রসায়নে পর্যায় সারণি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পর্যায় সারণির উপর ভিত্তি করে রসায়ন দাঁড়িয়ে আছে। পর্যায় সারণি সম্পর্কে ধারণা ছাড়া কখনোই একজন রসায়নবিদ হওয়া সম্ভব না। তাছাড়া নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যায় সারণি মুখস্থ করা জরুরি। এই ব্লগে পর্যায় সারণি নিয়ে আলোচনা করা হবে। পর্যায় সারণির মৌলগুলো সম্পর্কে জানতে ব্লগটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পর্যায় সারণি সম্পর্কে জানুন
পর্যায় সারণি কাকে বলে
মানুষ প্রাচীনকাল থেকে বিক্ষিপ্তভাবে পদার্থ এবং তাদের ধর্ম সম্পর্কে যে সকল ধারণা অর্জন করেছিল তার একটি সম্মিলিত রূপ হলো পর্যায় সারণি। একই ধর্মের মৌলগুলোকে একই শ্রেণিভুক্ত করে তাদের পারমাণবিক সংখ্যানুসারে ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে বর্তমানে যে সারণিভুক্ত করা হয়েছে সেটিই আসলে পর্যায় সারণি। পর্যায় সারণিতে মৌলগুলোকে তাদের ধর্ম অনুসারে আলাদা আলাদা গ্রুপে স্থান দেওয়া হয়েছে। এবং একই সারণিতে মৌলগুলোকে তাদের নিজস্ব পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে সাজানো হয়েছে।
পর্যায় সারণীর ইতিহাস
১৭৮৯ সালে বিজ্ঞানী ল্যাভয়সিয়ে মৌলিক পদার্থগুলোকে ধাতু ও অধাতু এই দুই ভাগে ভাগ করেন। ১৮২৯ সালে বিজ্ঞানী ডোবেরাইনার প্রমাণ করেন তিনটি করে মৌলিক পদার্থ একই রকম ধর্ম প্রদর্শন করে। ডোবেরাইনার ত্রয়ী সূত্র নামে একটি সূত্র উপস্থাপন করে, যেখানে প্রথম ও তৃতীয় মৌলের পারমানবিক ভরের গড় দ্বিতীয় মৌলের পারমানবিক ভরের সমান বা কাছাকাছি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৬৯ সালে বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডেলিফ আরেকটি সূত্র উপস্থাপন করে, যেখানে মৌলগুলোর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলম্বী তাদের পারমাণবিক ভর বৃদ্ধির সাথে সাথে আবর্তিত হয়। এটিই হলো পর্যায় সারণীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
আধুনিক পর্যায় সারণি
মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিকে আধুনিক পর্যায় সারণি বলা হয়। মেন্ডেলিফ তখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৬৩টি মৌলকে নিয়ে ১২টি আনুভূমিক সারি এবং ৪টি খাড়া কলামের একটি সারণি তৈরি করেন যা বর্তমানে ১১৮টি মৌলের আধুনিক পর্যায় সারণি নামে অভিহিত।
পর্যায় সারণি ছবি
পর্যায় সারণি হচ্ছে বিভিন্ন মৌলগুলোকে কিছু নিয়মের ভিত্তিতে একত্রিত করে সাজানোর আন্তর্জাতিক ছক। পর্যায় সারণিতে মোট মৌল সংখ্যা ১১৮টি। ১১৮টি মৌলকে তাদের ভর ও পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী পর্যায় সারণিতে সাজানো হয়েছে; যেখানে ১৮টি গ্রুপ ও ৭টি পর্যায় রয়েছে।
