জন্ডিসের লক্ষণ: জন্ডিস কোনো রোগ নয়; এটি রোগের লক্ষণ মাত্র। জন্ডিসের কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশ, চোখের সাদা অংশ হলুদাভ বর্ণ ধারণ করে। জন্ডিসে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। যদিও জন্ডিস কোনো রোগ নয়, তবুও এই জন্ডিসের কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই এসব সমস্যা এড়ানোর জন্য জন্ডিসের গতিবিধি জানা প্রয়োজন।
জন্ডিস কি?
আগেই সংক্ষিপ্তভাবে বলেছি রক্তে বিলিরুবিনের (Bilirubin) পরিমাণ বেড়ে গিয়ে চামড়া, চোখ ও প্রস্রাবের রং হলুদাভ হয়ে যাওয়াকে জন্ডিস (Jaundice) বলে। বিলিরুবিন হচ্ছে রক্তের লোহিত কনিকা ভেঙে গিয়ে তৈরি রাসায়নিক উপাদান।
জন্ডিস কেন হয়?
আলোচনার পরিপেক্ষিতে আগে একাধিকবার বলা হয়েছে জন্ডিসের কারণ হলো বিলিরুবিন। কোনো কারণে রক্তের কণিকা ভেঙে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়। আবার উন্নত দেশগুলোতে ধুমপানকেও জন্ডিসের কারণ হিসাবে তুলনা করা হয়ে থাকে। তাছাড়া হ্যাপাটাইসিস ভাইরাসগুলোকে জন্ডিসের প্রধান কারণ হিসাবে ধরা হয়। ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও জন্ডিস হতে পারে। আবার জন্ডিস বয়সভেদে একেক জনের একেক রকম হতে পারে।
আরো দেখুন: যেভাবে আজীবন সুস্থ থাকা যায়
জন্ডিসের লক্ষণ
জন্ডিস চেনার উপায় হিসাবে খুব সাধারণভাবে প্রস্রাবের রং, চোখের রং ও শরীরের চামড়ার রং হলুদ হওয়াকে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া জ্বর জ্বর ভাব, শরীর ব্যথা, পেট ব্যথা, ক্ষুদামন্দা, চোখ মুখ শুকিয়ে যাওয়াকেও জন্ডিসের উপসর্গ হিসাবে ধরা হয়। তাছাড়াও হয় বমি বমি ভাব, পেট ব্যাথা, চুলকানি, যকৃত শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এই লক্ষণগুলো দেখা গেলে বুঝা যায় যে লোকটি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছে। তাছাড়া কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা তো আছেই।
জন্ডিস হলে করণীয় কি
কথায় আছে প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ উত্তম। তাই চেষ্টা করতে হবে জন্ডিস হওয়ার আগে জন্ডিস প্রতিরোধ করা উচিত। এপর্যায়ে আলোচনা করবো জন্ডিসের কিছু প্রতিরোধ নিয়ে-
১. মদ পান করা বা অন্যান্য নেশা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. কারো থেকে রক্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করে নিতে হবে।
৩. যেহেতু হেপাটাইটিস থেকে জন্ডিস হয় সেক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বৃষ্টির পানি পান করার ফলে জন্ডিস হতে পারে। বৃষ্টির দিনেই জন্ডিসের প্রকোপতা বৃদ্ধি পায়।
৪. বিশুদ্ধ শাক সবজি খেতে হবে। অপরিষ্কার কোনো ফল খাওয়া যাবে না। ফরমালিনযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে বাইরে থেকে কেনা ফল সম্পূর্ণভাবে পরিহার করাই উত্তম।
জন্ডিসের তেমন কোনো নির্দিষ্ট কারণ না থাকাই এর প্রতিরোধও নির্দিষ্ট নয়। তবে যত সম্ভব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। হেপাটাইটিসের ফলে জন্ডিস দেখা দেয় এটা তো স্পষ্ট। তাই রক্তের ক্ষতি হয় এমন কাজ না করা এবং রক্ত সুস্থ রাখার যথাসম্ভব পদক্ষেপ নেওয়া জন্ডিস প্রতিরোধ করার একটা মাধ্যম। এগুলো নিয়মমাফিক মানলে আশা করা যায় জন্ডিস প্রতিরোধ সম্ভব।
