লক্ষণ নিয়ে। এ ব্যাপারে বিশদভাবে জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
গর্ভবতী হওয়ার অসংখ্য লক্ষণ আছে। আগেরকার দিনে মহিলারা কিছু সাধারণ বিষয়কেই গর্ভধারণের লক্ষণ হিসাবে ধরে নিত। তবে সব সময় সে লক্ষণগুলো সঠিক হতো না। প্রথমে আমরা কনসিভ করার সবচেয়ে প্রাথমিক কিছু লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করব। তারপর আলোচনা করব প্রেগন্যান্সির লক্ষণে কিছু ভুল নিয়ে। সাধারণত আমরা কিছু বিষয় লক্ষ করে অনুমান করি কোনো মহিলা কনসিভ করেছে কিনা। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো পিরিয়ড তারিখ মিস হওয়া। তারপর আরও কিছু বিষয় বা লক্ষণ আছে। যেমন: বমি বমি ভাব হওয়া, খেতে না পারা, মাথা ঘুরানো ইত্যাদি।
পিরিয়ড মিস হওয়া
পিরিয়ড মিস হওয়াকে মহিলারা গর্ভধারণের অন্যতম বিশেষ লক্ষণ মনে করেন। তবে পিরিয়ড মিস হওয়াই গর্ভধারণের একমাত্র লক্ষণ না। আবার শুধু পিরিয়ড মিস হলেই যে কনসিভ করে এমনও না। বর্তমানে মহিলারা টেস্টিং কিট ব্যবহার করে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করে ফেলে। তবে টেস্টিং কিট ব্যবহার করার আগে প্রাথমিক ভাবেও প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করা যায়। পিরিয়ড সঠিক সময়ে হতে দেরি হলে মহিলারা অনুমান করে যে সে কনসিভ করতে পারে। তবে সবক্ষেত্রে তা সত্যি নয়। হরমোনাল অনেক কারণে পিরিয়ড নির্দিষ্ট সময়ের থেকে দেরিতে হতে পারে। আবার পিরিয়ড মিস হওয়ার আগেও গর্ভবতী হওয়ার কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই শুধু পিরিয়ডের উপর ভিত্তি করে গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় না।
আরও দেখুন: ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম
প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কী কী
গর্ভবতী হওয়ার অনেক লক্ষণ আছে। তার মধ্যে কিছু লক্ষণ হলো মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব, মুড সুয়িং বা মাথা ঘুরানো, ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং, ক্লান্তি, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, স্তনযুগলে পরিবর্তন, ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ, কোষ্ঠকাঠিন্য, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, পেটব্যথা, ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ করা ইত্যাদি। এসকল লক্ষণ পর্যালোচনা করে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভধারণ করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
মুড সুয়িং বা মাথা ঘুরানো
যখন তখন মেজাজের পরবর্তন হওয়াকে মুড সুয়িং বলে। গর্ভাবস্থায় মেয়েদের অনেক বেশি মুড সুয়িং হয়। এটি গর্ভধারণের একটি লক্ষণ। এসময় মেয়েরা কখনো ফুরফুরে মেজাজে কখনো বা খিটখিটে মেজাজে থাকে। অনেক সময় মুড সুয়িংয়ের কারণে নিজের স্বামীকেও বিরক্ত লাগতে পারে। তখন তাদের উপর রাগ না করে মানসিক সাহস দিতে হবে। তাছাড়া হঠাৎ হঠাৎ মাথা ঘুরানোর মতো সমস্যাও হতে পারে যা একদমই স্বাভাবিক।
শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি
গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরনের স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। শুধু তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে গর্ভধারণ নিশ্চিত না হলেও এটি গর্ভধারণের ইঙ্গিত দেয়। তাছাড়া অন্য যেকোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
স্তনযুগলে পরিবর্তন
স্তনযুগলের পরিবর্তনও গর্ভধারণের সাধারণ লক্ষণের মধ্যে পড়ে। কনসিভ করার দুই সপ্তাহের ভেতর স্তন ফুলে যেতে পারে সাথে হালকা ব্যথাও হতে পারে।
ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ
ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ প্রেগন্যান্সির মুখ্য কোনো লক্ষণ না। তবে গর্ভবতী মহিলাদের ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ বা সাদা স্রাব হয়ে থাকে। এটি গর্ভধারণের সাধারণ লক্ষণ হিসাবে এটিকে ধরা যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য
কনসিভ করার সময় মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন হয়। তার মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য একটি। হরমোনাল কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে গর্ভাবস্থায়।
আরও দেখুন: স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার উপায়
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন
