রোজা ভঙ্গের কারণ কী কী? সাওম ভঙ্গের কারণ গুলো দেখুন

রোজা ভঙ্গের কারণ কী কী

সূচিপত্র

রোজা ভঙ্গের কারণ অর্থাৎ কী করলে রোজা ভেঙ্গে যায় তা নিয়ে আজকের আলোচনা। অতএব, রোজা বা সাওম ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে জানতে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

সাওম বা রোজা কাকে বলে?

সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, কামাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকে বিরত থাকার নাম রোজা বা সাওম (সিয়াম)।

রোজার নিয়ত
রোজার নিয়ত

রোজার নিয়ত সম্পর্কে হাদীস

উম্মুল মুমিনীন হাফসা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না। [সুনানে আবু দাউদ ১/৩৩৩]

কীভাবে রোজার নিয়ত করতে হয়

নিয়ত হলো মনের সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত বা সংকল্পের নাম। আপনি যে রোজা রাখছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এটা আপনার মনে বা চিন্তায় জাগ্রত থাকলেই সেটা নিয়্যত হিসাবে পরিগণিত হয়ে যাবে; মুখে কিছু উচ্চারণের প্রয়োজন নাই।

আরও দেখুন

রোজা রাখার ৪ শর্ত

  1. মুসলিম হওয়া
  2. বালেগ হওয়া
  3. অক্ষম না হওয়া
  4. ঋতুস্রাব থেকে বিরত থাকা (নারীদের ক্ষেত্রে)

রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের আয়াত

নিম্নোক্ত আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রোজা ভঙ্গের মূল কারণ উল্লেখ করেছেন।

“সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তার নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য স্পষ্ট করেন যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।” (সূরা আল বাকারা ২/১৮৭)

রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি?

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

রোজা ভঙ্গের কারণ বা সাওম ভঙ্গের কারণ সমূহ প্রধানত তিনটি।
প্রধানত যে ৩টি কারণে রোজা বা সাওম ভেঙ্গে যায় তা নিম্নে বর্ণিত হলোঃ
১. পানাহার
২. খাদ্যাহার
৩. যৌনাচার

এছাড়াও আরো কিছু কারণে রোজা ভেঙ্গে যেতে পারে। যেমন:

  1. ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা (মতপার্থক্য আছে)
  2. শিঙ্গা লাগানো (মতপার্থক্য আছে)
    • যে ব্যক্তি শিঙ্গা লাগায় ও যার শিঙ্গা লাগানো হয় উভয়ের রোযা ভেঙ্গে যাবে। [সুনানে আবু দাউদ ২৩৬৭]
  3. হস্তমৈথুন করলে
  4. সুবহে সাদেক অর্থাৎ সাহরী খাওয়ার সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও খাবার খেলে
  5. সূর্যাস্তের আগেই ইফতার করলে
  6. যা কিছু পানাহারের স্থলাভিষিক্ত
    • অর্থাৎ যা সরাসরি খাদ্য নয় কিন্তু তার মাধ্যমে খাদ্যের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। যেমন: এমন ইনজেকশন বা স্যালাইন যার মাধ্যমে খাদ্যাভাব দূর করা যায়।
  7. মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের রক্ত বের হওয়া

রোজা ভঙ্গের কাফফারা

ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভাঙ্গলে কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব। যেভাবে কাফফারা আদায় করবেন তা নিম্নে বর্ণিত হলোঃ

  • ১টি রোজার পরিবর্তে একাধারে ৬০ দিন রোজা রাখতে হবে। যদি এভাবে রোজা রাখতে সক্ষম না হোন তাইলে–
    1. ৬০ জন মিসকিনকে ১ বেলা করে ৬০ দিন খাওয়াবেন। অথবা,
    2. ১ জন গোলামকে আজাদ করতে হবে। (বর্তমানে দাস প্রথা না থাকায় এটা করার সুযোগ নেই।)

রোজা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর

নিচে রোজা বা সিয়াম সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

১. রোজা রেখে গালি দিলে কি হয়?

উত্তর: গালি দেয়া রমাদানে কিংবা এর বাহিরে কখনোই ঠিক নয়। গালি দেয়ার কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না ঠিকই কিন্তু আমলনামায় গোনাহ্ লিপিবদ্ধ হবে ও রোজার ফজিলত থেকে বঞ্চিত হতে হবে।

২. বয়সের কারণে রোযা রাখতে অক্ষম হলে টাকা দিয়ে অন্যকে দিয়ে রোযা রাখিয়ে নেয়া যাবে কি?

উত্তর: না, এভাবে রোযা রাখলে রোযা আদায় হবে না। এরকম অক্ষম ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিধান হল, সে তার রোযার ফিদিয়া আদায় করবে। এক্ষেত্রে প্রতি রোযার জন্য গরীবকে দুই বেলা খানা খাওয়াতে হবে। বা এর সমমূল্য দান করতে হবে। যার পরিমাণও সদকায়ে ফিতির পরিমাণ।

৩. কাযা রোজার সঠিক সংখ্যা মনে না থাকলে করণীয় কী?

উত্তর: এক্ষেত্রে সঠিক সংখ্যা স্মরণ করার চেষ্টা করতে হবে। যদি কোনোভাবেই মনে না আসে, সেক্ষেত্রে যে সংখ্যাটি সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে হবে সেই সংখ্যক রোজার কাযা আদায় করতে হবে।

৪. কাফফারা ও ফিদিয়া এর মাঝে পার্থক্য কী?

উত্তর: ইচ্ছাকৃত ভাবে রোজা ভঙ্গ করলে কাফফারা আদায় করতে হয়। আর শারীরিক অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে রোজা রাখতে অক্ষম হলে ফিদিয়া আদায় করতে হয়।

রোজা সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে Wikipedia এর এই লেখাটি পড়ুন।

উপসংহার

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সিয়াম বা রোজা একটি। যাদের উপর রোজা পালনের শর্ত উপস্থিত আছে তাদের রমাদান মাসে রোজা রাখা ফরজ। ইবাদত কবুলের প্রধান শর্ত হলো তা শির্ক ও বিদ’আত মুক্ত হতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলের রোজার ভুলত্রুটি ক্ষমা করে আমাদের সিয়াম সাধনাকে কবুল করুন। আমীন।

Share
Tweet
Share
Pin
Share
Share
Tweet
Pin
Share
Subscribe
Notify of
guest
4 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
abu sufian

ধন্যবাদ

StudyKoro

আপনাকেও ধন্যবাদ।

অজ্ঞাত

Hi

StudyKoro

অনুগ্রহ করে আপনার সঠিক নাম সহ পরিষ্কার করে মন্তব্য করুন।
ধন্যবাদ।

এই নিবন্ধে কোনো তথ্যসূত্র সংযোজন করা হয়নি।
লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
social media
অন্যদের সাথে শেয়ার করুন
Post
Tweet
Pin
Email
Happy
আপনি উপকৃত হওয়ায় আমরা খুশি হয়েছি।

নিবন্ধটি থেকে আপনি কেমন উপকৃত হয়েছেন তা আমাদের জানাতে ভুলবেন না যেন।

Sad
দুঃখিত কী সমস্যা?

পরবর্তী নিবন্ধটি আরও ভালো করতে আপনার সমস্যাটি অনুগ্রহ করে আমাদের জানান।

নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন

স্টাডিকরো’র গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ই-মেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন।

আপনার প্রাইভেসি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ

Report about this product

Let us know if you notice any incorrect information about this product. Also, please let us know if the given PDF file is banned for sharing; we will remove it as soon as possible. 

User Profile Picture

YourName