আরো দেখুন: ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়
জন্ডিসের প্রতিকার
জন্ডিস হলো যকৃতের একটা অনিয়ন্ত্রিত অবস্থা। যাকে রোগ হিসাবে চিহ্নিত করা না হলেও এটা রোগের উপসর্গ। এটা প্রতিকার করা জরুরি। যকৃতের সমস্যা হওয়ার কারণে এমন কোনো খাবার খাওয়া উচিত যার ফলে যকৃত সুস্থ থাকে। যেমন-
- শস্য জাতীয় খাবার: চাল, রুটি, ওটস, বাদাম ইত্যাদি।
- শাক সবজি: শাক সবজি যকৃতের রোগ সারাতে সাহায্য করে। তবে সেই শাক সবজিকে হতে হবে বিশুদ্ধ। যেমন- বিভিন্ন রঙিন শাক সবজি।
- ফল: ফরমালিন মুক্ত সবজি রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। যেমন- পেঁপে, আম, পেয়ারা, আনারস, কমলা, লিচু, বেল ইত্যাদি।
- পানি: পানি দেহের যেকোনো সমস্যা সমাধানে কাজ করে থাকে। জন্ডিস প্রতিরোধে পানি পান সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আখের রস, ডাবের পানি এসব জন্ডিসের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে।
জন্ডিস হলে কী কী খাওয়া যাবে না
জন্ডিসের সময় দুগ্ধজাত সব ধরণের খাবার পরিহার করতে হবে। গরু, মহিষ, হাস, ছাগল এসবের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাছাড়া হাসের ডিম, বেশি তেল মসলা দেওয়া খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
জন্ডিসে ঠিকঠাক বিশ্রাম নেওয়া হলে আর নিয়মমাফিক চলতে পারলে জন্ডিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: জন্ডিসে আক্রান্ত মা নির্দ্বিধায় তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবে। এতে সন্তানের কোনো ক্ষতি হবে না।
আরো দেখুন: স্তন ক্যান্সার কেন হয় এবং এর চিকিৎসা
জন্ডিসের চিকিৎসা
জন্ডিস হয়ে গেলে জন্ডিসের টিকা কাজ করে না। তাই জন্ডিস হওয়ার আগে ছোটবেলাতেই এর টিকা নেওয়া উচিত। তাছাড়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো কবিরাজ বা কারোর কথায় কোনো ঔষধ সেবন করা ঠিক না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
সাবধানতা
জন্ডিস কোনো রোগ না হয়ে রোগের লক্ষণ হলেও এখানে অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে যায়। প্রায় ৩০% লোকেই জন্ডিসের কারণে মৃত্যুর কোলে হেলে পড়ে সাবধানতা অবলম্বন না করার ফলে। তাই জন্ডিসের সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। জন্ডিসের সময় শারীরিক পরিশ্রম করা যাবে না। শারীরিক পরিশ্রম করলে জন্ডিস অধিক মাত্রায় দেখা দেয়। তাছাড়া নিষিদ্ধ খাবারগুলো খেলেও জন্ডিস মারাত্মক আকার ধারণ করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে জন্ডিসে পানি পানে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ হেপাটাইটিস হলো পানিবাহিত রোগ। তখন দূষিত পানি পান করা মানে জন্ডিসের মাত্রা বাড়িয়ে ফেলা।
শেষ কথা
আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে কোনো রোগই জটিল নয়। তবে প্রয়োজন রোগের সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়মমাফিক চলা। প্রাথমিক অবস্থাতেই জন্ডিসের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং সেই অনুযায়ী চললে কিছু দিনের ভেতর এই রোগ থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভব কিছু না। তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে এবং নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।