প্রেগন্যান্সির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন। এসময় ব্যাপকভাবে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হয়। পছন্দীয় খাবার অপছন্দের তালিকায় আবার অপছন্দের খাবার পছন্দের খাবারের তালিকায় চলে আসতে পারে। আবার কেউ গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক খেতে পারে।
পেটব্যথা
গর্ভাবস্থায় হালকা পেট ব্যথাও হতে পারে। তবে অধিক পরিমাণে পেট ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ
গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন মূত্র ত্যাগের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি আসলে কোনো সমস্যা না। এটিও প্রেগন্যান্সির ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।
সাদা স্রাব কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ
সাদা স্রাব একটি স্বাভাবিক ব্যপার। সব মেয়েদেরই সাদা স্রাব যায়। তবে প্রেগন্যান্সিতে সাদা স্রাব বেশি হতে পারে। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলে সাদা স্রাবকে প্রেগন্যান্সির লক্ষণ হিসাবে ধরা যায়।
দ্বিতীয়বার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
মহিলারা প্রথমবারের থেকে দ্বিতীয়বার গর্ভবতী হওয়ার সময় গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো তাড়াতাড়ি বুঝতে পারে। প্রথমবার গর্ভবতী হলে মহিলাদের বুঝতে দেরি হয়, কারণ তাদের পূর্ব-অভিজ্ঞতা থাকে না। তবে দ্বিতীয়বারের মতো যখন আমার গর্ভবতী হয় তখন পূর্ব অভিজ্ঞতার দক্ষতায় তারা সেটি তাড়াতাড়ি বুঝে ফেলে। তবে দ্বিতীয়বারেও সেই প্রথমবারের মতোই লক্ষণগুলো থাকে।
গর্ভবতী হলে করণীয় কী
গর্ভবতী হলে অনেক ধরণের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। শারীরিক পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকা থেকে শুরু করে মানসিক দিক দিয়েও সুস্থ থাকা জরুরি এই সময়। অন্য সময়ের থেকে অনেক বেশি খেয়াল রাখা উচিত শরীরের। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরণের ঔষধ সেবন করা যাবে না। সর্বোপরি গর্ভাবস্থায় গর্ভবতীদের সর্বোচ্চ যত্নে থাকতে হবে।
FAQ
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়?
সাধারণত পিরিয়ড মিস হলে গর্ভধারণ করেছে বলে মনে করেন মহিলারা। তবে কিছু বিষয়ের উপর লক্ষ রাখলে গর্ভবতী হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহেই এটি নিশ্চিত হওয়া যায়।
গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়?
গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ ও বিশেষ লক্ষণ হলো মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব হওয়া। প্রতিদিন ঘুম থেকে জাগার পর যদি বমি বমি ভাব হয় তাহলে তাকে মর্নিং সিকনেস বলে। গর্ভবতী হওয়ার দুই থেকে তিন সাপ্তাহের মধ্যেই বমি বমি ভাব বা মর্নিং সিকনেস প্রকাশ পায়। মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব হওয়া কোনো রোগ নয়। এটি স্বাভাবিকভাবে প্রতিটা গর্ভবতী মহিলারই হয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এই সমস্যাটা একেক জনের একেক রকম হয়ে থাকে। কারোর প্রথম তিন মাস মর্নিং সিকনেস সমস্যাটি থাকে। আবার কারো কারো এই সমস্যাটি প্রেগন্যান্সির পুরো সময়টাতেই থাকে। এটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই।
গর্ভবতী অবস্থায় মাসিক হয় কেন?
গর্ভাবস্থায় যদি যোনিপথ দিয়ে রক্ত যায় এটাকে বলা হয় ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং। এটিও গর্ভাবস্থায় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতি চারজন গর্ভবতী নারীর মধ্যে এক জনের এ সমস্যা হয়ে থাকে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অনেক ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং হয় হালকা। তবে এটা যদি ভারি পর্যায় চলে যায় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়?
মাসিক মিস হওয়ার এক সাপ্তাহের মধ্যেই প্রেগন্যান্সির লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এক সাপ্তাহের মধ্যে টেস্ট কিট দিয়ে পরীক্ষা করেও প্রেগন্যান্সির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।
শেষ কথা
মা হওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম অনুভূতি। এই অনুভূতির সূচনা হয় গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর। তাই গর্ভবতী হওয়ার উপরোক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর গর্ভবতী মহিলার অতিরিক্ত যত্ন নিতে হবে। তাকে মানসিক চাপ দেওয়া যাবে না। গর্ভবতী মায়েরা অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিতে পারবে না। সুস্থ থাকুন সুস্থ রাখন।