মৌলের নাম ও সংকেত
নিম্নে ধারাবাহিকভাবে ১১৮টি মৌলের নাম ও সংকেত উপস্থাপন করা হল:
- হাইড্রোজেন (H)
- হিলিয়াম (He)
- লিথিয়াম (Li)
- বেরিলিয়াম (Be)
- বোরন (B)
- কার্বন ( C)
- নাইট্রোজেন (N)
- অক্সিজেন (O
- ফ্লোরিন (F)
- নিয়ন (Ne)
- সোডিয়াম (Na)
- ম্যাগনেসিয়াম (Mg)
- অ্যালুমিনিয়াম (Al)
- সিলিকন (Si)
- ফসফরাস (P)
- সালফার (S)
- ক্লোরিন (Cl)
- আর্গন (Ar)
- পটাশিয়াম (K)
- ক্যালসিয়াম (Ca)
- স্ক্যানডিয়াম (Sc)
- টাইটানিয়াম (Ti)
- ভ্যানাডিয়াম (V)
- ক্রোমিয়াম (Cr)
- ম্যাঙ্গানিজ (Mn)
- আয়রন (Fe)
- কোবাল্ট (Co)
- নিকেল (Ni)
- কপার (Cu)
- জিংক (Zn)
- গ্যালিয়াম (Ga)
- জার্মেনিয়াম (Ge)
- আর্সেনিক (As)
- সেলেনিয়াম (Se)
- ব্রোমিন (Br)
- ক্রিপটন (Kr)
- রুবিডিয়াম (Rb)
- স্ট্রোনসিয়াম (Sr)
- ইট্রিয়াম (Y)
- জিরকোনিয়াম (Zr)
- নিওবিয়াম (Nb)
- মলিবডেনাম (Mo)
- টেকনেসিয়াম (Tc)
- রুথেনিয়াম (Ru)
- রোডিয়াম (Rh)
- প্যালাডিয়াম (Pd)
- সিলভার (Ag)
- ক্যাডমিয়াম (Cd)
- ইন্ডিয়াম (In)
- টিন (Sn)
- এন্টিমনি (Sb)
- টেলুরিয়াম (Te)
- আয়োডিন (I)
- জেনন (Xe)
- সিজিয়াম (Cs)
- বেরিয়াম (Ba)
- ল্যান্থানাম (La)
- সিরিয়াম (Ce)
- প্রাসিওডিমিয়াম (Pr)
- নিওডিমিয়াম (Nd)
- প্রোমেথিয়াম (Pm)
- সামারিয়াম (Sm)
- ইউরোপিয়াম (Eu)
- গ্যাডোলিনিয়াম (Gd)
- টার্বিয়াম (Tb)
- ডিসপ্রোসিয়াম (Dy)
- হলমিয়াম (Ho)
- আর্বিয়াম (Er)
- থুলিয়াম (Tm)
- ইটারবিয়াম (Yb)
- লুটেসিয়াম (Lu)
- হাফনিয়াম (Hf)
- ট্যান্টালাম (Ta)
- ট্যাংস্টেন (W)
- রেনিয়াম (Re)
- অসমিয়াম (Os)
- ইরিডিয়াম (Ir)
- প্লাটিনাম (Pt)
- গোল্ড (Au)
- মার্কারি (Hg)
- থ্যালিয়াম (Tl)
- লেড (Pb)
- বিসমাথ (Bi)
- পোলোনিয়াম (Po)
- অ্যাস্টাটাইন (At)
- রেডন (Rn)
- ফ্রানসিয়াম (Fr)
- রেডিয়াম (Ra)
- অ্যাকটিনিয়াম (Ac)
- থোরিয়াম (Th)
- প্রোটেকটিনিয়াম (Pa)
- ইউরেনিয়াম (U)
- নেপচুনিয়াম (Np)
- প্লুটোনিয়াম (Pu)
- আমেরিসিয়াম (Am)
- কুরিয়াম (Cm)
- বার্কেলিয়াম (Bk)
- ক্যালিফোর্নিয়াম (Cf)
- আইনস্টেনিয়াম (Es)
- ফার্মিয়াম (Fm)
- মেন্ডেলেভিয়াম (Md)
- নোবেলিয়াম (No)
- লরেনসিয়াম (Lr)
- রাদারফোর্ডিয়াম (Ru)
- ডুবনিয়াম (Db)
- সিয়াবর্গিয়াম (Sg)
- বোরিয়াম (Bh)
- হাসিয়াম (Hs)
- মিটরেনিয়াম (Mt)
- ডার্মস্টেডসিয়াম (Ds)
- রন্টজেনিয়াম (Rg)
- কোপারনেসিয়াম (Cn)
- নিহোনিয়াম (Nh)
- ফ্লেরেভিয়াম (Fl)
- মস্কোভিয়াম (Mc)
- লিভারমোরিয়াম (Lv)
- টেনেসাইন (Ts)
- ওগানেসন (Og)
