মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে থাকতে হলে নরমালি আমাদের সমাজের বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে উঠা-বসা করা লাগবেই। তার মধ্যে আমাদের কিছু বিশেষ মানুষ থাকে যাদের সাথে বেশির-ভাগ সময় থাকা হয় কথা হয় এদেরকে আমরা বন্ধু বা সহচর বলি। এই সহচর বাছাই করে গ্রহণ করাটা আমাদের যুবকদের জন্য জরুরী কারণ, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।”

বন্ধুর মতো আপনিও হয়ে উঠবেন
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, “সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে” এই বাক্যের গভীরতা অনেক। কারণ, সঙ্গের সাথে থাকতে থাকতে আপনিও সঙ্গীর মতোই হয়ে উঠবেন। সঙ্গীর আচার-ব্যবহার সব আপনার মাঝেই ফুটে উঠবে। আপনার বন্ধু যদি অসৎ হয় আপনি ঠিক আপনার বন্ধুর সব ব্যবহারে প্রভাবিত হতে থাকবেন। এবং নিজেই বন্ধুর খারাপ চরিত্রের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাবেন। বন্ধু যদি কোন নেশা করে ধীরে ধীরে আপনিও সেই নেশায় আসক্ত হয়ে উঠবেন। এরকম ঘটনাই সমাজে সবচেয়ে বেশি।
অসৎ সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চিত্র
আমরা জানি, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা বুয়েটে (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তির জন্য চান্স পায়। নিশ্চয় মেধা সম্পন্ন যুবক ছাত্ররা সেখানে পড়াশুনা করে। এতো মেধা থাকা সত্বেও সঙ্গ নির্বাচনে ভুল করে অনেক যুবক ভাইয়েরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। বুয়েটে যদি আমরা লক্ষ্য করি দেখা যাচ্ছে, আবরার ফাহাদ হত্যা। অসৎ সহচরদের সঙ্গে মিশে মানুষকে হত্যা পর্যন্ত করা হয়ে যাচ্ছে। যুবকদের জন্য এই অসৎ সঙ্গ কতটা ভয়ংকর লক্ষ্য করুন।

বন্ধু নির্বাচন সম্পর্কে কুরআনের আয়াত
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এই বিধানে মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লাহ কুরআন মাজীদের সূরা ফুরকানের ২৮-২৯ নাম্বার আয়াতে বলেছেন, জালিমরা কিয়ামতের দিন বলবে, ” হায়! আমার দূর্ভাগ্য হায়! আমি যদি অমুক লোককে বন্ধু রুপে গ্রহণ না করতাম, তার প্ররোচনার কারণে আমার কাছে আশা উপদেশ মানিনি, মানুষের কাছে শয়ত্বান বড়ই বিশ্বাস ঘাতক প্রমাণিত হয়েছে।”
আমরা এই এই আয়াতগুলোর উপর লক্ষ্য করলে দেখতে পাই ক্বিয়ামতের ময়দানে এই অসৎ সঙ্গের কারণে জালিমরা কতইনা আফসোস করবে।