পর্যায় সারণি সম্পর্কে শুধু জানলেই হবে! পর্যায় সারণি মনে রাখার কৌশল সম্পর্কে জানতে হবে না? এখনই জেনে আসুন পর্যায় সারণি মনে রাখার সহজ উপায় সম্পর্কে।
১১৮ টি মৌলের যোজনী তালিকা
একটি মৌলের শেষ কক্ষপথে যে কয়টি ইলেকট্রন যৌগ গঠনে কাজ করে তাকে ওই মৌলের যোজনী বলে। নিম্নে ১১৮ টি মৌলের যোজনী তালিকা দেওয়া হল:
মৌলের নাম | প্রতীক | যোজনী
- হাইড্রোজেন (H): ১
- হিলিয়াম (He): ০
- লিথিয়াম (Li): ১
- বেরিলিয়াম (Be) : ২
- বোরন (B): ৩
- কার্বন ( C): ২,৪
- নাইট্রোজেন (N): ৩
- অক্সিজেন (O): ২
- ফ্লোরিন (F): ১
- নিয়ন (Ne): ০
- সোডিয়াম (Na): ১
- ম্যাগনেসিয়াম (Mg): ২
- অ্যালুমিনিয়াম (Al): ৩
- সিলিকন (Si): ৪
- ফসফরাস (P): ৩
- সালফার (S): ২,৪,৬
- ক্লোরিন (Cl): ১
- আর্গন (Ar): ০
- পটাশিয়াম (K): ১
- ক্যালসিয়াম (Ca): ২
- স্ক্যানডিয়াম (Sc): ৩
- টাইটানিয়াম (Ti): ০
- ভ্যানাডিয়াম (V): ৪,৫
- ক্রোমিয়াম (Cr): ২
- ম্যাঙ্গানিজ (Mn): ২,৪,৭
- আয়রন (Fe): ২,৩
- কোবাল্ট (Co): ২,৩
- নিকেল (Ni): ২,৩
- কপার (Cu): ১,২
- জিংক (Zn): ২
- গ্যালিয়াম (Ga): ৩
- জার্মেনিয়াম (Ge): ৪
- আর্সেনিক (As): ৫
- সেলেনিয়াম (Se): ৬
- ব্রোমিন (Br): ১
- ক্রিপটন (Kr): ০
- রুবিডিয়াম (Rb): ১
- স্ট্রোনসিয়াম (Sr): ২
- ইট্রিয়াম (Y): ৩
- জিরকোনিয়াম (Zr): ৪
- নিওবিয়াম (Nb): ২,৩৫
- মলিবডেনাম (Mo): ২,৩,৪,৫,৬
- টেকনেসিয়াম (Tc): ২
- রুথেনিয়াম (Ru): ১
- রোডিয়াম (Rh): ১
- প্যালাডিয়াম (Pd): ২
- সিলভার (Ag): ১
- ক্যাডমিয়াম (Cd): ২
- ইন্ডিয়াম (In): ৩
- টিন (Sn): ৪
- এন্টিমনি (Sb): ৫
- টেলুরিয়াম (Te): ৬
- আয়োডিন (I): ১
- জেনন (Xe): ০
- সিজিয়াম (Cs): ১
- বেরিয়াম (Ba): ২
- ল্যান্থানাম (La): ৩
- সিরিয়াম (Ce): ৪
- প্রাসিওডিমিয়াম (Pr): ৪
- নিওডিমিয়াম (Nd): ৩
- প্রোমেথিয়াম (Pm): ৩
- সামারিয়াম (Sm): ৩
- ইউরোপিয়াম (Eu): ৩
- গ্যাডোলিনিয়াম (Gd): ৩
- টার্বিয়াম (Tb): ৩
- ডিসপ্রোসিয়াম (Dy): ৩
- হলমিয়াম (Ho): ৩
- আর্বিয়াম (Er): ৩
- থুলিয়াম (Tm): ৩
- ইটারবিয়াম (Yb): ৩
- লুটেসিয়াম (Lu): ৩
- হাফনিয়াম (Hf): ৪
- ট্যান্টালাম (Ta): ৫
- ট্যাংস্টেন (W): ৬
- রেনিয়াম (Re): ২
- অসমিয়াম (Os): ২
- ইরিডিয়াম (Ir): ২
- প্লাটিনাম (Pt): ২,৪
- গোল্ড (Au): ১,৩
- মার্কারি (Hg): ২
- থ্যালিয়াম (Tl): ৪
- লেড (Pb): ৪
- বিসমাথ (Bi): ৫
- পোলোনিয়াম (Po): ৬
- অ্যাস্টাটাইন (At): ০
- রেডন (Rn): ০
- ফ্রানসিয়াম (Fr): ১
- রেডিয়াম (Ra): ২
- অ্যাকটিনিয়াম (Ac): ৩
- থোরিয়াম (Th): ৪
- প্রোটেকটিনিয়াম (Pa): ৫
- ইউরেনিয়াম (U): ৬
- নেপচুনিয়াম (Np): ৬
- প্লুটোনিয়াম (Pu): ৬
- আমেরিসিয়াম (Am): ৬
- কুরিয়াম (Cm): ৪
- বার্কেলিয়াম (Bk): ৪
- ক্যালিফোর্নিয়াম (Cf): ৪
- আইনস্টেনিয়াম (Es): ৪
- ফার্মিয়াম (Fm): ৩
- মেন্ডেলেভিয়াম (Md): ৩
- নোবেলিয়াম (No): ৩
- লরেনসিয়াম (Lr): ৩
- রাদারফোর্ডিয়াম (Ru): ৪
- ডুবনিয়াম (Db): ২
- সিয়াবর্গিয়াম (Sg): ২
- বোরিয়াম (Bh): ২
- হাসিয়াম (Hs): ২
- মিটরেনিয়াম (Mt): ২
- ডার্মস্টেডসিয়াম (Ds): ২
- রন্টজেনিয়াম (Rg): ১
- কোপারনেসিয়াম (Cn): ২
- নিহোনিয়াম (Nh): ৩
- ফ্লেরেভিয়াম (Fl): ২
- মস্কোভিয়াম (Mc): ২
- লিভারমোরিয়াম (Lv): ০
- টেনেসাইন (Ts): ০
- ওগানেসন (Og): ০
পর্যায় সারণির জনক কে?
আধুনিক পর্যায় সারণির জনক হলেন বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডেলিফ। ১৮৬৯ সালে তার পর্যায় সারণি প্রকাশিত হয়। তখন পর্যন্ত ৬৩টি মৌলকে দিমিত্রি মেন্ডেলিফ পর্যায় সারণিতে তাদের ভৌত ও রাসায়নিক আচরণ অনুসারে শ্রেণি ও সারিভুক্ত করেন। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো তিনি পর্যায় সারণির অনাবিষ্কৃত মৌলগুলো নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন পরবর্তীতে তা মিলে যায়।
আধুনিক পর্যায় সারণির মূল ভিত্তি কী?
মৌলের ইলেক্ট্রন বিন্যাস হলো আধুনিক পর্যায় সারণির মূল ভিত্তি। ইলেক্ট্রন বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে আধুনিক পর্যায় সারণি সাজানো হয়েছে।
পর্যায় সারণিতে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের অবস্থান কত?
পর্যায় সারণির নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলো হলো হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপটন, জেনন, রেডন, ওগানেসন। এই গ্যাসগুলোর অবস্থান পর্যায় সারণির ১৮ নং গ্রুপে। অর্থাৎ পর্যায় সারণির ১৮ নং গ্রুপের মৌলগুলো নিষ্ক্রিয় গ্যাস।
পর্যায় সারণিতে অধাতু কয়টি ও কী কী?
যেসকল মৌল এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় তাদেরকে ধাতু বলে। এবং যেসকল মৌল এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয় তাদেরকে অধাতু বলে। পর্যায় সারণিতে অধাতুর সংখ্যা ১৯টি। অধাতুগুলো হল:
- Hydrogen
- Carbon
- Nitrogen
- Neon
- Oxygen
- Phosphorus
- Sulfur
- Helium
- Chlorine
- Fluorine
- Bromine
- Iodine
- Tennessine
- Astatine
- Argon
- Krypton
- Oganesson
- Radon
- Xenon
বি.দ্র. Selenium একটি অপধাতু।
শেষ কথা
আধুনিক পর্যায় সারণি বিজ্ঞানের এক চমৎকার সৃষ্টি। এই পর্যায় সারণি দ্বারা মৌল সংক্রান্ত সমস্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাই পর্যায় সারণির গুরুত্বটাও অনেক। আজকের আলোচনায় পর্যায় সারণির যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।