বন্ধু নির্বাচনের হাদিস
যদি কেউ মন্দ লোকের সাথে উঠা-বসা করে অবশ্যই মন্দ লোকের প্রভাব পড়বে উঠা-বসা করা ব্যক্তির উপর। রাসূল সঃ বলেছেন যে, “মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারণার অনুসারী হয়ে থাকে। সুতরাং তোমাদের সকলেরই খেয়াল রাখা উচিত সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে। [তিরমীযী-২৩৭৮] এর মানে আমাদের বন্ধু নির্বাচনে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, আমরা আমাদের বন্ধুর আচার-আচরণের প্রভাবে প্রভাবিত হই।
অন্য একটি হাদিসে রাসূল সঃ বলতেছেন, আবু দারদা ও মূসা আশআরী রাঃ হতে বর্ণিত, “রাসূল সঃ বলেছেন, নেককার সাথী ও অসৎ সাথীর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, একজন আতর বহনকারী ও অন্যজন কামারের ন্যায়। যে আতর বহনকারী সে তোমাকে আতর দিবে। অথবা তুমি খরিদ করবে। অথবা তুমি সুঘ্রাণ পাবে। যে কামার সে তোমার কাপড় পুড়িয়ে দিবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে গন্ধ পাবে।” [মুসলিম ২৬২৮]
রাসূল সঃ আমাদের কত সুন্দর উদাহরণ দিয়েছেন এই হাদিসের দিকে আমরা লক্ষ্য করলে বুঝতে পারি। ভালো বন্ধু সহচর হলে তার কাছ থেকে কিছুনা কিছু ভালো জিনিস পাবো, আর খারাপ বন্ধু গ্রহণ করলে ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই নেই।
এই হাদিসগুলো থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়েই সাথী গ্রহণ করা উচিত।
খারাপ বন্ধু ত্যাগ করার উপায়
সালাফদের চোখে অসৎ সঙ্গ: সহচর গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমাদের পূর্বসরী ব্যক্তিগণ ছিলেন খুবই সতর্ক। তারা আল্লাহর জন্যই বন্ধু গ্রহণ করেছেন ও ত্যাগ করেছেন।
ওয়াহাব ইবনু মুনাব্বিহ রহ. বলেন, ‘তোমরা আমার পক্ষ থেকে তিনটি বিষয়ের ওপর আমলের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখো—
(১) প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বেঁচে থাকো।
(২) অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করো।
(৩) আত্মমুগ্ধ হওয়া বিরত থাকো।
[বইঃ সালাফদের চোখে দুনিয়া]
লক্ষ্য করুন এখানে ৩ টি জিনিসের একটি অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করার ব্যাপারে৷ এখানে অন্য কোন বিষয় দিতে পারতেন কিন্তু উনি অসৎ সাথী ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। নিশ্চয় অসৎ সঙ্গ আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য অকল্যাণকর সে জন্যই এই গুরুত্বপূর্ণ নসিহত দিয়েছিলেন।
ভালো বন্ধু নির্বাচনের গুরুত্ব
যারা নেক লোকদের সাথে উঠা-বসা করবে। তারা অবশ্যই ভালো কিছু অর্জন করবে। বিশেষ করে তারা তাদের সংশ্রয় থেকে ভালো কিছু শিখবে বা দো’আ লাভ করবে। যদিও তাদের আমল ঐসব ভালো লোকদের আমলে পৌছাবে না। যেমনটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সঃ বলেছেন, “আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম আর তারা এমন এক সম্প্রদায়। তাদের সাথে যারা বসবে তারাও বঞ্চিত হবে না।” [মুসলিম-২৬৮৯]
সৎ লোক নেক লোকদের সাথে উঠা-বসা করা আল্লাহর মহব্বত লাভের কারণ হয়ে থাকে। হাদিসে কুদসীতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ বলেন, “আমার মহব্বত ওয়াজিব হয়ে যায়, যারা আমার জন্য একে অপরকে ভালোবাসে এবং আমার জন্য একে অপরের সাথে একত্রে বসে”।(বর্ণনায় মালেক ও ইবনু আব্দিল বার ও মুনাযিরি হাদিসটির সনদকে সহীহ বলেন) মুসনাদে আহমদ ৫/২৩৩ নং, ২২০৮৩]
হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সঃ বলেন, “একজন মু’মিন অপর মু’মিনের আয়না স্বরুপ”। [আবু দাঊদ-৪৯১৮]
উপরোক্ত আলোচনায় উল্লেখিত কুরআন ও হাদীসের কথা থেকে একথা স্পষ্ট যে, সৎ সঙ্গে দ্বীনের পথে চলা সহজ। ঠিক তেমনি অসৎ সঙ্গে চলা কঠিন। এবং কখনো কখনো এর পরিণাম ভয়াবহ। দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা লাভের জন্য সৎ সঙ্গ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
শেষ কথা
জীবনের যথার্থ ও সুষ্ঠু বিকাশের জন্য সৎ সাহচার্যের বিশেষ প্রয়োজন। সৎসঙ্গ মানুষের জীবনকে পরিপূর্ণতার দিকে উন্নীত করে। পক্ষান্তরে, অসৎ সঙ্গ তার ব্যক্তিত্ব, প্রতিভা, সুনাম এমনকি সাফল্যকেও ধ্বংস করে। তাই আসুন প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমরা একমাত্র আল্লাহর জন্যই বন্ধু গ্রহণ করি এবং আল্লাহর জন্যই বন্ধু ত্যাগ করি।